প্রতিবেদন : মুখ্যমন্ত্রীকে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে চলেছে রাজ্য (West Bengal)। বুধবার উচ্চশিক্ষা বিষয়ে এক জাতীয় সম্মেলনে স্পষ্টভাষায় একথা জানিয়ে দিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু (Education Minister Bratya Basu)। তাঁর কথায়, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য করতে হবে। তার জন্য নেওয়া হবে সবরকম ব্যবস্থা। শিক্ষামন্ত্রীর সাফ কথা, রাজ্যপাল যদি বিলে সই না করেন, তাহলে ফেরত পাঠিয়ে দিন। ওই বিল আমরা আবার বিধানসভায় পাশ করাব। দ্বিতীয়বারেও সই না করলে আমরা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাব। শিক্ষামন্ত্রীর যুক্তি, রাজ্যপাল যে আইনত এভাবে অনন্তকাল ধরে বিল আটকে রাখতে পারেন না, তা সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়েই স্পষ্ট বলা হয়েছে। ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট হলে আয়োজিত এদিনের আলোচনার বিষয় ছিল, দেশের উচ্চশিক্ষায় সঙ্কট এবং চ্যালেঞ্জ। সেখানেই নিজের বক্তব্যে রাজ্যপাল-আচার্য সি ভি আনন্দ বোসকে তীব্র ভাষায় কটাক্ষ করেন শিক্ষামন্ত্রী (Bratya Basu)। পঞ্চায়েত নির্বাচনের হিংসা, বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতি-সবেতেই অতিসক্রিয়তা দেখিয়ে প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমে প্রচারের আলোয় থাকার রাজ্যপালের প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরে ব্রাত্য বসু বলেন, রাজ্যপালের মতো একটি সাংবিধানিক পদ, যাঁর নিভৃতে থেকেই রাজ্যের অভিভাবকত্ব করার কথা, তাঁর গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে নায়ক হয়ে ওঠার উদগ্র বাসনা বারবার লক্ষ্য করছি। যে হারে রাজ্যপালদের পেজ-থ্রি সেলেব্রিটি হওয়ার বাসনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তা খুবই বিপজ্জনক। তিনি আবারও জানিয়ে দিয়েছেন, রাজ্যপালের ‘স্বৈরাচারী’ কার্যকলাপের বিরুদ্ধে দেশের শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হবে রাজ্য। তবে, সুপ্রিম কোর্টে যাবেন জানালেও, এখনও আলোচনার মাধ্যমেই এই সমস্যার সমাধানের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী। তাঁর কথায়, মত বিনিময় ছাড়া গণতন্ত্র স্বৈরাতন্ত্রে রূপান্তরিত হয়। আচার্যের শুভবুদ্ধির উদয় হোক। যেভাবে তিনি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছেন, এই প্রবণতাটা ঠিক নয়। আমরা সংলাপে, আলোচনায় বিশ্বাসী। উনি (রাজ্যপাল) আদালতের উপর এতটা ভরসা রাখছেন দফতরকে বাদ দিয়ে। আদালতের উপরে আমরাও ভরসা রাখছি। কিন্তু, আদালতের বাইরেও কথা হতে পারে। তাতে উনি আগ্রহী নন। রাজ্যপালের এক্তিয়ার-বহির্ভূত কাজকর্ম কীভাবে উচ্চশিক্ষার বিকাশ এবং প্রসারে রাজ্যের উদ্যোগে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করছে, তা এদিনের সম্মেলনে বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করেন শিক্ষামন্ত্রী। তাঁর আক্ষেপ, প্রকৃত অর্থে উপাচার্য বলতে যা বোঝায় তা বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে নেই। স্বাভাবিকভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পঠন-পাঠন, প্রশাসনিক কাজকর্ম এবং শিক্ষা পরিকাঠামো। তাঁর কথায়, সুস্থির অবস্থায় আনতে আমরা অনেক চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু বাধা দিয়েছে রাজভবনই। এদিনের সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন রাজ্যের বাইরে থেকে আসা একাধিক শিক্ষাবিদ। রাজ্যের শিক্ষাবিদদের তরফে করা মুখ্যমন্ত্রীকে আচার্য করার দাবিকে সমর্থন জানান তাঁদের অনেকেই। ইউজিসির প্রাক্তন সদস্য যোগেন্দ্র যাদব বলেন, শিক্ষা নিয়ে সব সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার থাকা উচিত মুখ্যমন্ত্রী ও নির্বাচিত সরকারের। সেই প্রেক্ষাপটেই আলোচনা হয় সম্মেলনে। বক্তারা প্রত্যেকেই নিজেদের বক্তব্যে তুলে ধরেন দেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার গেরুয়াকরণ করার কেন্দ্রীয় সরকারের অপচেষ্টার কথা। জাতীয় শিক্ষানীতি, বিভিন্ন রাজ্যে রাজ্যপাল-আচার্যের ভূমিকা তীব্র সমালোচনাও করেন তাঁরা। তাঁদের স্পষ্ট অভিযোগ, উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পরিচয়কে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে গোটা দেশে। ইউজিসির প্রাক্তন সচিব আর কে চৌহানের কটাক্ষ, বর্তমানে উপাচার্য হিসাবে নিযুক্ত হতে গেলে একজন ব্যক্তিকে আরএসএস বা এবিভিপির সদস্য হতে হবে। সম্মেলনে ছিলেন অধ্যাপক দেবনারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়, রঞ্জন চক্রবর্তী, শিবাজিপ্রতিম বসু, শিবরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়, কবি সুবোধ সরকার, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি গৌতম পাল, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মহালক্ষ্মী রামকৃষ্ণণ, আইএসআই কলকাতার অধ্যাপক অভিরূপ সরকার, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অপূর্বানন্দ-সহ প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন অধ্যাপক ওমপ্রকাশ মিশ্র।