খালি চোখে বোঝার উপায়
খালি চোখে কিডনির সমস্যা বোঝার উপায় তুলনামূলকভাবে কম। চোখটাকে একটু প্রশিক্ষিত করা প্রয়োজন। প্রথম যেটা বোঝা যাবে সেটা হল সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর যদি দেখা যায় চোখের পাতার তলা ফুলছে সেই সঙ্গে পা-ও ফুলছে, পায়ে আঙুল দিয়ে টিপলে ঢুকে যাচ্ছে। তবে মনে রাখতে হবে পা ফোলে অনেক কারণে তার মধ্যে কিডনির অসুখ অন্যতম কিন্তু চোখের তলা ফোলার একমাত্র কারণ কিডনির সমস্যা।
ইউরিন বা মূত্রত্যাগের সময় দেখা গেল সাধারণত যতটা ফেনা থাকে তুলনায় তার চেয়ে অনেকটা বেশি হচ্ছে। এটা তার নিজস্ব পারসেপশন। তখন তার নেফ্রোলজিস্ট দেখানো উচিত।
আরও পড়ুন-পঞ্চায়েত ভোটে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান
যিনি অন্তঃসত্ত্বা নন বা অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয় এমন পেশার সঙ্গে যুক্ত নন এমন মানুষের পা বারবার ফুললে এবং ইউরিনে ফেনা আসতে থাকলে বিশেষত সকালের দিকে। ফ্লাশ করার পরেও ফেনায় ভরে আছে।
ইতিমধ্যেই যদি তিনি ডায়াবেটিক বা হাইপারটেনসিভ হন তাহলে ইমিডিয়েট নেফ্রোলজিস্টের পরামর্শ নিতে হবে।
পিঠের দু’দিকে আমাদের কিডনি রয়েছে। অনেকেই এটা জানেন না। তাই পিঠে ভারী ভাব হয়, ব্যথা হয়, মোচড় দেয় বা ইউরিনে রক্ত আসে তাহলে বুঝতে হয় হবে তাঁর কিডনিতে নয় ইনফেকশন আছে অথবা স্টোন বা সিস্ট হচ্ছে। কিডনি ফেলিওর না হলেও এটা সময়মতো ডায়াগনোসিস হলে সুস্থ হওয়া সম্ভব।
আরও পড়ুন-ঢাকার গুলিস্তানে বাস ডিপোর কাছে বিস্ফোরণ, শতাধিক আহত, বাড়ছে মৃতের সংখ্যা
শ্বাসকষ্ট হচ্ছে মাঝেমধ্যে। মাছ, মাংস ইত্যাদি প্রোটিন আগে খেতেন এখন খেতে পারছেন না তখন বুঝতে হবে তাঁর রক্তে ইউরিয়া বা ক্রিয়েটিনিন হয়তো বাড়তে শুরু করেছে এবং সেই জন্য শরীর প্রোটিন রিজেক্ট করছে।
কিডনির অসুখ যদি বেড়ে যায় তাহলে বুকে জল জমবে এবং রক্ত শুকিয়ে যাবে। কারণ কিডনি রক্ত তৈরি করে। বুকে জল জমলে শ্বাসকষ্ট হবে বিশেষত চিত হয়ে শুলে। যখন পায়ের রক্তটা মাথায় বা বুকে আসবে তখন রীতিমতো শ্বাসকষ্ট হবে এবং সে উঠে বসবে। এটা ভাল সাইন না।
রক্ত শুকিয়ে যাচ্ছে অর্থাৎ হিমোগ্লোবিন ফল করছে মানে তার কিডনি ভাল কাজ করছে না। তখন প্রচুর হাঁপ ধরবে। আগে অনায়াসে চারতলা উঠে যেত এখন একতলায় উঠে প্রচণ্ড হাঁপিয়ে যাবে।
আরও পড়ুন-এপ্রিলেই গঙ্গার তলা দিয়ে শুরু মেট্রোর ট্রায়াল রান
কিডনি ড্যামেজ কেন হয়
যদি কোনও কারণে কেউ অধিকমাত্রায় পেনকিলার খায়।
কারও যদি ডায়াবেটিস হয়ে ইতিমধ্যে কিডনি দুর্বল হয়ে গিয়ে থাকে। সে জানে না এবং ক্রিয়েটিনিন ইত্যাদি খানিকটা বেড়ে রয়েছে। এই অবস্থায় বড় কোনও অপারেশনের ধকল নিতে হয় যেমন অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি, বাইপাস তাহলে সেই কিডনি আরও ড্যামেজ হয়ে যাবে।
কেউ যদি দোক্তা, খৈনি, জর্দা, সিগারেট ইত্যাদি নিয়মিত খান তাহলে কিডনির ক্ষতি হয়। দেখা গেছে টোব্যাকো কিডনির রোগ বাড়ায়।
কারও যদি অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস এবং হাইব্লাডপ্রেশার একসঙ্গে থাকে।
এখনকার অধিকাংশ মহিলা অফিস যান কিন্তু পাবলিক টয়লেট ব্যবহার করেন না। হাইজিনিক নয় এই ভেবে বা লজ্জায়। এর ফলে হয় দীর্ঘক্ষণ ইউরিন চেপে রাখেন, না হয় বাথরুম যেতে না হয় তাই বাইরে গেলে জলই খান না। আর তা না হলে পাবলিক টয়লেটে গিয়ে বাথরুম করার পর নিজেকে জল দিয়ে পরিষ্কার করেন— তিনটেই ভয়ঙ্কর। যদি তাঁরা জল না খান কিডনিতে স্টোন হবে, যদি চেপে রাখেন ইউরিন ইনফেকশন হবে বা কিডনির সমস্যা হবে আর যদি বাথরুমের পর হাত দিয়ে পরিষ্কার করেন তাহলে সরাসরি ইনফেকশন ঢুকবে ভিতরে যাকে আমরা বলি ‘সেল্ফ ইন্ট্রোডিউসড ইনফেকশন’। তাহলে ইউরিন-ইনফেকশন অবধারিত। যেটা এখন খুব কমন সমস্যা।
আরও পড়ুন-কঠিন গ্রুপে ইস্টবেঙ্গল, বুমোসদের লড়াই সহজ, সুপার কাপের সূচি প্রকাশ
এক্ষেত্রে হ্যান্ড শাওয়ার বা ওয়েট টিস্যু ব্যবহার করতে হবে।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা
বাবা বা মার কিডনির রোগ ছিল—তাহলে অবশ্যই সন্তানকে সতর্ক থাকতে হবে। রোগ নেই কিন্তু একটা হেল্থ স্ক্রিনিং করা জরুরি।
হাই ব্লাড সুগার এবং হাই ব্লাডপ্রেশার টেস্ট।
কিডনির দুটো ব্লাড টেস্ট রয়েছে— একটা ইউরিয়া এবং সেরাম ক্রিয়াটিনিন। এটা পরীক্ষা করে দেখা উচিত কিডনি কেমন কাজ করছে।
ইউরিনের তিনট গুরুত্বপূর্ণ টেস্ট রয়েছে। ইউরিন রুটিন মাইক্রোস্কোপি, ইউরিন কালচার অ্যান্ড সেনসিটিভিটি এবং ইউরিনের ফেনার নির্ণয় মান অর্থাৎ ইউরিন এসিআর অ্যালবোমিন ক্রিয়াটিনিন রেশিও। এই রেশিও বেশি মানেই ফেনা অনেক বেশি লিক করছে।
এ ছাড়া কিডনি স্টোন, কিডনিতে টিউমার, জন্মগতভাবে একটা কিডনি রয়েছে বা দুটোর একটা কিডনি ছোট ইত্যাদি জানতে হলে আল্ট্রসাউন্ড করা জরুরি। যার শর্ট ফর্ম ইউএসজিকেইউবি বা আল্ট্রাসাউন্ড কিডনি ইউরেটর ব্লাডার।
আরও পড়ুন-কঠিন গ্রুপে ইস্টবেঙ্গল, বুমোসদের লড়াই সহজ, সুপার কাপের সূচি প্রকাশ
চিকিৎসা
কিডনির রোগ ধরা পড়লে প্রথমেই নেফ্রোলজিস্টের কাছে কাছে যেতে হবে। তিনি দেখবেন কিডনি কতটা কাজ করছে এবং চিকিৎসা করে সারানো যাবে কি না, নাকি ওষুধের মাধ্যমে কন্ট্রোল করা যাবে।
এরপর যদি দেখা যায় ইউরিনে ইনফেকশন তাহলে তার আলাদা চিকিৎসা রয়েছে যদি মনে হয় কিডনি স্টোন তার জন্য, অপারেশন রয়েছে নানারকম। যদি মনে হয় কিডনিতে সিস্ট রয়েছে তার অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনও চিকিৎসাই লাগে না, শুধুমাত্র নজরদারি করলেই হবে। যদি মনে হয় ইউরিয়া, ক্রিয়েটিনিন বাড়ছে, রক্ত কমছে ধীরে, কিডনি শুকিয়ে আসছে তখন এটা সারানোর কথা না ভেবে নিয়ন্ত্রণের কথা ভাবতে হবে। কিডনি খারাপ হলে তখন জল বিষ। জল কতটা বেঁধে খেতে হবে তা চিকিৎসক বলে দেবেন। সেই সঙ্গে কতটা প্রোটিন খেতে পারবে সেটাও।
পটাশিয়াম বাড়লে কিডনি রোগে বিপজ্জনক হতে পারে। তখন হাই পটাশিয়াম আছে এরকম যত খাদ্য বা ফল যেমন লেবু, আনাজ, ডাব, শাকপাতা ইত্যাদি খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে।
আরও পড়ুন-ইন্দোর থেকে শিক্ষা নিয়ে আর হয়তো টার্নার নয়
যদি কিডনি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায় তাহলে সপ্তাহে দু’বার বা তিনবার ডায়ালিসিস করতে হবে। এখন আর এই পদ্ধতি যন্ত্রণাদায়ক নেই। ব্যথাহীনভাবে করা সম্ভব। সর্বশেষ চিকিৎসা হল কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট। দুটো কিডনি বিকল হলে কেউ যদি কিডনি দান করেন তাহলে রোগী একটা কিডনি দিয়েই সারাজীবন সুস্থ জীবনযাপন করতে পারেন।