মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কুশলি চালে কুপোকাত রাজ্যপাল, বিধানসভায় ভাষণের লাইন পড়তে বাধ্য হলেন, ভেস্তে গেল পরিকল্পনা

প্রথামাফিক রাজ্যপালকে বিদায় জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, বিধানসভায় এই ঘটনা নজির বিহীন।

Must read

রাজ্য বিধানসভার ইতিহাসে বেনজির ঘটনা। পরিকল্পনা অনুযায়ী বিজেপির তালে তাল দিয়ে বাজেট অধিবেশনে ভাষণ না পড়ে সাংবিধানিক সংকট তৈরি করতে চেয়েছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কুশলী চালে দলের মহিলা বিধায়ক- মন্ত্রীদের সামনে এগিয়ে দেওয়ায় কুপোকাত রাজ্যপাল নিজেই। শেষের দুলাইন হলেও তাঁকে পড়তে হল রাজ্য সরকারের লিখে দেওয়া ভাষণ। নির্যাসে ওদের প্লট ছিল, বিজেপি বিক্ষোভ করবে। রাজ্যপাল বসে থেকে তাদের প্রচার দেবেন। সুযোগ থাকলেও ভাষণ পড়বেন না বা ‘টেবিল’ করবেন না। বরং না পড়ে চলে যাবেন। ফলে বাজেট অধিবেশন নিয়ে সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরি হবে। এই প্লটই ফ্লপ করে গিয়েছে।

আরও পড়ুন-কোনো এয়ারটা্রবুলেন্স ছিল না, কাছাকাছি অন্য বিমান চলে এসছিল, আর ১০ সেকেন্ড হলে করতে পারতোঃ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

সোমবার শুরু থেকেই অধিবেশন ভন্ডুল করতে চেয়ে চূড়ান্ত অসভ্যতা ও নাটক শুরু করে বিরোধীরা । নেপথ্যে শিশির বাবুর ছেলেটা। রাজ্যপালের স্বাগত ভাষণের আগেই ওয়েলে নেমে হইহট্টগোল শুরু করে দেয়৷ এই পূর্ব পরিকল্পনা অনিযায়ী ভাষণ দিতে না পেরে বারবার চলে যেতে চান রাজ্যপাল। কিন্তু রাজ্যপাল যদি বাজেট অধিবেশনের স্বাগত ভাষণ না দিয়ে চলে যান, তাহলে সাংবিধানিক জটিলতা দেখা দেবে। এই কারণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে তাঁকে হাতজোড় করে ভাষণের শেষ লাইন পড়ে দিতে অনুরোধ করেন। তৃণমূলের মহিলা বিধায়করাও রাজ্যপালকে বারবার অনুরোধ করতে থাকেন। দফায় দফায় মুখ্যমন্ত্রী- রাজ্যপালের সঙ্গে কথা বলেন।

আরও পড়ুন-সকল পরীক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর

এই পরিস্থিতিতে স্পিকার বিমান বন্দোপাধ্যায় গোলমাল থামতে বারবার উদ্যোগ নেন। কিন্তু বিজেপি বিধায়করা সেই কথায় কর্ণপাত করেননি। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে চলতে থাকে স্লোগান।

এই পরিস্থিতিতে একবার দেখা যায় পরিষদীয় মন্ত্রীর পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও বিরোধী দলনেতাকে ডেকে কথা বলেন রাজ্যপাল। কিন্তু এরপরেও বিক্ষোভ থামার কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি। শিশির বাবুর ছেলেটা ক্রমাগত বিক্ষোভে ইন্ধন দিতে থাকেন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে বিধানসভার অধিবেশন কক্ষের সব দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। একটা সময় মুখ্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের দলের মহিলা বিধায়কদের সরিয়ে নেন। দলের সব বিধায়কদের শান্ত হয়ে নিজের নিজের আসনে বসতে বলেন। শেষে মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধ মেনে ভাষণের শেষ লাইন পড়ে বেরিয়ে যান রাজ্যপাল।

আরও পড়ুন-রেকর্ড পরীক্ষার্থী, কড়া নিরাপত্তা, পর্যাপ্ত বাস, আজ থেকে শুরু মাধ্যমিক

দুটো থেকে তিনটে বিধানসভায় থাকার কথা ছিল রাজ্যপালের। তিনটে বাজার কয়েক মিনিট আগেই রাজ্যপালের বিদায়ের বিউগল বেজে ওঠে। তার মধ্যেই স্বাগত ভাষণের শেষ লাইন পড়ে সাংবিধানিক দায়বদ্ধতা পালন করেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় এরপর বেরিয়ে যান তিনি। প্রথা মেনে বেরিয়ে এসে তাঁকে বিদায় জানান অধ্যক্ষ বিমান বন্দোপাধ্যায় ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে, তখনও অধিবেশন ঘিরে বিক্ষোভ চালাতে থাকেন বিজেপি বিধায়করা।

আরও পড়ুন-রাজ্যপালের ভাষণ দিয়ে আজ শুরু বিধানসভা

প্রথামাফিক রাজ্যপালকে বিদায় জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, বিধানসভায় এই ঘটনা নজির বিহীন। গণতন্ত্রের লজ্জা। ওরা হেরে গিয়ে অসভ্যতামি করেছে। নাটক করেছে৷ তবে রাজ্যপালকে আমি অনুরোধ করেছিলাম ভাষণের শেষের দুলাইন হলেও পড়তে। না হলে সমস্যা হতো। উনি পড়েছেন। আমি রাজভবনে ওনাকে ধন্যবাদ জানাতে যাচ্ছি।

Latest article