ডোনাপাওলা : গোয়ায় তৃণমূল কংগ্রেসের জোট সারা। এনসিপি তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে মিশে গিয়েছে। এছাড়াও মহারাষ্ট্র গোমন্তক পার্টির সঙ্গে জোট হয়েছে। গোয়ায় প্রথম জনসভার মঞ্চ থেকে ঘোষণা করলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপরেই কংগ্রেসের উদ্দেশে নেত্রীর বার্তা, কংগ্রেস আসতে চাইলে আসুক। কিন্তু ওরা না এলে তৃণমূল কংগ্রেস চুপ করে বসে থাকবে না। সোমবার প্রথমে ডোনাপাওলায় স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের এডিটরদের সঙ্গে আলাপচারিতা। এরপর গোয়ায় দলের নেতৃত্বের সঙ্গে সাংগঠনিক বৈঠক, যোগদান সেরে সোজা বেনাউলিমের জনসভায় যান দলনেত্রী। সেখানে তখন উপচে পড়া ভিড়৷ তিলধারণের জায়গা নেই। শুধু স্লোগান আর জোড়া ফুলের পতাকা। যেন বাংলা।
আরও পড়ুন-ধোঁয়াশা তৈরি করে আজ বাবলে বিরাট
বিজেপির বিকল্প তৃণমূল
বেনালিউমে এদিনের উপচে পড়া জনসভা থেকে তৃণমূলনেত্রী জানিয়ে দিলেন, তৃণমূল কংগ্রেসই গোয়ায় বিকল্প শক্তি। বিকল্প পথ। বিজেপিকে হারাতে হলে যে কেউ এই জোটে আসতেই পারেন। গোয়াবাসীর উদ্দেশে তাঁর বার্তা, এখানকার মানুষ অত্যন্ত বুদ্ধিমান। তাঁরা ভাল-মন্দ সবটা বোঝেন। তৃণমূল কংগ্রেস গোয়ায় ভোট ভাগ করতে আসেনি। বিজেপি বিরোধীদের একজোট করতে এসেছে। গত দশ বছরে একমাত্র তৃণমূল কংগ্রেসই বিজেপিকে রুখে দিয়েছে।
আরও পড়ুন-ফিরে এল পুলওয়ামা স্মৃতি শ্রীনগরে পুলিশ বাসে জঙ্গি হামলা, হত ৩
কনফিউজড কংগ্রেস
গোয়া থেকে কংগ্রেসের উদ্দেশে তৃণমূলনেত্রীর স্পষ্ট বার্তা, তৃণমূল কংগ্রেস কংগ্রেসের বিরোধী নয়। তারা চাইলে এই জোটে আসতেই পারে৷ এরপরেই তিনি বলেন, কেউ যদি জিতেও বিজেপির কাছে নিজেকে বিকিয়ে দেয় তাহলে মানুষ তাকে বিশ্বাস করবে কী করে? বিজেপির বিরুদ্ধে এদিন তোপ দেগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বাংলায় সামান্য জল জমলেও সিবিআই, ইডি পাঠিয়ে দিচ্ছে। আর গোয়ায় দুর্নীতি-সহ কতকিছু ঘটে যাচ্ছে, কই এখানে তো কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে দেখি না। মানবাধিকার কমিশনকেও দেখি না। বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলে কংগ্রেস।
গোয়ায় বাংলা মডেল
বছর ঘুরলেই গোয়ায় বিধানসভার নির্বাচন। জোট সারা। প্রথম জনসভায় উপচে পড়া ভিড়। এই সফরে একাধিক নেতা-নেত্রীর তৃণমূলে যোগদান। আত্মবিশ্বাসী নেত্রী জানিয়ে দিলেন, গোয়ায় জিতবে তৃণমূল। গোয়ায় খেলা হবে। ডোনাপাওলায় সাংগঠনিক বৈঠক হোক কিংবা বেনাউলিমের জনসভা, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দৃপ্তকণ্ঠে ঘোষণা করলেন, গোয়ার সরকার গঠনের পর তিনি আবার আসবেন। এখানে এসেই গোয়ার উন্নয়নের পরিকল্পনা করবেন। বাংলার মতো গোয়াতেও একাধিক প্রকল্প চালু হবে। বিশেষ করে মহিলাদের উন্নয়নে জোর দেওয়া হবে। নেত্রীর কথায়, বাংলা অনেক বড় জায়গা। সেখানে কয়েক কোটি মানুষ বসবাস করে। সেখানে তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার অজস্র প্রকল্প চালু করেছে। গোয়া ছোট্ট রাজ্য। এখানে দশ-বারোটা প্রকল্প চালু করলেই হবে। আমাদের সরকার বাংলায় করে দেখিয়েছে, এখানেও করে দেখাব। সঙ্গে যোগ করেন, কেন্দ্রীয় সরকার বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও-এর নামে ৭৫% টাকা শুধু বিজ্ঞাপনেই খরচ করেছে। বেটিদের জন্য আসলে কিছুই রাখেনি।
আরও পড়ুন-সুন্দরবন উন্নয়ন, কী পরিমাণ বরাদ্দ?
গোয়া চালাবে গোয়ার মানুষ
আগেও বলেছেন একাধিকবার। এদিন আবারও বললেন, গোয়ার মানুষই গোয়া চালাবে। তৃণমূল সুপ্রিমোর কথায়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, ডেরেক ও’ব্রায়েন, মহুয়া মৈত্র এরা কেউ গোয়া চালাতে আসবেন না। গোয়া চালাবেন গোয়ার মানুষই। আমরা শুধু পাশে থাকব।
কংগ্রেস-সিপিএম আঁতাঁত
বাংলায় সিপিএমের অত্যাচারের বিরুদ্ধে একটা সময় লড়াই করেছি। তখন কংগ্রেসে ছিলাম। কিন্তু দেখলাম সিপিএমের সঙ্গে তলায় তলায় কংগ্রেস আঁতাঁত করছে। তাই নতুন দল তৈরি করলাম। তৃণমূল কংগ্রেসের সরকারই এখন বাংলাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। কথাগুলি বেনাউলিমের জনসভায় এক নিশ্বাসে বলে গেলেন নেত্রী। বুঝিয়ে দিলেন, সময় বিশেষে কংগ্রেসের একই অঙ্গে কত রূপ!
আরও পড়ুন-লাগামছাড়া আলু, কড়া কৃষিমন্ত্রী
গোয়া- মাদার টেরিজা- কলকাতা
মাদার টেরিজা সর্বত্র সম্মানীয়া। মাদার দীর্ঘ দশক থেকেছেন কলকাতায়। মাদারের সঙ্গে নেত্রীর ছিল অত্যন্ত সুসম্পর্ক। নেত্রী নিজেই বললেন সেকথা। বললেন, বহু বছর আগে কলকাতায় দাঙ্গার সময় তিনি একা কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেরিয়েছেন। মাদারও সেসময় আর্তের সেবায় কলকাতার পথে পথে ঘুরতেন। সঙ্গে যোগ করলেন, ভ্যাটিক্যানে যাওয়ার আমন্ত্রণ পেয়ে সেখানে গিয়েছিলাম। মন ভরে গেছে। আমার সঙ্গে যোগাযোগ আছে। বাংলায় সব ধর্মের মানুষের বসবাস। গোয়ার মতো কলকাতা-সহ বিভিন্ন জায়গায় জমজমাট করে ক্রিসমাস- বড়দিন পালিত হয়। আমিও সেখানে হাজির থাকি। রাতের বেলায় চার্চে যাই। এবারও যাব ২০ ডিসেম্বর। একটা বছরও বাদ দিই না। গোয়াতেও প্রচুর চার্চ আছে। সকলকে বড়দিন ও নববর্ষের আগাম শুভেচ্ছা জানাই। নেত্রী বলেন, ফুটবলের মতো গোয়া – কলকাতার মিল রয়েছে। একদিন হঠাৎ মাদার ফোন করলেন। বললেন, সিপিএম তাঁদের একটি ঘর দখল করে নিচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে ছুটে গিয়ে আটকালাম। মাদারের স্মৃতিচারণায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তখন আবেগবিহ্বল। কেন্দ্রীয় সরকারকে তোপ দেগে বললেন, ওরা তো ছুটিও বাতিল করে দিয়েছে।
মূল মন্ত্র সম্প্রীতি
বেনাউলিমের জনসভায় তখন তুমুল উদ্দীপনা। উপচে পড়ছে ভিড়। যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই উড়ছে জোড়া ফুলের পতাকা। ভরা সভায় জনতার উদ্দেশে নেত্রী বললেন, তৃণমূল কংগ্রেস সবধর্মের মানুষকে সঙ্গে নিয়েই চলে। হিন্দু- মুসলিম- শিখ – খ্রিস্টান সকলকে নিয়েই চলতে হবে। এটাই হিন্দুস্তান। আমিও হিন্দু ঘরের মেয়ে। তা বলে মুসলিম- শিখদের দূরে ঠেলে দেব নাকি! বিজেপি মনে করে ওরা একাই হিন্দু। আমরা কি রাস্তা থেকে এসেছি নাকি! তোপ নেত্রীর।
আরও পড়ুন-সিবিএসই : নারীবিদ্বেষী প্রশ্ন, হইচই হতেই প্রত্যাহার
অসহিষ্ণু বিজেপি, অসহিষ্ণু সরকার
বেনাউলিমের জনসভা থেকে বিজেপিকে এদিন ধুইয়ে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, বিজেপির বিরুদ্ধে খেলা হবে। শুধু গোয়া থেকে নয়, দেশ থেকে বিজেপিকে হঠাতে হবে। ওরা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করছে। ইতিহাস বদলে দিচ্ছে। সংস্কৃতি বদলে দিচ্ছে। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের মতো মানুষকে বিহারের নালন্দা থেকে সরিয়েছে। এরা এতটাই অসিহষ্ণু। কী দলে, কী সরকারে।
আজ পানাজিতে গোয়ার জোট শরিক মহারাষ্ট্র গোমন্তক পার্টির সঙ্গে যৌথভাবে জনসভা হবে পানাজিতে বেলা দুটোর সময়। সেখানে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়াও থাকবেন গোয়ার প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী সুদীন ধাবালিকার এবং মহারাষ্ট্র গোমন্তক পার্টির দীপক ধাবালিকার।