অনবদ্য চারটি সাহিত্য পত্রিকা

দুটি ছোটদের দুটি বড়দের পত্রিকার সাম্প্রতিক সংখ্যার উপর আলোকপাত করলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

টুকলু
সম্পাদক : তরুণকুমার সরখেল
ছোটদের অন্যতম পত্রিকা। প্রকাশিত হচ্ছে ১৯৭২ সাল থেকে। সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষে বেরিয়েছে বিশেষ সংখ্যা। বিষয়বৈচিত্রে ভরপুর। উপন্যাস লিখেছেন সঞ্জয় কর্মকার। শিরোনাম ‘রাজা বিচিত্রসেন ও সন্তোষ ঢাকি’। ছোটদের মনের মতো। তবে লেখাটা বড্ড ছোট।
আছে কয়েকটি প্রবন্ধ। স্বাধীনতা আন্দোলনে অগ্রগণ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন নিবারণচন্দ্র দাশগুপ্ত। অবিস্মরণীয় এই ব্যক্তিত্বকে নিয়ে ‘মানভূমের ঋষি’ শীর্ষক রচনা উপহার দিয়েছেন অমিয়কুমার সেনগুপ্ত। আরও একটি আকর্ষণীয় গদ্য সমুদ্র বসুর ‘দুর্গা পরিবারের বাহনদের উৎস’। পড়তে ভাল লাগে। সংক্ষিপ্ত আকারে ‘ছোটোদের মহাভারত’ লিখেছেন সুনির্মল চক্রবর্তী। সহজ-সরল ভাষায়। পড়লে মহাভারতের কাহিনি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা তৈরি হতে পারে।

আরও পড়ুন-আধুনিক পরিকাঠামোর মোড়কে সেজে উঠছে পেটুয়াঘাট, গভীরতম মৎস্যবন্দরে গতি আনছে রাজ্য

কাঞ্চন ডাকাতের গল্প শুনিয়েছেন ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়। লেখার শিরোনাম ‘চক্রপুরের কালী’। বাণীব্রত চক্রবর্তীর ‘রাত্রির সহযাত্রী’ গল্পে রচিত হয়েছে আধিভৌতিক পরিবেশ। ভিনগ্রহের এক জীবের সঙ্গে পরিচয় করিয়েছেন অনন্যা দাশ। গল্পের নাম ‘মিষ্টিচোর’ এ-ছাড়াও উল্লেখযোগ্য গল্প লিখেছেন দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য, সাগরিকা রায়, সুচন্দ্রনাথ দাস, মৃত্যুঞ্জয় দেবনাথ, সংযুক্তা সেনগুপ্ত, দেবযানী বসু কুমার প্রমুখ।
আছে একগুচ্ছ ছড়া-কবিতা। মুগ্ধ করেছেন পবিত্র সরকার, শ্যামলকান্তি দাশ, নির্মলেন্দু গুণ, সুকুমার বড়ুয়া, ভবানীপ্রসাদ মজুমদার, পার্থজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, কার্তিক ঘোষ, অশ্রুরঞ্জন চক্রবর্তী, দীপ মুখোপাধ্যায়, চন্দন নাথ প্রমুখ। গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে কয়েকটি ছোটদের বই। আছে ছোটদের আঁকা। সব মিলিয়ে এক আনন্দ আয়োজন। দাম ১৫০ টাকা।

আরও পড়ুন-আজ ফিরহাদের সভা ঘিরে প্রস্তুত জঙ্গিপুর

ছড়াপত্র সুসাথী
সম্পাদক : প্রদীপ দেব বর্মন
৩৮ বছরের পত্রিকা। ৯৮তম সংখ্যাটি প্রকাশিত হয়েছে শারদীয়া সংখ্যা হিসেবে। পাতায় পাতায় উঠেছে ছন্দছড়ার ঢেউ। নানা স্বাদের ছড়ার পাশাপাশি আছে কয়েকটি গদ্য। শুরুতেই সেদিকে আলোকপাত করা যাক। স্মরণ করা হয়েছে সুকুমার রায়কে। বিনোদ মণ্ডল লিখেছেন নিবন্ধ ‘ক্ষণজন্মা সুকুমার রায়’। উত্তরাধিকার সূত্রে বিজ্ঞান ও সাহিত্য চেতনার ধারক ছিলেন সুকুমার। রবীন্দ্রনাথ তাঁর সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘তাঁর স্বভাবের মধ্যে বৈজ্ঞানিক সাংস্কৃতিক গাম্ভীর্য ছিল’। এইরকম বিবিধ প্রসঙ্গ ধরা পড়েছে লেখাটিতে। ‘আবোল তাবোল’-এর শতবর্ষে স্রষ্টাকে বিশেষভাবে জানতে সাহায্য করে।
‘বই তৈরির নেপথ্যে’ লেখার মধ্যে দিয়ে সত্যজিৎ রায়কে স্মরণ করেছেন শৈলেন্দ্র হালদার। লেখাটি ব্যক্তিগত গদ্য। তরুণকুমার সরখেল লিখেছেন ‘শিশু-সাহিত্যে পুরুলিয়া’। কয়েকজন বিশিষ্ট লেখকের পাশাপাশি আলোচনা করা হয়েছে জেলার কিছু পত্রিকা নিয়ে। প্রয়োজনীয় লেখাটি এককথায় সময়ের দলিল।

আরও পড়ুন-দুয়ারে সরকার শিবিরে হামলা

বিশেষভাবে আলোকপাত করা হয়েছে রেবন্ত গোস্বামী, দীপ মুখোপাধ্যায়, অরুণিমা রায়চৌধুরি, সিদ্ধার্থ সিংহ, গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর। তাঁদের লেখার পাশাপাশি আছে তাঁদের নিয়ে লেখা এবং সাক্ষাৎকার।
ছড়ার আসরে ঘটেছে নবীন-প্রবীণের মেলবন্ধন। অনবদ্য ছড়া উপহার দিয়েছেন ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়, মোহিনীমোহন গঙ্গোপাধ্যায়, সুনীতি মুখোপাধ্যায়, সুখেন্দু মজুমদার, অশ্রুরঞ্জন চক্রবর্তী, মৃণালকান্তি দাশ, আনসার উল হক, হাননান আহসান, জগদীশ মণ্ডল প্রমুখ। সংখ্যাটিকে আন্তরিকতার ছাপ স্পষ্ট। দাম ৪০ টাকা।

আরও পড়ুন-মাঠে নেমে গোল কাফুর

প্রতিকথা
সম্পাদক : বিরুপাক্ষ পণ্ডা
ষাণ্মাসিক এই কবিতাপত্রের সেপ্টেম্বর সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে। গদ্যে-পদ্যে ঠাসা। শুরুতেই স্মৃতিগদ্য। নগেন্দ্রনাথ মহান্তি, দেবব্রত পড়ুয়া, সুখেন্দুকুমার দাসকে স্মরণ করেছেন অতনুনন্দন মাইতি।
বিনয় মজুমদারের কবিকৃতির উপর চমৎকার একটি গদ্য লিখেছেন বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়।‌ যথেষ্ট বিশ্লেষণধর্মী। লেখাটি জানতে সাহায্য করে সেই আশ্চর্য এক কবিকে, যিনি গণিত এবং বিজ্ঞান দিয়ে কবিতার গভীর এবং রহস্যঘন অন্তঃপুরে প্রবেশ করেছিলেন।
বনশ্রী রায় দাসের লেখার শিরোনাম ‘উনিশ শতকের মহিলা কবি কামিনী রায়’। প্রয়োজনীয় একটি লেখা। সংক্ষিপ্ত পরিসরে তুলে ধরা হয়েছে কবির জীবন। আলোচনা করা হয়েছে কাব্যচর্চা। কামিনী রায় সমসাময়িকদের মধ্যে সর্বপ্রথম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। পেয়েছেন দুঃখ-শোক। বিষয়গুলো ধরা পড়েছে লেখাটিতে।
আছে আরও একটি মুল্যবান গদ্য। তৈমুর খানের ‘বিমূর্ত কবিতা ব্যক্তিজীবনের অভিক্ষেপ’। বেশকিছু কবিতা গভীর মনোযোগ সহকারে বিশ্লেষণ করেছেন লেখক। বললেন, একজনের কণ্ঠস্বরে বহুর কণ্ঠস্বর শোনা যায়। এক ‘আমি’ বহু ‘আমি’র ধারক ও বাহক। রচনাটি তৈরিতে লেখক যথেষ্ট মুনশিনার পরিচয় দিয়েছেন।
কয়েকটি বই নিয়ে আলোচনা করেছেন সুনীলকুমার গিরি, গৌতম রায় প্রমুখ।
আছে বিভিন্ন প্রজন্মের কবিদের কবিতা।‌ কারও গুচ্ছ, কারও দুটি, কারও একটি। মন ছুঁয়ে যায় মোহিনীমোহন গঙ্গোপাধ্যায়, বিপ্লব মাজী, কানাইলাল জানা, রেহান কৌশিক, ভবেশ বসু, সুনীল মাজি, রাখহরি পাল, আশিস মিশ্র, অশোক অধিকারী, তাপস ওঝা, ঋত্বিক ত্রিপাঠী, আশিস গিরি প্রমুখের কবিতা। সংখ্যাটি সংগ্রহে রাখার মতো। দাম ২০০ টাকা।

আরও পড়ুন-হাইকোর্টে খারিজ শুভেন্দুর আর্জি

আজ কাল পরশু
সম্পাদক : শশাংক দাস বৈরাগ্য
আত্মপ্রকাশেই বাজিমাত। পত্রিকার শরৎ-হেমন্ত সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে বেশকিছু উৎকৃষ্ট মানের লেখা। কবি ও কবিতা সম্পর্কিত অসামান্য গদ্য লিখেছেন সাধন চট্টোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘গদ্যের সঙ্গে কাব্যচর্চা পরিপন্থী নয়। বাংলায় প্রায় সকল কৃতিমান গল্পকার ঔপন্যাসিক জীবনের কোনো না কোনো পর্বে কবিতা লিখেছেন। বিষয়টি ক্ষমতা সাপেক্ষ।’ তিনি এও লিখেছেন, ‘আমি এ-পর্যন্ত একটি পংক্তিও লিখতে পারিনি। খুবই শক্ত কাজ মনে হয়।’ কবিতার দুর্বোধ্যতা নিয়েও তিনি মত প্রকাশ করেছেন।
ফেদেরিকো গার্সিয়া লোরকা। তর্কাতীতভাবে এখনও স্পেনের সবচেয়ে প্রিয় কবি। তাঁর উপর আলোকপাত করেছেন সঞ্জীব দাস। লিখেছেন, ‘লোরকার কবিতার মধ্যে সংগীতের সুর ধীর লয়ে বেজে ওঠে।’ সুন্দর অনুভূতির প্রকাশ।
ঈশানী বসাকের লেখার শিরোনাম ‘কবিতা লিখে ফেলার পর তা আর আমাদের থাকে না’। ছোট্ট রচনায় বিদেশি কবিতার পঙ্‌ক্তি সাজিয়ে চমৎকার বিশ্লেষণ। লেখাটি দীর্ঘ হতে পারত।

আরও পড়ুন-প্রতিভা বিকাশের মঞ্চ ইন্দ্ররঙ মহোৎসব

আছে আরও একটি গদ্য। সপ্তর্ষি রায়ের ‘নির্বাক মুখ সজাগ চোখ’। তিনি লিখছেন, ‘সৃজন কর্মে নিয়োজিত সকল মানুষের বোধ করি একটা আলাদা ঘর থাকে। চোখে দেখা যায় না।’ গভীর উপলব্ধি। এই ‘আলাদা ঘর’-এ সকলের প্রবেশাধিকার থাকে না। অর্জন করে নিতে হয়।
কবিতায় সমৃদ্ধ করেছেন নৃপেন চক্রবর্তী, সৌমিত বসু, তাপস রায়, ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য, উদয়ন ভট্টাচার্য, শীলা দাশ, জুলি লাহিড়ী, অজয়কৃষ্ণ ব্রহ্মচারী প্রমুখ। অনবদ্য এক সংখ্যা। দাম ৫০ টাকা।

Latest article