খাই খাই করো কেন

বিরিয়ানি খাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই মনে হচ্ছে একপেট ভাত অথবা বেশ কয়েকখান রুটি সাঁটিয়ে দিতে পারবেন! সবসময়ই মনে হয় কিছু না কিছু খেতেই থাকি! এমনটা হলে কিন্তু বিপদ। বুঝতে হবে আপনার শরীরে হরমোনের ভারসাম্য গেছে ঘেঁটে আর পুষ্টির হয়েছে ঘাটতি। সারাদিন খাই খাই স্বাস্থ্যকর লক্ষণ নয়। একটু সতর্ক হন। দরকারে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। লিখছেন শর্মিষ্ঠা ঘোষ চক্রবর্তী

Must read

একজন সাধারণ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তাঁর শরীর বুঝে সারাদিনে কম থেকে বেশি ৬ বার খেতে পারেন। পুষ্টির চাহিদা তাঁর দৈনিক পরিশ্রম ও দেহের ওজনের উপর নির্ভর করে। খাবার পুষ্টিকর করার জন্য মোট ক্যালরির ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ বিভিন্ন কার্বোহাইড্রেট থেকে, ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ স্নেহ পদার্থ থেকে এবং ১৫ থেকে ২০ শতাংশ প্রোটিন থেকে গ্রহণ করা উচিত। পুষ্টিবিদরা বলেন, ৫-৬ ঘণ্টা পরপর খাবার খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। কিন্তু অনেকেরই খাবার খাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই আবার খিদে পেয়ে যায়। সারাক্ষণ এই খাই খাই করার পিছনে গুরুতর কারণ রয়েছে। খাই খাই অর্থাৎ ফুড ক্রেভিং খুব স্বাস্থ্যকর লক্ষণ নয়।

কেন হয়
ফুড ক্রেভিং-এর (Food cravings) জন্যে দায়ী লেপটিন ও সেরোটোনিন নামক দুটি হরমোন। অনেক সময় মানসিক চাপ থেকেও ফুড ক্রেভিং হতে পারে। কারণ মানসিক চাপে প্রচুর কর্টিসল হরমোন নিঃসৃত হয়। এই হরমোন চর্বিযুক্ত খাবারের পাশাপাশি মিষ্টিজাতীয় খাবারের প্রতি আকর্ষণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে বারবার খেতে ইচ্ছে করে।
পিওএস কিংবা ডায়াবেটিস থাকলে ভীষণ পরিমাণে ফুড ক্রেভিং (Food cravings) হয়। তা নিয়ন্ত্রণে আনতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
যাঁদের ফুড ক্রেভিং রয়েছে তাঁদের খাবার খাওয়ার পরেই ব্লাড সুগার এবং ইনসুলিনের মাত্রা বেড়ে যায়, ফলে খিদে পায়। এই সময় যদি কেউ একটু সময় অপেক্ষা করে তাহলেই বোঝা যাবে যে একেবারেই খিদে নয় শারীরিক ত্রুটির কারণেই এমনটা হচ্ছে।
ফুড ক্রেভিং-এর সমস্যা রয়েছে যাঁদের তাঁদের সঠিক মাত্রায় প্রোটিন শরীরে পৌঁছয় না। কারণ খাবারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল প্রোটিন। তাই মাথায় রাখতে হয় যেন প্রোটিন সঠিক মাত্রায় শরীরে ঢোকে। প্রোটিন এই খিদে-খিদে ভাবটা কমায়।
যা খাচ্ছেন তা পুষ্টিকর কি না সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ অপুষ্টি ক্রেভিং বাড়ায়।
নিজেকে ছাড় দেওয়া যেমন খারাপ তেমনই অতিরিক্ত রেস্ট্রিকশনও ভাল না। অতিরিক্ত রেস্ট্রিকশনের মধ্যে থাকলে ফুড ক্রেভিং বাড়ে।

খিদে আর খিদে নয়
ভরপেট খাবার খাওয়ার এক থেকে দেড় ঘণ্টার মধ্যেই যদি মনে হয় আবার খিদে পাচ্ছে, তাহলে বুঝতে হবে খিদে নয় এটা ক্রেভিং (Food cravings)। বিশেষ করে মধ্যরাতে যখন ক্রেভিং হয়। যাঁরা রাত জেগে কাজ বা পড়াশোনা করেন তাঁরা ‘মিডনাইট ক্রেভিং’-এ ভোগেন। এই ক্রেভিংয়ের সময় মিষ্টি জাতীয় খাবার খেতেই ইচ্ছে করে।
শারীরিক কিছু লক্ষণ দেখে আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনার খিদে পেয়েছে। অনেকক্ষণ না খেলে গা গোলাতে শুরু করে, পেটের ভিতর অদ্ভুত শব্দ হয়, হঠাৎ করেই ঝিমুনি ভাব লাগতে পারে, মনে হয় পেটের মধ্যে একটা খালি খালি ভাব হয়। এমনটা হলে বুঝবেন আপনার শরীরের খাবারের প্রয়োজন।

পুষ্টিকর খাবার কী
দেহের প্রয়োজন অনুযায়ী খাবার খেতে হবে। লাইফস্টাইল অনুযায়ী এক-একজনের খাবারের চাহিদা এক-একরকম।
অনেকে ডায়েট করেন, দীর্ঘ সময় না খেয়ে বা কম খেয়ে থাকেন ফলে একটা সময় গিয়ে খাবারের ক্রেভিং এমন পর্যায় হয় যা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যায়।
যত কম মাত্রায় চর্বি ততই কম লেপটিন থাকবে শরীরে এবং লেপটিন কম থাকলে শরীরে এই সংকেত পৌঁছবেই না যে খিদে আর নেই। ফলে খিদে পেয়েছে মনে হতে থাকবে। তাই সঠিক পরিমাণ ফ্যাট শরীরে যেন থাকে।
মাছ এবং চিকেন খান। আমন্ড বাদাম খান সকালে দুটো করে। এতে রয়েছে প্রোটিন, ফাইবার, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন, কপার, ম্যাগনেসিয়াম, রাইবোফ্লাভিন, পটাশিয়াম সেলেনিয়াম, ভিটামিন বি, ফলিক অ্যাসিড। চিনাবাদামে রয়েছে প্রোটিন, ফাইবার, পটাসিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন বি এবং ম্যাগনেসিয়াম। ভেজানো বাদাম খাওয়া সবচেয়ে উপকারী। বিভিন্ন ধরনের কপি, ব্রকোলি, সবুজ শাকসবজি খান এতে রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, ভিটামিন এ, ফাইটোনিট্রিয়েন্টস, ফোলেট ভিটামিন ই এবং ফাইবার, আয়রন এবং ফাইবার ইত্যাদি। কুমড়োর বীজ আর কলা রোজ খেতে পারেন।

আরও পড়ুন- উন্নয়নের কথা পিছনের সারিতে, এখন কেবল ধর্ম আর ধর্ম

খাই খাই কমাতে
খিদে কমাতে প্রোবায়োটিক হিসেবে খুব ভাল কাজ করে বাটার মিল্ক। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম এবং প্রোটিন। যা হজম করায়, ফ্যাট গলায় এবং খিদে কমায়।
অঙ্কুরিত ছোলা-মুগের অনেক গুণ। এর মধ্যে থাকে প্রোটিন, ফাইবার। যা খিদে নিয়ন্ত্রণে রাখে। প্রোটিন হজম করতে বেশি সময় লাগে বলেই খিদে কম পায়।
নারকেলের মধ্যে আছে মিডিয়াম চেইন ট্রাইগালিসারাইড। যা দ্রুত চর্বি পোড়ায়, খিদে কমায়। বেশি পরিমাণে ফাইবার থাকায় অনেকক্ষণ পর্যন্ত খিদে পায় না।
অসময়ে খাবারের ক্রেভিং হলেই নিজেকে আটকে রাখুন। ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। কারণ যে কোনও খাবারের জন্য ক্রেভিং সাধারণত ৩০ থেকে ২০ মিনিট স্থায়ী হয়। সময়টা পেরলেই ক্রেভিং কমে আসবে।
মুখে চিউয়িং গাম রাখুন মিষ্টি এবং নোনতা খাবারের আসক্তি কিছুটা কমবে। তবে তা যেন অবশ্যই সুগার-ফ্রি হয়।
শরীরে জলের ঘাটতি হলে খাই খাই ভাব বাড়ে কাজেই দিনে কম করে আড়াই-তিন লিটার জল খান। অল্প করে, বারে বারে।
দিনে তিনটে কাজুবাদাম খান তার বেশি না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন কাজুবাদামের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন ই, ম্যাগনেসিয়াম, ফ্যাট, প্রোটিন, ফাইবার। যা অনেকক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখে। মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকায় তা খিদে নিয়ন্ত্রণ করে।

সাধারণ কার্বোহাইড্রেট খুব দ্রুত রক্তের সঙ্গে মিশে শরীরের রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। যেখান থেকে ইনসুলিনের রেজিট্যান্স পাওয়ার কমে যায়। এতে খিদে বেশি পায়।
মানসিক চাপ বাড়লে ফুড ক্রেভিং হয় তবে তার স্থায়িত্ব থাকে ৩-৫ মিনিট। সেই সময়টা কাটিয়ে দিলেই ক্রেভিং থাকবে না। মানসিক চাপ মুক্ত থাকার চেষ্টা করুন।
খুব খিদের মুহূর্তে খাবার পেলে সামলানো যায় না। তাই উচ্চক্যালরি যুক্ত খাবার হাতের কাছে রাখবেন না। বেশি রাত জাগবেন না।
চিনির বদলে সুগার সাবস্টিটিউট খাবেন না। চিনির গ্লুকোজ মস্তিষ্কের উদ্দীপনা নিয়ে আসে বলেই মিষ্টি খেয়ে তৃপ্তি হয়। কিন্তু সুগার সাবস্টিটিউটে তো গ্লুকোজ নেই, ফলে তা খাওয়ার পরও অতৃপ্ত থেকে যেতে পারে। ফলে তখন বারবার মিষ্টি খাবার ইচ্ছে তৈরি হয়।

Latest article