‘আমাকে আঘাত করতেই অভিষেককে হেনস্তা’, অহীন্দ্র মঞ্চের কর্মিসভায় আক্রমণাত্মক নেত্রী

Must read

প্রতিবেদন : এজেন্সির ভয় দেখিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসকে আটকাতে পারবে না বিজেপি। ভোট এলেই ওরা এসব করে। উপনির্বাচন ঘোষণার পর প্রথম কর্মিসভায় দাঁড়িয়ে আক্রমণাত্মক মেজাজে বললেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রে তিনিই দলের প্রার্থী। তাঁরই সমর্থনে বুধবার চেতলার অহীন্দ্র মঞ্চে ছিল কর্মিসভা।

আরও পড়ুন : ট্রমাকেয়ার ইউনিট রায়গঞ্জ হাসপাতালে

 

হলে উপস্থিত দলের সিনিয়র লিডার, মন্ত্রী এবং ভবানীপুরের ৮টি ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, যেই নির্বাচন ঘোষণা হল তখনই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নোটিশ পেল। পার্থ চট্টোপাধ্যায় নোটিশ পেল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা থেকে। আমার উপর রাগ, অভিষেককে ডাকছে! দিল্লিতে কেন ডাকতে হচ্ছে? ওখানে কাকে চুমু খাবে? কলকাতায় তো ওদের অফিস আছে, এখানে জেরা করুক৷ দিল্লিতে অভিষেককে ৯ ঘণ্টা জেরা করা হয়েছে। তারপর আবারও ডেকে পাঠাচ্ছে। আসল চোর-ডাকাত যারা টাকা নিয়েছে, তাদের নাম নেই কোথাও। আসলে আমাকে আঘাত করতে ওরা অভিষেককে হেনস্তা করছে।

মোদি-অমিত শাহ মিলে যা ইচ্ছে তাই করে যাচ্ছে। একটা সরকার শুধু একে গ্রেফতার করো, ওকে গ্রেফতার করো, পেগাসাস করো এই করেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, রাজনৈতিক ভাবে বিজেপি তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে পেরে উঠছে না। তাই এজেন্সি দিয়ে ভয় দেখাচ্ছে। তৃণমূল কংগ্রেস এসবে ভয় পায় না। আমাদের যাদের ডাকছে তারা সবাই যাচ্ছে। কিন্ত তথ্যপ্রমাণ-সহ রাজ্য সরকারে কোনও এজেন্সি ওদের কাউকে ডাকলে মামলা করে তা আটকে দিচ্ছে। এটা কেন হবে? একজনের বিরুদ্ধে মার্ডার কেস রয়েছে, তাও ওদের কাউকে জেরা করা যাবে না! কেন? উনি কি ভগবানের জ্যেষ্ঠ পুত্র? তৃণমূলের বেলায় এক নিয়ম আর বিজেপির বেলায় আর এক নিয়ম? তীব্র কটাক্ষ দলনেত্রীর। তিনি বলেন, আমরা মাথা উঁচু করে বাঁচব। আর যারা নিজেদেরকে বিকিয়ে দিয়েছে তারা কোনওদিন মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারবে না। বিজেপি এর আগে মুলায়ম সিং যাদব, কংগ্রেসের একাধিক নেতা-মন্ত্রী, মায়াবতী, শারদ পাওয়ার-সহ আরও অনেককেই চুপ করিয়েছে, সে কথা উল্লেখ করে তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, তৃণমূল কংগ্রেসকে এভাবে দমিয়ে রাখা যাবে না।

এদিন কর্মিসভায় বিজেপিকে তুলোধোনা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি যে দানবীয় শক্তি নিয়ে বাংলা দখল করতে চেয়েছিল, বাংলার মানুষ তা রুখে দিয়েছেন। সে কারণে বাংলার জনসাধারণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এই প্রসঙ্গেই নন্দীগ্রামের নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিজেপির চক্রান্ত, ষড়যন্ত্রের জন্য তাঁকে আবার নির্বাচনে দাঁড়াতে হচ্ছে। যদিও ঘরের মেয়ে হিসেবে ভবানীপুরে ফিরতে পেরে তিনি খুশি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, নন্দীগ্রামে চক্রান্ত করে আমাকে আক্রমণ করা হয়েছিল। পায়ে আঘাত করা হয়েছিল৷ ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা করে নির্বাচন করা হয়েছিল। কারা কীভাবে পরিকল্পনা করেছিল, পরে সব জেনেছি।
ওখানকার সব অফিসারদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। নন্দীগ্রামে পুরোটাই ছাপ্পা ভোট করা হয়েছিল। মামলা চলছে, তাই এটা নিয়ে বেশি কিছু বলব না। ওখানকার ভোটিং মেশিন নিয়ে অনেক কিছু বলার আছে। বুথে গিয়ে দেখেছি প্রচুর ভোটিং মেশিন ভাঙা। অনেক কিছুরই হদিশ নেই।

আরও পড়ুন অভিষেককে হেনস্থা করছে, নারদার আসল চোরের নাম নেই : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

ভবানীপুরে উপনির্বাচন নিয়ে কথা বলতে গিয়ে এদিন খানিকটা স্মৃতিমেদুর হয়ে পড়েন দলনেত্রী। তিনি বলেন, ঈশ্বরের আশীর্বাদেই আবার ভাবানীপুরে আমি ফিরতে পারলাম। যাদবপুর বাদ দিলে দক্ষিণ কলকাতায় ৬টা লোকসভা নির্বাচনে আমি জিতেছি। ২০১১-তেও নির্বাচনের ৬ মাস বাদে ভবানীপুর থেকে আমি জিতেছি। সুব্রত বক্সি ওখানে প্রথমে জিতেছিল। ২০১৬-তেও আমি ভবানীপুর থেকে দাঁড়িয়েছিলাম। ভবানীপুর আমাকে কোনওদিন ফেরায়নি। ঘরের মেয়ে আবার ঘরে ফিরে এসেছি। উপস্থিত দলের নেতা-কর্মীদের কার্যত নির্দেশ দিয়ে দলনেত্রী বলেন, মাথা ঠান্ডা রেখে ভোট করতে হবে। কোনও প্ররোচনায় পা দেওয়া চলবে না। কোনওভাবেই মাথা গরম করা চলবে না।
দলনেত্রী এদিন ভবানীপুর বিধানসভার আটটি ওয়ার্ডের দায়িত্ব ভাগ করে দেন। ৬৩ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্বে সুব্রত মুখোপাধ্যায়, ৭০-৭১-এ বাবলু শিখ, ৭৩-এ কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়, ৭২ দেখবেন সুব্রত বক্সি, ৭৪, ৭৭, ৮২-তে ফিরহাদ হাকিম। তাঁকে সহযোগিতা করবেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে স্থানীয় কোঅর্ডিনেটররা। এছাড়াও সুব্রত বক্সির সঙ্গে থাকবেন দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং শুভাশিস চক্রবর্তী।

আরও পড়ুন :অভিষেককে হেনস্থা করছে, নারদার আসল চোরের নাম নেই : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

এই উপনির্বাচনে দলনেত্রীর চিফ ইলেকশন এজেন্টের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়কে। নেত্রী জানিয়েছেন, ১০ সেপ্টেম্বর তিনি মনোনয়ন জমা দেবেন। সঙ্গে নির্দেশ দিয়েছেন, যাঁরা নির্বাচনের দিন বুথে বসছেন এবং যাঁরা ভোট গণনায় থাকবেন, তাঁদের অবশ্যই ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ নিয়ে নিতে হবে। সবশেষে নেত্রী বলেন, ভবানীপুরে খেলা হবে। জেতাও হবে। নেত্রীর সুরে সুর মেলান উপস্থিত নেতা-কর্মীরাও।

Latest article