কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জীবনে ও সাহিত্যে নারীদের প্রাধান্য অনেক বেশি আলোচিত, চর্চিত ও বিতর্কিত। দুর্গাপদ চট্টোপাধ্যায়, রাধারানি দেবী, গোপাল চন্দ্র রায়, অজিত কুমার ঘোষ, গিরীন্দ্রনাথ সরকার, পৃথ্বীরাজ সেন প্রমুখদের গবেষণার মধ্য দিয়ে শরৎচন্দ্রের জীবনের বিচিত্র তথ্য আমাদের কাছে উঠে এসেছে। শরৎচন্দ্রকে জানতে- বুঝতে সেই তথ্যগুলো আমাদের অনেক ভাবে সাহায্য করে। শরৎ জীবনের সবথেকে আলোচিত ও আকর্ষণীয় বিষয় হল নারী। শরৎ-সাহিত্যেও যা শরৎ-জীবনেও তা। শরৎচন্দ্রের জীবনে যে নারীদের আবির্ভাব ঘটেছিল তাঁদের সাথে কীভাবে শরৎচন্দ্রের জীবন জড়িয়ে পড়েছিল এই নিয়ে গবেষক মহলে তো বটেই, পাঠক মহলেও নানান কৌতূহল আছে, আর আছে একাধিক মতামত।
আরও পড়ুন-লৌকিক উৎসবের এক মহাযজ্ঞ রান্নাপুজো
যেকোনও মানুষের জীবনে প্রথম প্রেম আছে বাল্যকালে। ঠিক যখন শরীরের সাথে মনও বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছয়। স্বাভাবিক নিয়মে শরৎচন্দ্রের জীবনেও বয়েছিল বাল্যপ্রেমের মধুর বাতাস। শরৎচন্দ্রের বাল্যকালের প্রেম নিয়ে যদি কিছু বলতে হয় তাহলে সবার প্রথমেই তাঁর আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস শ্রীকান্ত থেকে রাজলক্ষ্মীকে তুলে ধরতে হবে। গবেষকদের মতে রাজলক্ষ্মী ছিলেন শরৎচন্দ্রের প্রথম প্রণয়ী। রাজলক্ষ্মী শরৎচন্দ্রের সঙ্গে একই গ্রামে থাকত। খুব অল্প বয়সে কুলিন ব্রাহ্মণের সাথে তার বিয়ে হয় এবং ভাগ্যে জোটে অকাল বৈধব্য। সেই অবস্থায় সে ফিরে আসতে বাধ্য হয় তার পরিবারের কাছে। কিন্তু বিধবা কন্যাকে লালন ও পালন করা একা এক মায়ের পক্ষে সম্ভব ছিল না। কালের যাত্রাপথে তাই রাজলক্ষ্মীর পরিণতি উপন্যাসের পিয়ারী বাড়িতে হয়েছিল কি না নাকি সেই সময়কার অন্য বিধবাদের মতো সে চলে গিয়েছিল কাশীতে তার খবর ঠিক পাওয়া যায় না। কিন্তু যা পাওয়া যায় তা শরৎচন্দ্রের কলমে বালিকা রাজলক্ষ্মীর ছায়া। বয়সের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে বালক-বালিকার মধ্যে মন নিয়ে কাছাকাছি আসা-যাওয়া চলে, তা অনেক সময় পরিণতি পায় না ঠিকই কিন্তু মন থেকে মুছে যায় না সহজে। সে কারণেই হয়তো বাল্যকালে রাজলক্ষ্মীর হাতে বোনা বঁইচি ফলের মালা তার উপন্যাসের রাজলক্ষ্মীর হাতেও তিনি ধরিয়ে দিয়েছিলেন। সময়ের সঙ্গে তার জীবন হয়ে উঠেছে বোহেমিয়ান, হয়েছে একাধিক নারীসঙ্গ তবুও তার মনের গোপন বাক্সে সুরক্ষিত রয়ে গিয়েছে বাল্যপ্রেমের স্মৃতি।
আরও পড়ুন-দলের নির্দেশ, উৎসবে পাশে থাকুন
এ তো গেল বাল্যপ্রেমের কথা। কিন্তু এরপরেই শরৎচন্দ্রের জীবনে যুবক বয়সে যাঁর আগমন ঘটল তিনি হলেন শরৎচন্দ্রের বন্ধু বিভূতিভূষণ ভট্টের বোন নিরুপমা। নিরুপমা দেবীকেও আমরা পরবর্তীকালে সাহিত্যিক রূপে পাই। এই সাহিত্যই তাঁদের মধ্যে সেতুবন্ধন করেছিল। নিরুপমা দেবীও ছিলেন অকাল বৈধব্যের শিকার। ধনী পরিবারের মেয়ে হয়েও বালবিধবার মতো জীবন তাঁকে যাপন করতে হয়েছিল। সেই সময় অন্দর থেকে বেরিয়ে বৈঠকখানা ঘরে গিয়ে পরপুরুষের মুখদর্শনের নিয়ম ছিল না কিন্তু নিয়তি তো নিয়ম মানে না ফলে বালবিধবা নিরুপমার সঙ্গে শরৎচন্দ্রের মুখোমুখি সাক্ষাৎ ঘটেই গেল একদিন। স্বামীর শ্রাদ্ধশান্তির কাজে বোলতার কামড়ের যন্ত্রণায় ছটফট করা নিরুপমার কষ্ট মোচন করতে যিনি এগিয়ে এলেন তিনি আর কেউ নন, শরৎচন্দ্র। সেই প্রথম তাঁদের সাক্ষাৎ দর্শন। এর আগে আড়ালে আড়ালে চোখে চোখে কথা হলেও এই প্রথম দেখা উভয়ের জীবনে গভীর ছাপ ফেলে যায়। নিরুপমা দেবী ছোট থেকেই সাহিত্য অনুরাগী লিখতেন সুন্দর সুন্দর কবিতা। ফলে শরৎচন্দ্রের সঙ্গে সাহিত্য আলোচনার মধ্যে দিয়ে তাঁদের বন্ধুত্ব আরও গাঢ় হয়ে ওঠে। শরৎচন্দ্রের জীবনে তিনি ছিলেন তাঁর সাহিত্যের অভিভাবক।
আরও পড়ুন-মেট্রো ডেয়ারি মামলা খারিজ
শরৎ সাহিত্যের কঠোর সমালোচনার দ্বারা তিনি শরৎচন্দ্রকে আরও ভাল করে লেখার অনুপ্রেরণা জোগাতেন। তাঁর কড়া তাগাদা, সমালোচনা, ফাঁকি ধরে ফেলা— এই সব কিছুকেই শরৎচন্দ্র খুব প্রশ্রয় দিতেন। আসলে এর মধ্যে দিয়েই তিনি জড়িয়ে থাকতেন নিরুপমার সঙ্গে। শরৎচন্দ্রের সম্পাদনা করা পত্রিকায় নিরুপমা দেবীর একাধিক লেখা প্রকাশিত হয়েছে, সাহিত্যবাসরে তাঁর গল্পপাঠ হয়েছে তাঁর উপস্থিতিতে এবং অনুপস্থিতিতেও। ফলে সাহিত্যচর্চার সঙ্গে শরৎচন্দ্র এবং নিরুপমা দেবী এক নিবিড় বন্ধনে আবদ্ধ ছিলেন যেখানে ভাল লাগা ছিল, ভালবাসা ছিল কিন্তু হাতের ওপর হাত রাখা সহজ ছিল না, সারা জীবন বইতে পারাও সহজ ছিল না। তাই নিরুপমার সাথেও শরৎচন্দ্রের বিচ্ছেদ ঘটে যায়। এই বিচ্ছেদে শরৎচন্দ্রের ওপর এক শোকের, একাকিত্বের ছায়া নেমে আসে। তাঁর সৃজনে বাধা পড়ে যায়। তিনি নিরুপমাকে কিছুতেই ভুলতে পারেন না। সংগ্রহ করতে থাকেন তাঁর প্রকাশিত রচনাগুলিকে। চিঠি লিখে তাঁর দাদার কাছে অনুরোধ করেন নিরুপমা দেবীর লেখার খাতাগুলো একবার লুকিয়ে যেন তাঁর কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সে খাতাগুলোর সত্যিই শরৎচন্দ্রের কাছে পৌঁছেছিল কি না জানা নেই।
আরও পড়ুন-নেই-রাজ্যের নৈরাজ্য
শরৎচন্দ্র তখন রেঙ্গুনে। তাঁর বোহেমিয়ান জীবনে, তাঁর নেশার জীবনে একাধিক মানুষের আনাগোনা লেগেই ছিল। তাঁর সঙ্গ হয়েছিল সমাজের প্রান্তিক মানুষদের সঙ্গে। ফলে সমাজে শরৎচন্দ্র ছিলেন একজন বেহিসাবি বেখেয়ালি বোহেমিয়ান। এই সময় তাঁর জীবনে প্রবেশ করেন মন্ত্রের মতো গায়ত্রী। আবারও একটি বাল্যবিধবা রমণী শরৎচন্দ্রের জীবনকে নাড়া দিয়ে গেলেন। গায়ত্রী বিধবা হওয়ার পর সৎ মায়ের অত্যাচার থেকে মুক্তি পেতে পাড়াতুতো বিশ্বাসী বন্ধু নন্দদুলালের সঙ্গে মাসির বাড়ি পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। লখনউয়ের উদ্দেশে রওনা হন কোনও এক মধ্যরাত্রে। কিন্তু তাঁর জীবনে যে সেই রাত্রি আরও অন্ধকার নিয়ে আসবে তিনি বুঝতে পারেননি ফলে ভাগ্যের পরিহাসে বন্ধুরূপে কাল সাপ নন্দদুলালের খপ্পরে পড়ে কালাপানি পার করে তিনি চলে আসেন রেঙ্গুনে। লোলুপ নন্দদুলালের হাত থেকে মুক্তির পথ খুঁজতে খুঁজতে তাঁর স্থান হয় শরৎচন্দ্রের অভিভাবকত্বের মধ্যে। নন্দদুলালের হাত থেকে রক্ষা করতে গিয়ে শরৎচন্দ্র নিজেই গায়ত্রীর প্রেমে পড়ে যান। তিনি তাঁর মনের কথা গায়ত্রীকে জানালেও গায়ত্রী ছিলেন পাথর সমান। কোনও আবেগ তাঁকে টলাতে পারেনি। সময়ের সাথে যেভাবে শরৎচন্দ্রের মদ্যপান, খামখেয়ালিপনা বেড়ে উঠেছিল, সেইভাবেই বেড়েছিল গায়ত্রীর প্রতি তাঁর বাসনা। তাঁকে তিনি হৃদ মাঝারে রাখতে চেয়েছিলেন কিন্তু গায়ত্রী চেয়েছিলেন ছেড়ে দিতে। সে কারণেই দিনের পর দিন শরৎচন্দ্রের প্রেম নিবেদন, কাকুতিমিনতি সত্ত্বেও তিনি শরৎচন্দ্রকে গ্রহণ করেননি। গায়ত্রী জানতেন তাঁর আর বাড়ি ফেরার উপায় নেই, সমাজে তাঁর স্থান নেই। তা সত্ত্বেও তিনি কোনও পুরুষ মানুষের কাছে সেবাদাসী হতে চাননি। সে কারণেই রেঙ্গুনের পরিচিত উকিল দম্পতির সহায়তায় তিনি ফিরে গেছেন লখনউয়ে মাসি- মেসোর কাছে। গায়ত্রী চলে যাবার দিন নির্বাক থেকে গেছেন শরৎচন্দ্র। পারেননি তাঁকে ধরে রাখতে।
আরও পড়ুন-জব চার্নককে দেখার অপেক্ষায় সিটি অফ জয়
সময় গেছে জলের মতো। শরৎচন্দ্রের জীবনে এসেছেন তাঁর প্রথমা স্ত্রী শান্তি। এই শান্তির কাছেই যেন ভবঘুরে নেশারু শরৎচন্দ্র স্থিতি পেলেন। খুঁজে পেলেন শান্তির নীড়। অন্যান্য সব চাহিদা ভুলে গিয়ে তিনি ডুবে গেলেন সংসার প্রেমে। অফিসের কাজ তাড়াতাড়ি সেরে তিনি ফিরে আসতেন শান্তির কাছে শান্তির খোঁজে। বিধাতা শরৎচন্দ্রের ভাগ্যে শুধুই লিখেছিলেন বিড়ম্বনা তাই এই সংসার সুখ তাঁর সহ্য হল না। বাবা হওয়ার পর বাবা ডাকটি শোনার আগেই হারালেন পুত্রসন্তানকে। তারপর মহামারী প্লেগের হাত থেকে বাঁচাতে পারলেন না শান্তিকেও। তার শান্তির চিতার সঙ্গে আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেল সেই ক্ষণিকের সুখটুকুও।
আরও পড়ুন-হাওড়ায় শিল্পের জোয়ার মুখ্যমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা
শান্তির মৃত্যুর পর শরৎচন্দ্র দিনের পর দিন শোকে ছটফট করেছেন। জীবন থেকে হয়েছেন উদাসীন। ভেঙে পড়েছেন কান্নার হাহাকারে কিন্তু সেই আর্তনাদ সকলে শুনতে পায়নি। স্ত্রীর মৃত্যুর পর তাঁর শুরু হয়েছে একলা ভ্রমণ। তিনি হয়েছেন আরও বেশি করে যাযাবর পাখি।
এই ঘটনার কিছু সময় পরে আরেক যাযাবরের সঙ্গে তাঁর ক্ষণিকের সান্নিধ্য ঘটে। এই পাখির কোনও বাসা নেই, উড়ে চলার নির্দিষ্ট কোনও পথ নেই। এর নাম ছিল সুমিত্রা কিন্তু সেই নামও যে সত্যিকারের নাম ছিল তা বলা যায় না। তবু শরতের কাছে সে সুমিত্রাই ছিল। ভাগ্যের পরিহাসে সুমিত্রা একাধিক পুরুষ দ্বারা ব্যবহৃত হতে হতে হয়ে উঠেছে কোকেন ব্যবসায়ের মক্ষীরানি। ভবিষ্যৎ তো দূরের কথা, বর্তমানও যার কাছে অজানা, অনির্দিষ্ট, সেই সুমিত্রা একদিন পুলিশের তাড়া খেয়ে আশ্রয় নিয়েছিল শরৎচন্দ্রের কাছে। শরৎচন্দ্রের ছোট্ট ঘরে পাশাপাশি রাত কাটিয়েছিল সে নিরাপদে। অনেক বছর পর সুমিত্রা যেমন কোনও পুরুষের কাছ থেকে সুরক্ষা পেয়েছিল তেমনই শরৎচন্দ্রের জীবনে সুমিত্রার আগমনে জ্বলে উঠেছিল নতুন প্রদীপ শিখা। কিন্তু সুমিত্রা তো ছিল এক রাত্রের অতিথি। সেই এক রাত্রি তারা জন্ম-জন্মান্তরেও ভুলবে না। সুমিত্রার প্রতি যে ক্ষণিকের তরে ভালবাসা জেগে উঠেছিল তা তিনি অকপটে স্বীকার করেছিলেন সুমিত্রার কাছে। সুমিত্রাও চেয়েছিল একটা সুখের ছোট্ট সংসারে থিতু হতে। কিন্তু সংসার তো সবার জন্য নয়, তাই সুমিত্রাকেও চলে যেতে হয়। বলে যেতে হয়, হে বন্ধু বিদায়! সে জীবনে অন্তত একবার ফিরে আসার কথা বলে গেলেও আর ফেরেনি। অন্ধকারে আরও একবার ডুবে গেল শরতের ঘর, আবারও শরৎচন্দ্র নিজেকে গভীর একাকিত্বের নেশায় ডুবিয়ে দিলেন।
আরও পড়ুন-রঘুনাথপুর শিল্পাঞ্চলে মাতোয়ারা শ্রমিকেরা
শেষ পর্যন্ত যাঁর সঙ্গে শরৎচন্দ্রের জীবন- মৃত্যু পর্যন্ত লেখা হয়ে গেল তিনি হলেন হিরণ্ময়ী দেবী। অনেকেই মনে করেছেন এই হিরণ্ময়ী দেবী হয়তো সেই বাল্য সখি রাজলক্ষ্মী কিন্তু সেই অনুমানও ভিত্তিহীন। আসলে শরৎচন্দ্র হিরণ্ময়ীকে বিবাহ করেছিলেন সবার অলক্ষে রেঙ্গুনে। ফলে তাঁর বিবাহের কোনও সাক্ষ্য না থাকায়, শাস্ত্রমতে শালগ্রাম শিলাকে সাক্ষী রেখে এই বিবাহ না হওয়ায় অনেকেই হিরণ্ময়ী দেবীকে তাঁর স্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে পারেননি। এমনকী শরৎচন্দ্রের দিদি অনিলা দেবীও হিরণ্ময়ীকে ভ্রাতৃবধূ হিসেবে গ্রহণ করতে পারেননি। ফলে সমাজের চোখে দ্বন্দ্ব লেগেছিল হিরণ্ময়ী দেবী আসলে কে? শরৎচন্দ্রের স্ত্রী নাকি কেবলই সঙ্গিনী? শরৎচন্দ্র এই ব্যাপারে কোনও কৈফিয়ত দেননি কোথাও। শুধুমাত্র সংসার করে গেছেন। তাঁদের কোনও সন্তান ছিল না ঠিকই। কিন্তু তাঁরা একে অপরের সঙ্গ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের মুহূর্ত পর্যন্ত ছাড়েননি। শরৎচন্দ্র পার্ক নার্সিংহোমে তাঁর যে শেষ উইলটি করেছিলেন তাতে তিনি তাঁর স্থাবর অস্থাবর সমস্ত সম্পত্তি ‘my wife Sm. Hironmoyee Debi’- কে লিখে দিয়ে গেছিলেন। বিভিন্ন অনুসন্ধানের মাধ্যমে জানা যায় হিরণ্ময়ীর আসল নাম ছিল মোক্ষদা এবং তিনি মেদিনীপুরের বাসিন্দা ছিলেন। বাবা কৃষ্ণদাস অধিকারীর সঙ্গে পাড়ি দিয়েছিলেন রেঙ্গুনে। সেখানেই কৃষ্ণদাসকে কন্যাদায়গ্রস্ত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে শরৎচন্দ্র বিয়ে করেন মোক্ষদাকে। তিনি ভালবেসে নাম রাখেন হিরণ্ময়ী।
আরও পড়ুন-সেরা পারফরমারের স্বীকৃতি কাটোয়ার বিজ্ঞানীর
এরপর হিরণ্ময়ীকে নিয়ে তিনি ফিরে আসেন কলকাতায়। হিরণ্ময়ীকে নিয়ে বন্ধু ও পরিচিত মহলে যে রকমের কুয়াশার জন্ম হয় সেখান থেকে পর্দা তুলতে শরৎচন্দ্র কোনও আগ্রহই দেখাননি। ফলে হিরণ্ময়ীকে ঘিরে তৈরি হয় নানা গল্পকথা। সে যাই হোক, শেষ পর্যন্ত শরৎচন্দ্র সারা জীবনের জন্য আরও একবার খুঁজে পেয়েছিলেন শান্তির নীড়। জীবনে চলার পথে তাঁকে বিভিন্ন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। তাঁর জীবনে আসা এক-এক নারী এক-এক ধরনের গল্প লিখে গেছে। সেই অসমাপ্ত গল্পগুলো শরৎচন্দ্রের জীবনকে এগিয়ে নিয়ে গেছে ভবিতব্যের দিকে। শেষে দিশাহারা নাবিক কূল খুঁজে পেয়েছে হিরণ্ময়ীর পাড়ে এসে। সংসারের ওঠা-নামা, ভাল-মন্দ, সুখ-দুঃখ সবেতেই ছিলেন শরৎচন্দ্রের সহধর্মিণী হয়ে, প্রকৃত সঙ্গিনী হয়ে। জীবনের এই পরম প্রাপ্তি থেকেই শরৎচন্দ্রের কলম থেকে ঝরে পড়েছে একের পর এক সোনার লেখা।