ডাঃ রায়ের বাড়ি

গতকাল ছিল চিকিৎসক দিবস। ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের জন্ম এবং মৃত্যুদিন। দীর্ঘদিন তিনি ছিলেন কলকাতার ওয়েলিংটনের বাড়িতে। এখানেই করতেন সাধারণ মানুষের চিকিৎসা। ঐতিহ্যবাহী বাড়িটি ঘুরে দেখল জাগোবাংলা

Must read

অঘোর প্রকাশ সদন
ওয়েলিংটনের রাজা সুবোধ মল্লিক স্কোয়্যার শিশু উদ্যান। তার ঠিক বিপরীতে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে একটি প্রাসাদোপম তিনতলা বাড়ি। ঠিকানা ৩৬ নির্মলচন্দ্র স্ট্রিট, কলকাতা। এখানেই থাকতেন পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, খ্যাতনামা চিকিৎসক ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়। বাড়িটির নাম ‘অঘোর প্রকাশ সদন’। তাঁর মা-বাবার নামানুসারে। যদিও স্থানীয়রা বলেন, ডাঃ রায়ের বাড়ি।
জন্ম বিহারে। একটা সময় চলে আসেন বাংলায়। কিছুদিন ঠিকানা ছিল ৬৭/১ হ্যারিসন রোড। পরে অস্থায়ী ভাবে থেকেছেন কয়েকটি জায়গায়। ১৯১৬ সালে কেনেন ওয়েলিংটন স্ট্রিটের এই বাড়িটি। জীবনের মূল্যবান ৪৬ বছর কাটিয়েছেন এখানেই।

আরও পড়ুন-ট্যাক্সিচালক থেকে পশ্চিমবঙ্গের নবরূপকার সবটাই ডাক্তার রায়

বাড়ির বর্তমান অবস্থা
বর্তমানে এই বাড়িতে কেউ থাকেন না। বাড়িটি হেরিটেজ বিল্ডিং হিসেবে ঘোষিত। মালিকানা রয়েছে ট্রাস্টি বোর্ডের হাতে। তাঁরাই দেখভাল করেন। বাড়িটি ঘুরে দেখার সৌভাগ্য হল। মূল প্রবেশপথে রয়েছে ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের একটি আবক্ষ মূর্তি। হলঘর পেরোতেই বাঁদিকে সিঁড়ি। দোতলায় শয়নকক্ষ, প্রয়াণকক্ষ, চেম্বার, বাথরুম, ল্যাব। জানলাম, সংগ্রহশালা বলে তেমন কিছু নেই। শুধু রয়েছে তাঁর ব্যবহৃত কাঠের চেয়ার, কাঠের আলমারি-সহ আরও কিছু জিনিসপত্র। বাথরুমে আছে বাথটাব। চোখে পড়ল তেলরঙে আঁকা কয়েকটি ছবি ও বাঁধানো ফটো।

আরও পড়ুন-৮০ হাজার রাজ্যের বাহিনী, সঙ্গে ভিন রাজ্য ও কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকছে ভোটে

সরকারি ব্যবস্থাপনায়
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বাস্থ্য দফতরের ব্যবস্থাপনায় এই বাড়িতে চলছে ডায়াগনস্টিক রিসার্চ ল্যাবরেটরি অ্যান্ড পলিক্লিনিক। নাম ‘ডাঃ বি সি রায় ডায়াগনস্টিক রিসার্চ ল্যাবরেটরি অ্যান্ড পলিক্লিনিক’। কী কী পরিষেবা দেওয়া হয়? সুপারিন্টেনডেন্ট ডাঃ সঞ্জয় রায় জানালেন, ‘‘এখানে বহির্বিভাগ চালু থাকে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টো পর্যন্ত। বিনামূল্যে দেখা হয় রোগী। কাটতে হয় মাত্র ২ টাকার টিকিট। বিভিন্ন রোগের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারবাবুরা বসেন। পরিষেবা দেন। বিকেলে চালু থাকে পলিক্লিনিক। পরিষেবা দেওয়া হয় নামমাত্র মূল্যে। এখানে প্রতিবছর ১ জুলাই ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের জন্মদিন পালিত হয়।’’

আরও পড়ুন-দাম বাঁধতে সুফল বাংলা সঙ্গে এনফোর্সমেন্ট হানা

বিনামূল্যে চিকিৎসা
থাকার পাশাপাশি এই বাড়িতে প্রতিদিন সাধারণ মানুষের চিকিৎসা করতেন। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। উপার্জন বাড়াতে বাড়িতেই স্থাপন করেছিলেন প্যাথলজিকাল ল্যাবরেটরি। আসতেন বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা। পেশায় বিপুল সাফল্য ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়কে বিশেষ সম্মানের আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। ১৯৬২ সালের ১ জুলাই, জন্মদিনে এই বাড়ির চেম্বারে বসেই শেষবারের মতো রোগী দেখেন ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়। তারপর কিছু সরকারি কাজ সেরে চলে যান দোতলায়। সেখানেই অসুস্থতা অনুভব করেন এবং শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

আরও পড়ুন-দিনের কবিতা

প্রবীণদের স্মৃতিচারণ
পাড়ায় ঘুরতে ঘুরতে আলাপ হল কয়েকজন স্থানীয় ব্যক্তির সঙ্গে। প্রত্যেকেই প্রবীণ। এঁরা দেখেছেন ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়কে। সঞ্জীবকুমার পাল জানালেন, ‘‘ছোটবেলায় তাঁকে দেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। রাস্তায় হাঁটতেন, কখনও গাড়ি চড়ে মহাকরণে যেতেন। আমরা দূর থেকে দেখতাম।’’
পীযূষ পাল জানালেন, ‘‘পড়তাম ক্যালকাটা কর্পোরেশন স্কুলে। প্রতি বছর ১ জুলাই ডাঃ রায়ের জন্মদিনে স্কুল থেকে আমাদের এই বাড়িতে নিয়ে আসা হত। আমরা লাইন দিয়ে ঢুকতাম। নমস্কার করতে করতে চলে যেতাম। ডাঃ রায় হাসি মুখে আমাদের দিকে হাত নাড়তেন। সেই স্মৃতিটা আজও অমলিন।’’

আরও পড়ুন-ফের সভার মধ্যে মৃত্যু, ফিরেও দেখল না গদ্দার

গৌতম ত্রিবেদী জানালেন, ‘‘মেট্রো রেলের কাজের জন্য বাড়ির কিছুটা অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাড়িতে আছে অনেকগুলো ঘর। যদিও বর্তমানে কয়েকটা ঘর বন্ধ রয়েছে। ছোটবেলায় দেখেছি, এই বাড়িতেই সাধারণ মানুষের চিকিৎসা করতেন ডাঃ রায়। ভিড় জমে যেত। ১৯৮৭ সাল থেকে প্রতি বছর আমরা এখানে ডাঃ রায়ের জন্মদিন পালন করি।’’

Latest article