নয়াদিল্লি : বিগত কয়েক বছর ধরেই একাধিক সমীক্ষা সূত্রে উঠে এসেছে, ভারতে জঙ্গলের পরিমাণ ব্যাপকভাবে কমছে। গ্লোবাল ফরেস্ট ওয়াচ নামে এক সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১০ থেকে ২০২১ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ভারতের জঙ্গল কমেছে ১ হাজার ২৭০ বর্গকিলোমিটার। এদিকে, কেন্দ্রীয় সরকারের হিসাব অনুযায়ী জঙ্গলের তথ্যেও বিস্তর গরমিল।
আরও পড়ুন-সাতদফা দাবি নিয়ে সংসদে অনড় তৃণমূল
সরকারি তথ্যে জঙ্গলের সংজ্ঞাও পৃথক। তাই লুটিয়েন্স দিল্লিতে থাকা মন্ত্রী, সরকারি আমলাদের দফতর, সংসদমার্গের রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ভবনের মতো পরিকাঠামোগুলিকে সরকারি হিসাবে জঙ্গল বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিস্ময়করভাবে সরকারের রেকর্ডে থাকা মানচিত্র অনুযায়ী, দিল্লি আইআইটি, এইমস এবং সংলগ্ন সমস্ত বাসভবন জঙ্গল বলে চিহ্নিত। সরকারি রেকর্ড অনুযায়ী, দেশের মোট ভূখণ্ডের এক পঞ্চমাংশ জঙ্গল হিসাবে উল্লেখ করা রয়েছে।
আরও পড়ুন-নিলামে লিথিয়াম
দেশের জঙ্গল সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রকাশ হয়নি ইউপিএ আমলেও। দু’বছর অন্তর স্টেট অফ ফরেস্ট রিপোর্ট প্রকাশ করে ফরেস্ট সার্ভে অফ ইন্ডিয়া বা এফএসআই। সেই রিপোর্টে গড় জঙ্গলের পরিমাণ উল্লেখ থাকে। ভারতের জঙ্গলের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, রাস্তার ধারে অবস্থিত গাছ, শহরাঞ্চলের আবাসনে গাছপালা, ভিআইপি আবাসন, শিক্ষা ও মেডিক্যাল প্রতিষ্ঠানে থাকা গাছপালাকেও। যদিও রাষ্ট্রপুঞ্জের খাদ্য ও কৃষি সংক্রান্ত বিভাগের তরফে বলা হয়েছে, অন্তত ১ হেক্টর এলাকা এবং ১০ শতাংশ জায়গা যদি গাছের ছায়াযুক্ত হয় তবেই সেটিকে জঙ্গল বলা হবে। ফলে রাষ্ট্রপুঞ্জের জঙ্গলের সংজ্ঞার সঙ্গে ভারতের জঙ্গল চিহ্নিত করার মধ্যে পার্থক্য থাকছে। কেন্দ্রীয় সরকারের বক্তব্য, উপগ্রহ চিত্রের মাধ্যমে জঙ্গলের মালিকানা এবং ব্যবহারের উদ্দেশ্য জানা সম্ভব নয়।
আরও পড়ুন-‘ভুল করে থাকলে আইন অনুযায়ী আবার সুযোগ দিন’, চাকরিহারাদের হয়ে সরব মুখ্যমন্ত্রী
ভারতের জঙ্গলের সংজ্ঞার এই বিভ্রান্তির কারণে লুটিয়েন্স দিল্লির সমস্ত ভিআইপি আবাসন, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ভবনও জঙ্গলের আওতায় চলে এসেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের এই নীতি হাস্যকর, দাবি ওয়াকিবহাল মহলের। কারণ কেন্দ্রীয় সরকারের মানচিত্র অনুযায়ী, রাজধানী দিল্লির ইট, কাঠ, পাথরের মধ্যে অবস্থান করেও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার সদর দপ্তর একটি ‘ঘন জঙ্গল’। প্রশ্ন উঠছে কেন্দ্রীয় সরকারের, জঙ্গলের ডেটা নিয়েও। সব মিলিয়ে একদিকে বাস্তবিক ক্ষেত্রে নগরায়নের ধাক্কায় জঙ্গলের পরিমাণ কমছে এবং অন্যদিকে যথাযথভাবে তা চিহ্নিত করতেও সরকারি স্তরে গাফিলতি ও উদ্যোগের অভাব স্পষ্ট।