বিধিসম্মত সতর্কীকরণ : দেশের বিচারপতি ও বিচার ব্যবস্থার ওপর আমাদের পূর্ণ আস্থা ও শ্রদ্ধা আছে। দেশের বিচারপতিরা নীরবে সেই ব্যবস্থাকে সঠিক পথেই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এই বিচারব্যবস্থার কারণেই এখনও সমাজটা দাঁড়িয়ে আছে। তাই কোনও বিবাদ হলে, এখনও সবাই বলে ‘কোর্টে দেখে নেব’। এটাই প্রমাণ করে বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের গভীর আস্থা। তা নিয়ে কোথাও কোনও প্রশ্ন নেই।
আরও পড়ুন-দুয়ারে সরকার হাওড়ায় তৃণমূলের সহায়তা ক্যাম্প
কিন্তু শুক্রবার এসএসসি-র অতিরিক্ত শূন্যপদে নিয়োগের একটি মামলায় বিচারপতির কিছু জবাবে তাঁর মুখোশ খুলে দিলেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। এই মামলায় শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল রাজ্য। এদিন রাজ্যের আবেদনের শুনানির পর এই মামলায় তিন সপ্তাহের স্থগিতাদেশ দেয় দেশের শীর্ষ আদালত। ফলে এই মামলার আর শুনানি করতে পারবে না কলকাতা হাইকোর্ট। এদিন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের তলব পেয়ে কলকাতা হাইকোর্টে হাজির হয়েছিলেন রাজ্যের শিক্ষাসচিব মণীশ জৈন। আদালতে তাঁকে মামলা সংক্রান্ত বেশ কিছু প্রশ্ন করেন বিচারপতি। জবাবে শিক্ষাসচিব জানান তিনি যা করেছেন সবই ক্যাবিনেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই করেছেন। যদিও এ নিয়ে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু স্পষ্ট জানান, ক্যাবিনেটের সিদ্ধান্তের পর অবশ্যই আমি শিক্ষাসচিবকে আইনি পরামর্শ নিতে বলেছিলাম। তবে মাননীয় বিচারপতি আজ কী জানতে চেয়েছেন বা তাঁর কাছে শিক্ষাসচিব কী বলেছেন, সবই আদালতে হয়েছে। সে সবই আইনি বিষয়। আইনি ব্যাখ্যা থাকে। আমার এ নিয়ে এখন কিছু বলার নেই। কিছু বলার হলে নিশ্চয়ই উপযুক্ত জায়গা থেকে বলা হবে।
আরও পড়ুন-টাকা চাওয়ায় দলিত যুবককে মারধর
এদিন শিক্ষাসচিবের উত্তর শোনার পর বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর পর্যবেক্ষণে বেশ কয়েকটি কথা বলেন। ‘গোটা ক্যাবিনেটকে পার্টি করে দেব’, ‘সবাইকে এসে জবাব দিতে হবে,’ ‘দল তুলে দেওয়া হবে’, ‘কমিশনকে বলব দলের প্রতীক প্রত্যাহার করে নিতে’, ‘দালাল মুখপাত্র’। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পাল্টা জবাবে কুণাল বলেন, উনি বলেছেন দালাল মুখপাত্র, তা আমিও একজন মুখপাত্র। তবে উনি কারও নাম বলেননি। তাই আমিও কারও নাম বলছি না। আমি বলছি, উনি তো নিজেকে অরণ্যদেব ভাবছেন। অরণ্যদেব গঙ্গোপাধ্যায়, আপনি বলছেন দল তুলে দেব, আর তাহলে কি আপনাকে আমরা রসগোল্লা খাওয়াব? একজন বিচারপতি কীভাবে এই কথা বলতে পারেন! আপনার যা করার আছে করে নিন। কার পিছনে ঘুরতেন জুনিয়র হিসেবে, সব জানা আছে। রাজনৈতিক উইস লিস্ট বিচারকের আসনে বসে বলা যায় না। চেয়ারের অপব্যবহার করবেন না।
আরও পড়ুন-অস্ট্রেলিয়া থেকে পালিয়ে এসেও জালে পড়ল খুনি
কুণাল আরও বলেন, ত্রিপুরায় কেন এতজন শিক্ষকের চাকরি গেল? কাদের জন্য? সেখানে তো বামেদের সরকার ছিল। বাংলায় একটা সমস্যা তৈরি হয়েছে। জট খোলার চেষ্টা হচ্ছে। বারবার বলা হচ্ছে ভুল হলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে। সরকার সবরকম চেষ্টা করছে। মুখ্যমন্ত্রীও যথাযথ পদক্ষেপ করছেন। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বারবার কথা বলা হচ্ছে। ব্যক্তিগতভাবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, মুখ্যমন্ত্রী তাদের সঙ্গে বসছেন। সমস্যা বোঝার চেষ্টা করছেন। জট খোলার চেষ্টা হচ্ছে। আন্দোলনকারীদের জিজ্ঞাসা করলেই জানা যাবে। যন্ত্রণা বোঝার চেষ্টা হচ্ছে। আর বিচারপতির চেয়ারে বসে বলবেন দালাল মুখপাত্র। হিরো সাজার চেষ্টা হচ্ছে। নিজের ইমেজ বিল্ডিং করছেন। অবসরের পর রাজনীতি করার জমি তৈরি করছেন। বিচারকের হাতে ক্ষমতা রয়েছে। আইনি পদক্ষেপ করবেন। দল তুলে দিতে বলব, কিন্তু এসব কী কথা? তৃণমূল কংগ্রেস বিচারকের চেয়ার বসে এধরনের বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করছে। এর জন্য যতদূর যেতে হয় দল যাবে।