পুজো মানেই দেদার খানাপিনা। এড়িয়ে যাবার জো নেই।
পুজোর আবহে সারাটাক্ষণ খাই খাই করে মন। চা টা বিস্কুট টা, কোল্ড-ড্রিঙ্কসটা, চিপসটা, চপটা, চাউমিনটা, আইসক্রিমটা দেখলেই মনে হয় আহা! পুজো তো খেলেই বা ক্ষতি কী! অনেকেই আবার পুজোর আগে কড়া ডায়েটে থাকেন শুধু পুজোয় পেটপুরে খাবেন বলে। দিনে যদিও বা বাড়িতে হাঁড়ি চড়ল রাতে নৈব নৈব চ।
পুজোর অজুহাতে সবার সব ছাড়। সারারাত জেগে ঠাকুর দেখা আর টুকটাক খাওয়া, শেষরাতে বিরিয়ানি। গরমে ঘেমে বোতল বোতল কোল্ড-ড্রিঙ্ক, ওটাই যে তখন আরামের। ওভারইটিং-এর মাত্রা ছাড়িয়ে যায়।
আরও পড়ুন-কর্মীরা চাইছেন না, মিঠুনের বর্ধমান ও বোলপুর সভা শেষ পর্যন্ত বাতিল হল
সেই মুহূর্তে সমস্যা না হলেও এই লাগামহীন খাওয়া ডেকে আনতে পারে সমূহ বিপদ। ক্ষতি করতে পারে স্বাস্থ্যের। হঠাৎ করেই হতে পারে শরীর খারাপ, গ্যাস, অম্বল, বমি, ডায়েরিয়া । তখন সামাল দেওয়া চাপের হয়ে যায়।
অবশ্যই খান কিন্তু একটু নিয়মে থাকুন।
বেশি খেলে
কথায় বলে বেশি খেলে বাড়ে মেদ। একদিন হোক বা চারদিন, বেশি খেলে সেই মুহূর্তেই কিন্তু ওজন বাড়তে থাকে। শরীরে একটা ফোলা ভাব আসে। বিশেষত পেটে। একটা প্রদাহ হয় যার প্রভাবে শরীরটা বাইরে থেকে একটু ফুলে যায়।
একটানা তৈলাক্ত খাবার খেলে হতে পারে বদহজম। দেখা দেয় কোষ্ঠকাঠিন্য। ভারী খাবার স্টমাকে গিয়ে আটকে থাকে ফলে পেট পরিষ্কার হয় না।
তাই খেতে হবে বুঝে। যাঁরা সকালে ঠাকুর দেখতে বেরন লাঞ্চে বিরিয়ানি খেতেই পারেন তবে রাতটা একদম হালকা থাকুন। বাড়ির খাবারই খান। একান্তই বাইরের খাবার খেলে একটু গ্রিলড বা সেদ্ধ কিছু খাবার চেষ্টা করুন।
আরও পড়ুন-উৎসবে বাড়ি ফিরুন
রাতে যদি ভারী খাবার খেয়ে ফেলেন তবে পরেরদিন ব্রেকফাস্ট স্কিপ করুন বা হালকা কিছু যেমন জ্যুস, গোটা একটা ফল খেতে পারেন।
পুজোর সময় খুব রাত জাগা হয়। বেশি খাওয়ার সঙ্গে ঘুম না হওয়া একটা বড় কারণ শারীরিক অসুস্থতার। তাই প্রপার ঘুম খুব দরকার।
পুজোয় সারাদিন উপোস থেকে শেষে অনেকটা খেয়ে ফেলাও ক্ষতিকর। মুহূর্তে অ্যাসিডিটি, বদহজম হয়ে যেতে পারে। তাই উপোস ভেঙে একটু নুন চিনির জল বা গুড়ের পাতলা শরবত, খুব হালকা এক কাপ চিনি ছাড়া লিকার চা খেতে পারেন। লুচির বদলে খুব সামান্য তেল ছোঁয়ানো পরোটা খান। যদি লুচি খেতেই হয় তবে দুটোর বেশি নয়। খিচুড়ি হলেও সামান্য, সঙ্গে ভাজাভুজি এড়িয়ে যান।
প্রচুর জল খান সারাদিন। সকালে খালি পেটে এই ক’দিন হজমের একটা করে ওষুধ খেয়ে নিন। ডিটক্স ওয়াটার খেতে পারেন সকালে খালি পেটে।
আরও পড়ুন-মানিকের রক্ষাকবচ
ড. তনুকা মণ্ডল
নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল
পুজো হোক বা অন্যসময় ওভার ইটিং, এক্ষেত্রে কিন্তু সাময়িক বা তৎক্ষণাৎ কিছু সমস্যা হতে পারে এবং পরবর্তীকালে এর থেকে ক্রনিক সমস্যাও হতে পারে। বেশি তৈলাক্ত খাবার একেবারে অনেকটা খেলে যেটা হয় তা হল অ্যাসিডিটি বা ডিসপেপসিয়া বা হার্ট বার্ন। হার্ট বার্ন হলে অনেকে হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেন। এটা একটি জ্বলন্ত সংবেদন যা অ্যাসিড রিফ্লাক্সের কারণে ঘটে। অর্থাৎ বুকের কাছে জ্বলে যায়, পেটের ব্যথাও হয় কিছু ক্ষেত্রে।
অম্বল হলে শরীরের খাদ্যনালিতে জ্বালাপোড়া হয়। এই জ্বালাপোড়া সাধারণত পেটের ঠিক উপরে হয়। এই অ্যাসিড উপরের অংশে এমনকী মুখের পিছনেও পৌঁছতে পারে। এর ফলে ছাড়া গা গোলানো শুরু হয় বমি বমি ভাব, এবং গলার কাছে খাবার উঠে আসে। ডায়েরিয়াও হতে পারে।
আরও পড়ুন-মহানগরীতে পোষ্যবান্ধব পুজো
তৈলাক্ত খাবার বেশি খাওয়া হয়ে গেলে সেই মুহূর্তেই জল খাবেন না। উচিত নয়। ওভার ইটিংয়ের প্রভাব এক থেকে দু’ঘণ্টার মধ্যে হয়।
পুজোর সময় পথেঘাটে শরীর খারাপ হলে লিক্যুইড কোনও অ্যান্টাসিড খেতে হবে। তাড়াতাড়ি কাজ হবে। সেদিন চেষ্টা করুন আর কিছু না খেতে বা অনেকটা সময় পেরনোর পর হালকা কিছু খেতে।
যদি দেখা যায় বমি বারবার হচ্ছে তবে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলুন।
এই ধরনের শরীর খারাপে পরবর্তীকালে কোলেস্টেরল হাই হতে পারে, সুগার বেড়ে যেতে পারে। ওজন বৃদ্ধি এবং শেষমেশ হার্ট এবং লিভারের রোগ ধরা পড়তে পারে। তাই পুজোর সময় খেতে হবে নিজের শরীর বুঝে।
আরও পড়ুন-পাত্রা পর্যটনে নতুন ঠিকানা
জল খান বেশি করে, ঠাকুর দেখার সময় রাস্তায় খাবার না খেয়ে সঙ্গে খাবার ক্যারি করলে খুব ভাল। না হলে হালকা খাবার দেখে খান। হাঁটাচলা করার সময় খুব ঘাম যখন হচ্ছে তখন বেশি খেয়ে ফেলবেন না। এতে অ্যাসিডিটি বা হার্ট বার্নের পরিমাণ অনেক বেশি বেড়ে যায়।