অটিজম ভয় নয়, সচেতন হোন

অটিজিম কোনও অসুখ নয়, একটি স্নায়বিক বিকাশজনিত সমস্যা। অটিস্টিক শিশু বা ব্যক্তি স্বাভাবিকের চেয়ে আলাদা— এটাই কিন্তু অটিজমের 'কি ওয়ার্ড' তাই তাদের প্রয়োজন বিশেষ ধরনের দেখভাল। কিন্তু অটিজম নিয়ে এখনও সমাজে সচেতনতা বেশ কম। কিছু হলিউডি বা বলিউডি সিনেমার সৌজন্যে মানুষজন অটিজম শব্দটার সঙ্গে পরিচিত হলেও সেই পরিচয় যথেষ্ট নয়। বহু বাবা-মা বুঝতেই পারেন না বা বুঝলেও মানতেই চান না যে তাঁদের শিশুটি অটিস্টিক। এর ফলে দেরি করে ফেলেন অনেকটা। আজ ১৮ জুন হল অটিস্টিক প্রাইড-ডে। বিশ্ব অটিজম দিবসের মতো এটিও অটিস্টিক শিশু বা ব্যক্তিদের প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে উদ্‌যাপিত হওয়া একটি দিন। এইদিনে অটিজম নিয়ে স্বচ্ছ ধারণা দিলেন কনসালটেন্ট সাইকিয়াট্রিস্ট ডাঃ শর্মিষ্ঠা চক্রবর্তী। এবং পিজি হাসপাতালের ফিজিওলজি বিভাগের মেডিক্যাল ফ্যাকাল্টি, চিকিৎসাবিদ ডাঃ অদিতি বন্দ্যোপাধ্যায়। শুনলেন শর্মিষ্ঠা ঘোষ চক্রবর্তী

Must read

সচেতনতাই সমাধান
কনসালটেন্ট সাইকিয়াট্রিস্ট ডাঃ শর্মিষ্ঠা চক্রবর্তীর চিকিৎসার ক্ষেত্রই হল অটিস্টিক চাইল্ড। অটিজম নিয়েই তাঁর চিন্তা চেতনার বেশিরভাগটাই আবৃত। তিনি জানালেন, ‘অটিজম হল অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার অর্থাৎ এর তিনটে ভাগ থাকে মাইল্ড এবং মডারেট, সিভিয়র। যদিও বিষয়টা শুধু এইটুকুতেই সীমাবদ্ধ নয় আরও অনেক বিস্তারিত। যার প্রথম কথা হচ্ছে নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার। শিশুর জন্মের ৩ বছর অর্থাৎ ৩৬ মাসের আগেই এর সিম্পটম শুরু হয়ে যায়। কিন্তু তিনবছর না পেরলে তা ধরা পড়ে না। প্রথমেই যেটা হয় তা হল সোশ্যাল ইন্টারাকশনের সমস্যা। আই কনট্যাক্টে বা তাকিয়ে কথা বলায় সমস্যা হয়। মন খারাপ বা খুশি এগুলো জাহির করতে পারে না। এমনকী যে বয়সে ইশারাতে কথা বলে অনেক শিশু তারা সেটাও বলতে পারে না। নাম ধরে ডাকলে ফিরে তাকায় না। রেসিপ্রোকেট বা প্রত্যুত্তর দিতে পারে না। অপর দিকের মানুষের অনুভূতিগুলো বুঝতে পারে না।

আরও পড়ুন-নৃতত্ত্বের নারী পথিকৃৎ

দ্বিতীয় যে সমস্যাটি হয় তা হল কমিউনিকেশনের সমস্যা। সাধারণ অটিস্টিক বাচ্চার একটা ডিলেইড স্পিচ হয়। অর্থাৎ দেখা যায় হয় শিশুটির কথা ফুটতে বেশ দেরি হচ্ছে বা দেখা গেল ঠিকঠাক কথা বলা শুরু করেছিল হঠাৎই কিছুদিন পর তা বন্ধ হয়ে গেল আর কথাই বলছে না।
কিছু স্টিরিওটিপিক্যাল বিহেভিয়ার তাদের মধ্যে দেখা দেয়। যেমন, একটা কথাই রিপিট করছে। অর্থাৎ কেউ জিজ্ঞেস করল তোমার নাম কী প্রত্যুত্তরে সেই শিশুটিও বলল তোমার নাম কী। এটা যদি সবক্ষেত্রেই ঘটে বুঝে নিতে হবে তাঁর ইন্টারাকটিভ স্পিচ ডেভেলপ করছে না।
তৃতীয় যে সমস্যাটা হল তা বিহেভিয়ারাল বা ব্যবহারিক সমস্যা। একই জিনিস বারবার করা। যেমন, একটা রকিং চেয়ারে বসে ঘুরেই যাচ্ছে বা পাখা ঘুরছে সেইদিকেই একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে। খেলনাগুলোকে একই সারিতে সাজিয়ে চলেছে, একটা অদ্ভুত আওয়াজ করছে।
আরও একটি সমস্যা হল হাইপার সেনসিটিভিটি। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় প্রেশার কুকারের সিটির আওয়াজে ভীষণ রকম চেঁচামেচি শুরু করে দিল। আসলে সেনসরি নার্ভের কারণে তারা পরিবেশের শব্দগুলোকে পৃথক করতে পারে না। সব মিলিয়ে দেখা যায় তাদের নিজের ভাবনা-চিন্তার একটা পৃথিবী গড়ে ওঠে এবং তার বাইরে তারা বেরতে পারে না। অর্থাৎ সোশ্যাল ইন্টারাকশন, কমিউনিকেশন এবং বিহেভিয়ার এই তিনটে সমস্যা নিয়েই হল ‘অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার’।

আরও পড়ুন-হারানো দিনের স্মরণীয় নায়িকা, বিবি পটেশ্বরীতেই বাজিমাত সুমিত্রা দেবীর

এই স্পেকট্রামে অনেক শিশুর ইন্টেলিজেন্স লো থাকে আবার অনেক শিশুর খুব হাই আই কিউও হয়। হয়ত তারা অঙ্ক বা ফিজিক্স দারুণ ভাবে করতে পারে, দুর্দান্ত আঁকতে পারে, গান গাইতে পারে ,ইনস্ট্রুমেন্ট বাজাতে পারে। অথচ সেই শিশুরই সোশ্যাল ইন্টারাকশন দেখা যাবে একেবারেই নেই। হাই আই কিউ রয়েছে এমন বাচ্চাদের অ্যাসপারজর সিনড্রোম বলে। এই সিনড্রোমের একটা উদাহরণ হল বলিউডের ছবি শাহরুখ খান অভিনীত ‘মাই নেম ইজ খান’। শাহরুখ এখানে অ্যাসপারজর সিনড্রোম-যুক্ত ব্যক্তি। আরও অনেক খুঁটিনাটি বিষয় থাকে। যার সহজ ব্যাখা নেই।

আরও পড়ুন-নিঃশব্দ বিপ্লব: অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশ করতে চলেছেন কাজের খতিয়ান

অটিজমের চিকিৎসা : জরুরি শর্তাবলি
সবচেয়ে দুভার্গ্যর বিষয় অটিজমের শিকার বাচ্চার বাবা-মা সেটা ধরতে পারেন না। ফলে অনেক দেরি করে ফেলেন। তাঁরা যখন আসেন তখন বাচ্চার বয়স হয়তো আট-দশ বছর। জরুরি হল দ্রুত ডায়গোনোসিস এবং চিকিৎসা শুরু করা যাতে বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিশুও উন্নত অবস্থার দিকে যেতে পারে।
অটিজমের সমস্যা হল নির্দিষ্ট কোনও পরীক্ষামূলক ডায়গোনসিস হয় না। এই ক্ষেত্রে যেটা হয় তা পুরোটাই ক্লিনিক্যাল ডায়গোনোসিস।
কোনও বাচ্চাকে তুমি কেন আছো জিজ্ঞেস করলে তার উত্তরে সে তুমি কেমন আছো বললে কোনও বাবা-মার সন্দেহ হয় না কারণ ইন্টারাকটিভ স্পিচটাই অনেক বাবা-মা জানেন না বা বোঝেন না। তাই লক্ষ্য রাখতে হবে সচেতন থাকতে হবে।
অটিজমের চিকিৎসা অন্যরকম, প্রথাগত নয়। স্পিচ এবং কমিউনিকেশনের জন্য ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি সেশন খুব প্রয়োজন। প্রতিটা সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালে ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিস্ট থাকেন তাঁকে বাচ্চাকে দেখাতে হবে।
দ্বিতীয় অকুপেশনাল থেরাপি করাতে হবে। কারণ অটিস্টিক শিশুদের ছোট ছোট কাজ করতেও অনেক অসুবিধে হয়। সোশ্যাল স্কিল বা বিভিন্ন সামাজিক বৃত্তিগুলো তাদের শেখানো খুব প্রয়োজন।

আরও পড়ুন-মানবিক মন্ত্রী, কলকাতায় চিকিৎসা ক্যান্সার-রোগীর

তৃতীয় বিহেভিয়ারাল থেরাপি যা সাইকোলজিস্টরা করেন। নানাধরনের বিহেভিয়ারাল থেরাপি রয়েছে। শিশুটির যে ব্যবহার সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্য নয় যেমন, হয়তো আঁচড়ে কামড়ে দিচ্ছে, মারধর করছে, উত্তেজিত হয়ে পড়ছে সেইগুলো ঠিক করতে এই থেরাপির প্রয়োজন। প্লে-থেরাপি বা আর্ট থেরাপি, মিউজিক থেরাপির মাধ্যমেও এই সব বাচ্চাদের উন্নতি হতে থাকে। সর্বোপরি তাদের পড়াশুনো। স্পেশাল স্কুলে তাদের পড়াশুনোর ব্যবস্থা করা। যাতে ঠিকমতো গাইডলাইন পেয়ে এগোতে পারে।
এ-ছাড়া ফ্যামিলি থেরাপি খুব জরুরি। অনেক সময় বাবা-মা মেনেই নিতে পারেন না যে তাঁর বাচ্চাটি অটিজমের শিকার। ভয় পান, হতাশ হয়ে পড়েন। তখন তাঁদের সেই বাস্তব পরিস্থিতিকে মানতে শেখানোর জন্যও থেরাপি দেওয়া হয়। যে বাচ্চার অটিজম আছে তার ভবিষ্যৎ-পরিকল্পনাও অন্যধারায় করতে হবে। কারণ এটা কখনও পুরো সেরে যায় না। কাজেই বাবা-মাকে প্ল্যান করতে হবে দৃঢ়ভাবে। শিশুটিকে ওইভাবেই মানুষ করা— যাতে সে একটা সময় সে মূলস্রোতে ফিরতে পারে। আত্মনির্ভর হয়ে উঠতে পারে। বাবা-মা আত্মবিশ্বাসী হলে অটিজম শিশুরাও আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে। এখন অনেক ধরনের প্রশিক্ষণ হয়। যা বাবা-মাকেই খুঁজে নিতে হবে কোনটা তাঁর বাচ্চার জন্য ভাল।

আরও পড়ুন-রাজ্যে অগ্নিগর্ভ অগ্নিপথ, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বাড়িতে বিক্ষোভ-অবরোধ

এগোই একসাথে
অটিজিম নিয়ে বহু বছর ধরে কাজ করে চলেছেন চিকিৎসাবিদ ডাঃ অদিতি বন্দ্যোপাধ্যায়। শিশুবিশেষজ্ঞ নন তিনি। নিউরো ফিজিওলজি অফ অটিজম নিয়ে কাজ করছেন। মেডিকেল কলেজে পড়ার সময় থেকেই একটি অটিস্টিক শিশু সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন। বিদেশে বহুবছর একটি অটিস্টিক অর্গানাইজেশনের শিশুদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। নিজেও একজন সিঙ্গল মাদার এবং অটিস্টিক শিশুর মা হিসেবে বড়সড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছেন অদিতি। পরিবার মেনে নেয়নি তাঁর কাজ এবং তাই সন্তানকে নিয়ে দেশে ফিরে এসছেন। এখানে ফিরে প্রশিক্ষণ নেন অটিজম নিয়ে। তখনই বুঝতে পারেন তাঁর ছেলেও অটিস্টিক শিশু। এরপর ২০১৫ সাল থেকে ডান্স অ্যান্ড মুভমেন্ট থেরাপির মাধ্যমে কাজ করছেন অটিস্টিক মানুষদের নিয়ে। কলকাতায় গড়ে তুলেছেন ‘সাম্য মডেল অফ ডান্স মুভমেন্ট থেরাপি ফর স্পেশাল নিডস বা সাম্য ফাউন্ডেশন’। উদ্দেশ্য, যাতে অটিস্টিক শিশুর মায়েরা প্রশিক্ষিত হতে পারেন। কারণ শিশুর যে কোনও ধরনের সমস্যায় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন তার মা। তাঁদের অবস্থা শোচনীয় হয়। থেরাপিস্টরা একটা পর্যায় পর্যন্ত গাইড করতে পারেন বাকিটা বাড়িতেই করতে হয় এবং পরিবার-প্রতিটা সদস্য যদি প্রশিক্ষিত হয় তবে তাঁদের সাহায্যে সেই শিশুটিও ধীরে ধীরে উন্নত হতে শুরু করে। নিজের বাবা-মার সাহচর্যে একাই বড় করে তুলেছেন সন্তানকে অদিতি। যে-সন্তান আজ সমাজের মূলস্রোতে অন্য ছেলেমেয়েদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে চলেছে নিজের লক্ষ্যে। অসুবিধা রয়েছে প্রতিপদে কিন্তু অদিতি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ নিজের সন্তানকে নিয়ে তো বটেই আরও যারা অটিস্টিক শিশু তাদের নিয়েও। বছরে দুবার কলকাতার নামী বিশ্ববিদ্যালয় ফ্যাকাল্টি ইনডাকশন প্রোগ্রামে অটিজম নিয়ে পড়ান। অটিজম নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন।

আরও পড়ুন-রাহুলের বদলে সম্ভবত মায়াঙ্ক, ইংল্যান্ডে রোহিত

সমস্যার মুখোমুখি
অটিজম নিয়ে তাঁর কাজের অভিজ্ঞতা বহুদিনের তাই খুব কাছ থেকে বুঝেছেন এই সমস্যাকে। এই প্রসঙ্গে ডাঃ অদিতি বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, অটিজম একটি স্নায়বিক বিকাশজনিত সমস্যা বা নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার। অর্থাৎ একটি সাধারণ শিশুর স্নায়বিক বিকাশ যেভাবে হয় অটিস্টিক শিশুদের স্নায়বিক বিকাশ তেমনভাবে হয় না। অটিস্টিক ব্রেনের নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা গেছে এদের নার্ভের অ্যারেঞ্জমেন্টটা একটু অন্যরকম থাকে। দুটো অটিস্টিক শিশুও কিন্তু পরস্পরের থেকে একদম আলাদা হয়। অটিজমে আমরা আক্রান্ত শব্দটাকে ব্যবহার করি না কারণ এটা কোনও অসুস্থতা নয়। এটা একটা কন্ডিশন বা অবস্থা। যেখানে স্নায়ুতন্ত্রটাই অন্যরকম হয়। একে বলা হচ্ছে নিউরো ডাইভার্সিটি অর্থাৎ নিউরোলজিকালই ডিফারেন্ট ইনডিভিজুয়াল। এই নিউরোলজিকালই ডিফারেন্ট ইন্ডিভিজুয়াল কথাটা বলার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মনে হতে পারে তাহলে সেই শিশুর কোনও অসুবিধে নেই? হ্যাঁ অসুবিধে রয়েছে। এই অসুবিধেটা তখনই ধরা পড়ে যখন থেকে সেই শিশুর কথা বলা শুরু হয়। চোদ্দো-পনেরো মাস বয়স থেকে একটা শিশু যখন কমিউনিকেট করা শুরু করছে ঠিক তখনই দেখা গেল সেই শিশু ডাকলে সাড়া দিচ্ছে না, তাকাচ্ছে না। তিন বছর পেরলে একটি শিশু প্যারালাল প্লে থেকে ইন্টারাকটিভ প্লের দিকে যায় অর্থাৎ অন্য শিশুদের সঙ্গে ভাবের আদানপ্রদান শুরু করে কিন্তু দেখা গেল অটিস্টিক বাচ্চাটি সেই ইন্টারাকটিভ প্লে করতে পারছে না অর্থাৎ তার সোশ্যাল কমিউনিকেশন ডিজঅর্ডার শুরু হয়। তার অর্থ সামাজিক ভাবে বাবা মা, দাদু দিদা, বন্ধু, পাড়া-প্রতিবেশী সকলের সঙ্গে কীভাবে কথা বলবে, ভাবভঙ্গির আদানপ্রদান করবে সেটা একেবারেই বুঝতে পারে না এবং তাকে কেউ কিছু বোঝালেও সে বুঝতেও পারে না। এবার যখন ওই শিশুটি নিজেকে প্রকাশ করতে পারছে না তখন এবং অন্যের অভিব্যক্তিও বুঝতে পারছে না তখন কী হয় একটা প্রচণ্ড হতাশা, যন্ত্রণা থেকে কান্নাকাটি করছে, ছুটোছুটি করছে, আঁচড়ে কামড়ে দিচ্ছে, জিনিসপত্র ছুঁড়তে শুরু করে। আগুনে হাত দিয়ে ফেলে, জলে ঝাঁপিয়ে পড়ে অর্থাৎ তার মধ্যে ফিয়ার অফ ডেঞ্জার বিষয়টাই ডেভেলপ করে না। সেপারেশন অ্যাংজাইটি অর্থাৎ মায়ের থেকে আলাদা হচ্ছে কিন্তু বুঝতে পারছে না সবার কাছে চলে যাচ্ছে। তখন এই সব দেখে মা-বাবারা দুশ্চিন্তায় পড়ে যান— আর পাঁচটা বাচ্চা স্বাভাবিক কিন্তু তাঁদের সন্তানই এমন হল কেন, এই কষ্ট থেকে মা-বাবা বা পরিবারও ডিপ্রেশনের শিকার হয়।

আরও পড়ুন-মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে প্রকল্পের কাজে বাড়ল গতি, ১ বছরে ৪৫৮ মৌজায় জল

কী পরামর্শ
পরামর্শ একটাই— এমনটা লক্ষ্য করলেই বাড়ির যিনি ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান বা যিনি পেডিয়াট্রিশিয়ান তাঁদের সঙ্গে কথা বলুন। প্রয়োজন পড়লে তাঁরা ডেভেলপমেন্ট পেডিয়াট্রিশিয়ান বা সাইকোলজিস্টের কাছে পাঠাবেন। আমাদের দেশে যে টেস্টের মাধ্যমে অটিজম রয়েছে কি না শনাক্ত করা হয় তাকে বলে ইসা বা ইন্ডিয়ান স্কেল ফর অটিজম অ্যাসেসমেন্ট। তবে এই পরীক্ষা তিনবছরের আগে হয় না। তাই তিনবছর আগে যদি কোনও শিশুর অটিজমের লক্ষণ দেখা যায়
সেই সম্পর্কে মা-বাবাকেই সচেতন হতে হবে। সেই অনুযায়ী এগোতে হবে। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। অটিস্টিক শিশুদের বিশেষ গুণ থাকে যা সচরাচর অন্য বাচ্চাদের মধ্যে দেখতে পাওয়া যায় না। হয়তো সে দারুণ আঁকতে পারে, দারুণ ভাল গান করে, ক্যালকুলেশন করে। তা হলে সেক্ষেত্রে তার সেই গুণগুলো চিহ্নিত করতে হবে। সেই জায়গাগুলোকে আরও উন্নত করতে হবে এবং পাশাপাশি বিশেষ সমস্যাগুলোর প্রতিও নজর দিতে। কারণ অটিস্টিক ছেলে বা মেয়েটির বিশেষ গুণ থাকা সত্ত্বেও সে ক্লাসরুমে এসে পড়াশুনোয় তাল মেলাতে পারছে না অসুবিধেয় পড়ছে তখন তার প্রয়োজন একজন স্পেশাল এডুকেটরের। সব স্কুলেই একজন স্পেশাল এডুকেটর প্রয়োজন। কারণ যারা মাইল্ড টু মডারেট অটিস্টিক তাদের মূল ধারায় পড়াশুনো করানো সম্ভব। কিন্তু এখনকার স্কুলগুলোয় খুব বেশি স্পেশাল এডুকেটর থাকে না। যেখানে একজন স্পেশাল এডুকেটরের আন্ডারে এগারোজন বাচ্চার থাকার কথা সেখানে চল্লিশ জন থাকে যা একেবারেই সঠিক রেশিও নয়। এতে তারাও ঠিক মতো কাজটা করতে পারে না। এর সঙ্গে কিছু থেরাপি খুব জরুরি অটিস্টিক শিশুদের জন্য। যেমন, অকুপেশনাল থেরাপি, স্পিচ থেরাপি ইত্যাদি। বিহেভিয়ার মডিফিকেশন থেরাপি এটাও খুব জরুরি অটিজমের জন্য। অর্থাৎ অটিস্টিক মানুষের খুব বেশি পরিমাণে অ্যাংজাইটি হয়। হয়তো সে— যে বাচ্চা— রোজ একই পথ দিয়ে স্কুল বাসে স্কুলে যায় একদিন কোনও কারণে সেই বাসের রাস্তা বদল হয়েছে তখন সেই মুহূর্তে উত্তেজনায় সে মাথা ঠুকতে শুরু করল বাসের জানলায়। রাস্তা পাল্টে যাওয়ায় সে ভয় পেয়ে গেছে। কারণ বেশির ভাগ অটিস্টিক মানুষদের স্মৃতি শক্তি প্রখর হয়। ওদের বলা হয় ভিস্যুয়াল লার্নার। এবার তাদের যদি কেউ গিয়ে বুঝিয়ে দেয় রাস্তা বদলের কারণ সঙ্গে সঙ্গে সে শান্ত হয়ে যাবে। কিন্তু এগুলো তাদের বোঝাবে কে! যারা শিশুদের দায়িত্বে তাদের একটা ন্যূনতম সচেতনতার বা বিষয়টা সম্পর্কে জানার প্রয়োজন রয়েছে। তাই অটিস্টিক বাচ্চাদের উন্নত করতে সমাজের প্রতিটি মানুষকেই সচেতন হতে হবে।

Latest article