প্রতিবেদন : নন্দীগ্রামের পর বিদ্রোহ এবার রাজ্যস্তরেও। সিবিআই থেকে বাঁচতে দলবদলুদের সিন্ডিকেটের হাতে চলে গিয়েছে বিজেপি। এখনই হস্তক্ষেপ না করলে বাংলায় বিজেপির অস্তিত্ব থাকবে না। বিজেপিকে বাঁচাতে হলে অবিলম্বে সিন্ডিকেট ভেঙে আদি বিজেপি নেতাদের ফিরিয়ে আনুন। এই বিস্ফোরক ভাষায় বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডাকে চিঠি দিয়েছেন বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসু।
আরও পড়ুন-বিরোধী দলনেতার ন্যক্কারজনক মিথ্যাচার, মুখোশ খুলে দিলেন চন্দ্রিমা
এই পত্রবোমায় ছত্রে ছত্রে শুভেন্দু ও তাঁর দলবলকে তোপ দেগে বলেছেন, কীভাবে এরা সিন্ডিকেট তৈরি করে রাজ্য বিজেপিকে কব্জা করেছে। কীভাবে টাকা দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের ঢাক নিজেরা পেটানোর ব্যবস্থা করেছে। বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক খুল্লামখুলা বলেছেন, কীভাবে কায়েমি স্বার্থে বিজেপির বিভিন্ন কমিটিতে নিজেদের লোক ঢুকিয়েছে শুভেন্দুদের সিন্ডিকেট। মূলত ২০১৯-এর পর দলবদলে বিজেপিতে ঢোকা নেতাদের জন্যই যে বাংলায় বিজেপি রুগ্ণ হয়ে পড়েছে সেকথাও স্পষ্ট লিখেছেন সায়ন্তন। এঁরা যে এজেন্সি থেকে বাঁচতেই বিজেপিতে এসেছেন তাও লিখেছেন সায়ন্তন। এঁরাই বাংলায় বিজেপির গ্রাউন্ড রিয়েলিটি কেন্দ্রীয় নেতাদের বলছেন না নিজেদের অপদার্থতা আড়াল করতে। এ যেন নন্দীগ্রামে বিজেপির পদ ছাড়া নেতাদের কথারই প্রতিধ্বনি।
আরও পড়ুন-যাদবপুরের উপাচার্যের অনুযোগ, টাকা দিচ্ছে না কেন্দ্র
তিনি লিখেছেন, বিশেষ করে শুভেন্দু অধিকারী রোজ যেসব কথা বলছেন তাতে বিজেপির কোনও লাভ হচ্ছে না। ওঁকে দেখে বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতা মনে হচ্ছে। সায়ন্তনের এই চিঠি প্রকাশ্যে আসতেই তোলপাড় পড়ে গিয়েছে বিজেপির অন্দরে। যদিও সুকান্ত মজুমদার ও দিলীপ ঘোষ ঘুরিয়ে হলেও কার্যত সাপোর্ট করেছেন সায়ন্তনকে। সংবাদমাধ্যমে দেওয়া তাঁদের বয়ানেই তা স্পষ্ট। এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, উনি রাজ্য কমিটির সাধারণ সম্পাদক। কোন মডেল কী হবে এসব তাঁদের ব্যাপার। যে চিঠি লিখেছেন একথা আমরা অনেক আগে থেকেই বলছি। বাংলার মানুষ ওদের আসল উদ্দেশ্য জেনে গিয়েছে। দেখলাম বিজেপির বদলে বামেরা উঠে আসছে বলে চিঠিতে লিখেছেন। এটা মোহভঙ্গ, তবে আমি বলব মানুষ তৃণমূলে ফিরবেন। একের পর এক নির্বাচনেই তা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। আগামী দিনে তৃণমূল কংগ্রেসের ভোট আরও বৃদ্ধি পাবে।
আরও পড়ুন-শিক্ষা দফতরের নির্দেশ, স্কুলের নোটিশ বোর্ডে রাখতে হবে শিক্ষকদের বায়োডাটা
ই-মেলে পাঠানো এই চিঠিটি কোনওরকম বিকৃত না করেই আমরা ছাপলাম। তবে আগেই বলা হয়েছে, মানুষ তৃণমূলে ফিরছে। সিপিএমে ফিরছে এই বক্তব্যের সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস একমত নয়। সায়ন্তনের লেখা চিঠিটি হুবহু এইরকম—
‘‘নমস্কার নাড্ডাজি, শুভ দীপাবলি। আমার রাজ্যে বিজেপির পরিস্থিতি সম্পর্কে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে এই চিঠি লিখছি। এই চিঠি অত্যন্ত দ্বিধা ও দুঃখের সঙ্গে লিখছি। ১৯৮০ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত লক্ষ লক্ষ কার্যকর্তার মাধ্যমে যে দল গড়ে উঠেছিল তা এখন ৫-৬ জন নব্যদের সিন্ডিকেটে পরিণত হয়েছে। এই নব্যরা ২০১৯ অথবা ২০-তে দলে এসেছে।
আরও পড়ুন-জগদ্ধাত্রী পুজো: চন্দননগরে বৈঠকে বিদ্যুৎমন্ত্রী
এই নেতারা ২০১৯ থেকে ২১-র মধ্যে বিজেপিতে যোগ দিয়েছে। ২০২১-এ এই নব্যদের নিরাপদ আসন দেওয়া হয়েছে, এক্ষেত্রে দলের পুরনো কর্মীদের দাবিকে অবহেলা করা হয়েছে। ফলস্বরূপ আমরা বেশিরভাগ নিশ্চিত আসনে হেরেছি। এগুলির মধ্যে আছে দুর্গাপুর পূর্ব, বিধাননগর, পানিহাটি, বারাকপুর, সিঙ্গুর, সিউড়ি, জলপাইগুড়ি, সপ্তগ্রাম, কালনা এবং ভবানীপুর। আমার আশা এইসব ভুল সত্ত্বেও আমরা নিজেদের সংশোধন করতে পারব। দুর্ভাগ্যবশত আগামী পঞ্চায়েত ভোটে হয়তো আমরা রাজ্যে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ব।
তৃণমূল বিপুলভাবে তাদের জমি হারাচ্ছে। তাদের কার্যকলাপ ও দুর্নীতির কারণে সাধারণ মানুষের মোহভঙ্গ হয়েছে। সিপিআইএম এই শাসক বিরোধিতাকে কাজে লাগাচ্ছে। সম্প্রতি তারা একটাও ট্রেন বা গাড়ি ভাড়া না করেই কলকাতায় ৩৫ হাজার যুবকর্মীদের নিয়ে জমায়েত করেছে।
দল সামাজিক মাধ্যমে ভীষণভাবে সক্রিয়। ফেসবুক, ইউটিউব-এর মাধ্যমে একটা ভ্রান্ত ধারণা কয়েকজন নেতা ছড়িয়ে চলেছেন। এইসব ফেসবুক প্রোফাইল ও ইউটিউব চ্যানেলকে নিজেদের কব্জায় নিয়ে তাঁরা নিজেদের ঢাক পেটাচ্ছেন। এই ধরনের কাজ আমাদের স্বার্থকে বিঘ্নিত করছে। এই ধরনের কাজ এভাবে চলতে থাকলে আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে আবার লড়াইটা টিএমসি এবং সিপিআইএমের মধ্যেই হবে।
আরও পড়ুন-সর্বকালের সেরা ভারতীয় চলচ্চিত্র পথের পাঁচালী
বর্তমানে এই নব্যরা বেশিরভাগ জেলা কমিটির সভাপতি হয়েছেন এবং তাঁদের লোকেরাই সিংহভাগ কমিটিতে রয়েছেন। আমি নব্যদের বিরোধী নই কিন্তু তাঁদের কোনও দায়িত্ব দেওয়ার আগে তাঁদেরও কিছু সময় দিতে হবে। বিরোধী দলনেতা এবং দলের কয়েকজন সাংসদ এমন মন্তব্য তৃণমূল নেতাদের সম্পর্কে করছেন যাতে সাধারণ মানুষের মনে হচ্ছে এটা দুই তৃণমূলের মধ্যে ঝগড়া। আমার সনির্বন্ধ অনুরোধ, এইসব নেতাদের দলের আদর্শগত দিক সামনে রেখে ইস্যু তৈরি করতে বলা হোক।
আরও পড়ুন-ম্যাচ ফি সমান হলেও গ্রেডেশন নিয়ে মুখে কুলুপ বিসিসিআইয়ের
শুধু আমাদের মূল জাতীয় ইস্যুগুলোই এখন বিজেপিকে সমর্থন দিতে পারে। এই ধারণা আবার তৈরি হয়েছে যে, ইডি-সিবিআই থেকে বাঁচতেই অনেক দলবদলু বিজেপিতে এসে জুটেছে। এই ধারণাও তৈরি হয়েছে যে রাজ্যে বিজেপি তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। এটা দলবদলু তৃণমূল নেতাদের সংগঠনে পরিণত হয়েছে। আমরা আবার একমাত্র বিকল্প হয়ে উঠতে পারি যদি ২০১৯-এর সাংগঠনিক কৌশল ফিরিয়ে আনি।
আশা করি আপনি আপনার সুচিন্তিত ভাবনা দিয়ে সঠিক পদক্ষেপ করবেন।”