তারে জমিন পর

শিশুদের মধ্যে সাধারণ বা বিশেষ এমন কোনও ভাগ হয় না। কেউ একটু এগিয়ে, কেউ বা একটুখানি পিছিয়ে। যারা পিছিয়ে, সামান্য যত্ন আর ভালবাসা পেলেই তারা হয়ে উঠতে পারে জিনিয়াস। শুধু দরকার ধৈর্যের। ১৪ নভেম্বর শিশুদিবস। দিনটাকে মনে রেখে এমন শিশুরা, যাদের একটু বিশেষ দেখভালের প্রয়োজন রয়েছে, তাদের নিয়ে লিখলেন শর্মিষ্ঠা ঘোষ চক্রবর্তী

Must read

‘তারে জমিন পর’ ছবিতে ঈশান ছিল ডিসলেক্সিয়ার শিকার। পড়তে বসলেই শব্দ, অক্ষর গুলিয়ে যেত তার, কখনও কল্পনায় ভর করে সেই সব অক্ষর নাচানাচিও করত। স্কুল শিক্ষক থেকে বাবা-মায়ের বকুনি সবই জুটত তার। ঈশান এই ছবিটিতে একজন বিশেষচাহিদা সম্পন্ন শিশু। কিন্তু শিক্ষক রামশঙ্কর নিকুম্ভর সংস্পর্শে এসে ধীরে ধীরে তাঁর ভালবাসা এবং স্নেহের পরশে সে পড়াশোনায় ভাল হয়ে ওঠে। অন্যান্য শিক্ষকদেরও স্নেহ পেতে শুরু করে। স্পেশ্যাল চাইল্ড বললেই যেন হঠাৎ একটা শ্রেণি শিশু আলাদা হয়ে যায়। ডিসলেক্সিয়া ছাড়া এমন কত নাম আমরা জানি— অটিজম, অ্যাসপার্জার সিনড্রোম, ডাউন সিনড্রোম, ব্লাইন্ডনেস, ডেফনেস, সেরিব্রল পলসি। শিশুদিবস তো এদেরও। সুস্থ সমাজ, শিক্ষা, পুষ্টি, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির প্রয়োজন সাধারণ শিশুদের চেয়ে কিছু কম নয় বরং কিছু বেশিই। তাই স্পেশ্যাল চাইল্ডদের দায়িত্ব শুধু তার পরিবারের নয়, গোটা সমাজের।

আরও পড়ুন-বিশ্ব কি শিশুর বাসযোগ্য?

তবে সেই গুরুভার বহন করা বড় সহজ নয়। তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে, সহানুভূতি এবং ভালবাসা দিয়ে সমাজের মূলস্রোতে ফিরিয়ে দেওয়া এক বড় চ্যালেঞ্জ। যে কাজটা খুব নিপুণভাবে করছেন তাদের শিক্ষক অর্থাৎ স্পেশ্যাল এডুকেটররা এবং এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। নিজের পুরোটা দিয়ে অনেকসময় ফলপ্রসূ হয় না তাঁদের স্বপ্ন। কীভাবে এই আশ্চর্য লড়াইটা চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।
শিশুদিবস প্রসঙ্গে জানালেন চিকিৎসাবিদ ডাঃ অদিতি বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর মতে— মানসিক বা শারীরিক প্রতিবন্ধী শিশু প্রত্যেকের শিক্ষার অধিকার আছে। সর্বশিক্ষা অভিযান কথাটা আমরা বলি ঠিকই কিন্তু আমাদের দেশে বিভিন্ন স্কুলে প্রতিবন্ধী শিশুদের এখনও তেমন ভাবে নেওয়া হয় না। এই সব শিশুদের নিতে হবে স্কুলগুলিকে।

আরও পড়ুন-প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ক বই প্রকাশ

বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুকে মাইল্ড, মডারেট, সিভিয়র তাদের এইভাবে আমরা ভাগ করি এবং অবশ্যই যারা সিভিয়র তাদের প্রতি বেশি মনযোগ দরকার। যারা মাইল্ড এবং মডারেট তারা কিন্তু প্রথাগত স্কুলে পড়াশুনোর উপযুক্ত। কিন্তু দেখা যায় ভর্তি নিল স্কুল, তারপর আর সেই শিশুটিকে তারা হ্যান্ডেল করতে পারছে না। একজন শিক্ষিকার আন্ডারে চল্লিশটা বাচ্চা, তার মধ্যে যদি দু’জন স্পেশ্যাল চাইল্ড থাকে তাহলে তাঁর পক্ষে সামাল দেওয়া খুব মুশকিল তো বটেই। সেই ক্ষেত্রে স্কুলকে স্পেশ্যাল এডুকেটর রাখতে হবে। প্রশিক্ষিত শিক্ষক নিতে হবে। সিবিএসই যে ম্যানডেট দিয়েছে এগারোজন শিশু পিছু একজন শিক্ষক— সেটাই হওয়া উচীত। সর্বশিক্ষা অভিযানেরও এটাই বিধি, তথাপি দেখা গেছে এই নিয়ম কোথাও মানা হচ্ছে না। বড় প্রাইভেট স্কুলে একজন স্পেশ্যাল এডুকেটর, তাঁর আন্ডারে একশোটা বাচ্চা। ফলে তাঁর পক্ষে এইসব শিশুদের প্রশিক্ষিত করা সম্ভব না। আবার স্টেট বোর্ড অফ এডুকেশনে একজন স্পেশ্যাল এডুকেটর, তাঁকে একটা পুরো জেলা দিয়ে দেওয়া হচ্ছে তিনি হয়তো মাসে একদিন একটা করে স্কুল ভিজিট করতে পারছেন। মেন স্ট্রিম শিক্ষকের পক্ষে সম্ভবই না স্পেশ্যাল চাইল্ডদের চাহিদা অনুযায়ী সবটা পূরণ করা। এদের জন্য দরকার স্পেশ্যাল এডুকেশন। বাবা-মাই প্রথম একটি শিশুর প্রথম শিক্ষক হন। কিন্তু শিশুর জন্মের পর পরই তাঁরা বুঝতে পারেন না তাঁদের বাচ্চা স্বাভাবিক নয়। তারপর হঠাৎ একদিন তাঁরা যখন বুঝতে পারেন যে তাঁদের বাচ্চা স্পেশ্যাল চাইল্ড অর্থাৎ শিশুটির বিকাশজনিত সমস্যা আছে তখন বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন। কী করব, কোথায় যাব। তখন তাঁরা স্পেশ্যাল এডুকেটরের শরণাপন্ন হন। শুরু হয় স্পেশ্যাল এডুকেশন। সেই মুহূর্ত থেকে সন্তানের সঙ্গে বাবা-মায়েরও নতুন জীবন শুরু হয়।

আরও পড়ুন-অনুসন্ধিৎসা ও কৌতূহলের অনবদ্য ফসল

স্পেশ্যাল এডুকেশন কী
সাধারণ শিশুদের আমরা যে কোনও নির্দেশ সরাসরি দিতে পারি— সকালে উঠবে, ব্রাশ করবে, ইত্যাদি কিন্তু স্পেশ্যাল চাইল্ডরা এই নির্দেশটা বুঝতে পারে না এবং করতে পারে না। তখন আমরা তাদের কাছে সেই জিনিসটাই সহজ করে তুলে ধরি। এটাই স্পেশ্যাল এডুকেশন। বিষয়টা বিভিন্ন ধরনের ছবির সাহায্যে তার নিচে লিখে লিখে বোঝাতে থাকি। যা আমরা যা শিখি তারই সরলীকরণ।
টিচিং স্কিলগুলোর মধ্যে প্রথম মেন্টালি চ্যালেঞ্জড যে সব শিশু তাদের আমরা বলি ভিসুয়াল লার্নার। একটা বাচ্চা হয়তো খুব চেঁচিয়ে যাচ্ছে, নরমাল হলে তাকে সরাসরি ধমক দিলে সে চুপ করে যাবে কিন্তু মেন্টালি চ্যালেঞ্জড যারা, তারা থামবে না, উল্টে বকাবকি করলে ফল আরও খারাপ হবে, আরও বেশি অ্যাগ্রেসিভ হয়ে যাবে কারণ সে বুঝতে পারল না তার চিৎকার করাটা বারণ করা হচ্ছে। চিৎকার করাটা ওদের কাছে স্বাভাবিক মনে হবে তাই এই ক্ষেত্রে ওই ব্যবহার ইগনোর করতে হবে। চিৎকার করার সময় সেখান থেকে সম্পূর্ণ সরে যেতে হবে। এবার যখন সে শান্ত রয়েছে বা খেলছে তখন তাকে খুব উৎসাহিত করা এই যে তার পজিটিভ বিহেভিয়ারকে রিইনফোর্স করলাম তখন ধীরে ধীরে সেটা বাড়বে এটা হল প্রশিক্ষণের আসল স্ট্রাটেজি। কারণ কোনটা গুড বিহেভিয়ার এবং ব্যাড বিহেভিয়ার সেটা এই ধরনের শিশুকে বোঝানোর কোনও উপায় নেই।

আরও পড়ুন-ডেঙ্গি পরিস্থিতি উদ্বেগজনক নয়

দ্বিতীয়ত, এদের অনেক শিশুর আই কনট্যাক্ট থাকে না। আই কনট্যাক্ট থাকে না বলে তারা ফলো করতে পারে না। শিশু যদি চোখের দিকে তাকিয়ে কথা না বলতে পারে তাহলে তো ইনস্ট্রাকশন ফলো করতে পারবে না। তাহলে আই কনট্যাক্ট ডেভেলপ করতে হবে। সেক্ষেত্রে এমন কিছু কাজ করতে হবে বা খেলতে হবে তার সঙ্গে করে যাতে তার মনোযোগটা আকর্ষিত হয়।
তৃতীয়ত, এই ধরনের শিশুর অ্যাটেনশন স্প্যান খুবই কম। সেটাকে ধরে নিয়ে শিশুকে নানা কাজে ইনভলভ করে দিতে হবে। দামি খেলনা সে ধরতে পারবে না, বুঝতে পারবে না কারণ সে বোধশক্তিরহিত, গ্রিপ নেই। তাকে বাড়ির জিনিসপত্র দিয়েই নানা ধরনের অ্যাক্টিভিটি করাতে হবে।
এই ধরনের শিশুদের নির্দেশ দেওয়া চলে না তাকে খুব ধীরে একবার বলে ছেড়ে দিতে হয়। অতিরিক্ত কথা না বলা। এর আরও একটা কারণ হল এদের অডিটরি প্রসেসে ডিজঅর্ডার থাকে। একটা কথা শুনে সেটা প্রসেস করতে সময় লাগে। তাই ভেঙে ভেঙে যেটুকু দরকার সেটুকুই বলতে হবে।

আরও পড়ুন-কেন্দ্রের এজেন্সি-রাজনীতির বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন শত্রুঘ্ন

নিউরো ফিজিওলজি অফ অটিজম নিয়ে কাজ করছেন অদিতি। বিদেশে বহুবছর একটি অটিস্টিক শিশুদের অর্গানাইজেশনে কাজ করেছেন। কলকাতায় গড়ে তুলেছেন সাম্য মডেল অফ ডান্স মুভমেন্ট থেরাপি ফর স্পেশ্যাল নিডস বা সাম্য ফাউন্ডেশন, যেখানে তার ডান্স মুভমেন্ট থেরাপি খুব সফল হয়েছে এইধরনের শিশুদের প্রশিক্ষণে। এটি হল একটি সাইকোথেরাপিউটিক পদ্ধতি। এই পদ্ধতি অ্যাটেনশন স্প্যান বৃদ্ধি করে, শিশুটি নিজেকে আমি বলে চিনতে পারে এবং চারপাশের পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন হয় এবং সবার সঙ্গে নিজেকে মেলাতে সক্ষম হয়। কারণ বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু বেশি লোকজন, ভিড় বাস, ট্রেন এই সব জায়গায় গেলে চিৎকার করে ওঠে, অনেক শিশু কামড়ে দিতে যায়, রাস্তায় গাড়ির সামনে ছুটে চলে যায়। এটা হয় যখন শিশুর স্নায়ুর নিয়ন্ত্রণে থাকে না তার মুভমেন্ট। সেই মুভমেন্ট কারেকশন হয় ডান্স মুভমেন্ট থেরাপির মাধ্যমে। কথাটা ডান্স মুভমেন্ট থেরাপি হলেও এখানে নৃত্যের ভাগ খুব কম আসল হল একটানা মুভমেন্ট। গ্রুপ থেরাপি করা হয়, ভিড়ে, অপরিচিত স্থানে কীভাবে নিজেকে সহজে নিয়ন্ত্রণে রাখবে সেটা শেখানো হয়। এইসব উন্নততর স্পেশ্যাল এডুকেনশনাল ট্রেনিং-এর ফলে এখন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুর অগ্রগতি লক্ষণীয় হয়েছে।

আরও পড়ুন-হিমাচলে ২৩% প্রার্থীর বিরুদ্ধে রয়েছে ফৌজদারি মামলা

এমনই একটি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন সফল শিশুদের স্কুল হল ‘নবপ্রয়াস’। এই স্কুলের প্রিন্সিপাল রমা ব্যানার্জি একজন স্পেশ্যাল এডুকেটরও। ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে নাড়াঘাটা করছেন এই সব শিশুদের নিয়ে। তিনি এবং তাঁর গোটা প্রশিক্ষণ টিম অনেক শিশুকেই সমাজের মূলস্রোতে ফিরিয়েছেন। তাঁর কথায়, নবপ্রয়াস আমার পরিবার, আমি সবসময় বলি আমার ১২০টা ছেলেমেয়ে। এদের জন্য এই পৃথিবীটা যদি বাসযোগ্য হয় তবেই আমাদের লক্ষ্য সফল। শুধু শিশুদিবসে নয়, আমরা যদি প্রত্যেকে একসঙ্গে এক পা করে এগোই এবং ৩৬৫ দিনে একটি করে দিন কাজ করি তাহলেই এই শিশুরা সুন্দর ভবিষ্যৎ পাবে। এদের দায়িত্ব পরিবারের সঙ্গে সমাজকেও নিতে হবে।

আরও পড়ুন-মিডিয়া ট্রায়াল ভয়ঙ্কর: প্রধান বিচারপতি

সর্বশিক্ষা অভিযানের কারণে এখন স্পেশ্যাল চাইল্ডদের সাধারণ স্কুলে ভর্তি করার একটা ট্রেন্ড চালু হয়েছে। এটা খুব আশাপ্রদ ঘটনা। সেখানে মাইল্ড এবং মডারেট অর্থাৎ যাদের সমস্যা অনেক কম তারাই বেশি যায় এবং সিভিয়র গ্রুপের বাচ্চা অর্থাৎ যারা খেতে, স্নান করতে, জামাকাপড় পরতে পারে না তারাই বেশি আমাদের স্পেশ্যাল স্কুলে আসে। সেক্ষেত্রে তাঁদের টয়লেট ট্রেনিং, নিজের নাম লেখা, অল্প আধটু অ, আ শিখিয়ে পাঠালে নর্মাল স্কুলে তারা তাড়াতাড়ি নিজেদের ম্যাচ করাতে পারছে। এই স্কুল মূলত তিনধরনের শিশু নিয়ে কাজ করে— মূক বধির, মেন্টালি চ্যালেঞ্জড, অটিস্টিক শিশু। এই মুহূর্তে অটিস্টিক শিশুর সম্ভাবনা রয়েছে অনেক বেশি মূল স্রোতে ফেরার। চারটে থেরাপির মাধ্যমে এখানে শিশুদের চিকিৎসা এবং প্রশিক্ষণ দুই চলে। এর মধ্যে রয়েছে অকুপেশন্যাল থেরাপি, স্পিচ থেরাপি, ফিজিওথেরাপি এবং কাউন্সিলিং। অকুপেশন্যাল থেরাপি দিয়ে শিশুর বিশেষ কিছু ব্যবহারিক সমস্যার সমাধান করা হয়। যেমন অটিস্টিক শিশুদের সেন্সরি প্রবলেম থাকে যেমন খাওয়ার সমস্যা বা স্পর্শের সমস্যা থাকে। এগুলোয় সুস্থতা আনা সম্ভব। ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে শরীরকে জড়তামুক্ত করা হয়। স্পিচথেরাপির মাধ্যমে স্পিচ ডেভেলপমেন্ট করা হয়। বিহেভিয়ার মডিফিকেশন, কাউন্সেলিং করানো হয়।

আরও পড়ুন-বৈদিক ভিলেজে মাদক খাইয়ে তরুণীকে গণধর্ষণ, ধৃত ৪

এরপর আসে স্পেশ্যাল এডুকেশন। এতে টয়লেট ট্রেনিং, জামাকাপড় পরা, নিজে হাতে খাওয়া, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা সেই সঙ্গে কমিউনিকেশন স্কিলের ডেভেলপমেন্ট করানো হয় যাতে সে নিজের নাম ঠিকানা বলতে পারে। এরপর ধাপে ধাপে তার বয়স এবং যোগ্যতার দিকটা দেখে পড়াশুনোর দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে স্কুলে দু’তিন ঘণ্টায় কিছু হবে না, বাবা-মাকেও সময় দিতে সবে এবং চেষ্টা করে যেতে হবে। বিশেষভাবে উল্লেখ্য যেটা শুধুমাত্র স্পেশ্যাল চাইল্ডদের প্রশিক্ষণই যথেষ্ট নয়, এর পাশাপাশি বাবা-মায়েদের কাউন্সেলিংও জরুরি। নবপ্রয়াসে বাবা-মায়ের কাউন্সেলিং এবং প্রশিক্ষণ হয়। কারণ বাবা-মা যদি প্রশিক্ষিত না হন তবে শিশুটিকে পরিচালনা করতে তাঁরা অক্ষম থেকে যাবেন। কারণ দিনের বেশিরভাগ সময় সন্তানের দায়িত্ব বাবা- মায়েরই থাকে।

Latest article