আঁধার পেরিয়ে আলো

দুই চোখে হঠাৎ নেমে এসেছিল অন্ধকার। তবে হাল ছাড়েননি। বহু বাধা পেরিয়ে জীবনে সাফল্য পেয়েছেন বাঁকুড়ার সোমা সাঁতরা। বর্তমানে স্কুলে পড়ান।

Must read

দুই চোখে হঠাৎ নেমে এসেছিল অন্ধকার। তবে হাল ছাড়েননি। বহু বাধা পেরিয়ে জীবনে সাফল্য পেয়েছেন বাঁকুড়ার সোমা সাঁতরা। বর্তমানে স্কুলে পড়ান। তাঁর সঙ্গে কথা বললেন অংশুমান চক্রবর্তী

আর পাঁচজন শিশুর মতোই দুই চোখে আলো নিয়ে জন্মেছিলেন বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের সোমা সাঁতরা। প্রাণ খুলে উপভোগ করতেন পৃথিবীর সৌন্দর্য। সূর্যের লাল, আকাশের নীল, গাছের সবুজ রঙে রঙিন হয়ে উঠতেন। তীব্রভাবে অপছন্দ করতেন কালোকে। অথচ ভাগ্যের কী পরিহাস, সেই কালোই তাঁকে ধীরে ধীরে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরল। কমে আসতে লাগল চোখের জ্যোতি।

আরও পড়ুন-কোটি কোটি টাকা ঢেলে ‘নগরনটী’দের দল কেনে

বর্তমানে তিনি যাপন করছেন প্রায় অন্ধত্ব জীবন। তবে অন্ধকারের মধ্যেও তিনি পেয়েছেন আলোর সন্ধান। একটা সময় প্রায় থমকে যেতে বসা জীবনকে তিনি দিয়েছেন গতি। বহু বাধা পেরিয়ে, আজ তিনি একটি হাইস্কুলের শিক্ষিকা। সোমার কাছে জানতে চাইলাম, কীভাবে করলেন অসাধ্যসাধন? তিনি জানালেন, বর্তমানে আমার ৭৫ শতাংশ দৃষ্টি সংক্রান্ত প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। তবে অতি শৈশবে সবকিছু স্বাভাবিক ছিল। দেখতেও পেতাম। একটা সময়ের পরে আমার দৃষ্টিশক্তি কমে আসতে থাকে। পড়তে অসুবিধা হত, লিখতে অসুবিধা হত। পরামর্শ নিয়েছি বহু চিকিৎসকের। তাঁরা জানান রেটিনার সমস্যার কারণেই কমেছে আমার দৃষ্টিশক্তি। ভেঙে পড়েছিলাম।

তবে ধীরে ধীরে মনকে শক্ত করেছি। চালিয়ে গেছি লেখাপড়া। এক-একটা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি সসম্মানে। মা-বাবা-দাদার পাশাপাশি শিক্ষক-শিক্ষিকারা আমাকে সহযোগিতা করেছেন। পাশে থেকেছে বন্ধুবান্ধবদের একাংশ। উৎসাহ পেয়েছি দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতাযুক্ত কিছু মানুষেরও। প্রত্যেকের সহযোগিতা নিয়েই আমি সামান্য হলেও এগোতে পেরেছি। বর্তমানে আমি বাঁকুড়ার গোগরা এসসি হাইস্কুলের শিক্ষিকা। পড়াই সংস্কৃত।

সহকর্মী ও ছাত্রছাত্রীদের কাছে কতটা সহযোগিতা পান? সোমা জানালেন, আমার দৃষ্টির সমস্যার কথা সবাই জানেন। প্রতি মুহূর্তে আমার সহকর্মীরা আমাকে সহযোগিতা করেন। পাশে আছে আমার ছাত্র-ছাত্রীরাও। স্কুলের এক বিল্ডিং থেকে আর এক বিল্ডিংয়ে তারা আমার হাত ধরে এগিয়ে দেয়। সহযোগিতা করে ক্লাসেও। এইভাবেই চলছে।

আসলে আমি কোনওদিন আমার প্রতিবন্ধকতাকে প্রশ্রয় দিইনি। হার না মানা লড়াই চালিয়ে গেছি অন্ধকারের সঙ্গে। আজ কিছুটা হলেও আমি সফল হতে পেরেছি। আঁধার পেরিয়ে অন্যভাবে দেখেছি আলোর মুখ।

পড়াশোনার পাশাপাশি গান ভালবাসেন সোমা। বললেন, আমি সময় পেলেই আপনমনে গান গাই। তবে শিখিনি কোনওদিন। স্কুলের অনুষ্ঠানে গেয়েছি বেশ কয়েকবার। সাহিত্যের প্রতি আমার ঝোঁক আছে। সামান্য লেখালিখিও করি। শিখছি কম্পিউটার। নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। এখন আমার জীবনের একটাই লক্ষ্য, ছাত্রছাত্রীদের তৈরি করা। তাদের চোখ দিয়েই আমি দেখব আগামী দিনের পৃথিবী।

Latest article