দুর্যোগ কেটে স্বাভাবিক ছন্দে উপকূল ,আলুর খেতে জমল জল ৭৫ শতাংশ, ধান চাষিদের গোলায়

Must read

প্রতিবেদন : নিম্নচাপের জেরে প্রবল বর্ষণ ও কোটালের জলোচ্ছ্বাসে আলু চাষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তবে মাঠ থেকে ৭৫ শতাংশ ধান তুলে নেওয়ায় ধানচাষিরা বড় আকারের ক্ষতির মুখে পড়েনি। সোমবার কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, হুগলি-সহ বিভিন্ন জেলায় আলুর খেতে প্রচুর জল দাঁড়িয়ে গিয়েছে। চাষি এবং জেলার কৃষি দফতরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, অবিলম্বে নালা কেটে জমা জল বের করার জন্য। তা না হলে আলু বাঁচানো যাবে না। কৃষিমন্ত্রী জানান, মূলত দুই মেদিনীপুর, হুগলি ও বর্ধমানে চাষে বড় আকারে ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ কত তা নিয়ে হিসাব চলছে। এই মুহূর্তে হিমঘর ও চাষিদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ আলু মজুত আছে। তাই আলু নিয়ে অযথা আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। আগামীতে যদি আলুর ঘাটতি দেখা দেয় তবে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আলু চাষিদের বিমা করা হয় না। রাজ্য সরকার একটি অংশ দিয়ে থাকে। আলু চাষিদের তাই বলা হয়েছে যাঁরা বিমা অন্তর্ভুক্ত তাঁদের অবিলম্বে বিমার টাকা দাবি করা জন্য। শোভনদেববাবু বলেন, যেভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়ছে তাতে আলু চাষিদের সম্পূর্ণভাবে বিমার করার কথা ভাববে রাজ্য সরকার। কৃষিমন্ত্রী বলেন, আলু চাষিদের আমরা পরামর্শ দিয়েছিলাম, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আগে কেউ আলুর চারা লাগাবেন না। যাঁরা আগে লাগিয়ে ফেলেছেন তাঁদের সঙ্কট হয়েছে। তবে এখন যাঁরা লাগাবেন তাঁদের বলা হয়েছে জমি থেকে জল বের করে তারপর আলুর চারা লাগান। ধানচাষের ক্ষেত্রে বিপর্যয়ের আগেই ৭৫ শতাংশ চাষি তাঁদের ধান জমি থেকে কেটে ফেলেছেন। স্বভাবতই ধানের ক্ষেত্রে বড় ধরনের কোনও সঙ্কট নেই। তবুও কত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা আমরা ভেবে দেখছি। জেলা থেকে পূর্ণাঙ্গ ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। তারপরই পদক্ষেপ করা হবে।

নিম্নচাপের জেরে রবিবার রাত থেকে লাগাতার ভারী বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়াতে বিপর্যস্ত দক্ষিণ ২৪ পরগনা। বেলা বাড়ার পর বৃষ্টির পরিমাণ বেশ কিছুটা কমে যায়। তবে আকাশ কালো মেঘে ঢেকে ছিল। সুন্দরবনের আবহাওয়ার ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে। বকখালি, সাগরে রোদের দেখা মেলে। তুলনায় ডায়মন্ড হারবার, বারুইপুর, মহেশতলা, সোনারপুরে ঝিরঝিরে বৃষ্টি চলে দিনভর। তবে টানা বৃষ্টিতে জেলার নিচু এলাকাগুলি জলমগ্ন। জল জমেছে চাষের জমিতে। ধান, পান ও সবজির ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে অমাবস্যার কোটালের জেরে সাগর, নামখানা, গোসাবা এলাকার বেশকিছু মাটির বাঁধ ভেঙে বা উপচে জল ঢুকতে শুরু করেছে। রাতেও বেশ কিছু বাঁধ উপচে নদীর জল চলে আসে। সেচ দপ্তরকে দ্রুত বাঁধ মেরামতির নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। সোমবারও মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় ভাঙা বাঁধ মেরামতিও শুরু হয়েছে। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে বেলা থেকে আবার ফেরি সার্ভিস চালু হয়। সকাল থেকে রাস্তাঘাট শুনশান। যানবাহনও কম চলেছে। প্রতিটি ব্লকে সোমবার থেকে দুর্গত মানুষদের ত্রাণ বিলির কাজ শুরু করেছে প্রশাসন।

আরও পড়ুন : গোয়াকেও সমীহ করছে ইস্টবেঙ্গল

কোটালে ভাসল আলুর খেত।  গভীর নিম্নচাপের ফলে আলু চাষের ব্যাপক ক্ষতি হুগলি জেলা জুড়ে। জাওয়াদ ঘূর্ণি ঝড়ের প্রভাবে রবিবার থেকেই ব্যাপক বৃষ্টি চলছে হুগলি জেলা জুড়ে। আর ব্যাপক পরিমাণ বৃষ্টির ফলে জলে ডুবেছে আলু চাষের জমি। যার ফলে ব্যাপক ক্ষতির মুখে আলুচাষিরা। হুগলির সিঙ্গুর, হরিপাল, ধনেখালি, খানাকুল-সহ বিভিন্ন এলাকায় আলু চাষের জমি ইতিমধ্যেই জলের তলায় চলে গিয়েছে। এই পরিমাণ ক্ষতির ফলে আগামী দিনে আলুর দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার আশঙ্কা করছে ব্যবসায়ী মহল। হুগলি জেলাপরিষদের সভাধিপতি মেহবুব রহমান জানান, সমগ্র হুগলি জেলা জুড়েই আলু চাষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কৃষি দফতরের আধিকারিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তাঁরা সরেজমিনে চাষের জমি পরিদর্শন করে ক্ষতির পরিমাণ জানাবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে রাজ্য সরকার সবসময় চাষিদের পাশে আছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ খতিয়ে দেখে আগামী দিনে পদক্ষেপ করা হবে।

জল আটকাল দিঘার ব্ল্যাকস্টোন, পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূলের চাঁদপুর ও জামড়া শ্যামপুর গ্রামে সমুদ্রবাঁধ দুর্বল। মৎস্যমন্ত্রী অখিল গিরির এলাকা। ইয়াসের সময় এখানকার সমুদ্রবাঁধ টপকে জল ঢুকেছিল গ্রামে। তারপরই অখিল গিরি সেচ দফতর ও সংশ্লিষ্ট ব্লক প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় এই দুই জায়গায় ব্ল্যাকস্টোন ফেলেছিলেন। আজ তার সুফল পাওয়া গেল। জাওয়াদ ও নিম্নচাপের কোটালের জোয়ারের সময় গত দু’দিন এই দুই জায়গায় সমুদ্রের ঢেউ আছড়ে পড়ে। বিশেষত চাঁদপুরে উত্তাল সমুদ্রের ঢেউয়ে পরিস্থিতি অনেকটা কঠিন হয়ে ওঠে। রামনগর ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শম্পা মহাপাত্র রবিবার এবং সোমবার দু’দিন জোয়ারের সময় চাঁদপুরে উপস্থিত থেকে গ্রামবাসীদের আশ্বস্ত করেন।

Latest article