পার্ল, ১৯ জানুয়ারি : পঞ্চাশ হয়ে যাওয়ার পর হেলমেট খোলেননি। বড়জোর নিজেদের ডাগ আউটের দিকে একবার আলগোছে ব্যাট তুললেন তিনি। ব্যস। সেলিব্রেশনের প্রশ্ন নেই!
বিরাট-মঞ্চ ততক্ষণে তৈরি হয়ে গিয়েছে বোল্যান্ড পার্কে। ছবির মতো সাজানো মাঠ। সবুজের মাঝে ধূসর পাহাড়ের উকি-ঝুঁকি। তাঁর মধ্যে বিরাট রাজার রুদ্ধশ্বাস লড়াই। নাকি রাজার মুকুট খুলে রেখে এক সাধারণের লড়াই? ততক্ষণে শিখর ধাওয়ানের (৭৯) সঙ্গে প্রথম উইকেটে দুর্দান্ত পার্টনারশিপ খেলে ফেলেছেন। জানেন টিভির সামনে হুমড়ি খেয়ে বসে আছেন আমজনতা থেকে নির্বাচক, বোর্ড কর্তারা। কাটাছেঁড়ার অপেক্ষা! কিন্তু যেভাবে এতদিন এসব ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছেন উইলোর জোরে, সেটা বুধ দুপুরে হল না। সামসিকে আধা সুইপ আধা চপ মারতে গিয়ে নিজেকে তুলে দিলেন বাভুমার হাতে। ৬৩ বলে ৫১। গোটা ইনিংসে বাউন্ডারি তিনটি। এটাই সম্ভবত বুঝিয়ে দিচ্ছে, মুকুটহীন কিং কোহলি রানের খোঁজে কতটা মরিয়া ছিলেন প্রথম একদিনের ম্যাচে।
আরও পড়ুন-অভিষেকের সৌজন্যে অস্ত্রোপচারের পর সেই শিশু আপাতত সুস্থ
বিরাট যখন উইকেটে ছিলেন, টার্গেট ২৯৭ অসম্ভব লাগেনি। কিন্তু তিনি চলে যাওয়ার পর ড্রেসিংরুমে ফেরার লাইন লেগে গেল। রাহুল সবার আগে আউট হয়েছিলেন ১২ রানে। এরপর পন্থ ১৬, শ্রেয়স ১৭, অভিষেক ম্যাচে নামা ভেঙ্কটেশ ২ রানে ফিরে যাওয়ার পর ভারতের হার কার্যত নিশ্চিত হয়ে গেল। শেষবেলায় শার্দূল(৫০ নট আউট) কিছুটা করলেন। তবে তাতে ম্যাচের ভাগ্য বদলায়নি। শেষপর্যন্ত ২৬৫ রানে থেমে গেল ভারতের ইনিংস। ৩১ রানে হেরে একদিনের সিরিজে ০-১ পিছিয়ে পড়লেন রাহুলরা।
আরও পড়ুন-সুন্দরবনে বিলুপ্ত কচ্ছপ গবেষণায় স্যাটেলাইট ট্যাগিং
দক্ষিণ আফ্রিকা ব্যাটিং শুরু করার পর দেখা গেল টেস্ট সিরিজের সঙ্গে এই উইকেটের কোনও মিল নেই। সেঞ্চুরিয়ন, জোহানেসবার্গ বা কেপটাউনে বল রীতিমতো ছুটেছে। আর এখানে ব্যটসম্যানদের অপেক্ষা করতে হল বল কখন আসবে! তার মধ্যেও আশ্বিন আর বুমরা শুরুতে যে ঝটকা দিয়েছিলেন, তার সঙ্গে ভেঙ্কটেশ আইয়ার মার্করামকে রান আউট করে আফ্রিকানদের বেশ চাপে ফেলে দিয়েছিলেন। বোর্ডে দক্ষিণ আফ্রিকা তখন ১৫ ওভারে ৬৮/৩। কিন্তু সেখান থেকে চতুর্থ উইকেটে ২০৪ রানের রেকর্ড পার্টনারশিপ খেলে দলকে ২৯৬/৪-এ নিয়ে গেলেন রসি ভ্যান ডার ডুসেন ও তেম্বা বাভুমা। সেঞ্চুরি করলেন দু’জনেই। ডুসেন ৯৬ বলে নট আউট থাকলেন ১২৯ রানে। এটা তাঁর সর্বোচ্চ রান। আর বাভুমা তাঁর দ্বিতীয় শতরানে করে গেলেন ১১০ রান।
আরও পড়ুন-আর জি কর-এ বহিরাগতদের হামলা, এমআরআই বিভাগে তাণ্ডব
অধিনায়ক হিসেবে একদিনের ক্রিকেট এটা কে এল রাহুলের অভিষেক ম্যাচ। জোহানেসবার্গে দ্বিতীয় টেস্টে বিরাট চোট পাওয়ায় তিনি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু বিরাট দলে, অথচ টস করতে গেলেন অন্য কেউ, বেশ বিরল দৃশ্য। কিন্তু এমনই হওয়ার ছিল। একদিনের দলের নেতৃত্ব বিরাট টেস্ট অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়ার অনেক আগেই হারিয়েছিলেন। ডি’কককে অশ্বিন বোল্ড করে দেওয়ার পর একবার শুধু স্বভাবসিদ্ধ উচ্ছ্বাস দেখিয়ে ফেলেছিলেন ভিকে। দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলেন অশ্বিনকে। বাকিটা দূরে ফিল্ডিং করার মতোই নিজেকে কিছুটা যেন গুটিয়ে রাখলেন।
আরও পড়ুন-গোয়ায় অভিষেক, আজও কর্মসূচি
বাভুমা যখন একটা দিক আগলে রেখে খেলছিলেন, তখন উল্টোদিকে দাড়িয়ে দুসেন ফ্রি স্ট্রোক প্লে করে গেলেন। সকালের দিকে বল তাও কিছুটা সুইং করেছে। কিন্তু বেলা যত গাড়িয়েছে, গরমে বুমরা, শার্দূল, ভুবনেশ্বর কুমারদের হাত থেকে সুইং উধাও হয়ে গিয়েছে। বুমরা তাও ১০ ওভারে ৪৮ রান দিয়েছেন। একটি উইকেট। কিন্তু ভুবি আর শার্দূল কোনও উইকেট ছাড়াই দিয়ে গেলেন যথাক্রমে ৬৪ ও ৭২। স্লো উইকেট দেখে রাহুল আগেই নিয়ে এসেছিলেন অশ্বিনকে। কিন্তু আফ্রিকান ব্যাটসম্যানরা তাঁকে দেখেই সুইপ আর রিভার্স সুইপ মারতে শুরু করেন লাইন গুলিয়ে দিতে। শেষপর্যন্ত ৫৩ রান দিয়ে একটি উইকেট পান আশ্বিন। তাঁর মতোই বুধবার একদিনের দলে প্রত্যাবর্তন ঘটেছিল যুজবেন্দ্র চাহালের। তিনি ১০ ওভারে ৫৩ রান দিয়েও এদিন উইকেটের মুখ দেখেননি।