অভিনব রেডিও

কোভিডোত্তর কালে একবছর পূর্তি হতে চলেছে অভিনব ইন্টারনেট রেডিও-র যার নাম ‘রেডিও কলকাতা’। ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে তৈরি সেই রেডিওর কাজ কী। সেই নিয়ে লিখলেন তুহিন সাজ্জাদ সেখ

Must read

লকডাউন চলছে, স্কুল-কলেজে আসা বন্ধ। ছাত্রছাত্রীদের কাছে ক্লাসরুমকে পৌঁছে দেওয়ার নানান আয়োজন শুরু হল বিশ্ব জুড়ে। গুগল মিট, গুগল ক্লাসরুম, জুম এরকম নানা অ্যাপের আমদানি ঘটল। এই বাংলার ছাত্রছাত্রীরাও অভ্যস্ত হল তাতে। শুধু ছাত্রছাত্রী কেন, কমিউনিটির মানুষও আলাপ-আলোচনা, সেমিনার-সিম্ফোজিয়াম এমনকী নির্ভেজাল আড্ডা দিতেও এই সমস্ত অ্যাপ ব্যবহার করতে শুরু করে। এরকমই এক সময়ে কলকাতার বিজয়গড় জ্যোতিষ রায় কলেজে সাংবাদিকতা ও গণজ্ঞাপন বিভাগ শুরু করল এক অভিনব পরিকল্পনা। তৈরি করল ইন্টারনেট রেডিও। নাম দিল ‘রেডিও কলকাতা’ (Radio Kolkata)। এই রেডিও শোনার জন্য প্রয়োজন ইন্টারনেট যুক্ত মোবাইল ফোন বা কম্পিউটার। গুগল খুলে সার্চ অপশনে গিয়ে radiokolkata.org (Radio Kolkata) লিখে সার্চ করলে, রেডিও কলকাতার ওয়েবসাইট খুলে যাবে। সেখান থেকেই শোনা যাচ্ছে এই রেডিও’র সম্প্রচার প্রতিদিন রাত ৯টায়। প্রথমে ভাবনাটা ছিল ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে। যাতে তাদের কাছে ক্লাসরুমটা অতি সহজেই ইন্টারনেট রেডিও’র মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়া যায়। এই ভাবনাটা আরও বিস্তারিত হল। শুধু কলেজের গণ্ডি নয়, কলেজের বাইরের কমিউনিটির মানুষ, রাজ্যের মানুষ, দেশের মানুষ এমনকী বিশ্বের মানুষও উপকৃত হবেন এই রেডিও’র মাধ্যমে। বর্তমানে নানান বিষয় নিয়ে অনুষ্ঠান চলছে এই রেডিওতে। গান ও আড্ডায় ভরা অনুষ্ঠান ‘কিছু কথা কিছু গান’; বিশিষ্ট সাহিত্যিকদের গল্প নিয়ে সাহিত্যের বাগানে ছাত্রছাত্রীরা সৃষ্টি করেছে নানান সাধের নাটক, নাম দিয়েছে— ‘সাহিত্য শ্রুতি’ ; আবার তারা নিজেরাও গল্প লিখেছে, নব্য লেখকদের গল্প নিয়ে তৈরি হচ্ছে ‘নতুন দোয়াত’; বাংলার প্রত্যন্ত গ্রামের চাষির কথা, চাষের কথা, বিশেষজ্ঞদের মুখে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে চাষবাসের পরিকল্পনা এবং গ্রামীণ কৃষ্টি ও সৃষ্টিকে বিশ্বের বাঙালির কাছে তুলে ধরার জন্য অনুষ্ঠান চলছে ‘চাষবাস’ নামে। আমাদের সংস্কৃতি ও পরম্পরাকে তুলে ধরা হচ্ছে ‘ঐতিহ্য’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ; থাকছে স্বাস্থ্য বিষয়ক অনুষ্ঠান ‘স্বাস্থ্যের সাথী’ এবং বিজ্ঞানের অনুষ্ঠান ‘জিজ্ঞাসা’; সংগীত শিল্পীদের সাক্ষাৎকারমূলক অনুষ্ঠান হিসাবে থাকছে ‘সংগীত সমারোহ’ কিংবা ‘মিউজিক্যালি ইয়োর্স’; মহিলাদের জন্য অনুষ্ঠান থাকছে ‘অঙ্গনা; ছোটদের জন্য থাকছে ‘রামধনু’ কিংবা ‘ছুটির আড্ডা’; এ-ছাড়াও থাকছে আলোচনামূলক অনুষ্ঠান ‘কথায় কথায়’; গল্পপাঠের অনুষ্ঠান ‘গানে গল্পে’; সংবাদপাঠ ও বিষয়ভিত্তিক আলোচনা হিসাবে থাকছে ‘এই সময়ে’; স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা সরাসরি অংশগ্রহণ করছে ‘স্টুডেন্ট কর্নার’-এ; আর ছাত্রছাত্রীদের বা গবেষকদের জন্য সিরিয়াস পড়াশোনা নিয়ে আলোচনা থাকছে ‘ভার্চুয়াল ক্লাসরুম’। এই অনুষ্ঠানে উচ্চমাধ্যমিক, গ্রাজুয়েশন বা পোস্ট গ্রাজুয়েশন পরীক্ষা প্রস্তুতির ব্যাপারটা গুরুত্ব দিয়ে ভাবা হয়। এই ইন্টারনেট রেডিও’র মূল উদ্দেশ্য হল ছাত্রছাত্রী এবং নতুন প্রজন্মের সৃষ্টিকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরা। শুধু নতুন প্রজন্ম নয়, পুরনো দিনের মানুষও যদি নতুন কিছু করতে চান, তার জন্য সুযোগ থাকছে এই ইন্টারনেট রেডিওতে। পুরনো নতুনের মেলবন্ধনে এক অভিনব সংস্কৃতিকে বিশ্বের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছে রেডিও কলকাতার সদস্যরা। পশ্চিমবাংলার প্রায় সব জেলা, দেশের প্রায় ৩০টি গুরুত্বপূর্ণ শহর, বিশ্বের প্রায় ১২টি দেশের মানুষ শুনছেন রেডিও কলকাতার অনুষ্ঠান। দেখতে দেখতে প্রায় একটা বছর কেটে গেছে এই রেডিও কলকাতার। আগামীকাল অর্থাৎ ২ নভেম্বর এই ইন্টারনেট রেডিওর প্রতিষ্ঠা দিবস। বিজয়গড় জ্যোতিষ রায় কলেজের অধ্যক্ষা এবং রেডিও কলকাতার মুখ্য উপদেষ্টা ড. রাজ্যশ্রী নিয়োগীর তরফ থেকে সুখবর এটাই যে সেই উপলক্ষে বুধবার এই কলেজে দুপুর ২টো থেকে আয়োজিত হবে এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

আরও পড়ুন-বাংলার শিক্ষা শিখরের দিকে ছুটছে

Latest article