মণীশ কীর্তনীয়া : মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবার আজমেঢ়ে চাদর চড়ালেন, পুষ্করের ব্রহ্মা মন্দিরে দিলেন পুজো। এসবের মাঝেই সূদূর রাজস্থানের বুকেও আওয়াজ উঠল, খেলা হবে-মা মাটি মানুষ জিন্দাবাদ। না, কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়। ছিল না কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সঙ্গে সাক্ষাৎও। শুধু আজমেঢ়ের খোয়াজা মৈনুদ্দিন চিস্তি দরগা শরিফে চাদর চড়ানো আর প্রার্থনা এবং পুষ্করে পৃথিবীর একমাত্র ব্রহ্মা মন্দিরে পুজো দেওয়া। কিন্তু হলে কী হবে, মাত্র কয়েক ঘণ্টার ঝটিকা সফরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজমেঢ়, পুষ্করের হৃদয় জিতে নিলেন। দুটি জায়গাতেই উপচে পড়া ভিড়-তাঁকে একটিবার ছুঁতে চাওয়ার প্রাণপণ মরিয়া চেষ্টা-কয়েক হাজার মোবাইলে একসঙ্গে ছবি ওঠা- দরগার মধ্যেই জনতার খেলা হবে স্লোগান আর পুষ্করের ব্রহ্মা ও সাবিত্রী ঘাটে মা-মাটি মানুষ জিন্দাবাদ-গঙ্গাসাগর জিন্দাবাদ ধ্বনি। এসব দেখে একলহমায় ভ্রম হতে বাধ্য এ কোথায় আছি, সূদূর রাজস্থান নাকি বাংলার কোনও দরগা কিংবা মন্দিরে। আর এসবের মাঝে আমজনতা থেকে পুণ্যার্থীদের সামলাতে এই ডিসেম্বরের নরম সকালেও রাজস্থান পুলিশ-প্রশাসনের রীতিমতো গলদঘর্ম অবস্থা। আজমেঢ় বা পুষ্করে দেশ-বিদেশের অনেক নেতা-নেত্রী, ভিভিআইপিরা আসেন সারা বছর।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
কিন্তু বাংলার মুখ্যমন্ত্রী জননেত্রীমমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঘিরে রাজস্থানের মাটিতেও যে এরকম বাঁধন ছাড়া উৎসাহ উদ্দীপনা ও আবেগের ঢেউ আছড়ে পড়তে পারে তা তারা স্বপ্নেও আন্দাজ করতে পারেননি৷ এটাই নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্যারিশমা।
এদিন বেলা ঠিক ১টা ১০ মিনিট নাগাদ খোয়াজা মইনুদ্দিন চিস্তির দরগার বুলন্দ দরওয়াজার সামনে মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় থামতেই চারপাশে হইচই শুরু। স্থানীয় ব্যবসাদার-হোটেল মালিকরা আগেই জেনে গিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসছেন। ফলে উৎসাহ- আলোচনা ছিলই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গাড়ি থেকে নামার পর স্থানীয়রা তাঁকে শুভেচ্ছা জানান। তিনিও সৌজন্যের নমস্কার ফিরিয়ে দেন। দরগা কমিটির তরফে সভাপতি হাজি সৈয়দ গুলাম কিবরিয়া দস্তগীর, সম্পাদক সৈয়দ সারওয়ার চিস্ত সহ কমিটির সদস্যরা বুলন্দ দরওয়াজায় দাঁড়িয়ে ছিলেন বাংলার ওয়াজিরে আলাকে স্বাগত জানানোর জন্য। মুখ্যমন্ত্রী এবং বাংলার আর এক মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে তাঁরা ভিতরে নিয়ে যান। দরগায় চড়ানোর জন্য চাদর সহ বিশাল ডালা আগে থেকেই আনানো ছিল। সেটি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তুলে দেন ফিরহাদ হাকিমের মাথায়। এরপর যান দরগার ভিতরে খোয়াজা মইনুদ্দিন চিস্তির সমাধিতে। দরগার ভিতরে তখন উপচে পড়ছে ভিড়। আমজনতা তো আছেই, রয়েছে দেশের তামাম জাতীয় মিডিয়া।
আরও পড়ুন-আত্মসচেতনতাই বড় ওষুধ
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এগোচ্ছেন আর চারদিক থেকে মুঠোফোনে উঠেই চলেছে পটাপট ছবি-ভিডিও। চাদর চড়ানোর পর দরগা কমিটির সভাপতি-সম্পাদককে সঙ্গে আনা উপহার দিলেন। দরগা কমিটিও মুখ্যমন্ত্রীকে বড় ফ্রেমে বাঁধানো একটি দরগার ছবি উপহার দেন। সঙ্গে শাল। তখন ভয়ঙ্কর হুড়োহুড়ি। কে আগে নেত্রীর কাছে যাবে। প্রবীণ হাজি সাহেব বললেন, আপনার দীর্ঘায়ু হোক। আপনার রাজ্য বাংলার ভাল হবে। বাংলার সকলে ভাল থাক। খানিকক্ষণ সেখানে থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় জনতার আবদার, দিদি দিদি। তিনি সেদিকে এগোতেই ভিড়টা সমস্বরে বলে উঠল, ‘‘খেলা হবে”। হাত জোড় করে অভিবাদন জানালেন মুখ্যমন্ত্রী। দরগা থেকে তিনি যখন বেরিয়ে যাচ্ছেন তখন সেই ভিড়টা চলল পিছুপিছু। আওয়াজ উঠল দিদি দিদি। দরগা কমিটির অনুরোধে পাশেই একটু সময় কাটিয়ে বেরিয়ে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী। তখন ঘড়ির কাঁটায় দুপুর ২টো। গেলেন কাছেই সার্কিট হাউসে। কারণ দুপুর ১টা থেকে ৩টে পুষ্করের ব্রহ্মা মন্দির বন্ধ থাকে। বিকেল সাড়ে তিনটের কিছু পরে এলেন পুষ্করে। ব্রহ্মা মন্দিরে পুজো দিলেন। আরতি করলেন। প্রধান পুরোহিত কৃষ্ণ বশিষ্ঠের তত্ত্বাবধানে হল পুজো পর্ব।
আরও পড়ুন-ছাত্র আন্দোলনে মেডিক্যালে ব্যাহত চিকিৎসা পরিষেবা
এরপরের পর্ব ব্রহ্মা ও সাবিত্রী ঘাটে পুষ্করিণীর জলের ধারে বসে আধঘণ্টারও বেশি সময় ধরে পুজো-পার্বণ। পুষ্করিণীর জল মাথায় ঠেকালেন। পান্ডাদের সঙ্গে দু’হাত তুলে ভগবানের নামোচ্চারণ করলেন। পান্ডাদের জন্য তিনি শাল এনেছিলেন। তাঁরাও তাঁকে উপহার দেন ব্রহ্মা-সরস্বতীর ছবি। মুখ্যমন্ত্রী সকলকে আসন্ন গঙ্গাসাগর মেলায় যাওয়ার আমন্ত্রণ জানান। এবার ফেরার পালা। এখানেও সেই থিকথিকে ভিড়। একজন সাধু বলে উঠলেন, জয় মা মাটি মানুষের জয়। জয় গঙ্গাসাগরের জয়। তাঁকে কাছে গিয়ে শাল পরিয়ে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাধু বললেন, দিদি গঙ্গাসাগরের জন্য যা করেছেন, কুম্ভমেলার জন্যও এত কিছু কেউ করেনি। আমি সবজায়গায় ঘুরে বেড়াই। সকলকে নমস্কার জানিয়ে এয়ারপোর্টের উদ্দেশে রওনা দিলেন তিনি। ফিরলেন দিল্লিতে। আজ, বুধবার সাংসদ সৌগত রায়ের লোধি এস্টেটর বাড়িতে দলের বৈঠক করবেন। থাকবেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও।