গেরুয়া শিবিরের দুঃখের কারণ বহুবিধ। এবং কোনওটাই উপেক্ষা করার মতো নয়।
প্রথম কারণ অবশ্যই বাংলার মেয়েদের উন্নতির জন্য কন্যাশ্রী প্রকল্পে অবিশ্বাস্য সাফল্য।
আগামিকাল, ১৪ অগাস্ট , ২০২৩-এ পূর্ণ হচ্ছে কন্যাশ্রী প্রকল্পের এক দশক। আর্থিকভাবে দুর্বল পরিবারের বহু মেয়ের আগে পড়া বন্ধ হয়ে যেত। কম বয়সে বিয়েও হয়ে যেত অনেক মেয়ের। স্কুলছুটের সংখ্যা কমাতে এবং বাল্যবিবাহ রুখতে ২০১৩ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কন্যাশ্রী চালু করেন। তবে প্রকল্পটি কতটা সফল? সমাজে এই প্রকল্পের প্রভাব কতটা? চমকে দেওয়ার মতোই তথ্য দিল রাজ্য প্রশাসন। নবান্নের পদস্থ কর্তারা জানাচ্ছেন, উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে স্কুলছুটের হার। মাধ্যমিক স্তরে স্কুলছুটের হার ১৬.২৩ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ১.৭৪ শতাংশ। উচ্চমাধ্যমিক স্তরেও স্কুলছুটের হার যথেষ্ট কমেছে—১৫.৪ শতাংশ থেকে ৭.০৮ শতাংশ হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের এই সাফল্য নিঃশন্দেহে নজিরবিহীন।
আরও পড়ুন-জয়াপ্রদার কারাদণ্ড
গত দশ বছরে কন্যাশ্রীতে উপকৃত মেয়ে বা বেনিফিশিয়ারির সংখ্যা হয়েছে ৮১ লক্ষ ১৮ হাজার ৩৪৫ জন। আর চলতি অর্থবর্ষ পর্যন্ত এজন্য খরচ করা হয়েছে ১৬ হাজার কোটি টাকা। এই টাকা সরাসরি উপভোক্তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পৌঁছেছে। এই প্রকল্পের অনুকরণেই ২০১৪ সালে মোদি সরকার ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’ প্রকল্প চালু করে। কেন্দ্রীয় প্রকল্পে ২০১৪-১৫ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবর্ষ পর্যন্ত মোদি সরকার খরচ করেছে মাত্র ১,২৭০ কোটি টাকা। দুর্ভাগ্য যে, তার মধ্যে ৪০১ কোটি টাকা খরচ হয়েছে স্রেফ প্রকল্পের বিজ্ঞাপন দিতে। এই প্রকল্পের প্রথম দু’টি ভাগের (‘কে-ওয়ান’ এবং ‘কে-টু’) রূপায়ণের দায়িত্বে রয়েছে নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ দফতর। প্রথম দু’টি ভাগ মিলিয়েই দশ বছরের উপভোক্তার সংখ্যা ১৮ লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছে। আর ‘কে-থ্রি’র দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে উচ্চশিক্ষা দফতরকে। শুরুর দিকে ১৩-১৮ বছর পর্যন্ত ‘কে-ওয়ান’-এর অধীনে প্রত্যেক উপভোক্তা পেত ৫০০ টাকা। পরবর্তীকালে দুই পর্যায়ে তা বাড়িয়ে করা হয় বার্ষিক ১০০০ টাকা। আর, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার পরে তারা প্রত্যেকে এককালীন ২৫ হাজার টাকা পায় ‘কে-টু’র অধীনে।
আরও পড়ুন-অসুখ
একটা কথা পরিষ্কার। তুলনা করলে কন্যাশ্রী প্রকল্পের গড় খরচের ধারেকাছেও আসে না কেন্দ্রের প্রকল্প।
এসবের মধ্যে খবর। বিশ্ববাংলা মেলা প্রাঙ্গণে আগামী ২৩ অগাস্ট এই অনুষ্ঠান থেকেই ১০ হাজার ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোগীর কাছে ভবিষৎ ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা পৌঁছে দেবেন দেবেন মুখ্যমন্ত্রী। এই শিল্পোদ্যোগীদের প্রায় ৩০০ কোটি টাকার ঋণ নিশ্চিত করা হবে। ১৮ অগাস্টের মধ্যে ১০ হাজার ভবিষ্যৎ ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ঋণের আবেদন অনুমোদন দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে। ১ এপ্রিল চালু হওয়া এই প্রকল্পের অধীনে এখনও পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাঙ্কে মোট ৫২ হাজার আবেদন জমা পড়েছে। সেগুলির মধ্যে ব্যাঙ্কগুলি ১৪ হাজার আবেদনের জন্য প্রাথমিক অনুমোদন দিয়েছে। আড়াই হাজার আবেদনের মাধ্যমে ৬৫ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন হলেও আরও সাড়ে সাত হাজার ঋণ দ্রুত অনুমোদন করার কথা বলা হয়েছে। এই ১০ হাজার ভবিষ্যৎ ক্রেডিট কার্ড হোল্ডারকেই আগামী ২৩ অগাস্ট সুবিধা প্রদান করবেন মমতা। তার আগে ১৮ অগাস্ট ফের এ নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠক করবেন মুখ্যসচিব। পড়ে থাকা স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের আবেদনও ফেলে না রেখে দ্রুত অনুমোদন দেওয়ার কথা বলা হয়েছে ব্যাঙ্কগুলিকে। সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে দুয়ারে সরকার শিবির। তার আগে পড়ে থাকা আবেদনের নিষ্পত্তির টার্গেট নিয়েছে মা মাটি মানুষের সরকার।
আরও পড়ুন-শ্রী অরবিন্দ
ব্যস! গেরুয়া শিবিরের মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে। যাদের ভাতে মারার ব্যবস্থা করে বঙ্গ বিজয়ের খোয়াব দেখছিল গৈরিক ভৈরব বাহিনী, তাদের এহেন সাফল্য, সমৃদ্ধি দেখে মাথা তো খারাপ হবেই। রাজভবনে সদা ষড়যন্ত্রকারী পদ্মপালও ব্যাপারটা সামাল দিতে পারছেন না বুঝতে পেরে, শিশির বিন্দু লোডশেডিং বাহিনী বেজায় হতাশ।
এসবের মধ্যে ঘটে গিয়েছে আর এক কাণ্ড। সংসদে সেভাবে বাংলার ইস্যু তুলতেই পারল না বঙ্গ বিজেপি। এমনকী এনডিএ সাংসদদের সঙ্গে বৈঠক ছাড়া আলাদা করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাতও হল না সংসদের এবারের বাদল অধিবেশনে।
আরও পড়ুন-মহারাষ্ট্রের বিজেপি নেত্রী খুন, ধৃত স্বামী
সেসবের জন্য বুকফাটা কান্না চাপতেই এখন মোদি মিথ্যে অপপ্রচারকে হাতিয়ার করে ময়দানে নেমে পড়েছেন। টিম ইন্ডিয়া প্রসঙ্গে তিনি প্রমাণ ছাড়া যা ইচ্ছে তাই বলে যাচ্ছেন। তিনি চাইছেন গরিব মানুষ মারা যাক। দেশের মৃত্যু হোক। সাধারণ মানুষ দুর্ভোগে থাকুক। শুধুমাত্র বিজেপি থাকবে। তিনি তাঁর মতাদর্শ দিয়ে মানুষের কাছে পৌঁছতে পারছেন না। মোদির শাসনে ভূরি ভূরি দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। যেমন, পিএম কেয়ার ফান্ড, রাফাল চুক্তি, দেশের প্রতিরক্ষা কারখানা বিক্রি করে দিচ্ছেন, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিক্রি করে দেওয়া। নোট বাতিল করা হয়েছে নোটবন্দির নামে। মোদি নিজের এবং নিজের পার্টির স্বার্থে ২ হাজার টাকার নোট বাতিল করেছেন।
কিন্তু মোদিজি! আপনি সব সময় মানুষকে বোকা ভাববেন না। কিছু সময় মানুষকে বোকা বানানো যায়, কিন্তু সব সময় আপনি মানুষকে বোকা বানাতে পারবেন না। তৈরি থাকুন। ২০২৪ আসছে। জনতা সব হিসেব বুঝে নেবে।