তরুণ-তেজে আফ্রিকা জয়

দক্ষিণ আফ্রিকা ১১৬ (২৭.৩ ওভার) ভারত ১১৭-২ (১৬.৪ ওভার)

Must read

জোহানেসবার্গ: সাই সুদর্শনের অভ্যেস আছে পরের দিন কী করবেন সেটা লিখে রাখা। আইপিএলে গুজরাট টাইটান্সের হয়ে দিল্লি ক্যাপিটালসের বিরুদ্ধে খেলতে নামার আগে তিনি লিখেছিলেন, পরিস্থিতির উপর নজর রাখো। ফাস্ট আউটফিল্ড। দিল্লি কীভাবে আনরিখ নরখিয়াকে …।
পরের দিন ম্যাচে ১৪৮ কিমিতে বল করা নরখিয়াকে উইকেটকিপারের মাথার উপর দিয়ে চার মেরে সেঞ্চুরি করেছিলেন ২২ বছরের তরুণ। যে ইনিংস দেখে উচ্ছ্বাস চেপে রাখতে পারেননি সুনীল গাভাসকর। কেউ জানে না জো’বার্গে অভিষেক ম্যাচে নামার আগে সুদর্শন ঠিক কী লিখে রেখেছিলেন। কিন্তু সবাই এটা অবশ্যই জেনে গেল যে, ভারতীয় (South Africa- India) ক্রিকেটে নতুন তারার উদয় হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ৪৩ বলে ৫৫ নট আউটের মধ্য দিয়ে চেন্নাইয়ের তরুণ এই বার্তা দিয়ে গেলেন যে, তিনি ভিড়ে হারিয়ে যেতে আসেননি।
১১৭ রানের টার্গেট নিয়ে খেলতে নেমে সুদর্শন ও শ্রেয়স আইয়ারের দাপটে ১৬.৪ ওভারে জিতে গেল ভারত (South Africa- India)। রবিবাসরীয় ওয়ান্ডারার্সে জয় এল ৮ উইকেটে। কিন্তু এমন দাপুটে জয়ে শুধু দুই হাফ সেঞ্চুরি করা ব্যাটারের কথা বললে লেখা সম্পূর্ণ হবে না। আসবে অর্শদীপ সিং ও আবেশ খানের নামও। এই দুই তরুণ পেসার যদি শুরু থেকে আফ্রিকান ব্যাটিংকে চেপে না ধরতেন, তাহলে এত সহজে প্রথম একদিনের ম্যাচ জিততে পারত না কে এল রাহুলের দল। উইকেট ও মেঘলা আকাশের সুবিধা নিয়ে অর্শদীপ প্রথমবার পাঁচ উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা হলেন। আগে এই ফরম্যাটে তাঁর উইকেটই ছিল না।
আইপিএলের সুবাদে সুদর্শন এখন মোটামুটি চেনা মুখ। এমনিতে তিন নম্বরে নামলেও রবিবার এলেন শুরুতে ঋতুরাজ গায়কোয়াড়ের (৫) সঙ্গী হয়ে। তবে ঝতুরাজ দলের ২৩ রানে ফিরে যাওয়ার পর সুদর্শন ও শ্রেয়স দ্বিতীয় উইকেটে যে ৮৮ রানের পার্টনারশিপ খেললেন, তাতেই জয়ের দরজায় পৌঁছে যায় ভারত। বাকি ক’টা রান এল তিলক (১ নট আউট) নামার পর। সুদর্শন এই ইনিংসে ন’টি চার মেরেছেন। কপালের সামান্য সহায়তা পেলেও তাঁর খেলা পণ্ডিতদের পছন্দ হয়েছে। এদিন মাঠ-জুড়ে শট খেললেন তিনি। দেখে মনে হল না জীবনের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলছেন।
মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে অদ্ভুত পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেল ওয়ান্ডারার্সের উইকেটের। তৃতীয় টি-২০ ম্যাচে এখানে কুলদীপ যাদব ভেলকি দেখিয়েছিলেন। ২.৫ ওভারে পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। এদিন সেই একই মাঠে আবার দুই তরুণ পেসারের সামনে ২৭.৩ ওভারে ১১৬ রানে গুটিয়ে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা। অর্শদীপ ১০ ওভারে ৩৭ রান দিয়ে ৫ উইকেট নিয়ে গেলেন। তাঁর পাশে আভেশ জীবনের সেরা বোলিং করে ২৭ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন। বাকি উইকেট কুলদীপের।
ইডেনে বিশ্বকাপে এই দু’দলের ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা ৮৩ রানে ইনিংস শেষ করেছিল। রবিবার যখন ৭৮ রানে কেশব মহারাজ (৪) আউট হলেন, বোর্ডে রান ছিল ৭৩-৮। ইডেনের ৮৩-কে টপকানো নিয়ে সেই মুহূর্তে সংশয় তৈরি হয়েছিল। পরেরদিকে তাবরিজ শামসির (১১ নট আউট) জন্য তাদের রান ১১৬-তে পৌঁছেছে। দশ নম্বরে নামা নান্দ্রে বার্গার (৭) ৩২ বল উইকেটে কাটিয়ে ব্যাটারদের সাহায্য করেছেন। শেষ দুই উইকেটে দক্ষিণ আফ্রিকা ৪৩ রান যোগ করেছে। না হলে তাদের একশো পার করা মুশকিল ছিল।
ওয়ান্ডারার্স এমনিতে ফাস্ট বোলারদেরই মাঠ ছিল এতদিন। কিন্তু উইকেট হঠাৎ চরিত্র বদলেছে। আগের ম্যাচে যেমন আলোর নিচে ভারতীয় স্পিনাররা একহাত বল ঘুরিয়েছেন। এদিন ঠিক তার উল্টোটা হল। আগে বল করতে নেমে অর্শদীপ ও আভেশ অনেকটা করে স্যুইং করালেন। মেঘলা আকাশের সুবিধা তাঁরা পেয়েছেন। উইকেটের নিচের আর্দ্রতাও অর্শদীপদের সাহায্য করেছে। এরা দুজন উইকেট ভাগাভাগি করে নিলেও মুকেশের জন্য দিনটা ভাল যায়নি। প্রথম ওভার ভালই করেছেন তিনি। কিন্তু পরে মার খেয়ে গড় দাঁড়াল ৭-০-৪৬-০।
রেজা হেনড্রিকস টি-২০ সিরিজে দুর্দান্ত ব্যাট করেছেন। কিন্তু এখানে তিনি অর্শদীপের শিকার হলেন। কোনও রান না করেই হেনড্রিকস ফিরে যান। দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম উইকেট হারিয়েছে ৩ রানে। এরপর ওই একই রানে রসি ভ্যান ডার ডুসেনকেও (০) তুলে নেন অর্শদীপ। শুরুর এই ঝটকা আর সামলাতে পারেনি স্থানীয় দল। টনি ডি জর্জি (২৮) রান করলেও অধিনায়ক মার্করাম এদিন ১২ রান করে আভেশের শিকার হন। এই জায়গায় দক্ষিণ আফ্রিকা দুই স্পেশালিস্ট টি-২০ প্লেয়ার ক্লাসেন (৬) ও মিলারের (২) উপর ভরসা করেছিল। দু‘জনেই পরপর ফিরে যাওয়ায় দক্ষিণ আফ্রিকার একসময় রান ছিল ৫৮-৭।
শেষদিকে ফেলুকায়ো ৪৯ বলে ৩৩ রান করে না গেলে দক্ষিণ আফ্রিকার অবস্থা আরও করুণ হত। গোটা ইনিংসে মাত্র চারজন ব্যাটার দুই অঙ্কে পৌঁছতে পেরেছেন। ভারতের মতো এই সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকাও একঝাঁক তরুণকে সুযোগ দিয়েছে। কিন্তু ব্যাট হাতে তাদের সবাই ব্যর্থ হলেন। অর্শদীপ ও আভেশের সামনে এদের কেউ সুবিধা করতে পারেননি। দুবার এই দুই বোলার হ্যাটট্রিকের সুযোগ পেয়েছিলেন। বোর্ডে বড় রান তুলে দিতে না পারলেও হ্যাটট্রিক অবশ্য আটকেছেন মিলাররা। তবে শেষ লগ্নে বল করতে এসে তাঁদের ইনিংস শেষ করে দেন কুলদীপ। তিনি অবশ্য সিমারদের জন্য বেশি বল করার সুযোগ পাননি।

আরও পড়ুন-ইডেন গার্ডেন্সে সিএবি কর্মীর পুত্রের ঝু.লন্ত দেহ, তদন্তে পুলিশ

Latest article