মহালয়ায় মাতৃরূপে প্রথমবার ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত

দেবীপক্ষ আসন্ন। আগমনীর সুর ভাসছে সাদা মেঘের ভেলায়। আর তার অনুরণন সরাসরি মানুষের মনে। ঠিক এক সপ্তাহ পর মহালয়া। আর মহালয়া মানেই চ্যানেলে চ্যানেলে মহা আয়োজন। চোরা প্রতিযোগিতা। আপাতত এগিয়ে কালার্স বাংলা। কারণ দেবী দুর্গা রূপে তারা হাজির করছে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তকে। দীর্ঘ কেরিয়ারে এই প্রথম। কথা বলে জানাচ্ছেন প্রীতিকণা পালরায়

Must read

কে দেবে চমক। কে করবে বাজিমাত। প্রতি মহালয়ার আগে বাংলা বিনোদন চ্যানেলগুলির মধ্যে চলে এই চোরাগোপ্তা প্রতিযোগিতা। বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ উৎসবের ট্রেলার লঞ্চ অনুষ্ঠান যেন এই মহালয়ার ভোর। কার দুর্গা কে, কে হাজির করল কত বড় মুখ, কে পারল দর্শককে নিজের দিকে টেনে নিতে এই নিয়ে একটা হইহই কাণ্ড। একটা বড় সংখ্যক মানুষের কাছে যেমন মহালয়া মানে আজও আকাশবাণীর ‘মহিষাসুরমর্দিনীর’ প্রভাতী অনুষ্ঠান শোনা, তেমনই এক অংশের মানুষ বেশ কিছু বছর যাবৎ অভ্যস্ত মহালয়া শুনতে নয়, দেখতে! এবার তারাই দেখতে পাবেন টলিউডের এক নম্বর নায়িকা ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তকে দেবী রূপে।

আরও পড়ুন-প্রেমিক শরৎচন্দ্র

বাকি নায়িকারা একে একে প্রায় সবাই মা দুর্গার বেশে ছোটপর্দায় অবতীর্ণ হলেও দীর্ঘ কেরিয়ারে এই প্রথমবার মহালয়া অনুষ্ঠানের মুখ হলেন ঋতুপর্ণা। সে কারণে তিনি নিজেও বেশ উত্তেজিত। চ্যানেলের পক্ষ থেকে এ নিয়ে জোর প্রচার চালানো হচ্ছে। আয়োজন করা হয়েছিল এক সাংবাদিক সম্মেলনের, সেখানেই এ নিয়ে মন খুলে কথা বললেন ঋতুপর্ণা।
“স্টেজে কয়েকবার পারফর্ম করলেও এই প্রথমবার আমি দুর্গারূপে ছোটপর্দায় এলাম। শ্যুটিং চলাকালীন গান, মিউজিক শুনে বারবার ফিরে যাচ্ছিলাম ছোটবেলায় যখন মহালয়ার দিন ভোরবেলা ঠাকুমা ঠেলে ঘুম থেকে তুলে দিতেন আর আমরা আধ-ঘুমন্ত চোখে বসে রেডিওয় বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র’র কণ্ঠে মহালয়ার অনুষ্ঠান শুনতাম। ‘দশমহাবিদ্যা’ অনুষ্ঠানে পারফর্ম করা তাই যেমন আনন্দের তেমনই ভীষণ একটা ভাল লাগারও। সবার আগে আমি কালার্স বাংলা’র কাছে কৃতজ্ঞ এরকম একটা সুযোগ আমাকে দেওয়ার জন্য” শুরুতেই জানালেন ঋতুপর্ণা। একই সঙ্গে বললেন, “ভীষণ ব্যস্ততার মধ্যে ছিলাম। টাইট শিডিউল ছিল। বেঙ্গালুরুর ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল সেরেই গিয়েছিলাম কেরলে একটা শ্যুটিং করতে। সেখান থেকে জাস্ট দু’দিনের জন্য সিঙ্গাপুর। সেখান থেকে ফিরেই ‘দশমহাবিদ্যা’র শ্যুটিং করেছিলাম। তার ওপর আবার সে সময় একটু জ্বরও হয়েছিল। কিন্তু এসব মনে ছিল না শ্যুটিং-এর সময়। কারণ নাচ আমার কাছে বরাবরই স্পেশ্যাল। আর এখানে নাচ এবং অভিনয় একসঙ্গে করার সুযোগ পেয়েছিলাম।”

আরও পড়ুন-লৌকিক উৎসবের এক মহাযজ্ঞ রান্নাপুজো  

‘দশমহাবিদ্যা’তে দশভুজা রূপে ঋতুপর্ণা ছাড়াও বিভিন্ন দেবীর চরিত্রে অভিনয় করছেন চ্যানেলের বিভিন্ন ধারাবাহিকের প্রধান মুখেরা। যেমন, দেবী কমলা, ডোনা ভৌমিক, দেবী ভুবনেশ্বরী, অদ্রিজা রায়, দেবী ত্রিপুরাসুন্দরী, দেবলীনা দত্ত, দেবী বগলা, তিতিক্ষা দাস, দেবী ভৈরবী, রিমঝিম মিত্র, দেবী কালী, শ্রুতি দাস, মা তারা, সংঘমিত্রা তালুকদার, দেবী মাতঙ্গী, ঐন্দ্রিলা শর্মা, দেবী ছিন্নমস্তা, দেবাদৃতা বসু, দেবী ধূমাবতী, সৈরিতি বন্দ্যোপাধ্যায়। ঋতুপর্ণা নিজেই জানিয়েছেন, “বিরাট একটা টিমের নিরলস চেষ্টায় এই অনুষ্ঠান করা সম্ভব হয়েছে। দর্শক হয়তো পর্দার পিছনের এই পরিশ্রম দেখতে পাবেন না তাই সামান্য হলেও আমি বলছি, আমার রুমে প্রায় কুড়ি-পঁচিশজন থাকত একেক সময়! চার-পাঁচজন একসঙ্গে লুক সেট-এর কাজ করত। কেউ চুল সেট করছে লম্বা করে, কেউ খোঁপা করে দিচ্ছে, কেউ গয়না সিলেক্ট করছে, পরিয়ে দিচ্ছে। কেউ পোশাক নিয়ে দৌড়োদৌড়ি করছে। ফাইনালের আগে তিনবার লুক সেট হয়েছে আমার। শুধুমাত্র মেক আপ করতেই লাগত তিনঘণ্টা। বাকি সাজগোজ তো বাদ। সেও একটা দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। সব মিলিয়ে একটা বিশাল কর্মযজ্ঞ যেন। যে টিম কাজ করেছে তাদের প্রত্যেক মেম্বারকে আমার কুডোস।’’

আরও পড়ুন-দলের নির্দেশ, উৎসবে পাশে থাকুন

মহালয়া মানে মহা আলয়, আলয় অর্থাৎ আশ্রয়। দেবী দুর্গাই হলেন সেই আশ্রয়। এদিনই দেবীর চক্ষুদান হয়। পিতৃপুরুষের উদ্দেশে তর্পণ করার রীতি প্রচলিত আছে এই দিনেই। সব মিলিয়ে এই তিথি বাঙালি জীবনে বিশেষ তাৎপর্যের। ‘দশমহাবিদ্যা’য় দশভুজার সতী থেকে মহিষাসুরমর্দিনীর সম্পূর্ণ জার্নি তুলে ধরা হয়েছে। শুরু হয়েছে যখন পতিদেব মহাদেবকে পিতৃদেব দক্ষ’র যজ্ঞসভায় যাওয়ার জন্য রাজি করাতে না পেরে সতী তাঁর দশ রূপ দেখান এবং শেষ অবধি পরিণতি আন্দাজ করেও স্ত্রীর আবেদনে মহাদেব রাজি হয়ে শ্বশুরের যজ্ঞস্থলে হাজির হন। সেখানে স্বামীর অপমান সহ্য করতে না পেরে সতীর দেহত্যাগ, শিবের তাণ্ডব থেকে মহিষাসুরের কাহিনি ও তাকে বধের উদ্দেশ্যে মহামায়ার আবির্ভাব ও মহিষাসুর বধ পুরো কাহিনিই সুন্দরভাবে সাজানো হয়েছে। ঋতুপর্ণার মতো চ্যানেলও আশাবাদী, এই সোজা সরল গল্প বলার ভঙ্গি সকলের ভাল লাগবে। এখন অপেক্ষা আর সাতদিনের। ‘দশমহাবিদ্যা’ সম্প্রচারিত হবে ২৫ সেপ্টেম্বর, ভোর পাঁচটায়।

Latest article