আন্তরিক সিকিম এবং নিখাদ বন্ধুত্বের গল্পগাথা সিনিওলচু

পরিচালক ইন্দ্রনীল ঘোষের হিন্দি ছবি 'সিনিওলচু'। পটভূমি সিকিম। প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন রঘুবীর যাদব। শেষ হয়েছে শ্যুটিং। শুরু হবে পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ। মুক্তি ২০২৩-এ। লিখলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

নির্ভেজাল সম্পর্কের ছবি ‘সিনিওলচু’ (Siniolchu)। পাশাপাশি পবিত্র ভালবাসারও। এই সম্পর্ক, এই ভালবাসা আশ্চর্য রকমের ঔজ্বল্যহীন। আটপৌরে। নরম আলোর মতো। জানান দেয় না। শুধুমাত্র উপলব্ধি করতে হয়। পর্দায় এক অনন্য উপলব্ধির গল্পগাথা রচনা করেছেন পরিচালক ইন্দ্রনীল ঘোষ। এর আগে পরিচালনা ছাড়াও তিনি বহু উল্লেখযোগ্য ছবিতে শিল্প নির্দেশক হিসেবে কাজ করেছেন।
ছবির পটভূমি সিকিমের একটি পাহাড়ি গ্রাম। গ্রামটি ছবির মতো সুন্দর। তুলে ধরা হয়েছে সেখানকার সহজ-সরল গ্রামীণ জীবন, সংস্কৃতি।

কান সিং সোধা এই ছবির প্রযোজক। তাঁর সংস্থা কেএসএস প্রোডাকশন অ্যান্ড এন্টারটেইনমেন্ট এর আগে ‘ঠাম্মার বয়ফ্রেন্ড’, ‘৮/১২-বিনয় বাদল দীনেশ’, ‘হৃৎপিণ্ড’, ‘শ্রীমতী’র মতো বাংলা ছবি প্রযোজনা করেছে। ‘সিনিওলচু’ (Siniolchu) প্রথম হিন্দি ছবি।
মূল চরিত্রে অভিনয় করছেন রঘুবীর যাদব। অন্যান্য চরিত্রে প্রেমকুমার প্রধান, রিয়া ভুজেল এবং তিয়াশা। ছবিতে দেখা যাবে সিকিমের স্থানীয় শিল্পীদেরও।
সম্প্রতি কলকাতায় সাড়ম্বরে করা হল ছবির প্রচার। ছিলেন অভিনেতা, প্রযোজক, পরিচালক-সহ অনেকেই। মেলে ধরলেন ছবি সম্পর্কে কিছু কথা।

পরিচালক ইন্দ্রনীল ঘোষ জানালেন, সত্য ঘটনার উপর ভিত্তি করেই তৈরি হয়েছে ছবিটি। একজন মানুষ একটি চূড়াকে ভালবাসে। চূড়াটির নাম সিনিওলচু। এটাই মূল বিষয়। পাশাপাশি ছবিতে তুলে ধরা হয়েছে একটি মানবিক গল্প। বয়সের বাধা অতিক্রম করে দুটি মানুষ কেমন ভাবে বন্ধু হয়ে ওঠে, দেখানো হয়েছে। প্রথম থেকেই রঘুবীর যাদবের কথা ভেবেছিলাম। ওঁর সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা অসাধারণ। পুরো ইউনিট নিয়ে সিকিমের স্বয়মে টানা ১৩ দিন শ্যুটিং করেছি। টিমের প্রত্যেকেই দারুণভাবে সহযোগিতা করেছেন। তাঁদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। কৃতজ্ঞ প্রযোজকের কাছেও। তিনি পাশে না দাঁড়ালে এইরকম হৃদয়স্পর্শী একটি গল্প ছবি হয়ে উঠত না। মূল ভাবনাটা আমার স্ত্রী দীপান্বিতা ঘোষ মুখোপাধ্যায়ের। ওঁরই লেখা গল্প। পড়েই মনে হয়েছিল, এটা নিয়ে একটা ছবি হতে পারে। প্রযোজককে জানাই। তিনি এককথায় রাজি হয়ে যান। শেষ হয়েছে শ্যুটিং। শুরু হবে পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ। ছবি মুক্তি পাবে আগামী বছর, ২০২৩ সালে।

প্রযোজক কান সিং সোধা বলেন, নিখাদ বন্ধুত্ব, আনন্দ এবং বেদনার একটি অনবদ্য গল্প তুলে ধরে ‘সিনিওলচু’ (Siniolchu)। পরিচালক ইন্দ্রনীল ঘোষ অসাধারণ একটি ছবি তৈরি করেছেন। সকলের দেখা উচিত। কেএসএস প্রোডাকশনস অ্যান্ড এন্টারটেইনমেন্ট ‘সিনিওলচু’র মাধ্যমে বলিউডে প্রবেশ করছে। শুধুমাত্র ভারতীয় দর্শকদের জন্য নয়, আমাদের প্রযোজনা সংস্থা বিশ্বব্যাপী দর্শকদের জন্য অর্থপূর্ণ এবং বিনোদনমূলক ছবি তৈরি করতে আগ্রহী। বলিউডে এটা আমাদের প্রথম পদক্ষেপ। তারকা সমাবেশ নয়, আমরা প্রাধান্য দিই অর্থপূর্ণ এবং বিনোদনমূলক বিষয়বস্তুকে। হিন্দি এবং বাংলায় আরও ভাল ভাল ছবি তৈরির পরিকল্পনা আমাদের আছে।
দাউয়া এবং তার মুরগিকে ঘিরে জমাট বেঁধেছে ‘সিনিওলচু’র গল্প। ডিম বিক্রি করাই ছিল দাউয়ার একমাত্র পেশা। আট বছরের মায়া ছিল তার বন্ধু। যার সঙ্গে কথা বলে, সময় কাটিয়ে সে আনন্দ পেত। একদিন ডিম এবং মুরগি বিক্রিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। মহাসমস্যায় পড়ে দাউয়া।

আরও পড়ুন-গ্রাহককে কম সামগ্রী দিয়ে সাসপেন্ড হল রেশন ডিলার

এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন রঘুবীর যাদব। নিজের চরিত্র সম্পর্কে তিনি বলেন, দাউয়া একজন নরম মনের মানুষ। পাহাড়ি প্রকৃতির মতো নির্মল তার স্বভাব। সাদামাঠা তার জীবন-যাপন। এমন একটি চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে পেরে খুবই ভাল লেগেছে। আসলে আমি নিজে দাউয়ার মতো একজন প্রকৃতিপ্রেমী। প্রকৃতির মধ্যে আমার আমিকে খুঁজে পাই। শ্যুটিং করতে গিয়ে সিকিমের অসাধারণ প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে গিয়েছিলাম। গ্রামের মানুষ আমি। সময় পেলেই চলে যাই মাটির কাছে, শিকড়ের কাছে। নিজেকে নতুন ভাবে আবিষ্কার করি। পেয়ে যাই বাঁচার রসদ। অক্সিজেন। চরিত্রটি তাই আমার খুব পছন্দের। আমি নিশ্চিত, যাঁরা ছবিটা দেখবেন, তাঁরা একবুক প্রশান্তি নিয়ে ঘরে ফিরবেন।

কাজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি বলেন, সিকিমে শ্যুটিং করেছি। ওখানকার মানুষজন খুবই ভাল। আন্তরিক। কয়েকজন এই ছবিতে অভিনয়ও করেছেন। ওঁদের কিছুই শেখাতে হয়নি। বরং আমরাই ওঁদের কাছে শিখেছি। বিশেষত ওখানকার ভাষা। চেষ্টা করেছি যতটা সম্ভব ভালভাবে কাজ করার। বাকিটা দর্শকরা বলবেন। সবথেকে বড় কথা, কাজটা করার সময় খুব আনন্দ পেয়েছি। শ্যুটিং শেষ হয়ে যাওয়ার পর মনে হয়েছে, যাহ্, এত তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেল! আরও কিছুদিন থাকলে ওখানকার মানুষজনের সঙ্গে আরও কিছুদিন সময় কাটাতে পারতাম!

দীর্ঘ কেরিয়ার। ফুটিয়ে তুলেছেন অসংখ্য মনে রাখার মতো চরিত্র। নিজের অভিনয়-জীবন সম্পর্কে রঘুবীর বলেন, আমি বেছে বেছে ছবি করার পক্ষপাতী। ছবির পর ছবিতে নিজেকে মেলে ধরতে চাই না। অতিরিক্ত কাজের প্রতি আমার বিন্দুমাত্র লোভ নেই। কোনওদিন ছুটিনি অর্থের পিছনে। বাণিজ্যিক ছবির তুলনায় প্রাধান্য দিয়েছি অন্য ধারার ছবিকেই। আসলে বেশি কাজ করলে তাড়াতাড়ি ক্লান্ত হয়ে যাব, ফুরিয়ে যাব। তাই বরাবর আমি চুজি। বেছে বেছে কাজ করি। সিনেমা, ওয়েব সিরিজের পাশাপাশি অভিনয় করি থিয়েটারেও। বলা যায়, থিয়েটারই আমার প্রাণ, আমার গুরু। যেটুকু শিখেছি, থিয়েটার থেকেই।

বাংলা ছবি ও বাঙালিদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাশীল। রঘুবীর বলেন, আমি সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালী’ দেখেছি। অসাধারণ একটি ছবি। এমন ছবিতেই আমি বরাবর অভিনয় করতে চেয়েছি। ‘দামু’ নামের একটি বাংলা ছবিতে আমি বহু বছর আগে কাজ করেছি। দারুণ অভিজ্ঞতা। বাংলার মানুষদের খুব আপন মনে হয়। এখানকার সংস্কৃতিকে আমি সম্মান করি। ভাল লাগে কলকাতায় এসে, কলকাতার মানুষজনের সঙ্গে কথা বলে। অতীত দিনের অনেক কথা মনে পড়ে যায়। বাঙালি পরিচালক ইন্দ্রনীল ঘোষের সঙ্গে কাজ করেও খুব ভাল লেগেছে। ছবিতে তিনি ঘটিয়েছেন মৌলিক ভাবনার প্রয়োগ। ইন্দ্রনীলও আমার মতোই একজন প্রকৃতিপ্রেমী। কাজের ব্যাপারে খুবই খুঁতখুঁতে। এমন মানুষের সঙ্গে কাজ করে সমৃদ্ধ হয়েছি। ইন্দ্রনীল খুব যত্ন নিয়ে ‘সিনিওলচু’ তৈরি করেছেন। আশা করি ছবিটা সবাই দেখবেন।

ছবিতে সুর দিয়েছেন দেবজ্যোতি মিশ্র। সম্পাদনা করেছেন সুজয় দত্ত রায়। চিত্রগ্রাহক শুভঙ্কর ভড়। চিত্রনাট্য রচনা করেছেন দীপান্বিতা ঘোষ মুখোপাধ্যায়। ‘সিনিওলচু’ (Siniolchu) ঘিরে দর্শকদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
ছবি : শুভেন্দু চৌধুরি

Latest article