শহর জুড়ে সিনেমা

আহ্লাদে ৮ দিন। ৫-১২ ডিসেম্বর। শহরের ২৩টি প্রেক্ষাগৃহে দেখানো হল ৩৯ দেশের ২১৯টি সিনেমা। এলেন দেশ-বিদেশের চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বরা। মিলন ঘটল ভাবের, সংস্কৃতির। পাশ্চাত্যকে টেক্কা দিল প্রাচ্য। আবারও। দেখা গেল জনপ্রিয় এবং শৈল্পিক ধারার সহাবস্থান। নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধানের মহাসম্মিলন ২৯তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। শুধু বিনোদন নয়, রাজ্য সরকারের এই আন্তরিক আয়োজন জুগিয়েছে ভাবনার রসদ।

Must read

সত্যজিতে আচ্ছন্ন দুই পরিচালক
মৃণাল সেনের শতবর্ষে ‘পদাতিক’ বানাচ্ছেন। তবে সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের শয়নে স্বপনে জাগরণে সত্যজিৎ রায়। প্রথম ছবি ‘অটোগ্রাফ’-এ ছিল ‘নায়ক’-এর ছায়া। ফেলুদা নিয়ে বানিয়েছেন সিরিজ। কথা বললেই এসে পড়ে সত্যজিৎ প্রসঙ্গ। এবারের উৎসবে একদিন বসেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার পরিচালক ব্রুস বেরেসফোর্ডের মুখোমুখি। তাঁদের আলোচনায় সত্যজিৎ প্রসঙ্গ এসেছে ঘুরেফিরে। সিনে আড্ডার আসরেও একই ঘটনা। প্রযুক্তির ব্যাপারে পাশ্চাত্যের কাছে ঋণ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে সৃজিত জানান, সত্যজিৎ রায়ের গল্প বলার ধরনে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মিশেল রয়েছে। এই প্রসঙ্গে তিনি ‘পথের পাঁচালী’র উদাহরণ দেন। উৎসবে সত্যজিৎ রায় স্মারক বক্তৃতা দিলেন বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক, নাট্যকার লরেন্স কার্দিশ৷ সৃজিতের মতো সত্যজিতে আচ্ছন্ন তিনিও। বিশ্বের দুই প্রান্তের দুই পরিচালক এই বিষয়ে বাঁধা পড়েছেন এক সুতোয়। প্রায় পাঁচ দশক আগে ‘পথের পাঁচালী’ দেখেছিলেন। কেমন ছিল সেই অভিজ্ঞতা, সবিস্তারে বলেন লরেন্স কার্দিশ। ছবিটি বদলে দিয়েছিল তাঁর জীবন। বুঝতে পেরেছিলেন, সারা বিশ্বের মানুষ আসলে একই রকম। তাঁদের সাংস্কৃতিক পার্থক্য সত্ত্বেও। অনুভব করেন সত্যজিতের সিনেমার গভীরতা। তাঁর কথায়, ছবি মানে না দেশ-কালের সীমানা। বাংলার মাটিতে অপু-দুর্গা যতটা প্রাসঙ্গিক, ততটাই প্রাসঙ্গিক ভিনদেশের কোনও অজানা গ্রামে৷ ছবির ভাষা যে কতটা তীব্র হয়, সেটা বুঝিয়েছিলেন পরিচালক সত্যজিৎ৷

আরও পড়ুন-মা হওয়া নয় মুখের কথা

১৯৬৮ সালে মিউজিয়াম অফ মডার্ন আর্ট-এ একজন ‘ফিল্ম কিউরেটর’ হিসাবে যোগ দেন লরেন্স কার্দিশ। ৪৪ বছরে ১০০০টি চলচ্চিত্র প্রদর্শনীতে গিয়েছেন৷ অর্জন করেছেন বিচিত্র অভিজ্ঞতা। হয়েছেন পুরস্কৃত। সত্যজিতের প্রতি তাঁর অপার মুগ্ধতা, শ্রদ্ধা। তার প্রকাশ ঘটে সমগ্র বক্তৃতায়। তিনি জানিয়েছেন, সেই সময় ‘পথের পাঁচালী’ যতটা প্রভাবিত করেছিল, ততটা প্রভাবিত করতে পারেনি কোনও হলিউডের ছবি। তত্ত্বকথার আশ্রয় না নিয়ে সহজ সরল ভাষায় উপস্থাপন করেন বক্তৃতাটি। তাঁর বাচন ভঙ্গিতে মুগ্ধ হন শ্রোতারা। তাঁকে ধন্যবাদ জানাতে গিয়ে নিজের ভাললাগার কথাও জানান অরিন্দম শীল। উপস্থিত ছিলেন অপর্ণা সেন।

আরও পড়ুন-মাওবাদী ডেরায় এনআইএ হানা, উদ্ধার অস্ত্র ও সেনার পোশাক

অঞ্জন যখন মৃণাল
‘চালচিত্র এখন’ ছবির মাধ্যমে শতবর্ষে মৃণাল সেনের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করলেন অঞ্জন দত্ত। পরিচালনার পাশাপাশি তিনি অভিনয়ও করেছেন। মৃণাল সেনের চরিত্রে। ঠিক বায়োপিক নয়, তবু ছবি জুড়ে রয়েছেন ‘মহাপৃথিবী’র পরিচালক। ফিরে যেতে হয় আটের দশকে। মুখোমুখি হতে হয় বছর ছাব্বিশের অঞ্জনের। হ্যাঁ, অঞ্জনের এই ছবিতে অঞ্জন নিজেও একটি চরিত্র। যাঁর দু’চোখে সিনেমার নেশা জাগিয়েছিলেন মৃণাল। ১৯৮১ সালে মুক্তি পেয়েছিল ‘চালচিত্র’। অঞ্জনের প্রথম ছবি। দু’জনের মতের বিস্তর অমিল। দর্শন ভিন্ন। তবু কেউ কাউকে ছাড়েননি। বেঁধে বেঁধে ছিলেন একে অপরের সঙ্গে। পরবর্তী সময়ে আরও অনেক ছবি। একসঙ্গে। এই ছবির কেন্দ্রে সেই ‘চালচিত্র’। প্রাধান্য পেয়েছে পর্দার পিছনের ঘটনাবলি। অঞ্জন চাইছিলেন জার্মানি পালাতে। তবু থেকে গেলেন। মূল কারণ মৃণাল। যে রাগী যুবক একটা সময় কলকাতার প্যাচপ্যাচে গরম, নোংরা, পলিউশন, চারপাশের বিশৃঙ্খলাকে অপছন্দ করতেন, তিনিই একদিন শহরটাকে ভালবেসে ফেললেন। এর পিছনেও সেই তিনিই। ঘটনায়, সংলাপে বাঁধা হয়েছে একটা বিশেষ সময়কে। ধরা পড়েছে সমাজের আলোকালো দিক। শহরের অলিগলি। প্রতিটি চরিত্র বাস্তবধর্মী।

আরও পড়ুন-দাবি আদায়ে গায়ে আগুন দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল, জেরায় সাগরের চাঞ্চল্যকর স্বীকারোক্তি

রক্তমাংসের। টুকরো টুকরো কিছু মুহূর্ত চরিত্রগুলোকে পূর্ণতা দিয়েছে। মৃণালের চরিত্রে অঞ্জন অসাধারণ। সাহায্য নিয়েছেন প্রস্থেটিক মেকআপের। তবে সংলাপ উচ্চারণে বজায় রেখেছেন নিজস্বতা। ছবির অন্যতম আবিষ্কার সাওন চক্রবর্তী। অভিনয় করেছেন ছাব্বিশ বছরের অঞ্জন ওরফে রঞ্জনের চরিত্রে। মৃণালের স্ত্রী গীতা ওরফে মিতার ভূমিকায় বিদীপ্তা চক্রবর্তী সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছেন। সব মিলিয়ে একটি বিশুদ্ধ সম্পর্কের ছবি। মৃণালের ছবি মূলত রুক্ষ। আবেগের ছিটেফোঁটা থাকত না। তবে এই ছবিতে রয়েছে ভরপুর আবেগ। কিছু কিছু মুহূর্ত চোখে জল এনে দেয়। অসংখ্য ছবির ভিড়ে ‘চালচিত্র এখন’ একটা মাস্টারপিস হয়ে থাকবে। হয়তো অঞ্জনের সেরা ছবি। উৎসবের অন্যতম প্রাপ্তি। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা বিভাগে বাংলা ভাষার ছবিটি পেয়েছে বিশেষ জুরি পুরস্কার।

আরও পড়ুন-ঠিক যেন কেকে’র স্মৃতি! মঞ্চে গান গাইতে গাইতেই মৃত ব্রাজিলের গায়ক

সেরা ইজরায়েল
একটা সময় বিশ্ব চলচ্চিত্রে ইউরোপ, আমেরিকার দাদাগিরি দেখা যেত। তখন ছিল না বিকল্প। সময় বদলেছে। বদলেছে পরিস্থিতি। বিশ্ব জুড়ে ঘটেছে ভাবনার বিকাশ। দূরত্ব কমছে প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের, উন্নত-উন্নয়নশীলের। এখন নানা দেশে তৈরি হচ্ছে উৎকৃষ্ট মানের ছবি। ইউরোপ, আমেরিকাকে টেক্কা দিচ্ছে বাকি দেশগুলো। গতবছর বড় চমক দিয়েছিল বাংলাদেশ, এবার ইজরায়েল। মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি বর্তমানে যুদ্ধবিদ্ধস্ত, রক্তাক্ত। তার মধ্যেই এই দেশের ‘চিলড্রেন অফ নোবডি’ জিতে নিল ২৯তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা বিভাগের সেরা ছবির ‘গোল্ডেন রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার পুরস্কার’। অর্থমূল্য ৫১ লক্ষ টাকা। এই বিভাগে ছিল স্পেন, জার্মানি, রাশিয়া, রোমানিয়া, ফ্রান্স প্রভৃতি দেশের ছবি। লড়াই ছিল কঠিন। তবু শেষ হাসি হাসল সমস্যা জর্জরিত দেশটি। তপ্ত মাটিতে ফুটল ফুল। বারুদ বাতাসে ছড়াল সুর। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা বিভাগের প্রধান বিচারক লরেন্স কার্দিশ বলেছেন, এবারের উৎসবের ছবি নির্বাচন অত্যন্ত উচ্চমানের। যে ছবিগুলো বাছাই করা হয়েছে, সেগুলো পৃথিবীর যে-কোনও চলচ্চিত্র উৎসবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে।

আরও পড়ুন-অপারেশন পুস্তক

ইজরায়েলের ছবিটি এবারের উৎসবে বিশাল প্রাপ্তি। ‘চিলড্রেন অফ নোবডি’র পরিচালনা করেছেন এরেজ তাদমোর। ছবির গল্প দানা বেঁধেছে ইজরায়েলি সমাজের প্রান্তে থাকা কয়েকজন সমস্যাগ্রস্ত যুবককে ঘিরে। প্রেম-ভালবাসাহীন তাদের জীবন। সংসারে অবহেলিত, অপাঙ্ক্তেয়। সমাজে উচ্ছিষ্ট। মনের মধ্যে জন্ম নেয় ক্ষোভ। মাঝেমধ্যেই বিশৃঙ্খলতার সৃষ্টি করে। এদের এক ছাদের নিচে আনেন পরোপকারী বৃদ্ধা মার্গালিট। সস্নেহে আশ্রয় দেন যুবকদের। মায়ের মতো আগলে রাখেন। তাঁর লক্ষ্য, যুবকরা যাতে বেপথু না হয়। জ্যাকি নামের এক সহৃদয় ব্যক্তি তাঁকে নানাভাবে সহযোগিতা করেন। স্নেহ-ভালবাসা দিয়ে তিনি হয়ে ওঠেন যুবকদের বড় ভাই। তাঁর কথাকে সবাই মান্যতা দেয়। প্রয়োজনে জ্যাকি তাদের শাসনও করেন। একদিন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন মার্গালিট। জ্যাকি তাঁকে মাটি দেন। মার্গালিটের বাড়ি, সম্পত্তি দুর্নীতিগ্রস্ত সম্পত্তি বিকাশকারীদের নজরে পড়ে। সবকিছু রক্ষা করার গুরুদায়িত্ব নেন জ্যাকি। তদন্তে সাহায্য করেন। আসে ঝড়ঝাপটা। লক্ষ্যে অবিচল থেকে মোকাবিলা করেন কঠিন পরিস্থিতির। সত্য ঘটনা অবলম্বনে তৈরি ছবিটি। ঘটনার ঘনঘটা বড় একটা নেই। সাবলীল অভিনয় এই ছবির সম্পদ। জ্যাকি চরিত্রে রয় আসাফ অনবদ্য। চরিত্রটি বহুস্তরীয়। চোখমুখের অভিব্যক্তি অসামান্য দক্ষতায় ফুটিয়ে তুলেছেন। অভিনয় মেধা-নির্ভর। মার্গালিটের চরিত্রে অভিনয় করেছেন টিকি দায়ান। বাকিরাও বেশ ভাল। হিব্রু ভাষায় তৈরি ১০৮ মিনিটের ছবিটি সমাজ সচেতন দর্শকদের ভাবিয়েছে। যোগ্য ছবি হিসেবেই নির্বাচিত হয়েছে উৎসবের সেরা। এই বিভাগে সেরা পরিচালকের পুরস্কার পেয়েছেন কার্লস ড্যানিয়েল মালাভে। ‘ওয়ান ওয়ে’ ছবির জন্য।

আরও পড়ুন-রাহুলদের সামনে আজ নতুন চ্যালেঞ্জ

বাংলা ছবির ভবিষ্যৎ
বেঙ্গলি প্যানোরামা নিয়ে প্রতিবছর দর্শকদের আগ্রহ থাকে। এবার সেই আগ্রহ দ্বিগুণ বেড়েছিল। কারণ প্রথমবার এই বিভাগে চালু হয়েছে পুরস্কার। দেখানো হয়েছে ‘আবার আসিব ফিরে’, ‘অসম্পূর্ণ’, ‘অনাথ’, ‘বিজয়ার পরে’, ‘বনবিবি’, ‘মাতৃপক্ষ’, ‘মন পতঙ্গ’। সাতটি ছবির মধ্যে শর্মিষ্ঠা মাইতি এবং রাজদীপ পাল পরিচালক জুটির ‘মন পতঙ্গ’ পেয়েছে বেঙ্গলি প্যানোরামা বিভাগে সেরা ছবির পুরস্কার। তাঁরা তুলে ধরেছেন একটি মুসলমান ছেলে এবং একটি হিন্দু মেয়ের প্রেমের গল্প। হাজার হাজার পরিযায়ী মানুষের মতো তাঁদের জীবন শুরু হয় ফুটপাথে। কিন্তু তাঁরা স্বপ্ন দেখে রাজরানি হওয়ার। প্রেমের পাশাপাশি গল্পে আছে সমাজের জ্বলন্ত প্রতিচ্ছবি। এই পরিচালক জুটির ‘কালকক্ষ’ ২০২৩-এ পেয়েছে সেরা বাংলা ছবির জাতীয় পুরস্কার। সেটা যে ফ্লুক ছিল না এবারের সাফল্য প্রমাণ করল। এটা পরিষ্কার, বাংলা ছবির ভবিষ্যৎ নির্ভরযোগ্য হাতে। আগামী দিনে তাঁদের কাজের প্রতি নজর থাকবে। এই বিভাগে বিশেষ জুরি পুরস্কার পেয়েছে অমর্ত্য সিনহার ‘অসম্পূর্ণ’। ছবিতে বলা হয়েছে মধ্যবিত্ত বাঙালি দম্পতির প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির গল্প। সেরা ভারতীয় তথ্যচিত্র হিসেবে গোল্ডেন রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে ‘চ্যালেঞ্জ’। সেরা ভারতীয় স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি ‘লাস্ট রিহার্সাল’। এশিয়ার জন্য দেওয়া হয়েছে নেটপ্যাক অ্যাওয়ার্ড। সেরা ছবি ‘ব্রোকেন ড্রিম’। ভারতীয় ভাষায় সেরা ছবি হিসেবে স্পেশাল জুরি অ্যাওয়ার্ড জিতেছে ‘জোসেপস সন’। সেরা পরিচালক হিসেবে হীরালাল সেন মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন শোনেট অ্যান্টনি ব্যারেটো। হিন্দি ছবি ‘অবনী কি কিসমত’-এর জন্য। ভারতীয় ভাষার সেরা ছবি হিসেবে হীরালাল সেন মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড পেল বোরো ভাষার ছবি ‘গোরাই ফাখরি’। ছবিগুলো ঘিরে ছিল উৎসাহ। এবার মেইন স্ট্রিমে দেখানো হয়েছে সাঁওতালি ভাষার ছবি। বিনোদন নয়, প্রায় প্রতিটি ছবি জুগিয়েছে ভাবনার রসদ। দেখার সুযোগ দিয়েছে নতুনদের কাজ।

আরও পড়ুন-প্রকাশিত কাব্য সংকলন

জমজমাট সিনে-আড্ডা
উৎসবের বড় আকর্ষণ সিনে-আড্ডা। একতারা মুক্তমঞ্চে বিভিন্ন বিষয়ে আড্ডায় মেতে ওঠেন বিশিষ্টরা। একটি দিনের বিষয় ছিল, ‘আজকের প্রজন্মের কাছে কোনটা আকর্ষণীয়? কাল্পনিক না বাস্তবধর্মী চলচ্চিত্র।’ প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলেন, সিনেমা মানেই কল্পনা। কল্পনার মিশেলে বাণিজ্যিক ছবি যতখানি প্রয়োজন, ঠিক ততটাই বাস্তবধর্মী ছবিরও প্রয়োজন। তিনি যে বাণিজ্যিক ছবির জন্য তারকা হয়েছেন, স্বীকার করেন। বলেন, আগে দশ-বারো বছর অন্তর বাংলা ছবিতে বদল আসত। এখন দ্রুত বদল আসছে। এর পিছনে রয়েছে ওটিটির ভূমিকা। পাশাপাশি মনে করান, বাস্তবধর্মী ছবিও কিন্তু বাণিজ্যিক সাফল্য পেয়েছে।
নতুন প্রজন্মের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেন আবির চট্টোপাধ্যায়। খরাজ মুখোপাধ্যায় মনে করেন, বাণিজ্যিক ছবি মূলত তারকা-নির্ভর। তারকা না থাকলে ছবির সাফল্য পাওয়া কঠিন।
আরেক দিনের আড্ডার বিষয় ছিল ‘পাশ্চাত্য ভাবনাই কি বাংলা সিনেমার অনুপ্রেরণা?’ কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, পাশ্চাত্য আমাদের অভিভাবকের মতো। এর প্রভাব কোনও ভাবেই অস্বীকার করা যায় না। বীরসা দাশগুপ্তও স্বীকার করেন বাংলা ছবিতে পাশ্চাত্য প্রভাবের কথা। একই সুর শোনা যায় মৈনাক ভৌমিকের কণ্ঠেও। প্রভাত রায়, হরনাথ চক্রবর্তী বরাবর নিজেদের মতো ছবি করেছেন। যেখানে প্রাচ্যের প্রভাব বেশি। তবে তাঁরাও মনে করেন পাশ্চাত্য প্রভাবের অনুপ্রেরণা রয়েছে বাংলা ছবিতে।
‘ওটিটি বনাম সিনেমা’ নিয়ে জমে ওঠে একদিনের আড্ডা। স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় মনে করেন, ওটিটি বহু মানুষকে কাজের সুযোগ করে দিয়েছে। শুধু রাজ্যে নয়, জাতীয় স্তরেও। সারা বছরের সাবস্ক্রিপশন নিয়ে নিজের সময়মতো ছবি দেখার সুযোগ থাকছে। গান নিয়ে আড্ডা বসেছিল দু’দিন। একদিন কমেডি ছবি নিয়ে। প্রতিদিনের জমজমাট আড্ডার ব্যবস্থাপক স্বরূপ বিশ্বাস। সিনেপ্রেমীদের উৎসাহ দেখে খুশি তিনি।

আরও পড়ুন-শতবর্ষে সমরেশ বসু

বলি-কানেকশন
দুটি ধারা রয়েছে চলচ্চিত্র জগতে। জনপ্রিয় ধারা এবং শৈল্পিক ধারা। এবারের উৎসবে দেখা গেল দুই ধারার সহাবস্থান। উদ্বোধন করেছেন সলমন খান। তিনি সুপারস্টার। জনপ্রিয় ধারার অভিনেতা। উৎসবে এসেছিলেন মনোজ বাজপেয়ীও। তিনি শৈল্পিক ধারার অভিনেতা। দর্শকদের মধ্যে দুজনেরই গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। প্রথমবার উৎসবে এসে আপ্লুত সলমন। বক্তৃতায় নিজের ভাললাগার কথা জানান। মাস্টার্স ক্লাসে যোগ দেন মনোজ। ভবিষ্যতে ভাল অভিনেতা, পরিচালকের উঠে আসা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন ‘শূল’ অভিনেতা। এর জন্য তিনি সোশ্যাল মিডিয়াকে দায়ী করেন। বলিউড অভিনেতা সৌরভ শুক্লাও অংশ নেন মাস্টার্স ক্লাসে। বলেন অভিনয় রীতির ভিন্নতা নিয়ে। তাঁর কথায়, অভিনয়ের খুব একটা রকমফের হয় না। অভিনেতাকে একের পর এক চরিত্র নির্মাণ করে যেতে হয়। ভাল অভিনেতা নিজের রাস্তা নিজেই তৈরি করে নেন। উৎসবে এসেছিলেন অনুরাগ কাশ্যপ। দেখানো হয়েছে তাঁর পরিচালিত ‘কেনেডি’। ছবিটি ঘিরে দেখা গিয়েছে ব্যাপক উন্মাদনা। ২০০৩ সালে এই ছবির কথা ভেবেছিলেন। কুড়ি বছর পরে বাস্তবায়িত হল। জানান, তারকা মেপে ছবি করেন না। তিনি ছবি নির্মাণ করেন নিজের শর্তে।

Latest article