প্রতিহিংসার রাজনীতি আর কতদিন?

ফের ইডি-সিবিআই ভয়ানক তৎপর পশ্চিমবঙ্গে। কারণটা বুঝতে অসুবিধা হয় না। ভোট আসছে। ওদিকে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন তীব্রতর করে চলেছেন। সেদিক থেকে নজর ঘোরাতেই ফের মাঠে কেন্দ্রীয় এজেন্সি। লিখছেন সাগ্নিক গঙ্গোপাধ্যায়

Must read

ভোট আসছে, কীভাবে বুঝবেন?
যখনই দেখবেন কেন্দ্রীয় সরকারের এজেন্সিগুলো মাত্রাতিরিক্ত ভাবে লম্ফঝম্প শুরু করেছে, তখনই নিশ্চিত হবেন, ভোট এসে গেছে।
হ্যাঁ, এটাই বিজেপি জমানার নিদারুণ সত্য। দুর্নীতি হলে তদন্ত হবেই। হোক। সবাই সেটাই চায়। সেটা হওয়াটা উচিতও। দুধ কা দুধ, পানি কা পানি হয়ে যাক। এটা সবাই চাইবেই।

আরও পড়ুন-গোয়ার ধাঁচে দিঘায় সমুদ্রসফর করাবে প্রমোদতরী

কিন্তু কেন্দ্রীয় এজেন্সি কেন ভোটের আগে স্রেফ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে চালিত হয়? এটা নিশ্চিত করা নরেন্দ্র মোদি এবং অমিত শাহ একান্ত কর্তব্য বলে মনে করেন কেন? এই প্রশ্নের কোনও বিশ্বাসযোগ্য উত্তর পাওয়া যায় না।
আর বিজেপি জমানায় এই তদন্তের কায়দাকানুনগুলোও অন্য রকম। আগেই দোষী সাব্যস্ত করে তারপর তদন্ত শুরু হয়। প্রয়োজনে ফাঁসি দিন, ক্ষতি নেই, তবে তা বিচার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হওয়ার পর। সেটাই অভিপ্রেত। কিন্তু এ জমানায় সেটা হয় না। তাইতো কাগুজে তথ্যপ্রমাণ আর নড়বড়ে সাক্ষ্যের জন্য আদালতে ভর্ৎসিত হতে হয় তদন্তকারী সংস্থাকে।
এসব বুঝতে একবার ফের চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক পরিসংখ্যানে।
কে না জানে সিবিআই আজ পর্যন্ত বফর্স-সহ ৯৯ শতাংশ মামলাতেই ডাহা ফেল করেছে।

আরও পড়ুন-খুদে বিস্ময়কন্যা দ্রিশানীর জন্য গর্বিত কোলাঘাট

শুধু লোকসভা ভোটে দু’গাছা আসন জেতার জন্য উঁচুতলার নির্দেশে এই নাটক মঞ্চস্থ হয়। ফের একই নাটক। আর সেটাই বুঝিয়ে দিচ্ছে, আগামী লোকসভা ভোটে বিজেপির ঘোর দুর্দিন অপেক্ষা করছে। ক্ষমতার জোরে রাজধর্ম ভুলে মেরে দিলে তার পরিণতি ভয়ঙ্কর। গত এক দশকের প্রশাসনিক কাজকর্ম নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন উঠছেই। তার সঙ্গে এক কলঙ্কিত অধ্যায় তাড়া করছে বিজেপিকে। অঘোষিত জরুরি অবস্থার মতো এই দশা, এই পর্ব মানুষের স্মৃতি থেকে ফিকে হওয়ার নয়। মোদিজি! মনে রাখবেন, ভারতের ইতিহাস সাক্ষী, কালা কানুনের জোরে তাবৎ বিরোধী শক্তিকে জেলে পুরেও সাতাত্তরে একজন অতি ক্ষমতাশালী কুর্সি বাঁচাতে পারেননি। জনমত বিরুদ্ধে গেলে আপনিও পারবেন না। ভারতীয় গণতন্ত্রে বেশিদিন ওসব রংবাজি চলে না।

আরও পড়ুন-অন্ধ্রে বেড়েই চলেছে মৃতের সংখ্যা, ক্ষতিপূরণের ঘোষণা, শোকপ্রকাশ মুখ্যমন্ত্রীর

সবে উমা ফিরছেন কৈলাসে। নীলকণ্ঠ পাখি আগেই পৌঁছে জানিয়ে দিয়েছে মহামায়ার প্রত্যাবর্তন বার্তা। দেখতে দেখতে লক্ষ্মীপুজোও শেষ। বাঙালির মনে আবার এক বছরের প্রতীক্ষার প্রহর গোনা। আগামী বছর মায়ের মর্ত্যে আগমনের আগে ঘটে যাবে আরও কত কী পরিবর্তন। ফল ছত্রভঙ্গ না শস্যপূর্ণ বসুন্ধরা? এই অশান্ত সময়ে আমাদের জন্য কী অপেক্ষা করছে, তার হিসেবনিকেশও চলছে পুরোদমে। কিন্তু তারও আগে শব্দকে হারিয়ে আলোর গতিতে পৌঁছে গিয়েছে প্রতিহিংসার পদধ্বনি। দুর্নীতি খতম করার নামে বেছে বেছে শুধু ইন্ডিয়া জোটের দরজায় হানা। আর সম্পদের পাহাড়ে ফুলেফেঁপে ওঠা গেরুয়া নেতানেত্রীদের আগমার্কা সফেদ ভাবমূর্তি, সেখানে কালি ছেটায় সাধ্য কার!
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে গ্রাম-বাংলার মানুষ আন্দোলনে নেমেছেন। ১০০ দিনের কাজের বকেয়া আদায়ের আন্দোলন তীব্রতর হচ্ছে। ঢোক গিলে স্বয়ং রাজ্যপাল মহোদয়ও বাধ্য হয়েছেন কেন্দ্রের কাছে বকেয়া আদায়ের জন্য পত্রযোগে দরবার করতে। মোদি, অমিত শাহদের তাই ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। তার থেকে জনদৃষ্টি ঘোরাতে হবে। তাই ইডি-আশ্রিত নোংরামি চালু।

আরও পড়ুন-কলকাতা সহ গোটা রাজ্যে ৭০টি অস্থায়ী বাজার, ময়দানে ফিরছে বাজি-বাজার

আর এসবের মধ্যেই মোদি সরকার সেরে ফেলছে আর একটা ভয়ংকর কারবার।
সংস্কারের নামে আরও বেশি করে বেসরকারীকরণের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে কয়লা শিল্পকে। খনি থেকে কয়লা উত্তোলন, বিক্রি এবং ব্যবহারের উপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ আরও শিথিল করা হচ্ছে। আগামী দিনে সবটাই তুলে দেওয়া হবে বেসরকারি হাতে। লক্ষ্মীপুজোর দিন, রীতিমতো সরকারি বিবৃতি জারি করে এই ইঙ্গিত দিয়েছে মোদি সরকার। বিষয়টি আসলে কোল ইন্ডিয়া বন্ধের ছক। কারণ, এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে দেশের কয়লা খনি তথা কয়লা শিল্পের উপর রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটির প্রভাব এবং নিয়ন্ত্রণ প্রায় উঠে যাবে। সরকারি তো বটেই, বেসরকারি খনিগুলিতে পর্যন্ত কয়লা বিক্রি এবং ব্যবহারের ক্ষেত্রে বর্তমানে কিছু বিধিনিষেধ রয়েছে। মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদের লাগামছাড়া বাণিজ্য যাতে রোখা যায়।

আরও পড়ুন-মণিপুর নিয়ে মৌন থাকার খেসারত, অশান্তির আঁচ পেয়ে মিজোরামে সভা বাতিল প্রধানমন্ত্রীর

কিন্তু এবার সেই নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই শিথিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোদি সরকার। এখানেই শেষ নয়, কয়লা শিল্পকে আগামী দিনে পরিকাঠামো ক্ষেত্র হিসেবে গণ্য করার জন্যও অনুরোধ জানানো হয়েছে অর্থমন্ত্রকের অধীন ডিপার্টমেন্ট অব ফিনান্সিয়াল সার্ভিসের কাছে। আরও বেশি করে বেসরকারি লগ্নি আনার ক্ষেত্রে যাতে সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতেই কয়লা মন্ত্রকের এই সিদ্ধান্ত। কারণ, সাম্প্রতিককালে পরিকাঠামো ক্ষেত্রের তকমা পাওয়া প্রতিটি বিভাগে অবাধ বেসরকারীকরণ হয়েছে। কয়লা শিল্পের জন্যও সেই পরিকল্পনার নেপথ্যে প্রধানমন্ত্রী-ঘনিষ্ঠ একটি সংস্থাকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার কথাও শোনা যাচ্ছে, কান পাতলেই। আবার অনেকে বলছেন, কয়লা ভবিষ্যতেও জ্বালানি শক্তির প্রধান উৎস হিসেবে থেকে যাবে বলে কেন্দ্রীয় সরকার মনে করছে। তার অভাবে প্রতি বছর এপ্রিল মাস থেকেই বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির উৎপাদন কমে যায়। সেই কারণে সরকার আর দায় নিতে নারাজ। তাই কয়লা শিল্পে ক্রমেই বাড়ছে বেসরকারীকরণের পরিধি।
সব মিলিয়ে মহা প্যাঁচে ফেঁসেছে বিজেপি সরকার। সেদিক থেকে নজর ঘোরাতেই প্রতিহিংসার রাজনীতি ইডি-সিবিআইয়ের সাহায্য।
কিন্তু এভাবে আর বেশিদিন চলবে না। সেটা আগামী লোকসভা ভোটে টের পাবে বিজেপি।

Latest article