পুণে, ১৯ অক্টোবর : শ্রেয়স আইয়ার (১৯) যখন মেহেদিকে উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে গেলেন, উল্টোদিকে বিরাট কোহলি (১০৩ নট আউট)। তিনি ছিলেন, অতএব চাপ বলে কিছু নেই। না হলে রান আ বল সিচ্যুয়েশনে এসব শট অপরাধ। তবে বিরাট-সেঞ্চুরির পর আর কি এসব আলোচনায় আসবে! শেষদিকে রাহুল (৩৪ নট আউট) বিরাটকে সেঞ্চুরির রাস্তা করে দিলেন রান না করে। তারপর ছক্কায় ৪৮তম ওডিআই সেঞ্চুরি।
রোহিত আর শুভমন জয়ের প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে গিয়েছিলেন। টপ অর্ডার রান পাচ্ছে বলে জয়ের রাস্তাও সহজ হচ্ছে। কিন্তু বুধ-সন্ধ্যায় ভারতীয় উইকেটগুলো সব হারাকিরিতে গেল! রোহিত, শুভমন, শ্রেয়স। সবাই। আর এখানেই তিনি বি-রা-ট। হাতে গোনা ক’টা বাউন্ডারি। বাকি এক-দুই। ভারত অনায়াসেই জিতল। ৭ উইকেটে। এতে চারে চার হয়ে গেল। তারপরও যা বলার, দল আগে। অ্যাডভেঞ্চার পরে। বিরাটকে দেখে সবাই শিখুক।
রোহিত আর শুভমন যেভাবে শুরু করেছিলেন, তাতে মনে হচ্ছিল আর একটা আফগানিস্তান ম্যাচ চলছে বুঝি! সেই রান তাড়া করার ব্যাপার। আফগান ম্যাচে ছিল ২৭৩ রানের টার্গেট। যা ভারত ১৫ ওভার বাকি রেখে তুলে দিয়েছিল। এখানে রোহিতদের দরকার ছিল একটু কম। ৫০ ওভারে ২৫৭। যেটা তাঁরা তুলে দিলেন ৪১.৩ ওভারে, ৩ উইকেটে।
শাকিব না খেলায় বাংলাদেশ বোলিং কিছুটা মার খেয়েছে। শরিফুল, হাসান, নাসুমদের লেংথ ও নিশানা রোহিতের ঝোড়ো ব্যাটিংয়ের সামনে এলোমেলো হয়ে গেল। বিরাট যেমন ফ্রন্টফুটে স্ট্রোক খেলতে ভালবাসেন, রোহিত তেমনই ব্যাকফুটে। মুস্তাফিজুর সেটা জানেন বলে উপরে বল রাখলেন। বাকিরা অনভিজ্ঞতার খেসারত দেন।
আরও পড়ুন-‘জীবন দিতে হলে বাংলার জন্য দেব’ সাতগাছিয়ায় ‘পুজোর উপহার’ দিয়ে কেন্দ্রকে তোপ অভিষেকের
কিন্তু শুভমনকে নিয়ে ৮৮ রান তুলে ফেলার পর রোহিত (৪৮) হাসানকে উইকেট দিয়ে গেলেন। শর্ট বলে লো পুল শট মেরেছিলেন অধিনায়ক। যেটা স্কোয়ার লেগ বাউন্ডারিতে তৌহিদের হাতে চলে গেল। ৪০ বলে সাতটি বাউন্ডারি, দুটি ছক্কা। উল্টোদিকে শুভমন (৫৩) ততক্ষণে দাঁড়িয়ে গিয়েছেন। বিরাটও এসেই বোলারের উপর দিয়ে বল উড়িয়ে বুঝিয়ে দিলেন, তিনি ছন্দে রয়েছেন। কিন্তু ক্যাজুয়াল শটে নিজের পতন ডেকে আনেন শুভমন।
বাংলাদেশ ইনিংসে বড় ঘটনা ঘটে গেল হার্দিকের চোট। মাত্র ৩ বল করতে পেরেছেন বরোদা অলরাউন্ডার। গোড়ালিতে চোট পেয়ে বেরিয়ে যাওয়ার পর বাকি ৩ বল করে ওভার শেষ করেন বিরাট কোহলি। তবে হার্দিকের না থাকাটা অবশ্যই চাপে ফেলে দিয়েছিল রোহিতকে। বুমরা ও সিরাজের পর থার্ড সিমার হিসাবে হার্দিকই বেস্ট চয়েস এই মুহূর্তে। কিন্তু তিনি প্রথম ওভার বল করতে এসেই চোট পেলেন। চতুর্থ পেসার শার্দূল আগের ম্যাচে মোটে ২ ওভার বল করেছিলেন। এখানে ৯ ওভারে দিলেন ৫১ রান। মাঝখানে এসে তৌহিদ রিদয়কে (১৬) ফেরালেন বটে, কিন্তু কোনও ছাপই ফেলতে পারেননি তিনি।
আরও পড়ুন-উপাচার্যের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রীকে চিঠি অধ্যাপকদের
মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের এই মাঠের উইকেট নিয়ে প্রথম থেকেই একটা ধন্দ ছিল। আগে এখানে ব্ল্যাক সয়েলের উইকেট হত। তাতে হাল্কা স্পিন ফ্রেন্ডলি উইকেট হলেও অনেক রান উঠত। কিন্তু বিশ্বকাপের আগে উইকেটে নতুন মাটি পড়েছে। তাতে বোঝা যাচ্ছিল না পুণের উইকেট কেমন যাবে। শেষপর্যন্ত যা দাঁড়াল, সেটা নিয়ে ব্রেকে রবীন্দ্র জাদেজার বক্তব্য ছিল, এটা স্লো এবং নিখাদ পাটা উইকেট। এখানে জায়গায় বল করে যাওয়া ছাড়া বোলারদের আর কিছু করার নেই। তা এহেন উইকেটে জাদেজা ১০ ওভারে ৩৮ রানে ২ উইকেট নেন। কুলদীপ নিয়েছেন ৪৭ রানে ১ উইকেট।
আরও পড়ুন-চিকিৎসককে পুনর্বহালে বাধ্য হল বিশ্বভারতী
শাকিবের জন্য শেষমুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু তিনি এই ম্যাচে খেলতে পারেননি। শান্ত টসে জিতে আগে ব্যাট নেওয়ার পর বাংলাদেশ কিন্তু বেশ ভাল শুরু করেছিল। প্রথম উইকেটে তানজিদ (৫১) আর লিটন (৬৬) মিলে ৯৩ রান তুলে ফেলেছিলেন। বুমরা ও সিরাজ এই জুটিকে বিচ্ছিন্ন করতে পারেননি। শেষপর্যন্ত তানজিদকে তুলে নেন কুলদীপ। আর লিটনকে আউট করেন জাদেজা। মুশকিল হচ্ছে যে, এত ভাল শুরু করার পরও বাংলাদেশ কিন্তু তাদের ইনিংসকে খুব বড় স্কোরে নিয়ে যেতে পারেনি। পারলে ৫০ ওভারে ২৫৬-৮ দেখাত না তাদের স্কোর। আরও কিছুটা বড় হত।
আরও পড়ুন-পুজোয় ভিড়ের জেরে যাত্রীদের সুরক্ষার্থে একাধিক পদক্ষেপ কলকাতা মেট্রোর
এর একটা বড় কারণ হল, প্রথম স্পেলে বুমরা ও সিরাজ তেমন কিছু করতে না পারলেও পরে এসে তাঁরা দুটি করে উইকেট নিয়েছেন। বুমরা এখানে বাউন্সও পেয়েছেন। মুশফিকুর (৩৮) ও মাহমুদুল্লাহ (৪৬) বুমরার শিকার। দু’জনেই উইকেটে থিতু হয়ে গিয়েও নিজেদের রানকে বাড়িয়ে নিয়ে যেতে পারেননি। তার আগে অবশ্য মেহেদি (৩) ও তৌহিদকে ফিরিয়েছেন সিরাজ ও শার্দূল। মাত্রাতিরিক্ত হাফভলি বল করে সিরাজ ১০ ওভারে ৬০ রান দিয়েছেন। বুমরা দেন ৪১ রান। ভারতীয় বোলারদের মধ্যে সবথেকে কৃপণ ছিলেন জাদেজা। ১০ ওভারে ৩৮ রান দিয়েছেন তিনি। তাঁর উপর ছড়ি ঘোরাতে পারেননি লিটনরা। তবে জাদেজা নন, ম্যাচের সেরার পুরস্কার নিয়ে গেলেন বিরাটই।