গণতন্ত্র এখন একনায়কতন্ত্রে পরিণত হয়েছে। দেশে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে ধ্বংস করার যাবতীয় উপাদান তৈরি করা হয়েছে এবং একের পর এক ধ্বংস করা হচ্ছে। এখন সারা দেশে কেন্দ্রী – রাজ্য সম্পর্কে বলে কিছু নেই শুধুই কেন্দ্র এবং কেন্দ্র। বাকি রাজ্যগুলোর উপর কেন্দ্রীয় সরকার তার যাবতীয় সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিচ্ছে। শুরু হয়েছে দখলদারি মানসিকতা। বক্তা বিশিষ্ট আইনজীবী ও অধুনা সমাজবাদী পার্টির নেতা কপিল সিব্বল। একই সঙ্গে তার বিস্ফোরক মন্তব্য বিজেপি এখন আর কংগ্রেস মুক্ত ভারত চাইছে না। চাইছে বিরোধী মুক্ত ভারত। সাম্প্রতিক অতীতে মহারাষ্ট্র ,উত্তরাখন্ড কর্ণাটক , মধ্যপ্রদেশ তার জলজ্যান্ত উদাহরণ । শনিবার কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রি ও রাজ্যসরকারের সঙ্গে একুইল ও এনইউজিএস আয়োজিত দ্য ডিসকোর্স ২০২২ এই আলোচনা সভায় এসে সরকারি কার্যত ধুইয়ে দিলেন তিনি।
আরও পড়ুন-জলোচ্ছ্বাসে নদী ও সমুদ্রবাঁধ, ভেঙে বিপদে সাগর, সুন্দরবন
রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটক এই আলোচনা সভায় বিচার ব্যবস্থার বিভিন্ন দিক তাদের নিয়োগ এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ নিয়ে একাধিক প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন। আসলে আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল আধুনিক যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা। এই প্রেক্ষিতেই বলতে গিয়ে মলয় ঘটক বলেন, দেখা যাচ্ছে কলকাতা হাইকোর্ট অনেক বেশি রাজনৈতিকভাবে বিভিন্ন মামলার শুনানি করছে এবং শুনছে। কিন্তু পাবলিক ইন্টারেস্টের ক্ষেত্রে এ ধরনের অনেক মামলা আছে যেগুলো ক্ষেত্রে তাদের সেভাবে কোন আগ্রহ নেই। আসলে সবটাই এখন পলিটিক্যালি মোটিভেটেড। সময় এসেছে বিচারপতিদের নিয়োগের ক্ষেত্রেও রাজনৈতিক একটি আর নাক গলানো বন্ধ করার। অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে বিচারপতিরা রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছেন। একই সঙ্গে মন্ত্রী ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে সামাজিক দায়বদ্ধতার সংজ্ঞা ও তার ব্যাখ্যা তুলে ধরেন।
আরও পড়ুন-সুতপা-খুনের ৭৩ দিনের মাথায় জমা চার্জশিট
কিন্তু রাজ্যের কর কাঠামো ও রাজ্যের জিএসটি সংক্রান্ত বিষয়ে চর্চায় আনেন মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। রাজ্যের পর ব্যবস্থার মজবুতীকরণ এবং কেন্দ্রীয় ও রাজ্যের করের ক্ষেত্রে রাজ্যের পাওনা গন্ডা ক্ষেত্রে তার বক্তব্য পেশ করেছেন।
কিন্তু সম্পর্কের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কাঠামোকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে রাজ্যের এডভোকেট জেনারেল সৌমেন্দ্রনাথ মুখার্জি বলেন, সংবিধান দিনের শেষে আসলে পলিটিকাল ডকুমেন্ট। সংবিধানের ভিতরেই ভারতবর্ষের যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোকে ঠিক করা হয়েছিল। জি আর আম্বেদকর সংবিধান তৈরীর ক্ষেত্রে ভারতবর্ষের প্রতিটি কোণার প্রতিটি মানুষের প্রতি সমান দৃষ্টিভঙ্গির ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। প্রফেসর নির্মল কান্তি চক্রবর্তী বলেন, কিন্তু রাজ্য লড়াই কখনো আধুনিক যুক্তরাষ্ট্রে কাঠামোর আদর্শ উদাহরণ হতে পারে না।
আরও পড়ুন-বিশ্বভারতীকে ক্রমশ পিছিয়ে দিচ্ছেন উপাচার্য
এদিনের এই আলোচনা থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট সকলের বক্তব্যেই, এই মুহূর্তে দেশে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যে যা ঘটছে আসলে তা হওয়া উচিত নয়। রাজ্যগুলোকে আর অনেক বেশি অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া উচিত। কিন্তু বর্তমান বিজেপি সরকার সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার নীতিতেই বিশ্বাসী। গোটা ভারতবর্ষ জুড়ে এখন শুধু বিজেপির দখলের রাজনীতি। যুক্তরাষ্ট্রের কাঠামো কার্যত ভেঙে চুরমার করার দিকেই তাদের টার্গেট।
আরও পড়ুন-প্রাথমিক স্কুল সকালে করার দাবি করলেন শিক্ষকরা, তীব্র দাবদাহে কাহিল উত্তর
সিআইএ সিআইআই ভাইস চেয়ারপারসন সুচরিতা বসু সকলকে ধন্যবাদ জানাতে গিয়ে বলেন, কিন্তু রাজ্যের সঙ্গে নিরন্তর লড়াই তা দেশের পক্ষে কখনোই ভালো উদাহরণ হতে পারে না। দেশের প্রত্যেকটা রাজ্য যদি অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে না পারে তাদের ক্ষেত্রে শুধু চাপিয়েই দেওয়া হয় তাহলে রাজ্যগুলো এগোতে পারবে না আখেরে ক্ষতি হবে দেশের। বিশিষ্ট আইনজীবী সঞ্জয় বসু বলেন, যুক্তরাষ্ট্রী য় বিষয়টি আসলে ভারতীয় গণতন্ত্রের সব থেকে বড় জিনিস। তাকে আরো বেশি করে রক্ষা করা দরকার তা সেই বিচারব্যবস্থা ক্ষেত্রে হোক প্রশাসনিক ক্ষেত্রে হোক বা অন্যান্য ক্ষেত্রেই হোক। এতে একদিকে যেমন নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় ওর একই সঙ্গে প্রত্যেকটি মানুষের বিভিন্ন চাওয়া পাওয়া আরও বেশি শক্তিশালী হয়। গোটা দেশের ক্ষেত্রেই যা প্রযোজ্য।
আরও পড়ুন-দায়িত্ব নিয়ে অনিত পাহাড়ে নবযুগ শুরু
এদিনের আলোচনা সভায় শহরের বিশিষ্ট আইনজীবীরা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়, ডেরেক ও ব্রায়েন, রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, শশী পাঁজা, ডেপুটি চিফ হুইপ তাপস রায়, কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল-সহ অন্যান্যরা।