হুব্বা

আটের দশকে বাংলার অপরাধ জগতের কুখ্যাত গ্যাংস্টার শ্যামল দাসের উত্থান। শোনা যায় তৎকালীন শাসকদলের ঘনিষ্ঠ এই দুর্বৃত্তের গুন্ডারাজ চলত গোটা হুগলি অঞ্চল জুড়ে। তোলাবাজি, ডাকাতি, অপহরণ, খুন, পাচার-সহ একাধিক অপরাধমূলক ঘটনায় অভিযুক্ত সেই দুষ্টু লোকটার গল্প নিয়েই পরিচালক ব্রাত্য বসুর আসন্ন থ্রিলারধর্মী ছবি ‘হুব্বা’। কেন্দ্রীয় চরিত্রে রয়েছেন বাংলাদেশের অভিনেতা মোশারেফ করিম। ছবির ট্রেলার দেখেই শিরা দিয়ে বয়ে যায় ঠান্ডা রক্তের স্রোত। লিখছেন শর্মিষ্ঠা ঘোষ চক্রবর্তী

Must read

২ জুন ২০১১ হুগলির বৈদ্যবাটির খালে ভেসে উঠল একটা পচাগলা দেহ। যার দেহ ভেসে উঠল তাকে আশপাশের এলাকার মানুষ তো চেনেনই তা বাদে তাকে চেনে লালবাজার, ভবানী ভবনের তাবড় পুলিশ অফিসাররাও। তিনি একদা হুগলির ত্রাস হুব্বা শ্যামল ওরফে শ্যামল দাস।
আটের দশকে হুগলির গঙ্গারধার বরাবর এবং কোন্নগর ও রিষড়ায় এক্সপ্রেসওয়ের দিকে ছিল একাধিক কারখানা। সেই কারখানার শ্রমিকদের থেকে হপ্তা তুলে শ্যামল দাসের অপরাধ জগতে হাতেখড়ি হয়। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে শ্যামলের আধিপত্য। ডাকাতি, তোলাবাজি, রাহাজানি, অপহরণ, ড্রাগ পাচার ও খুনের মতো একাধিক অপরাধ ঘটতে শুরু করে। খুন করতে হাত কাঁপত না শ্যামলের বরং মানুষ খুন করে সেই রক্তের ছিটে শরীরে নিয়ে এক অদ্ভুত তৃপ্তি অনুভব করত সে। নয়ের দশকে ধীরে ধীরে সে হয়ে ওঠে হুগলির দাউদ ইব্রাহিম, এলাকার ত্রাস কুখ্যাত গ্যাংস্টার হুব্বা (Hubba) শ্যামল। প্রায় ৩৫টা খুনের অভিযোগ-সহ ড্রাগ পাচারের ৩০টি মামলা ছিল তার বিরুদ্ধে, পুলিশের হাতে তিনবার গ্রেফতার হয়েও জামিনে ছাড়া পায় সে। ৭০টা মোবাইল ফোন ব্যবহার করত সে। হুব্বা শ্যামল ২০০৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে স্বাধীনভাবে ভোটেও দাঁড়িয়েছিল, যাতে বেজায় বিপাকেও পড়েছিল শাসকদল। যদিও পরবর্তী সময়ে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেয় সে। এহেন শ্যামলের খুন করার কায়দা ট্রেডমার্ক ছিল ‘পৈতে কাট’! গলা থেকে কোমর পর্যন্ত যেভাবে পৈতে ঝুলে থাকে, ঠিক সেভাবেই শ্যামল কুপিয়ে খুন করত। শেষদিকে আবার গ্রেফতার হয় সে। পরে জামিনে ছাড়া পেলেও চলে যায় তার রাজ্যপাট। একসময় যারা ছিল তার কাছের লোক ২০১১ সালে পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতির মাঝে তাদের হাতেই খুন হয় শ্যামল। সবচেয়ে ভয়াবহ হল শ্যামলের কায়দাতেই নৃশংসভাবে তাকে খুন করে প্রতিপক্ষ। পুলিশ যখন তার লাশ শনাক্ত করে শরীরটা পৈতের মতো করেই কোপানো ছিল।

আরও পড়ুন- বিলকিস বানো মামলার রায়ে জয় হল সত্যের

অন্ধকার জগতের একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী সেই হুব্বা শ্যামলের কাহিনিই এবার বড়পর্দায় তুলে আনছেন অভিনেতা, নট, নাট্যকার, পরিচালক তথা এ-রাজ্যের শিক্ষমন্ত্রী ব্রাত্য বসু তাঁর ছবি ‘হুব্বা’তে। ছবিতে হুব্বা শ্যামলের চরিত্রে অভিনয় করেছেন বাংলাদেশের বিখ্যাত অভিনেতা মোশারেফ করিম। এরকম একটা চরিত্রে এত নিখুঁত নির্বাচনেই ব্রাত্য বসুর ছবি একশোয় একশো পেয়ে গেছে রিলিজের আগে। কেন এরকম একটা গল্প বাছলেন এই প্রসঙ্গে পরিচালক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, মধ্যবিত্তের গল্প তো অনেক হয়েছে। আমিও করেছি। এবার অন্যরকম ভাবলাম। এই জনারটা আমার খুব পছন্দের। দুঁদে পুলিশ কর্তা ও কলেজে আমার জুনিয়র সুপ্রতিম সরকারের ‘আবার গোয়েন্দা পীঠ’ বইয়ে বারোটা কেস হিস্ট্রি রয়েছে। তার একটা কেস হল হুব্বা শ্যামলের। যেটা পড়তে গিয়ে খুব এক্সাইটেড লেগেছিল। তখন সুপ্রতিমের সঙ্গে কথা বলি এবং বিষয়টা নিয়ে এগোই।
ছোট মফসসল শহরের বড় অ্যাকশন প্যাকড গল্পের ছবি ‘হুব্বা’ (Hubba)।
ছবির প্রযোজক ফিরদৌসুল বলেছেন, ‘ব্রাত্য নিজের ছবির জন্য যে পরিমাণ পড়াশোনা করে তা সত্যিই প্রশংসনীয়। আশা করি এই ছবিটিও দর্শক খুবই পছন্দ করবেন।’
হুব্বার টিজার আর ট্রেলার দেখেই হাড়হিম হয়ে যায়। ফলে দর্শকদের আগ্রহ তুঙ্গে। ঠিক দশবছর আগে ব্রাত্য পরিচালিত ‘ডিকশনারি’ ছবিতে মূল চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন অভিনেতা মোশারেফ করিম। ছবিটি নেপাল আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা ফিচার ফিল্ম হিসাবে ‘গৌতম বুদ্ধ’ পুরস্কার জিতে নিয়েছিল। দশবছর পরে আবার তাঁর নতুন ছবি ‘হুব্বা’তে মুখ্য ভূমিকায় অভিনেতা মোশারেফ করিম। ফের বড়পর্দায় ব্রাত্য-মোশারেফ জুটি। এই ছবিতে গ্যাংস্টার হুব্বা শ্যামলের অপরাধ ও ব্যক্তিজীবন দুটোই উঠে আসবে। তবে নামটা পরিবর্তিত করে করা হয়েছে ‘হুব্বা বিমল’ (Hubba)। ট্রেলার লঞ্চের পরেই দেখা গিয়েছিল পরতে পরতে অন্ধকার জগতের খুঁটিনাটি। পুলিশ আর গ্যাংস্টারের লুকোচুরি। মারপিট, খুন, রক্ত, বেপরোয়া গোলাগুলি ভরা গ্যাংস্টারের রাজত্বে পুলিশ বাহিনীর নাকানিচোবানি।
টানটান উত্তেজনাপূর্ণ, গায়ে কাঁটা দেওয়া অ্যাকশন এবং অপ্রত্যাশিত ট্যুইস্টে ভরপুর থ্রিলার আর কমেডির মিশেলে তৈরি এই ছবিতে ওপার বাংলার মোশারফ করিমের পাশাপাশি দুঁদে পুলিশ অফিসারের চরিত্রে দেখা যাবে এই বাংলার নামী অভিনেতা ইন্দ্রনীল সেনগুপ্তকে। এ-ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে রয়েছেন লোকনাথ দে, পৌলোমী বসু ও অন্যরা।

কেন মোশারেফ করিমকে বাছলেন ‘হুব্বা’র (Hubba) জন্য? এই প্রসঙ্গে পরিচালক বলেন, ‘ফ্রেন্ডস কমিউনিকেশন ও বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেতা মোশারফ করিমের সঙ্গে এটা আমার দ্বিতীয় কাজ। মোশারফ সাংঘাতিক একজন অভিনেতা এবং যে কোনও চরিত্রে সুন্দরভাবে মানিয়ে যান, খুব সূক্ষ্ম, মরমী এবং ডিসিপ্লিনড একজন মানুষ। আমার ছবির চরিত্রের জন্য ওঁকে ছাড়া আর কাউকে ভাবতেই পারতাম না।’
এই ছবির অপর গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এর সংলাপ। বহুদিন পর বাংলা ছবিতে বলিষ্ঠ সংলাপ শুনবেন দর্শক। চিত্রনাট্য লিখেছেন ব্রাত্য বসু এবং সুপ্রতিম সরকার। ক্যামেরায় সৌমিক হালদার। ছবির তিনটে গানই গেয়েছেন সঙ্গীতশিল্পী শিলাজিৎ। ছবির একটি গান ইতিমধ্যেই বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। গানটি কম্পোজ করেছেন প্রবুদ্ধ বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু তাই নয়, সেখানে শিলাজিতের গলায় জনপ্রিয় একটি ডায়লগও রয়েছে। ‘ভিজে হাত শুকনো করে ঢুকিয়ে দেব।’ এই কথা সোশ্যাল মিডিয়ায় মুখে মুখে। আগামী ১৯ জানুয়ারি ভারত এবং বাংলাদেশে একযোগে মুক্তি পাবে তাঁর এই ছবি।

Latest article