প্রতিবেদন : আগামী পঞ্চায়েতে তৃণমূলের মুখ কারা শনিবার কেশপুরের সভায় তার মডেল তুলে ধরে দেখিয়ে দিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মঞ্চে লাখো মানুষের সামনে শেখ হোসেনুদ্দিন এবং পঞ্চায়েত সদস্যা মঞ্জু দলবেরা ও তাঁর স্বামী দলের বুথ সভাপতি অভিজিৎ দলবেরাদের দেখিয়ে তাঁদের সততার উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, এঁরাই আগামিদিনে পঞ্চায়েতে তৃণমূল কংগ্রেসের মুখ। নতুন তৃণমূল কংগ্রেস এমনটাই হবে। গোটা বাংলার প্রতিটি ব্লকে-বুথে-পঞ্চায়েতে-জেলাপরিষদে এইরকম মানুষেরই দরকার।
আরও পড়ুন-সিপিএম-কংগ্রেস নেতাদের চিটফান্ড সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত
উপস্থিত মিডিয়াকে কটাক্ষ করে বলেন— যাঁরা বলেন, তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য, বুথ সভাপতি ফুলে-ফেঁপে উঠেছে— তাঁরা আজ এঁদের দেখুন। কী মনে হয়? ১০ বছর বুথ সভাপতি অভিজিৎ দলবেরা। আমি আপনাদের বলব, আজ আমার ছবি দেখাতে হবে না। এঁদের ছবি দেখান। এদিন একই সঙ্গে নিজের দলকে হুঁশিয়ারি দিয়ে অভিষেক বলেন, গোষ্ঠীবাজি করে দলকে ডোবালে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাঁর কথায়, একমাস সময় দিচ্ছি, শুধরে যান, এখনও সময় আছে। তিন-চারটে নেতার নিজেদের রেষারেষির জন্য যদি দলের মাথা নত হয় তাহলে ছেড়ে কথা বলব না। স্পষ্ট হুঁশিয়ারি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। মনে রাখবেন এখন আমি পাহারাদার। আগে ছিলাম না। এরপরই অভিষেকের সংযোজন, কেউ কেউ এখন থেকেই বলতে শুরু করেছে পঞ্চায়েতে আমি প্রার্থী দেব। আমি বলছি ওসব হবে না।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনকে সামনে রেখে অভিষেকের স্পষ্ট বার্তা, তৃণমূল কংগ্রেসের কোনও জেলা সভাপতি-বুথ সভাপতি কোনও প্রাক্তন সভাপতি প্রার্থী ঠিক করবে না। প্রার্থী ঠিক করবেন নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কোনও দাদার তল্পিবাহক হয়ে পঞ্চায়েতে প্রার্থী হওয়া যাবে না। যাঁরা মানুষের পাশে থাকবেন মানুষ যাঁকে চাইবে তিনিই প্রার্থী হবেন, শনিবার কেশপুরের ঐতিহাসিক জনসভায় সাফ কথা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। দলের পাখির চোখ লোকসভা। তাই এদিন কার্যত গোটা কেশপুরকে শপথ করিয়ে নিয়েছেন, ২০২৪-এর লোকসভায় ঘাটাল ও মেদিনীপুর— দুটি আসনই জিতে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত শক্ত করতে হবে।
আরও পড়ুন-সুপ্রিম কোর্টের মন্তব্যে উত্তাল সিকিম
গ্রামের অতি-সাধারণ আটপৌরে মানুষ শেখ হোসেনুদ্দিন। এককথায় বলতে গেলে ‘কমন ম্যান’। যাঁকে দেখিয়ে উপস্থিত জনতাকে বলেন, ইনি কোনও দল করেন না। তৃণমূল-বিজেপি-সিপিএম-কংগ্রেস— কিছুই না। এঁকে দেখে চোর বলে মনে হয়? শেখ হোসেনুদ্দিন আসলে দিন-আনা, দিন-খাওয়া কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জনসভায় সকলের সামনে তাঁর অতি-সাধারণ বাড়ির ছবিও দেখালেন। তিনি হাতে পেয়েও বাংলা আবাস যোজনার টাকা নেবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন পঞ্চায়েতকে। আর এক দম্পতি মঞ্জু দলবেড়া ও অভিজিৎ দলবেড়া। যাঁরা তৃণমূলের বুথ সভাপতি, পঞ্চায়েত সদস্যা হয়েও থাকেন মাটির বাড়িতে। বৃষ্টি হলে চাল দিয়ে জল পড়ে। তবু, আবাস যোজনার টাকা নিচ্ছেন না তাঁরা। তাঁরাই আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনের নতুন তৃণমূলের মুখ— স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন অভিষেক। মঞ্চেই অভিষেক জানিয়ে দেন হোসেনুদ্দিনের মেয়ের বিয়ের সব দায়িত্ব নিলেন তিনি। আর দলবেড়া-দম্পতিকে অভিষেক বলেন, এতদিন কারও কাছে হাত পাতেননি, আর পাততেও হবে না। দলই আপনার বাড়ি তৈরি করে দেবে। এরপরই তিনি বলেন, আমার গর্ব হয় আমি এমন একটা দল করি যে দলে এঁদের মতো সহকর্মীরা রয়েছেন।
আরও পড়ুন-ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা ধৈর্য রাখুন: স্টিফেন
এদিন বক্তৃতার পরতে পরতে আসলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় পরিষ্কার করে দিয়েছেন, দল ভাঙিয়ে করে খাওয়ার দিন শেষ। সৎভাবে মানুষের পাশে থেকে যাঁরা মাথা নিচু করে মানুষের কাজ করবেন, তাঁরাই দলে জায়গা পাবেন। কে কোথায় কী করছে সব তাঁর নজরে আছে বলে জানান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।