প্রতিবেদন : গত ১ সেপ্টেম্বর ইউনেস্কোকে ধন্যবাদজ্ঞাপক মিছিল দিয়ে উৎসবের শুরুটা করে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ৮ অক্টোবর শনিবার কার্নিভালের মধ্যে দিয়ে অবশেষে শেষ হল এবারের শারদোৎসব। প্রায় সাত ঘণ্টার অনুষ্ঠানে ছিল বাংলার ঐতিহ্য থেকে শিল্প, শিল্প থেকে সংস্কৃতি, সংস্কৃতি থেকে বৈচিত্র্যের এক অনন্য মেলবন্ধন। যা দেখে বঙ্গবাসী তো বটেই বিস্মিত খোদ বিদেশিরাও। সবমিলিয়ে শনিবাসরীয় সন্ধেয় উৎসবের বিশ্বায়ন দেখল কলকাতার ঐতিহাসিক রেড রোড।
আরও পড়ুন-ভূতের গল্প নয়
দু’বছর করোনা-কাঁটায় ছিল না কার্নিভাল। এদিন সন্ধ্যায় রেড রোডে আছড়ে পড়েছিল জনজোয়ার। সঙ্গে ছিলেন রাজনীতি, বিনোদন, শিল্প-সহ প্রায় সব জগতের তারকারা। মধ্যমণি অবশ্যই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সরকারি তথ্য বলছে প্রায় কুড়ি হাজার মানুষ এদিন সাক্ষী হন কার্নিভালের। এত বড় জমায়েত, কিন্তু অনুষ্ঠানের তাল কাটেনি কোত্থাও। গোটাটাই ছিল নিয়ন্ত্রিত। নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা— সবমিলিয়ে উৎসবের শেষ পাতে দুঃখের মধ্যেও কার্নিভালে মেতে উঠল তিলোত্তমা।
আরও পড়ুন-গর্জন তেল
দুপুর থেকেই জমায়েত : মাত্র কয়েক বছরেই রাজ্যের উৎসব-ক্যালেন্ডারে জায়গা করে নিয়েছে পুজো কার্নিভাল। শনিবার বেলা বাড়তেই রেড রোডমুখী শহর। একদিকে পুজো কমিটির শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। অন্যদিকে আমজনতার বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস। দুয়ে মিলে অনুষ্ঠান শুরুর অনেক আগে থেকেই মধ্য কলকাতা কার্যত চলে যায় উৎসবপ্রেমী জনতার কবজায়। বারোটার পর থেকে রেড রোড লাগোয়া একাধিক রাস্তায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ শুরু করে পুলিশ। দুটো থেকেই শুরু হয়ে যায় জমায়েত।
বিদেশিদের উপস্থিতি : কার্নিভালে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল অনেক বিদেশি অতিথিকে। ইউনেস্কোর প্রতিনিধিরা তো ছিলেনই সঙ্গে ছিলেন বিভিন্ন দেশের কনসুলেটের কর্তারাও। সেই সঙ্গে হাজির হয়েছিলেন একাধিক বিদেশি অতিথি। বাংলার লোকশিল্প থেকে আদিবাসী সংস্কৃতি— সব কিছুই তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করলেন তাঁরা।
আরও পড়ুন-বাসে আগুন, মৃত ১২
মঞ্চে তখন চাঁদের হাট : সূচি মেনে ঠিক সাড়ে চারটেয় শুরু হয় অনুষ্ঠান। তার কিছুটা আগেই অনুষ্ঠানস্থলে চলে আসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার আগেই চলে এসেছিলেন ব্রাত্য বসু, অরূপ বিশ্বাস, সুজিত বসু, ডাঃ শশী পাঁজা, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়-সহ রাজ্য মন্ত্রিসভার প্রায় সব সদস্যই। মঞ্চে তখন চাঁদের হাট। মুখ্যমন্ত্রীর পাশে মেয়র ফিরহাদ হাকিম, স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়, শুভাপ্রসন্ন, সাংসদ সৌগত রায়, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, জুন মালিয়ারা। মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী-সহ প্রশাসনের শীর্ষকর্তারাও ছিলেন মঞ্চে। সঙ্গে টলিউডের একঝাঁক অভিনেতা ও অভিনেত্রী। সপরিবারে মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কেও দেখা গেল।
বিবিধের মিলন : কলকাতা ও শহরতলি মিলিয়ে মোট ৯৪টি পুজো কমিটি এদিনের কার্নিভালে অংশ নিয়েছিল। প্রত্যেকেই নিয়ে এসেছিলেন তাঁদের নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা। ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়ের পরিচালনায় শুরুতে দীক্ষা মঞ্জরীর ছোট্ট অনুষ্ঠান কার্নিভালের সুরটা বেঁধে দিয়েছিল। তারপর টুকরো টুকরো করে উঠে এল বাংলার শিল্প-সংস্কৃতির নানা ঝলক। এক সময় নৃত্যশিল্পীদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীকে আদিবাসী নাচেও অংশ নিতে দেখা যায়। সঙ্গে ঢাক ও কাঁসরও বাজান তিনি। অনুষ্ঠান চলাকালীন কয়েকজন শিল্পী মুখ্যমন্ত্রীর হাতে একটি দোতারা তুলে দেন। সেটি হাতে নিয়ে বাজান মুখ্যমন্ত্রী।
আরও পড়ুন-দীপাবলির আগেই দাম বাড়ল সিএনজি ও পিএনজির
মুখ্যমন্ত্রীর গান : প্রায় প্রতিটি পুজো কমিটিই নিজস্ব থিম সং নিয়ে হাজির হয়েছিলেন কার্নিভালে। তার মধ্যে অনেকগুলিই ছিল মুখ্যমন্ত্রীর লেখা ও সুর করা গান। মুখ্যমন্ত্রীর সেসব গান ও গানের সঙ্গে নাচ অনুষ্ঠানে উপস্থিত দেশি-বিদেশি অতিথিদের নজর কাড়ে।
পুলিশি নিরাপত্তা : গোটা অনুষ্ঠান ঘিরে ছিল কড়া পুলিশি নিরাপত্তা। অনুষ্ঠানের পাস ছাড়া প্রবেশের অনুমতি ছিল না কারও। কিন্তু নির্বিঘ্নেই শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে দর্শকেরা প্রবেশ করেন অনুষ্ঠানস্থলে। ছুটি না নিয়ে গোটা পুজোয় মানুষের স্বার্থে ২৪ ঘণ্টা পথে ছিলেন পুলিশকর্মীরা। এদিনের অনুষ্ঠানে পুলিশকর্মীদের দুঃসাহসিক খেলা নজর কাড়ে দর্শকদের।