ডাঃ এস কে দাস
মেডিক্যাল কনসালটেন্ট
অ্যালোপ্যাথি
নিউমোনিয়া অনেকদিনের পুরনো একটি রোগ। আজ থেকে প্রায় দু হাজার পাঁচশো বছর আগে এই রোগ আবিষ্কৃত হয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের জনক মহান গ্রিক চিকিৎসক হিপোক্রেটিস প্রথম উল্লেখ করেছিলেন পেরিনিউমোনিয়ার কথা যা আসলে নিউমোনিয়াই। এই পুরনো রোগটি নিয়ে বিভিন্ন সময় গবেষণা হয়েছে। এটি একটি বিশাল বড় চ্যাপ্টার যা নিয়ে প্রচুর বই লেখা হয়েছে। নিউমোনিয়া নিয়ে বহুদিনের গবেষণার পর বর্তমানে নিউমোনিয়ার চিকিৎসার ধারাগত কিছু পরিবর্তন হয়েছে। তার উপর ভিত্তি করে বলা যায়, এই রোগের একটা কনভেনশনাল ট্রিটমেন্ট রয়েছে যা আজও একই রকম। যেহেতু এটা ইনফেকশন সেহেতু অ্যান্টিবায়োটিকই এর একমাত্র চিকিৎসা। কিন্তু শুধু অ্যান্টিবায়োটিক দিলেই তো হবে না, অনেকগুলো কারণে নিউমোনিয়া হয় যেমন ভাইরাল, ব্যাকটেরিয়াল, ফাংগাস এবং অন্যান্য। একে বলে ইটিওলজিকাল ক্লাসিফিকেশন অর্থাৎ কী কারণে এই রোগ হয়েছে। আমরা যে নিউমোনিয়ার কথা আজ বলছি তা মূলত ব্যাকটেরিয়াল নিউমোনিয়া। ভাইরাল নিউমোনিয়ার সঙ্গে আমরা এখন ভালমতো পরিচিত সেটা হল কোভিড নিউমোনিয়া। ইনফ্লুয়েঞ্জা নিউমোনিয়াও ভাইরাল নিউমোনিয়া। বিশেষজ্ঞরা এর আরও শ্রেণিবিন্যাস করেছেন। পুরো ফুসফুস সংক্রমিত (লোয়ার নিউমোনিয়া) বা ব্রঙ্কো নিউমোনিয়া নাকি ইনটারস্টিশিয়াল নিউমোনিয়া। একটা হল কোথায় হয়েছে আর অপরটা কী কারণে হয়েছে এই দু’ভাবে নিউমোনিয়াকে ভাগ করা হয়েছে। এরপর সংক্রমণের অনুযায়ী নিউমোনিয়ার তিনটিভাগ। কমিউনিটি অ্যাকোয়ারড নিউমোনিয়া অর্থাৎ বাড়িতে যাদের নিউমোনিয়া হবার পর রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে, আর এক ধরনের হল হাসপাতালে রোগী ভর্তি থাকাকালীন যে নিউমোনিয়া হয় তাকে হসপিটাল অ্যাকোয়ারড নিউমোনিয়া বলা হয়, শেষটা হল ভেন্টিলেশনে পেশেন্ট, তখন কিছু ছিল না কিন্তু হঠাৎ আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যে নিউমোনিয়া ধরা পড়ল তাকে বলা হয় ভেন্টিলেটর অ্যাসোসিয়েটেড নিউমোনিয়া। এর প্রতিটার কারণ এবং রিস্ক আলাদা যেমন হসপিটালে বা ভেন্টিলেটরে যে নিউমোনিয়া হয় তাতে মর্টালিটির রেট বেশি।
আরও পড়ুন-সন্তানের নিউমোনিয়া রুখবেন মা-ই
এই কথাগুলো বলছি তার কারণ এই সবকিছুর সঙ্গে নিউমোনিয়ার নতুন ডায়াগনসিস এবং চিকিৎসার বড় সম্পর্ক আছে। দেখা গেল যত দ্রুত এই রোগের ডায়াগনোসিস হবে তত দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা যাবে। একে বলা হয় পয়েন্ট অফ কেয়ার টেস্ট। এটা নতুন। এর মধ্যে রয়েছে এমন বেশ কিছু টেস্ট যা চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট দেয় যেমন ‘ইউরিনারি অ্যান্টিজেন ডিটেকশন’ টেস্ট। স্টেপটোকক্কাস এবং লেজিওনেলা বলে দুটো ব্যাকটেরিয়াল অর্গানিজমের কারণে যদি নিউমোনিয়া হয় তাহলে এই ইউরিন টেস্টটি করলেই রিপোর্ট পজিটিভ আসে। ফলে সেই মুহূর্তে অ্যান্টিবায়োটিক চালু করা যায়। এই দুটো ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণে খুব সিরিয়াস নিউমোনিয়া হয়। আর একটা হয় আরটিপিসিআর টেস্ট যেই টেস্টের মাধ্যমে কোভিড নিউমোনিয়া ধরা পড়ে।
আরও পড়ুন-নন্দীগ্রামের প্রতিবাদী মঞ্চে বিরোধী দলনেতাকে ধুয়ে দিল তৃণমূল
ভাইরাল নিউমোনিয়ার ক্ষেত্রে একটা নতুন ডায়াগনোসিস এসছে ‘আপার রেসপিরেটরি ট্র্যাক্ট বায়োফায়ার টেস্ট’। এই টেস্ট বা পরীক্ষাটির মাধ্যমে আমরা ব্যাকটেরিয়াল, ভাইরাল, ফাংগাল যেকোনও ধরনের নিউমোনিয়া টেস্ট করতে পারি এবং খুব কম সময় মোটামুটি চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই রিপোর্টও পেতে পারি। এতে নিউক্লিক অ্যাসিড অ্যামপিফ্লিকেশন টেকনোলজি ব্যবহার করা হয় যেটা আরটিপিসিআর টেস্টের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হয়। এই টেস্টের ফলে নির্দিষ্ট অর্গানিজমকেই চিহ্নিত করে নির্দিষ্ট অ্যান্টিবায়োটিক চালু করা সম্ভব হয়।
আর একটি নতুন পরীক্ষা হল প্রো ক্যালসিটনিন টেস্ট (পিসিটি)। আমাদের থাইরয়েড থেকে একটা হরমোন বেরয় যাকে বলে ক্যালসিটনিন। দেখা গেছে ইনফেকশন যখন শরীরে হয় তখন লিভার এই প্রোটিন ক্যালসিটনিন এজেন্ট করে। এটার মাত্রা দেখে বোঝা যায় নিউমোনিয়া কত গুরুতর এবং তার ট্রিটমেন্ট করতে হবে কি না। এই প্রো-ক্যালসিটনিনের মাত্রা যদি পয়েন্ট ফাইভের চেয়ে বেশি বেড়ে যায় তাহলে ধরে নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা শুরু করতে হবে।
আরও পড়ুন-এবার স্ক্রাব টাইফাস আতঙ্কে জলপাইগুড়ি
ব্রঙ্কোসকপি বা ‘ব্রঙ্কো অ্যালভাওলা লাভাজ’ একটি টেস্ট রয়েছে যখন নিউমোনিয়া সারছে না, অ্যান্টিবায়োটিকে কাজ হচ্ছে না তখন আমরা ফুসফুসের এর ভিতরটা দেখতে চাই। তখন রেসপিরেটরি ট্র্যাক্ট দিয়ে ব্রঙ্কোস্কোপ ঢোকানো হয়। সেই ব্রঙ্কোস্কোপ দিয়ে ঠিক যে অংশে নিউমোনিয়া হয়েছে সেই জায়গাটা ডিটেক্ট করতে পারি খুব দ্রুত চিকিৎসা শুরু করতে পারি।
ইবাস বা এন্ডোস্কপিক ব্রঙ্কিয়ল আল্ট্রাসাউন্ড। এটাও নিউমোনিয়ার একটি লেটেস্ট ডায়াগনোসিস। এই পরীক্ষাতেও লোকালি রোগটা ঠিক কোন অংশে, তা ধরা পড়ে।
আরও পড়ুন-রাজীব গান্ধী হত্যা মামলা: ৬ অপরাধীকে মুক্তির নির্দেশ
ডাঃ প্রদ্যোৎ বিকাশ কর মহাপাত্র
শিক্ষক ও চিকিৎসক
শ্যামাদাস বৈদ্যশাস্ত্রপীঠ
আয়ুর্বেদ
প্রথমেই বলি আয়ুর্বেদ কিন্তু কোনও অল্টারনেটিভ মেডিসিন বা বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি নয়। এটাই প্রাচীনতম চিকিৎসা আজ থেকে প্রায় সাড়ে চার, পাঁচ হাজার বছর আগে চরকের সময় আয়ুর্বেদের সূচনা। এরপর বিকল্প চিকিৎসা হিসেবে সব এসছে। নিউমোনিয়াকে আয়ুর্বেদে শ্বসনক জ্বরকে নিউমোনিয়ার সঙ্গে তুলনা করা যায়।
আয়ুর্বেদে বায়ু, পিত্ত, কফ— এই তিনটে দোষ যখন জ্বরের সঙ্গে যুক্ত হয় তাকে সান্নিপাতিক জ্বর বলে এবং নিউমোনিয়াকে তদ্রুপ একটি জ্বর বলা যায়। নিউমোনিয়াতে কফ প্রধান দোষ রূপে থাকে। টক্সিন যুক্ত বিকৃত কফ যখন শরীরে বৃদ্ধি পায় আয়ুর্বেদের ভাষায় বিভিন্ন স্রোত অবরুদ্ধ হয় অর্থাৎ দেহের ভিতরে সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম চ্যানেলগুলোকে আটকে দেয় এর ফলে শরীরে প্রতিবর্ত ক্রিয়া বা নিউরোলজিকাল রিফ্লেক্স বাড়ে যাকে বলে বায়ু বেড়ে যাওয়া তখন তাপমাত্রা সারা শরীরে ছড়িয়ে যায় এবং দেহের বাইরে বেরিয়ে আসে যাকে আমরা জ্বর বলি। বুকে কফ জমেছে ফলে সেটাকে বের করতে ফুসফুসও তাঁর প্রতিবর্ত ক্রিয়া বাড়ায় ফলে কাশি হয়, বুকে পেন শুরু হয়। এটা প্রথম অবস্থায় জানতে পারলে চিকিৎসা সহজ হয় যত দেরি হয় ততই কঠিন হয়ে যায়। প্রথমেই নিউমোনিয়ার প্রতিরোধ দরকার যাতে শিশু বা বয়স্কদের এটা না হয়। আমরা যেটা করি তা হল প্রাণবহ স্রোত বা রেসপিরেটরি ট্র্যাক্ট-এর ইমিউনিটি পাওয়ার বাড়ানোর চেষ্টা করি। পাঁচ বছরের নিচের শিশুদের প্রাথমিকভাবে ইমিউনিটি বাড়াতে আমরা যেগুলো দিই সেগুলো হল, যেমন— মকরধ্বজ ৩২.৫ মিলিগ্রাম, পিপুল চূর্ণ ১২৫ মিলিগ্রাম, তাল মিছরি চূর্ণ ২৫০ মিলিগ্রাম এগুলো মিশিয়ে নিয়মিত একটা ডোজ তৈরি করে নিয়মিত খাওয়াতে বলি তাহলে বেশি ঠান্ডা লাগার বা ইনফেকশনের ভয় থাকে না। বয়স্কদের জন্য আমলকীর অবলেহ, ভার্গী গুড়, বা বাসবলেহ, শীতপলাধি চূর্ণ, মকরধ্বজ ইত্যাদি ওষুধ প্রেসস্ক্রাইব করি যা নিয়মিত খেলে ঠান্ডা লাগার ভয় থাকবে না বা বাড়াবাড়ি হবে না। অ্যালোপ্যাথিক মতে এই ইমিউনিটি বাড়ানোর জন্য ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, আয়ুর্বেদে সেটার প্রয়োজন নেই। আয়ুর্বেদে কফ যাতে তৈরিই না হয় প্রথমে সেটার চিকিৎসা করা হয় তার সঙ্গে শরীরের অগ্নিবল যাতে ঠিক থাকে তার ওষুধ দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন-নন্দীগ্রামে শহিদ তর্পণ মঞ্চে রাতের অন্ধকারে আগুন লাগালো বিজেপির গুন্ডারা
এর পরবর্তী ধাপে রোগী উপসর্গ নিয়ে এলে একটা এক্সরে করতে বলা হয়। রিপোর্টে নিউমোনিয়া ধরা পড়লে আয়ুর্বেদের ভাষায় ধরে নিতে হবে শরীরে কফ বিকৃত হয়েছে টক্সিনের প্রভাবে। সেই টক্সিন বের করতে প্রথমেই রোগীকে এক-দুদিন ফাস্টিং বা উপোস করতে বলা হয়। একে বলা হয় লঙ্ঘন চিকিৎসা। এরপর যে কফ জমেছে তাকে বমি করিয়ে বের করে দেওয়া অর্থাৎ বমন চিকিৎসা। শাস্ত্রীয়ভাবে বমন করানো হয়। এগুলো সবটাই প্রথমদিকে রোগীর শারীরিক অবস্থা বুঝে। এরপর জ্বরনাশক ওষুধ আর কাশির ওষুধ দেওয়া হয়। কাশকুঠার রস, শৃঙ্গারাভ্র রস সিতোপলাদি, চন্দ্রামৃত দিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে, কাশি কমাতে চন্দামৃত রস, জ্বরের ক্ষেত্রে মহালক্ষ্মীবিলাস খাওয়ানো যেতে পারে। সঞ্জীবনী বটি, পিপুল চূর্ণ, গুলঞ্চ, তুলসী, বামনহাটি চূর্ণ, কুড়চির ছাল— এইধরনের বেশ কিছু একক দ্রব্য আয়ুর্বেদে রয়েছে যা খাওয়ানো যেতে পারে। কোনওটা ফুটিয়ে বা কোনওটা রস করে খাওয়ানো হয় ফলে বায়ু-পিত্ত-কফের সাম্যতা আসে। তবে খুব সিভিয়র হলে যেমন কোভিডের সময় অ্যাকিউট নিউমোনিয়া হয়ে যাচ্ছিল তখন অক্সিজেন দেওয়া জরুরি ছিল সেক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি ছাড়া উপায় থাকে না। তার আগে পর্যন্ত আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার মাধ্যমে রোগীর সুস্থ হয়ে ওঠা সম্ভব। দিন সাতেকের মধ্যে রোগী অনেকটা স্টেবল হয়ে যায়। তবে কো-মর্বিডিটি থাকলে সুস্থ হতে বেশ সময় লাগে। হার্বো ডোজ বয়স অনুযায়ী দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন-টুইটারের ‘ব্লু টিক’ পরিষেবার জন্য প্রতি মাসে দিতে হবে ৭১৯ টাকা!
ডাঃ প্রকাশ মল্লিক
সিনিয়র সুপার স্পেশ্যালিস্ট হোমিওপ্যাথ
হোমিওপ্যাথি
নিউমোনিয়া স্বল্পমেয়াদি অসুস্থতা হলেও কখনও কখনও তা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। ফুসফুসের একটি মারাত্মক সংক্রমণ এটি। যদিও হোমিওপ্যাথির মাধ্যমে এই রোগের সফল চিকিৎসা সম্ভব। নিউমোনিয়ার নানা লক্ষণ খুব কমন যেগুলো তা হল— ধুম জ্বর, একশো তিন, চার জ্বর উঠে যায়, অনেক সময় সবুজ বা হলুদ রক্তযুক্ত কফ, শ্বাসপ্রশ্বাস কমে যায়, মাথার যন্ত্রণা ক্লান্তি, ক্ষুধামান্দ্য, বুকে তীব্র ব্যথা, ঘড়ঘড়ানি এবং দ্রুত শ্বাস হৃদস্পন্দনের কারণে ঠোঁট নীলচে হয়ে যায়, ঘাম হতে থাকে। চিকিৎসা পদ্ধতি যা-ই হোক বুকের এক্স-রে জরুরি প্রথমেই। বড়দের নিউমোনিয়ার অন্যতম একটি কারণ হল ধূমপান। এর থেকে বাচ্চারাও প্যাসিভ স্মোকার হিসেবে নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত হতে পারে। নিউমোকক্সিন ভাইরাস সংক্রমণে এই রোগ হয়। হোমিওপ্যথিতে এই রোগের চিকিৎসা তো আছেই দেখা গেছে অনেক সময় পেশেন্ট অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা করার পরেও আবার সমস্যায় পড়েছেন, রোগটা আবার ফিরে এসছে এবং তখন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
আরও পড়ুন-পরিদর্শনে উপাচার্য
হোমিপ্যাথিক মতে রোগের কারণ, লক্ষণ ও মায়াজম অনুযায়ী চিকিৎসা করা হলে নিউমোনিয়াতে খুব ভাল ফল মেলে। এই রোগের ডায়গনোসিসের পর যে সব ওষুধ প্রয়োগ করলে খুব ভাল পাওয়া যায় তার একটা দীর্ঘ তালিকা রয়েছে যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ব্রায়োনিয়া এটা মাথার যন্ত্রণা, শ্বাস নিতে গিয়ে বুকে ব্যথা, জলতেষ্টা পাওয়া ইত্যাদি ক্ষেত্রে ভাল কাজ করে। লাইকোপোডিয়াম নিউমোনিয়ার চেষ্ট পেন বিশেষত বুকের ডানদিক থেকে প্রচণ্ড চাপ, ব্যথা হলে বিশেষ কাজ করে। কফ এবং বুকের ঘড়ঘড়ানি শব্দ হলে অ্যান্টিমটার্ট খুব কার্যকরী। শ্বাসকষ্টের সঙ্গে পাঁজর হাঁপরের মতো ওঠানামা করলে সাইলেশিয়া খুব ভাল কাজ করে। কাশির সঙ্গে বমিভাব থাকলে ইপিকাক এবং কাশির সঙ্গে জিভ সাদা হয়ে গেছে সেই ক্ষেত্রে ক্যালিমিউর খুব কাজ করে। কফ এবং হলুদ প্রস্রাব হলে চেলিডোনিয়াম কার্যকরী। এছাড়া স্পঞ্জিয়া, অ্যাসপিডোজপারমা, হিপারসালফার এই জাতীয় ওষুধগুলো নিউমোনিয়ার জন্য বিশেষ উপকারী। প্রতিটা ওষুধ ছোটদের জন্য দু ফোঁটা এবং বড়দের চার ফোঁটা। এটাই ডোজ। রোগের পরিমাণ সিভিয়রিটি অনুযায়ী দিনে তিনবার খেতে হয়। নিউমোনিয়া থেকে সুস্থ হবার পর আর সেই রোগ যাতে ফিরে না আসে তার জন্য হোমিওপ্যাথিতে যে ওষুধটা ব্যবহার করা হয় তাঁর নাম হল নিউমোকক্সিন থার্টি। এই ওষুধ নিউমোনিয়া সম্পূর্ণ শিকড় থেকে সারিয়ে তোলে। তবে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় ওষুধের সঙ্গে পথ্যকে সবসময় গুরুত্ব দেওয়া হয় তাই ট্রিটমেন্ট চলাকালীন খাওয়াদাওয়ার একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। ঠান্ডা লাগানো চলবে না এবং সাইট্রাস জাতীয় ফল এবং প্রোটিন জাতীয় খাবার খেতে হবে। সদ্যোজাত শিশুর নিউমোনিয়ার চিকিৎসার ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের ইতিহাস জানাটা খুব জরুরি তারপর ওষুধ দেওয়া হয়। হোমিপ্যাথিক ট্রিটমেন্টে মোটামুটি একসপ্তাহে রোগী প্রাথমিক ভয়াবহতা কাটিয়ে ওঠে। তারপর তার ফ্যামিলি হিস্ট্রির উপর নির্ভর করে সম্পূর্ণ সুস্থ হতে রোগীর কতটা সময় লাগবে।