বিশ্বকাপ মেসির
ক্রীড়াজগতে বাইশের সেরা মুহূর্ত বাছলে নিঃসন্দেহে তালিকায় শীর্ষে থাকবে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়। কেরিয়ারে পঞ্চম বিশ্বকাপ খেলতে নেমেছিলেন লিওনেল আন্দ্রেস মেসি। ২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠলেও কাপ ও ঠোঁটের দূরত্ব ঘোচাতে পারেননি এলএম টেন। অবশেষে স্বপ্নপূরণ মেসির। ৩৬ বছরের খরা কাটিয়ে বিশ্বকাপ এল আর্জেন্টিনায়। কাতারে স্বপ্নের ফাইনালে গতবারের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সকে টাইব্রেকারে হারিয়ে ট্রফি জিতল আলবিসেলেস্তেরা। ফাইনালে হ্যাটট্রিক করেও ট্র্যাজিক নায়ক কিলিয়ান এমবাপে। তবে সর্বোচ্চ গোলদাতার গোল্ডেন বুট পেলেন ফরাসি তারকা। সেরা ফুটবলারের গোল্ডেন বল উঠল মেসির হাতে।
আরও পড়ুন-তিনদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ব্রাজিলে, প্রিয় স্টেডিয়ামে শেষবার ফুটবল সম্রাট, স্যান্টোসেই শেষকৃত্য পেলের
ব্যাডমিন্টনে ভারতের ইতিহাস
ব্যাডমিন্টন কোর্টে ব্যক্তিগত বিভাগে বারবার তেরঙ্গা উড়িয়েছেন পি ভি সিন্ধু, সাইনা নেহওয়াল, লক্ষ্য সেনরা। কিন্তু দলগতভাবে লক্ষ্য, শ্রীকান্তদের সর্বোচ্চ সাফল্য ২০২২ সালেই। এবারই প্রথমবার থমাস কাপের ফাইনালে ওঠে ভারত। আর প্রথমবারই সোনা জয়। খেতাবি লড়াইয়ে অপ্রতিরোধ্য ইন্দোনেশিয়াকে হারিয়ে প্রথমবার থমাস কাপ জিতে ইতিহাস রচনা করে ভারতীয় ব্যাডমিন্টন দল। শ্রীকান্ত, লক্ষ্য, এইচ এস প্রণয়, চিরাগ শেট্টি, সাত্ত্বিক সাইরাজরা ইতিহাসের পাতায় নাম লেখান।
আরও পড়ুন-ওঁর জাদু না দেখে মাঠে লড়াই করেছিলাম আমরা
কমনওয়েলথে উজ্জ্বল বাংলা
বাইশে ভারতের সেরা সাফল্য কমনওয়েলথ গেমসে। ২০টি সোনা-সহ ৬১টি পদক জয় ভারতের। ভারোত্তোলনে মীরাবাই চানুর সোনা জয় দিয়ে শুরু হয়েছিল বার্মিংহাম কমনওয়েলথ গেমসে ভারতের পদক জয়ের অভিযান। এর পর ভারোত্তোলনে পুরুষ ও মহিলা বিভাগে একাধিক পদক এসেছে ভারতের ঝুলিতে। সোনার পদক জিতে আপামর বাঙালিকে গর্বিত করেছেন বাংলার ছেলে ভারোত্তোলক অচিন্ত্য শিউলি। ৪০ বছরের শরথ কমল সিঙ্গলসে কেরিয়ারের দ্বিতীয় সোনা জেতেন বার্মিংহামে। কুস্তিতে সোনা জেতেন বজরং পুনিয়া, সাক্ষী মালিক, ভিনেশ ফোগতরা। হকিতে ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে রুপোতে সন্তুষ্ট থাকতে হয় ভারতীয় পুরুষ হকি দলকে। মেয়েরা জেতেন ব্রোঞ্জ।
আরও পড়ুন-কেন্দ্রের বঞ্চনা অব্যাহত ফুঁসছে আলিপুরদুয়ার
বিশ্বসেরা নিখাত
২০২২ সালটা ভুলবেন না ভারতীয় মহিলা বক্সার নিখাত জারিন। বার্মিংহাম কমনওয়েলথ গেমসে পদক জয়ের আগেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন বক্সার হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। মেরি কম, সরিতা দেবী, জেনি এবং লেখার পর পঞ্চম ভারতীয় মহিলা হিসেবে বক্সিংয়ে বিশ্বসেরা হয়ে নজির গড়েন নিখাত। ফাইনালে অলিম্পিয়ান জুটামাস জিটপংকে ৫-০ তে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নের মুকুট পরেন তেলেঙ্গানার নিজামাবাদের মেয়ে।
রজারের অবসর
সেরেনা উইলিয়ামসের না-বলা অবসরের হতাশার মধ্যেই টেনিসের আরও এক অধ্যায়ের সমাপতন হল। অবসর ঘোষণা করেন কোর্টের রাজা রজার ফেডেরার। হাঁটুর চোটের কারণে বেশ কিছুদিন ধরেই ভুগছিলেন সুইস সম্রাট। অস্ত্রোপচারের পরেও ফিট হননি ফেডেক্স। ভক্তরা যখন কোর্টে ফেরার অপেক্ষায়, ঠিক তখনই অবসরের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন সুইস কিংবদন্তি।
আরও পড়ুন-এনজেপিতে মুখ্যমন্ত্রীর প্রকল্পই শিলান্যাস করলেন প্রধানমন্ত্রী
ফের ব্যর্থ রোহিতরা
শেষবার ২০০৭ সালে টি২০ বিশ্বকাপ জিতেছিল ভারত। সেই প্রথম এবং সেই শেষ। এবার অনেক প্রত্যাশা জাগিয়েই অস্ট্রেলিয়ায় বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছিল রোহিত শর্মার নেতৃত্বাধীন মেন ইন ব্লু। কিন্তু ৯ বছরের আইসিসি ট্রফি জয়ের খরা এবারও কাটাতে পারেনি ভারতীয়রা। সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের কাছে ১০ উইকেটে লজ্জার হারে স্বপ্নভঙ্গ রোহিতদের। নিঃসন্দেহে বিদায়ী বছরে ভারতীয় ক্রিকেটে সব থেকে হতাশার মুহূর্ত টি২০ বিশ্বকাপ জিততে না পারা।
আরও পড়ুন-এনজেপিতে মুখ্যমন্ত্রীর প্রকল্পই শিলান্যাস করলেন প্রধানমন্ত্রী
ওয়ার্নের অকালমৃত্যু
বিদায়ী বছরে ক্রিকেট বিশ্বকে স্তম্ভিত করে না ফেরার দেশে পাড়ি দেন লেগ স্পিনের জাদুকর শ্যেন ওয়ার্ন। মাত্র ৫২ বছর বয়সে প্রয়াত হন অস্ট্রেলীয় কিংবদন্তি। ওয়ার্ন ছুটি কাটাচ্ছিলেন থাইল্যান্ডে। সেখানেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ১৪৫ টেস্টে ৭০৮ উইকেট নিয়েছিলেন ওয়ার্ন। শতাব্দীর সেরা বলটি বেরিয়েছিল ওয়ার্নের হাত থেকেই। টেস্টের পাশাপাশি ওয়ান ডে-তেও একইরকম সাফল্য ছিল তাঁর। অবসর নেওয়ার পর কোচিংয়েও নজর কেড়েছিলেন ওয়ার্ন।
আরও পড়ুন-সরকারি অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক স্লোগান, মঞ্চেই উঠলেন না মুখ্যমন্ত্রী
বোর্ডে সৌরভের অপসারণ
১৪ বছর পর পুজোর রেশ মিলিয়ে যেতে না যেতেই ফের বিষাদের সানাই। সেদিন বাইশ গজ থেকে বিদায় নিয়েছিলেন ক্রিকেটার সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। ১১ অক্টোবর, ২০২২— ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রশাসন থেকে বিদায় নিলেন। তাঁর সঙ্গে গত তিন বছর ধরে কাজ করা পুরনো কর্তারা প্রায় প্রত্যেকেই থেকে গেলেন। ‘উইকেট’ গেল শুধু বাংলার সৌরভের। এমনকী আটকে দেওয়া হল আইসিসি-তে যাওয়ার রাস্তাও। প্রশ্ন ওঠে, রাজনৈতিক গুগলিতেই কি
বোল্ড হলেন ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম সফল অধিনায়ক? যেখানে আদালত বোর্ড সভাপতি পদে তাঁর মেয়াদ বাড়িয়ে দিয়েছিল। বিসিসিআই-এর নতুন সভাপতি হন ’৮৩-র বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য রজার বিনি।
আরও পড়ুন-সরকারি অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক স্লোগান, মঞ্চেই উঠলেন না মুখ্যমন্ত্রী
ঝুলন, মিতালির অবসর
ঝুলন গোস্বামী এবং মিতালি রাজ— ভারতে মেয়েদের ক্রিকেটের দুই মুখ। দুই মহাতারকাই বুটজোড়া তুলে রাখলেন ২০২২ সালেই। একটা আক্ষেপ অবশ্য দু’জনকেই বাকি জীবনে তাড়া করবে, সেটা হল বিশ্বকাপ জিততে না পারা। এর বাইরে দু’জনেই যে সাফল্য অর্জন করেছেন, তা মেয়েদের ক্রিকেটে ইতিহাস হয়ে থাকবে। বাংলার ঝুলন বিশ্বের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি হিসেবে অবসরের গ্রহে। দেশের হয়ে ২০৪টি ওয়ান ডে ম্যাচে ২৫৫ উইকেট চাকদহ এক্সপ্রেসের। অন্যদিকে, মিতালি মেয়েদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বাধিক রান সংগ্রাহক। অবসর নিলেও ধারাভাষ্যকার হিসেবে এ বছরই আত্মপ্রকাশ ঘটেছে ভারতের প্রাক্তন অধিনায়কের।
আরও পড়ুন-সরকারি অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক স্লোগান, মঞ্চেই উঠলেন না মুখ্যমন্ত্রী
ফিফার কোপে ভারত
মাত্র ১২ দিনের জন্য হলেও ভারতীয় ফুটবল গভীর সংকটে পড়ে গিয়েছিল। স্বাধীনতা দিবসের রাতে ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সাসপেন্ড করে ফিফা। তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপের দায়ে এই নির্বাসন দেওয়া হয়। তবে সুপ্রিম কোর্টের নতুন রায়ে প্রশাসনিক প্যানেল বাতিল হওয়ার পরই এআইএফএফ-এর উপর থেকে নির্বাসন তুলে নেয় ফিফা। ফেডারেশনেও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হয়। প্রাক্তন ফুটবলার কল্যাণ চৌবে সভাপতি নির্বাচিত হন।
সবুজ মাঠে রক্তের দাগ
ফুটবল মাঠে নজিরবিহীন দুর্ঘটনা। ইন্দোনেশিয়ায় একটি ফুটবল ম্যাচে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় ১২৫ জন ফুটবলপ্রেমীর। দেশের দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাব আরেমা এবং পারসেবায়া সুরাবায়ার মধ্যে চলছিল উত্তেজক ম্যাচ। আরেমা ম্যাচটি হারতেই রণক্ষেত্রে পরিণত হয় স্টেডিয়াম। খেলার শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গেই মাঠে ঢুকে পড়ে ক্ষিপ্ত আরেমার সমর্থকরা। মাঠের ঝামেলার রেশ ছড়িয়ে পড়ে গ্যালারিতেও। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়তেই অবস্থার অবনতি হয়। হুড়োহুড়িতে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় শতাধিক মানুষের।
আরও পড়ুন-ফুটবল সম্রাট পেলেকে শ্রদ্ধা জানিয়ে শুরু MP Cup-এর সমাপ্তি অনুষ্ঠান
ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই শেষ। নতুন বছর শুরু হওয়ার দু’দিন আগেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন ফুটবল সম্রাট পেলে। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। আসল নাম এডসন অ্যারানটেস ডু ন্যাসিমেন্টো। কিন্তু পেলে নামেই পরিচিত ছিলেন ব্রাজিলীয় ফুটবলের কিংবদন্তি। ব্রাজিলের হয়ে টানা ২০ বছর খেলে ৯২ ম্যাচে গোল করেছেন ৭৭টি। পরপর চারটি বিশ্বকাপে খেলেছেন। তার মধ্যে তিনবার (১৯৫৮, ১৯৬২, ১৯৭০) চ্যাম্পিয়ন। যা বিশ্ব ফুটবলে রেকর্ড। বিশ্বকাপে গোল করেছেন ১২টি। ব্রাজিলের স্যান্টোসের হয়ে খেলেছেন টানা ১৮ বছর। ফুটবল জীবনে ১৩৬৩ ম্যাচ খেলে গোল করেছেন ১২৮১টি। যা এখনও রেকর্ড।