ফোটো অ্যালার্জি
আমাদের শরীরে সবচেয়ে বড় অঙ্গ হল ত্বক। তাই গ্রীষ্মের তীব্র গরমের প্রভাব ত্বকেই সর্বাধিক পড়ে।
একটা সরাসরি ক্ষতি হয় সূর্যের আল্ট্রাভায়োলেট রে বা অতিবেগুনি রশ্মি থেকে। ভারতীয় বা বাঙালিদের ত্বকে প্রধানত হল বাদামি বা কালো ত্বক। সেই ত্বকে সানট্যানটা বেশি হয়। এটা আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি থেকে।
সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির অনেকগুলো ভাগ রয়েছে— যেমন আল্ট্রাভায়োলেট এ, বি এবং সি। আল্ট্রাভায়োলেট সি পৃথিবীপৃষ্ঠে এসে পৌঁছয় না। আল্ট্রাভায়োলেট এ এবং বি পৃথিবীর ওজন স্তর ভেদ করে চলে আসে।
আরও পড়ুন-নেইমারকে পেতে আসরে ম্যান ইউ
সানবার্ন কথাটা আসলে ভুল করে সবাই সান ট্যানের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেন। সানবার্ন বা রোদে পুড়ে যাওয়াটা আসলে সাদা চামড়া যাঁদের, তাঁদের হয় । সানবার্নের জন্য দায়ী হল আল্ট্রাভায়োলেট বি (UVB) রশ্মি। পুড়ে যাওয়া অর্থাৎ লাল টুকটুকে হয়ে ঝলসে ফোসকা পড়ে যাওয়া। এটা মূলত বিদেশিদের হয়। বিদেশিরা ট্যানিং পছন্দ করেন তাই দেখা যায় তাঁরা সি-বিচে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পড়ে থাকেন। তখন ত্বক কালচে বা খয়েরিটে হয় না, লাল লাল ছিট ছিট হয়ে পুড়ে যায়।
আরও পড়ুন-প্রথম দফার ভারতীয় দল ইংল্যান্ড পৌঁছল
আল্ট্রাভায়োলেট এ বা (UVA) থেকে হয় সান ট্যান। ট্যানিং হল কালো বা খয়রিটে হয়ে যাওয়া। এমনিতেই সূর্যরশ্মিতে খুব বেশি সময় থাকলে ফোটো এজিং হয় অর্থাৎ দ্রুত বলিরেখা পড়ে, বয়সের ছাপ চলে আসে। সূর্যের উত্তাপ যত বেশি শরীরে পড়বে বার্ধক্য তত দ্রুত আসবে।
গরমকালে দেখা যায় কেউ গায়ে কোনও পারফিউম মেখে বেরোলেন বা কোনও প্রসাধনী ব্যবহার করে রোদে বেরোলেন বা কিছু ওষুধ খেলেন। এর থেকে গায়ে অ্যালার্জি বেরিয়ে গেল। একে বলে ফোটো অ্যালার্জি। মানে সূর্যের আলোর সঙ্গে এই সব সামগ্রীর রাসায়নিকের ক্রিয়া-বিক্রিয়া হওয়ার ফলে এই ধরনের অ্যালার্জি হয়।
অবশ্যই সানস্ক্রিন মাখা দরকার। রোদে বেরোনোর দশ-পনেরো মিনিট আগে লাগিয়ে নিতে হবে।
মুখ গা হাত পা ঢাকা থাকলেই ভাল। অনাবৃত অংশেই সান ট্যান হয়।
সানগ্লাস ব্যবহার করা খুব জরুরি। দেখে নিতে হবে ইউভি প্রোটেকশন দেওয়া রয়েছে কি না কারণ চোখের চারপাশটা সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে কালো হয়ে যায়।
আরও পড়ুন-বজরংদের মোমবাতি মিছিল
ফাঙ্গাল ইনফেকশন
ফাঙ্গাল ইনফেকশন একটি সংক্রামক রোগ। আমাদের চারপাশে এমন অনেক রোগজীবাণু ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে যা আমরা খালি চোখে দেখতে পাই না। এসব রোগজীবাণু আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে শরীরে প্রবেশ করে এবং শরীরের যে কোনও একটি অংশকে আক্রান্ত করে। দ্রুত এ রোগের চিকিৎসা না নিলে ধীরে ধীরে তার সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। বিশেষ করে যাঁদের ইমিউন সিস্টেম বেশি দুর্বল তাঁরা বেশি ফাঙ্গাল ইনফেকশনে আক্রান্ত হন।
গরমকালে ঘর্মাক্ত শরীরে স্কিন ফাঙ্গাস হতে পারে। তাছাড়াও স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে বসবাস করা, যাঁদের পা অতিরিক্ত ঘামে তাঁদের জুতো থেকেও ফাঙ্গাস আক্রমণ করতে পারে। মাথার ত্বকেও ফাঙ্গাল ইনফেকশন হয়।
যে কোনও ফাঙ্গাল ইনফেকশনে ত্বক লাল হয়ে যায়। প্রচণ্ড চুলকোয়। ত্বকে জ্বালাপোড়া হয়।
হাত-পায়ের ত্বক খসখসে হয়ে যায়, চুলকোয়, চামড়া ওঠে।
রিংওয়ার্ম, ডার্মাটোফাইটোসিস, যাকে বলা হয় দাদ, এটিও একটি ছত্রাক সংক্রমণ। এটি ত্বকে বা মাথার ত্বকে ঘটে এবং ত্বক থেকে ত্বকের যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়ায়।
আরও পড়ুন-৪ জুলাই মোহনবাগানে পেলে-মারাদোনা-সোবার্সের সম্মান, কিংবদন্তিদের গেট উদ্বোধনে মার্টিনেজ
সরাসরি অ্যান্টিফাঙ্গাল মেডিসিন দিয়ে চিকিৎসা করতে হবে। কোনও স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা যাবে না। অনেকে পাড়ার দোকান থেকে ওষুধ নিয়ে চলে আসেন, এটাও করা যাবে না। দাদের মলম বলে যেগুলো বাজার চলতি তাতে স্টেরয়েড থাকে। ত্বকরোগ বিশেষজ্ঞ দেখিয়ে নিতে হবে।
ফলিকুলাইটিস
গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশে অতিরিক্ত আপেক্ষিক আর্দ্রতা। নর্থ ইন্ডিয়াতে বা সাহারা মরুভূমিতে হয়তো তাপমাত্রা এর চেয়ে অনেক বেশি কিন্তু সেখানে এই হিউমিডিটিটা থাকে না। আর এই আর্দ্রতা হওয়ার জন্য যেটা হয় তা হল প্রচণ্ড ঘাম। এই গরম এবং ঘামের বিপজ্জনক ককটেলে যেটা হয় বেশকিছু বাজে ধরনের ত্বক সংক্রমণ হয়। যেমন দাদ বা হাজা। এগুলো গরমে অত্যন্ত বেশি হয়। বিশেষ করে শরীরের যেসব অংশে অতিরিক্ত ঘাম হয় বা বলা যেতে পারে শরীরে খাঁজযুক্ত অংশ। আন্ডার আর্ম, কুঁচকিতে বা পেটে, ব্রেস্টের নিচের অংশে, ঘাড়ে অর্থাৎ বডি ফোল্ডগুলোতে বিশেষত, যাঁদের ওজন খুব বেশি তাঁদের ঘাম জমে এবং ছত্রাক জাতীয় সংক্রমণ হয়। এছাড়া যেটা হতে পারে, ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন বা জীবাণু থেকে সংক্রমণ, যার থেকে অ্যালার্জি হয়। এগুলোকে বলে ফলিকুলাইটিস। সারাগায়ে এই সংক্রমণ হয় ।
আরও পড়ুন-বেআইনি বাজি মজুত রুখতে কড়া লালবাজার
ব্যাকটেরিয়াল ফলিকুলাইটিসের ক্ষেত্রে লাগানোর অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হয়, সঙ্গে অ্যান্টি অ্যালার্জিক ওষুধ দিতে হয়।
খুব বেশি সাবান দেওয়ার দরকার নেই। সঙ্গে দু’বার তিনবার স্নান, সুতির ঢিলেঢালা জামা পরা।
ঘামাচি
এছাড়া যেটা হয়, আমাদের খুব পরিচিত ঘামাচি, যাকে বলা হয় মিলিয়ারিয়া ক্রিস্টালিনা। ঘামাচি আর কিছুই নয়, যখন অতিরিক্ত ঘাম ঘর্মগ্রন্থিগুলোতে তৈরি হয়, তখন সেই ঘাম গ্রন্থিমুখে জমা হয় এবং মুখটা বন্ধ করে দেয়। ফলে বেলুনের মতো ফুলে ফুলে ওঠে। প্রত্যেকটা দানা ফুলে ওঠা ঘর্মগ্রন্থি। ফলে এমতাবস্থায় পাউডার দিলে আরও সমস্যা বাড়ে। তার কারণ ত্বক বিশেষজ্ঞরা ঘামাচিতে পাউডার দিতে বলেন না। শুধু পাউডার নয়, পারফিউম, কসমেটিক ব্যবহার করাও উচিত নয়। এর ফলে ঘাম আটকে থাকে না, বেরিয়ে যায়।
এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভাল ল্যাকটো ক্যালামাইন লাগানো।
আরও পড়ুন-বৃষ্টির মধ্যেই রোড শো করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়
দিনে দু’বার-তিনবার স্নান। স্নানের জলে কোনও অ্যান্টিসেপ্টিক স্প্রে বা লিক্যুইড মিশিয়ে স্নান করলে কষ্ট কমবে। সুতির ঢিলেঢালা জামাকাপড় পরা। যাতে ঘামগুলো শরীর থেকে বেরিয়ে যায়।
ঘামাচির মোকাবিলায় বরফ অত্যন্ত কার্যকরী। একটি পাতলা এবং পরিষ্কার কাপড়ে বরফের টুকরো নিয়ে ঘামাচিযুক্ত ত্বকের উপর হাল্কা হাতে সার্কুলার মোশনে ঘষুন। এতে ঘামাচি কমবে, ত্বকের জ্বালা, চুলকানি ভাব অনেকটাই কমে যাবে।
ঘর্মাক্ত ভেজা জামাকাপড় পরে থাকলে যে কোনও ধরনের সংক্রমণ দ্রুত বাড়ে এবং সারা শরীরে ছড়িয়ে যায়।
গ্রীষ্মে ত্বকের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে খাওয়া-দাওয়ার বিষয়ে খুব সচেতন থাকা জরুরি।
সারাদিনে প্রচুর পরিমাণে জল খেতে হবে। অন্তত চার থেকে পাঁচ লিটার।
মরশুমি ফল এবং সবজি খেতে হবে বেশি পরিমাণে।
ত্বক সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন শুকনো রাখতে হবে।