ইনি নাকি ‘নিরপেক্ষ’ ছিলেন! অবসরের পর বিজেপির মঞ্চে প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরা

অরোরা যখন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ছিলেন তখন সন্ত্রাস কবলিত পাঞ্জাব ও অসমে একদফা বিধানসভা নির্বাচন করলেও বিজেপির চাপে বাংলায় ৮ দফা নির্বাচন ঘোষণা করেছেন।

Must read

প্রতিবেদন : শেষ পর্যন্ত মুখোশটা খসেই পড়ল দেশের প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল আরোরার। দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষপদে থাকাকালীন তাঁর ভূমিকা যে সংশয়ের ঊর্ধ্বে ছিল না বিরোধীদের সেই অভিযোগ সত্য প্রমাণ হল। বাংলা বিধানসভা নির্বাচনে আটদফা ভোট করিয়ে রাজ্যের ভাবমূর্তি নষ্ট করে বিজেপি নেতাদের তুষ্ট রাখার চেষ্টা করেছেন দেশের তৎকালীন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার। তাঁর নিরপেক্ষতা প্রশ্নাতীত নয়, এই অভিযোগ বারবার তুলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। অবসরের পর এবার আরএসএস-বিজেপির মঞ্চে হাজির থেকে সেই অভিযোগেই সিলমোহর দিলেন অরোরা।

আরও পড়ুন-মস্কোর আগ্রাসন, পদক্ষেপ

নির্বাচন কমিশনের শীর্ষপদে বসার পর কখনওই নিরপেক্ষ ভূমিকা নিয়ে উঠতে পারেননি অরোরা। তিনি গেরুয়া শিবিরের ঘনিষ্ঠ এবং মোদি-শাহের নির্দেশে কাজ করছেন বলে বিভিন্ন সময়ে তৃণমূল-সহ বিরোধী দলগুলি সরব হয়েছে। সেই অভিযোগ যে ভিত্তিহীন নয় সেটা এবার স্পষ্ট হয়ে গেল। দেশের প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিককে দেখা গেল বিজেপির ছাত্র সংগঠন এবিভিপির এক অনুষ্ঠানে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে। নিজের কার্যকালে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার হিসেবে তিনি কেমন ‘নিরপেক্ষ’ ছিলেন এ ঘটনায় তারই প্রতিচ্ছবি!
অরোরা যখন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ছিলেন তখন বাংলার শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদরা নির্বাচন চলাকালীন বা নির্বাচনের আগে-পরে কমপক্ষে ২০ বার তাঁর সঙ্গে দেখা করে নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু অরোরা কখনওই পক্ষপাতহীন হয়ে উঠতে পারেননি। তিনি যে কেন্দ্রীয় সরকার ও বিজেপির ইঙ্গিতে কাজ করেছেন তা তাঁর নেওয়া বিভিন্ন সিদ্ধান্তেই স্পষ্ট ছিল। কিন্তু এবার সেই রাজনৈতিক পক্ষপাতই খুল্লামখুল্লা প্রকাশ হয়ে পড়ল।

আরও পড়ুন-গণহত্যা চালিয়েও হুমকি! কিয়েভের কাছে গণকবরের হদিশ, পরমাণু যুদ্ধের শঙ্কা

তৃণমূল কংগ্রেস একাধিকবার অভিযোগ করেছে, বিজেপির আমলে সমস্ত স্বশাসিত সংস্থাগুলির গৈরিকীকরণ হয়েছে। দেশের গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে চলেছে নরেন্দ্র মোদি সরকার। অরোরার ভূমিকায় আবার স্পষ্ট হল তৃণমূল কংগ্রেসের বক্তব্যের যৌক্তিকতা। সোশ্যাল মিডিয়ায় গেরুয়া শিবিরের মঞ্চে অরোরার ছবি দেখে নেটিজেনরাও তীব্র নিন্দা করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, গেরুয়া শিবিরের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষে বসে কখনওই পক্ষপাতহীন স্বাধীন সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। এঁদের সরাতে রাজনৈতিক দলগুলিকে একযোগে লড়াই করতে হবে। ২০২৪-এর নির্বাচনে বিজেপিকে হারালেই দেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলি তাদের হৃত গৌরব ফিরে পাবে।

আরও পড়ুন-হাইকোর্টে জোর ধাক্কা সিবিআইয়ের

প্রসঙ্গত, অরোরা যখন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ছিলেন তখন সন্ত্রাস কবলিত পাঞ্জাব ও অসমে একদফা বিধানসভা নির্বাচন করলেও বিজেপির চাপে বাংলায় ৮ দফা নির্বাচন ঘোষণা করেছেন। বিজেপির দাবি মেনে বাংলার একের পর এক অফিসারকে বদলি করেছেন। বাংলার সরকারের উপর চাপ তৈরি করতে ভোট পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার নামে একাধিকবার প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছেন। এসবই তিনি করেছেন কেন্দ্রের মোদি সরকারের চাপে পড়ে, এমনটাই অভিযোগ ছিল তৃণমূলের। সেসময় বিজেপি বা অরোরা নিজেও তৃণমূলের এই অভিযোগ উড়িয়ে দিতেন। কিন্তু সেই অভিযোগ যে ভিত্তিহীন নয়, বরং তাঁর সঙ্গে গেরুয়া শিবিরের ঘনিষ্ঠ যোগ রয়েছে, এবার তা প্রমাণ হল। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই এ প্রসঙ্গে দেশের প্রধান রঞ্জন গগৈয়ের দৃষ্টান্ত টেনেছেন। ২০১৯-এর সেপ্টেম্বরে অবসর গ্রহণের আগেই রামমন্দির-বাবরি মসজিদ মামলার রায় দিয়েছিলেন গগৈ। যথারীতি ওই রায়ে রাজনৈতিকভাবে লাভবান হয় বিজেপি। দেশের প্রধান বিচারপতির পদ থেকে অবসর গ্রহণের কিছুদিন পরেই রাজ্যসভায় মনোনীত সাংসদ হয়েছিলেন গগৈ। তা নিয়ে বিতর্কের ঝড় ওঠে।

Latest article