প্রতিবেদন : কলকাতার আদিগঙ্গা সংস্কারের কাজ শুরু হতে চলেছে। এই প্রকল্পের আওতায় ১৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে কলকাতার বুকে ৩টি সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট এবং ২২টি নতুন ড্রেনেজ পাম্পিং স্টেশন তৈরি করা হবে। সেই সঙ্গে আদি গঙ্গার ১৫.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ নদীখাত পলিমুক্ত করা হবে। এর ফলে ৩৩ বর্গ কিমি এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা কলকাতা পুরনিগমের ২৮টি ওয়ার্ড ও সোনারপুর রাজপুর পুরসভার ৩টি ওয়ার্ডের প্রায় ৩ লক্ষ বাসিন্দা বর্ষায় জল জমার সমস্যা থেকে পাকাপাকি ভাবে মুক্তি পাবেন। কেন্দ্রের জলসম্পদ মন্ত্রক এই প্রকল্পের ব্যায় বহন করলেও কেএমডিএ এবং কলকাতা পুরসভা এই প্রকল্প রূপায়ণের দায়িত্বে থাকছে।
আরও পড়ুন-জয় হাতছাড়া কিবুর দলের
গ্লোবাল টেন্ডার ডেকে এই কাজ করা হবে বলে কেএমডিএ সূত্রে জানা গিয়েছে। সংস্কার প্রকল্পের আওতায় আদি গঙ্গার পলি নিষ্কাশন, পুরনো ভূগর্ভস্থ নিকাশি নালার সংস্কার, জিআরপি লাইনিং, প্রায় ২৩ কিমি নতুন পাইপলাইন পাতা, ৭৫টি পেনস্টোক গেট নির্মাণ, চারটি ট্রেসেল ব্রিজ নির্মাণ এবং ৩টি সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট বা এসটিপি ও ২২টি নতুন ড্রেনেজ পাম্পিং স্টেশন নির্মাণের কাজ করা হবে। সেই সঙ্গে জঞ্জাল ফেলা আটকাতে আদি গঙ্গার গোটা পথের দু’দিকে লোহার জাল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হবে। খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ থেকে সপ্তদশ শতাব্দী পর্যন্ত আদি গঙ্গাই ছিল ভাগীরথীর নিম্ন স্রোতের মূল অংশ। সেই সময় ব্যান্ডেলের কাছে ত্রিবেণীতে ভাগীরথী বা গঙ্গা ৩টি স্রোতে ভাগ হয়ে যেত। পশ্চিম দিকে সপ্তগ্রাম ছুঁয়ে প্রবাহিত হত সরস্বতী নদী। যার কিছুটা অস্তিত্ব এখনও হুগলি ও হাওড়া জেলায় দেখা যায়।
আরও পড়ুন-দ্রুত সমাধানের কথা দিলেন মন্ত্রী
পূর্বদিকে বয়ে যেত যমুনা নদী যার অস্তিত্ব এখনও উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় দেখা যায়। কিন্তু এই দুটি নদীই গঙ্গার মূল স্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কার্যত বুজে গিয়েছে। তবে ব্যান্ডেল থেকে সরাসরি দক্ষিণে নেমে আসা গঙ্গার খাত এখনও রয়েছে। এই খাতই সপ্তদশ শতাব্দী পর্যন্ত এখনকার কলকাতা বন্দর লাগোয়া আলিপুর চিড়িয়াখানার কাছে বাঁক নিয়ে পূর্ব দিকে বেঁকে কালীঘাট, টালিগঞ্জ, গড়িয়া, বারুইপুর, মগরাহাট হয়ে সাগরে গিয়ে মিশত। এই পথ ধরেই শ্রীচৈতন্য নীলাচলে গিয়েছিলেন। তবে ভূমিকম্পের জন্য এই স্রোতটি গঙ্গার মূল স্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরিবর্তে গঙ্গার স্রোত বইতে থাকে বর্তমান নদীখাতে অর্থাৎ হাওড়া ছুঁয়ে উলুবেড়িয়া, ডায়মন্ড হারবার হয়ে সাগরের পথে। থেকে যায় আদি গঙ্গার খাত যা এখন অনেকাংশে বিলুপ্ত।
আরও পড়ুন-ধাপে ধাপে এগোতে চাই : অচিন্ত্য, রাজ্য সরকারের সংবর্ধনা
কিন্তু ঘটনা হল আদিগঙ্গা এখনও দক্ষিণ কলকাতা, রাজপুর-সোনারপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ অংশে নিকাশির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। কিন্তু তা অনেক জায়গায় বুজে যাওয়ায় বা তার খাত দখল হয়ে যাওয়ায় এখন জল টানার ক্ষমতাটাও হারিয়েছে। একটু বেশি বৃষ্টি হলেই দক্ষিণ কলকাতা ও লাগোয়া এলাকা জলবন্দি হয়ে পড়ছে। সমস্যার সমাধান করার জন্যই ‘নমামি গঙ্গে’ প্রকল্পের মাধ্যমে এই বুজে যাওয়া নদীখাতের আমূল সংস্কার করার কথা ভাবা হয়েছে।