লহু

বিনোদন এবং রাজনীতি যেন রাজযোটক। বিনোদনের তারকারা যেমন রাজনীতির সঙ্গে জুড়েছেন তেমনই রাজনীতির তাবড় ব্যক্তিত্বরা বিনোদনে। সেই ধারাকে অব্যাহত রেখেই এবার বঙ্গ রাজনীতির অন্যতম ব্যক্তিত্ব কুণাল ঘোষ বিনোদনের ময়দানে। একাধারে দক্ষ রাজনীতিক, দুঁদে সাংবাদিক, সাহিত্যিক কুণাল ঘোষের লেখা রোমহর্ষক থ্রিলারধর্মী উপন্যাস ‘পথ হারাব বলেই’ অবলম্বনে তৈরি হচ্ছে ওয়েব সিরিজ ‘লহু’। যাতে প্রথমবার জুটি বাঁধছেন সোহিনী সরকার এবং বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেতা আরিফিন শুভ। লিখছেন শর্মিষ্ঠা ঘোষ চক্রবর্তী

Must read

দক্ষ রাজনীতিক, দুঁদে সাংবাদিক কুণাল ঘোষের সাহিত্যজগতে অবাধ বিচরণের কথা অনেকেরই জানা। ব্যস্ততম শিডিউলের ফাঁকেই তিনি এখন পর্যন্ত লিখে ফেলেছেন বহু উপন্যাস এবং গল্প। পেয়েছেন স্বীকৃতি। তাঁরই একটি জনপ্রিয় থ্রিলার উপন্যাসের গল্প নিয়ে এবার তৈরি হচ্ছে একটি ওয়েব সিরিজ। উপন্যাসটির নাম ‘পথ হারাব বলেই’। ২০২০ সালের বইমেলার আগে তাঁর নতুন দুটি বই প্রকাশ হয়। একটি ছিল ‘শাস্তির পর’।

আরও পড়ুন-এখনও খোঁজ মেলেনি জলপ্রপাতে পড়া ছাত্রের

আরেকটি নবকল্লোলে প্রকাশিত উপন্যাস ‘পথ হারাব বলেই’। গল্পের কেন্দ্রবিন্দুতে এক অন্তঃসত্ত্বা মাওবাদী নেত্রী। সম্প্রতি স্বত্ব কেনা হয়েছে উপন্যাসটির। এর ওপর ভিত্তি করেই তৈরি হবে ওয়েব সিরিজ ‘লহু’। এই সিরিজের মাধ্যমে প্রথমবার জুটি বাঁধছেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেতা আরিফিন শুভ এবং টলিউডের সোহিনী সরকার। এই খবরটা প্রকাশিত হবার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে গিয়েছিল জল্পনাকল্পনা— তাহলে কি এবার বড়পর্দায় দেখা যাবে কুণাল ঘোষকে! সব কৌতূহলের অবসান ঘটিয়ে তিনি মিডিয়াকে জানান, আমার পরিচালনায় টেলিফিল্ম রয়েছে। এ-ছাড়াও একটি সিরিয়াল শুরু হয়েছিল ‘চন্দন’ নামে। সেখানে আমার অভিনয় করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। সেগুলো আমার শখের বিষয় ছিল। কিন্তু লেখালিখিতেই আমি অনেক বেশি স্বচ্ছন্দ। ফলে ওগুলো শখ দিয়েই শেষ হয়েছে। তবে টেলিফিল্মটা আমি খুব যত্ন নিয়ে করেছিলাম। সেটার কাহিনি-চিত্রনাট্য আমারই ছিল।

আরও পড়ুন-ময়দানে আর চলবে না ঘোড়ায় টানা গাড়ি! কী বলছে হাই কোর্ট

ওয়েব সিরিজটি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘প্রযোজক অরিন্দম দে আর্থিক চুক্তিতে আমার থেকে স্বত্ব কিনেছেন। একটা গল্প থেকে ছবি বা ওয়েব সিরিজ যেটাই হোক, তৈরি করতে গেলে কিছু তো রদবদল করতেই হয়। চিত্রনাট্যের স্বার্থে সেই বদল থাকবে তবে যে-বদল আনতে হয়েছে তা নিয়ে আমার আপত্তি নেই।”
কেন এরকম একটা গল্প নির্বাচন? এই প্রসঙ্গে সিরিজের প্রযোজক অরিন্দম দে জানালেন, ‘কুণালদার উপন্যাসটা পড়েই আমার ভীষণ ভাল লেগেছিল। তখন আমি ওঁর সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারপর দীর্ঘ আলোচনা হয়। প্রায় দু-বছর ধরে এটার ওপর কাজ চলছিল আমাদের। এরপর সিদ্ধান্ত নিলাম এটার ওপর ভিত্তি করে সিরিজটা করার। আমি নিজেও একজন পরিচালক কিন্তু এখন প্রোডাকশনটাই বেশি করছি। ইন দ্য মিন টাইম রাহুল আমাদের টিমে এল, যে এই ওয়েব সিরিজের পরিচালক। রাহুল ইয়ং পরিচালক হিসেবে খুব ভাল কাজ করছে। দিলখুশ, কিশমিশ-এর মতো ছবির পরিচালনা করেছে। ওর ব্যতিক্রমী চিন্তাভাবনা রয়েছে, ক্রিয়েটিভিটি রয়েছে তাই অনেক কিছু ইনপুট করতে পারবে।

আরও পড়ুন-যুদ্ধে ছেদ পড়তেই জেলমুক্ত ৩৯ প্যালেস্তিনীয়, ২৫ পণবন্দিকে মুক্তি হামাসের

সিরিজের পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায় ইতিমধ্যে দেবের ‘কিশমিশ’ ছবিটির জন্য বেশ পরিচিত, এ ছাড়া পরান বন্দ্যোপাধ্যায়, খরাজ মুখোপাধ্যায়ের ‘দিলখুশ’ ছবিটিরও পরিচালনা করেছেন তিনি। ‘দাদুর কীর্তি’ নামে একটা দারুণ মজার ওয়েব সিরিজ তৈরি করেছেন হৈচৈর জন্য। রাহুল এই প্রসঙ্গে বললেন, ‘‘কুণালদার উপন্যাসটা পড়ে একটা খেরোর খাতার মতো ফিলিং এসেছিল আমার— গল্প নয়, এটা অনেকটাই যেন একটা ডায়েরি। ওঁর জীবনদর্শনটাই যেন গল্পের আকার নিয়েছে। চরিত্রগুলো সব ভীষণভাবে বাস্তবের মাটি-ঘেঁষা। এরা সবাই যেন মানুষ, কেউ কল্পনার নয়। তাই খুব পছন্দ হয়েছিল। তখন আমি এটার চিত্রনাট্য লেখা শুরু করি। গল্প এক রেখে ছবির প্রয়োজনে একটু বদল করা হয়েছে। কুণালদা যেটা সুন্দর করে লিখেছেন সেটাকেই এক্সিকিউট করার চেষ্টা করেছি আমি। এই ওয়েব সিরিজটা সামনের বছর ফেব্রুয়ারি-মার্চে রিলিজ হবার কথা রয়েছে। আপাতত এটা নিয়েই ব্যস্ত। সামনের বছর ‘জুনিয়র’ নামে একটি ছবি করব। তারও প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।”

আরও পড়ুন-মুখ্যমন্ত্রীর স্পেন সফরের জের, নবান্নে মাদ্রিদের প্রতিনিধিরা

‘লহু’তে আরিফিন শুভ এবং সোহিনী সরকার ছাড়াও রয়েছেন অভিনেত্রী রাজনন্দিনী পাল, জ্যোতির্ময়ী কুণ্ডু, সৌম্য মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। চিত্রনাট্য লিখেছেন পরিচালক রাহুল মুখার্জি এবং অরিত্র সেনগুপ্ত। উপন্যাসের গল্পটা হল, ‘এক মাওবাদী নেত্রী জঙ্গল ছেড়ে নদিয়া জেলার একটি পল্লি এলাকাতে আশ্রয় নেয়। সেখানে ছদ্ম পরিচয়ে আত্মগোপন করেছে। সেখানে দলের লোকেরাই তাকে লুকিয়ে থাকতে সাহায্য করে। এদিকে পুলিশও খবর পেয়েছে এবং সেই মাওবাদী নেত্রীকে খুঁজে পেতে তারা মরিয়া। তাকে ধরতে তারা ছদ্ম-পরিচয়ে স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চের একজন এক দুঁদে অফিসারকে পাঠায়। ওই পুলিশ আধিকারিককে সংশ্লিষ্ট এলাকায় একটা বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতে বলা হয়। তবে সেই খবর পেয়ে যায় সেই মাওবাদী নেত্রী। জেলে বন্দি থাকা ‘বিপ্লবী’ বন্ধুদের মারফত মাওবাদী নেত্রী জানতে পারে তাকে পুলিশ নজরদারির মধ্যে রেখেছে। ফলত, অন্য জায়গায় সরে যাওয়াই লক্ষ্য হয়ে ওঠে তার। এই গল্পের ওপর ভিত্তি করেই তৈরি হয়েছে জমজমাট চিত্রনাট্য। শ্যুটিং শুরু হয়ে গেছে। কলকাতা ছাড়াও এর শ্যুটিং হবে শিলং এবং আরও একাধিক জায়গায়। এই সিরিজটি মুক্তি পাবে বাংলাদেশের ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ‘চরকি’তে। বাংলাদেশের কোনও ওটিটির এটা প্রথম কাজ ভারতের সঙ্গে। ফলে নিঃসন্দেহেই খুব ভাল বিষয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

Latest article