টাইগার থ্রি

টাইগার ইজ ব্যাক। খরা কাটিয়ে স্বমহিমায় ফিরলেন সলমন খান। যশরাজ ফিল্মস প্রযোজিত তাঁর 'টাইগার থ্রি' বক্স অফিসে দারুণ ব্যবসা করছে। দেশে তো বটেই। বিদেশেও। পরিচালক মণীশ শর্মার মুখে চওড়া হাসি। অ্যাকশন ঘরানার ছবিটির ব্লকবাস্টার তকমা পাওয়া এখন সময়ের অপেক্ষা। লিখলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

আকাশছোঁয়া চাহিদা
শেষ কবে মেগা হিট দিয়েছেন, হয়তো নিজেই ভুলেছেন। কয়েক বছর ধরেই মুখোমুখি হচ্ছিলেন ব্যর্থতার। নামছিল কেরিয়ারগ্রাফ। যদিও তাঁর ফ্লপ ছবিও হেসেখেলে একশো কোটি পেরোয়। কিন্তু তিনি সলমন খান। দেশের সেরা সুপারস্টার। তাঁর কাছে চাহিদা আকাশছোঁয়া। ফলে নিজেও চাপে ছিলেন। অপেক্ষায় ছিলেন একটা জম্পেশ ব্লকবাস্টারের। তাঁকে কিছুটা হলেও অনুপ্রাণিত করেছেন বাজিগর শাহরুখ। হারতে হারতে জিতে গেছেন। দীর্ঘ ব্যর্থতা পেরিয়ে এই বছর দেখলেন সাফল্যের মুখ। ‘পাঠান’, ‘জওয়ান’-এর হাত ধরে। বুঝিয়ে দিলেন, ফুরিয়ে যাননি। সলমনও যেন সেই পথেই হাঁটলেন। ক্ষুধার্ত বাঘ। হার মানেননি। নিভতে দেননি বুকের আগুন। কাঙ্ক্ষিত হিট পেতে, নিজেকে প্রমাণ করতে মরিয়া ছিলেন। মঞ্চ সাজালেন দীপাবলি মরশুমে। তুরুপের তাস যশরাজ ফিল্মসের মেগা বাজেটের ‘টাইগার থ্রি’ (Tiger 3)।

সলম্যানিয়ায় কাঁপছে দেশ
ইদ বরাবরই লাকি। ওই সময় মুক্তিপ্রাপ্ত তাঁর বেশিরভাগ ছবিই সুপারহিট। অন্যদিকে দীপাবলিতে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিগুলো ফ্লপ। তবু ইদের বদলে ‘টাইগার থ্রি’ (Tiger 3) মুক্তির জন্য বেছে নিলেন আলোর উৎসবকেই। রীতিমতো ঝুঁকি নিয়ে। ১২ নভেম্বর সাড়ম্বরে মুক্তি পেল ‘টাইগার থ্রি’। রেজাল্ট কেমন হবে, আন্দাজ পাওয়া গিয়েছিল আগেই। ঝড়ের গতিতে হয়েছে অ্যাডভান্স বুকিং। প্রথম দিনই বক্স অফিসে নেমেছে সুনামি। দেশের মধ্যে ব্যবসা করেছে ৪৪ কোটি টাকা। যা একটি দীপাবলি-রেকর্ড। দেশে তো বটেই, ছবিটি বিদেশেও ফাটিয়ে ব্যবসা করছে। প্রথম তিন দিনেই বিশ্ববাজারে কামিয়েছে ২৪০ কোটি। এখন প্রায় ৩০০ কোটির কাছাকাছি। অর্থাৎ টাইগার ইজ ব্যাক। কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে বাঘের গর্জন। ব্যর্থতা কাটিয়ে ফের স্বমহিমায় সলমন খান। ফিরলেন সুলতানের মতো। তাঁর টানা ১৭টা ছবি নাম লেখাল বক্স-অফিসের ১০০ কোটি ক্লাবে। এই মুহূর্তে সলম্যানিয়ায় কাঁপছে গোটা দেশ। ফিল্ম ক্রিটিকরা প্রশংসায় পঞ্চমুখ। ছবিটি ভেঙেছে বেশকিছু রেকর্ড। রয়েছে আরও কয়েকটি রেকর্ড গড়ার সম্ভাবনা।

একটা শ্রেণির আবেগ
সলমন খান শুধুমাত্র ফিল্মস্টার নন, একটা শ্রেণির আবেগ। অগণিত মানুষের কাছে ঈশ্বরের মতো। তাঁর মতো ক্রেজ রয়েছে খুব কম তারকার। তাঁকে বড়পর্দায় চেনা মেজাজে দেখে উচ্ছ্বসিত ভক্তরা। দলে দলে ভিড় জমাচ্ছেন সিনেমা হলে। কোথাও কেটে নিচ্ছেন সমস্ত টিকিট। হচ্ছে হাউসফুল। কোথাও খুশিতে হয়ে উঠছেন অতি-উন্মাদ। হলের মধ্যেই জ্বালাচ্ছেন আতশবাজি। এ-সবকিছু আসলে আনন্দের বহিঃপ্রকাশ। খাদের কিনারা থেকে প্রিয় তারকার রাজকীয় ফেরা দেখে। আনন্দ যখন বাঁধভাঙে, তখন ঠিক-ভুলের হিসাব তালগোল পাকিয়ে যায়। ‘টাইগার থ্রি’র আশ্চর্য সাফল্যে সেটাই ঘটছে। এই ফ্র্যাঞ্চাইজির আগের দুটো ছবি ‘এক থা টাইগার’ এবং ‘টাইগার জিন্দা হ্যায়’ বক্স অফিসে চূড়ান্ত সাফল্য পেয়েছিল। সিরিজের তৃতীয় ছবি ‘টাইগার থ্রি’র ব্লকবাস্টার তকমা পাওয়া এখন সময়ের অপেক্ষা। যে যশরাজ ফিল্মস একটা সময় সলমনকে ব্রাত্য করে রেখেছিল, সেই যশরাজ ফিল্মস এখন সাফল্যের জন্য অনেকটাই নির্ভরশীল দাবাং খানের উপর। সলমন-অভিনীত এই প্রযোজনা সংস্থার প্রতিটি ছবিই বক্স অফিসে ঝড় তুলেছে।

আরও পড়ুন- প্রধানমন্ত্রী বা উপাচার্য কারওর নামই থাকবে না, লেখা হবে ৩ ভাষায়

নিন্দুকদের ভুল প্রমাণ করেছেন
এবার আসা যাক ছবি প্রসঙ্গে। ‘টাইগার থ্রি’ (Tiger 3) বিশুদ্ধ স্পাই থ্রিলার। নাম ভূমিকায় সলমন খান। যদিও ছবিতে তাঁর আসল নাম অবিনাশ সিং রাঠৌর। ভারতের বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট। লড়াই করেন দেশের শত্রুর বিরুদ্ধে। পরিচালক মণীশ শর্মা তাঁকে দারুণ ভাবে কাজে লাগিয়েছেন। ছবির সাফল্যে তাঁর মুখে চওড়া হাসি। নিন্দুকরা মনে করেন, সলমন মেগা স্টার, কিন্তু আহামরি অভিনেতা নন। অতি-বিজ্ঞদের আবারও ভুল প্রমাণ করেছেন সলমন। ছবিতে অনবদ্য অভিনয় এঁকে দিয়েছেন। অ্যাকশন থেকে ইমোশন— সমস্তকিছু ফুটিয়ে তুলেছেন চমৎকারভাবে। ৫৮ ছুঁই-ছুঁই। যে-বয়সে অন্যরা অবসর নেন, সেই বয়সে নিচ্ছেন নতুন চ্যালেঞ্জ। নিজেকে ভাঙছেন। তাল মেলাচ্ছেন সময়ের সঙ্গে। লজ্জায় ফেলছেন পরের প্রজন্মকে। তিনি ওয়ান ম্যান আর্মি। পর্দায় এন্ট্রি হয়েছে ধামাকেদার। দাপিয়ে বেড়িয়েছেন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত।

গল্পে আছে নতুনত্ব
টাইগারের স্ত্রী জোয়ার চরিত্রে অভিনয় করেছেন ক্যাটরিনা কাইফ। তিনিও নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন। সলমনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে করেছেন দুর্ধর্ষ অ্যাকশন। ছবির খলনায়ক ইমরান হাশমি। তাঁর অভিনয় দেখে মনে হয়েছে, এতদিন তাঁকে ভুলভাল রোলে কাস্ট করা হয়েছে। রেবতী আছেন একটি বিশেষ চরিত্রে। এ ছাড়াও দুটি ক্যামিও চরিত্রে মাত করেছেন শাহরুখ খান এবং হৃতিক রোশন। পাঠান ও কবির হিসেবে। গল্পে আছে নতুনত্ব। বিভিন্ন সময় নিয়েছে বাঁক। বদলেছে গতিপথ। চুম্বকের মতো টেনে রাখে দর্শকদের। প্রথমার্ধ শান্ত। দ্বিতীয়ার্ধ দুর্দান্ত। কিছু কিছু মুহূর্ত দেশাত্মবোধ জাগায়। বিশেষত বিদেশের মাটিতে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মুহূর্তটি। দর্শকরা উঠে দাঁড়িয়ে সম্মান জানান। প্রীতমের সুরে আছে দুটি গান। গেয়েছেন অরিজিৎ সিং। ‘প্রভু কা নাম’ গানটি ফিরছে মুখে মুখে।

ভরপুর বিনোদন
আদিত্য চোপড়া প্রযোজিত ‘টাইগার থ্রি’ বিশুদ্ধ মশালা মুভি। সলমন খানের ভক্ত হলে অবশ্যই দেখবেন। সলমনকে অপছন্দ করলেও দেখবেন। কারণ আড়াই ঘণ্টার অ্যাকশন ঘরানার ছবিটি ভরপুর বিনোদন দেবে। দীর্ঘ খরা কাটিয়ে ফিরলেন ভাইজান। সাফল্য পেলেন। চুপ করিয়ে দিলেন সমালোচকদের। ব্যক্তিজীবনেও আজ সত্য হয়ে উঠল তাঁর মুখের হিট সংলাপ, ‘যবতক টাইগার মরা নেহি, তবতক টাইগার হারা নেহি।’

Latest article