মোহময়ী সকাল
পুজোর ছুটিতে পাহাড়-জঙ্গল-নদীর সঙ্গ উপভোগ করতে চান? আদর্শ জায়গা হতে পারে সাতকোশিয়া। ওড়িশার কটক, বৌধ, নয়াগড় ও আঙ্গুল— ৪ জেলায় প্রায় ১০০০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত এই অভয়ারণ্য। প্রকৃতি এখানে রূপের পশরা সাজিয়ে বসেছে। এক-এক ঋতুতে এক-এক রকম রূপ। শীতে একরকম, শরতে আরেক রকম। সাধারণত দেশের অভয়ারণ্যগুলো বর্ষার মরশুমে পর্যটকদের জন্য দরজা বন্ধ রাখে। কারণ তখন পশুদের প্রজননের সময়। পাশাপাশি দেখা যায় সাপের উপদ্রব। তাই মোটামুটি এই সিদ্ধান্ত। কিন্তু সাতকোশিয়ায় কোনও সময় প্রবেশে বাধা নেই। যাওয়া যায় বছরের যে কোনও সময়। তাই শরতের ঝলমলে রোদ্দুর, শীতের আমেজ গায়ে মাখার পাশাপাশি বর্ষাও চুটিয়ে উপভোগ করা যায় মনপ্রাণ ভরে। এই উপত্যকার সকাল মোহময়ী। বিশেষত শরতের দিনে। বঙ্গের মতো না হলেও, দেখা মিলতে পারে সাদা কাশবনের। আকাশের পেঁজা তুলোর মতো মেঘ বাংলার কোনও এক গ্রামের কথা মনে করাবে।
আরও পড়ুন-কয়েক দশক পর মূল স্রোতে দার্জিলিং, শুরু প্রশিক্ষণ
নেচার ক্যাম্প
ওড়িশা ইকো-ট্যুরিজমের সৌজন্যে বিভিন্ন অঞ্চলে গড়ে উঠেছে নেচার ক্যাম্প। জঙ্গল, পাহাড় ও নদীর কাছাকাছি হওয়ার জন্য লবঙ্গির জঙ্গল সংলগ্ন ‘টিকরপাড়া নেচার ক্যাম্প’ অতিরিক্ত জনপ্রিয়তা পেয়েছে। দু-পাশে পাহাড়, মাঝখান দিয়ে সাতক্রোশ বা ২২ কিলোমিটার পথ মহানদী বয়ে চলেছে। তাই এই অভয়ারণ্যর নাম ‘সাতকোশিয়া’। আশ্চর্য রকমের নির্জন। গভীর অরণ্যের মধ্যে ছড়িয়ে রয়েছে রোমাঞ্চ।
পশুপাখির দেখা
সিমলিপালের পর এই ঘন বনাঞ্চল ওড়িশার দ্বিতীয় বৃহত্তম টাইগার রিজার্ভ। মহানদীর কোলঘেঁষা সাতকোশিয়া পক্ষীপ্রেমীদের জন্য স্বর্গোদ্যান। দেখা মেলে নানা রকমের পাখির। সারাদিন চলে কিচিরমিচির। ভোর থেকে সন্ধে পর্যন্ত। এটি একটি টাইগার রিজার্ভ। তাই বনভূমি জুড়ে রয়েছে বাঘ, হরিণ, হাতি, বাইসন, লেপার্ড, ভালুক ইত্যাদির অবাধ বিচরণ। কপাল ভাল থাকলে দর্শন পেতে পারেন। তবে বজায় রাখতে হবে নিরাপদ দূরত্ব। পরামর্শ নিতে হবে স্থানীয় লোকজন এবং গাইডের। বেপরোয়া হলেই বিপদ। ঘুরে বেড়ায় নানারকম পোকামাকড়, পতঙ্গ।
আরও পড়ুন-মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে নজির হয়ে থাকল বাংলার পর্যটন
ফুলের আনন্দ
নাম না জানা রঙ-বেরঙের ফুলেরও দেখা মেলে জঙ্গলের আনাচে কানাচে। অপরূপ সৌন্দর্য নিয়ে আপনমনে ফুটে থাকে। কে দেখল, কে না দেখল সেই নিয়ে যেন বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। ফোটাতেই তাদের আনন্দ। যেমন আমাদের পথ চলায়। সকালে পাহাড়ের বুকে, গাছের পাতায়, মহানদীর জলের উপর পড়ে সূর্যকিরণ। গোটা উপত্যকা জুড়ে চলে কুয়াশা এবং সূর্যের আশ্চর্য আলো-খেলা। দেখামাত্র মন জুড়িয়ে যায়। টিকরপাড়া নেচার ক্যাম্প থেকে দেড় কিলোমিটার হেঁটে জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ রয়েছে। যাওয়ার পথে জায়ান্ট স্কুইরেল, ওরিয়েন্টাল ব্লু ম্যাগপাই বা প্যারাডাইস ফ্লাইক্যাচারের দেখা মেলে।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
লবঙ্গির হাতছানি
ক্যাম্পে বোটিং করা যায়। তবে খুব সাবধানে। জলে কুমির ওঁৎ পেতে থাকে। মুহূর্তের ভুলে ঘটে যেতে পারে বিপদ। দেখা মিলতে পারে পাথরের উপর নিশ্চুপে কচ্ছপের রোদ পোহানো। এ-ছাড়াও মাছরাঙা আর রুডিশেলের ডাক শোনা যায়। টিকরপাড়া নেচার ক্যাম্প থেকে বেড়িয়ে নিতে পারেন লবঙ্গির জঙ্গল। বুদ্ধদেব গুহর লেখায় এই জঙ্গলের উল্লেখ আছে। সবুজের সমারোহে ঘুরতে ঘুরতে পেয়ে যেতে পারেন ‘ঋজুদার দেখা’। হয়তো তিনি অরণ্যের শোভা উপভোগ করছেন আলো-আঁধারির মধ্যে দাঁড়িয়ে।
এ-ছাড়াও ঘুরে আসতে পারেন পুরানাকোট, বাঘমুন্ডা ইত্যাদি। পায়ে হেঁটেই ঘুরে দেখতে পারেন ঘড়িয়াল রিসার্চ সেন্টার। সন্ধের পর ক্যাম্পফায়ার। মেতে ওঠা যায় বাঁধভাঙা আনন্দে। সব মিলিয়ে উৎসবের মরশুমে সাতকোশিয়া সফর উপভোগ্য হয়ে উঠবে। ভাবনাচিন্তা দূরে সরিয়ে বেরিয়ে পড়ুন।
আরও পড়ুন-বিধায়কের শপথ নিয়ে বোসের রাজনীতি, জটিলতা বাড়ছেই
কীভাবে যাবেন?
হাওড়া থেকে ট্রেনে কটক। কটক স্টেশন থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে বাদামবাড়ি বাস স্ট্যান্ড। বাদামবাড়ি থেকে বাসে আঙ্গুল। দূরত্ব প্রায় ১২০ কিলোমিটার। আঙ্গুল থেকে টিকরপাড়া ৬০ কিলোমিটার। দলে ভারী হলে কটক থেকে গাড়ি ভাড়া করে আঙ্গুল যাওয়া যায়। এ-ছাড়াও হাওড়া থেকে সম্বলপুর এক্সপ্রেসে চেপে পৌঁছানো যায় আঙ্গুল। আঙ্গুল থেকে গাড়ি নিয়ে পৌঁছে যান সাতকোশিয়া। জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতে গাড়ি ভাড়া করে নিতে পারেন আঙ্গুল থেকেই। কিন্তু হাওড়া থেকে আঙ্গুলের ট্রেন নিয়মিত নয়। সেই কারণে কটক পৌঁছে যাওয়াই ভাল। কটক রেলস্টেশন থেকে ১৩০ কিলোমিটার পথ গেলেই পৌঁছে যাবেন সাতকোশিয়া।
আরও পড়ুন-
কোথায় থাকবেন?
সাতকোশিয়ার বিভিন্ন দিকে ওড়িশা ইকো ট্যুরিজমের নেচার ক্যাম্প রয়েছে। অনলাইনে বুকিংয়ের জন্য লগ ইন করতে পারেন ecotourodisha.com। এ ছাড়া এই অঞ্চলে একটি সুন্দর বেসরকারি রিসর্ট রয়েছে। সেখানেও থাকতে পারেন। থাকার পাশাপাশি পাবেন খাবার। কোনও অসুবিধা হবে না। হেসেখেলে বেড়িয়ে অনায়াসে দুই তিনদিন কাটিয়ে দেওয়া যায়।