বহু প্রাঙ্গণ ঘোরাঘুরি। অবশেষে আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা পেয়েছে নিজের ঠিকানা ‘বইমেলা প্রাঙ্গণ’। গতবছর বইমেলার উদ্বোধনে রাজ্যের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সল্টলেক সেন্ট্রাল পার্কের এই নামকরণ করেছেন। পাশাপাশি জানিয়েছেন, প্রতি বছর বইমেলা হবে এই প্রাঙ্গণেই।
আরও পড়ুন-পারলে দশ পয়সার লেনদেন প্রমাণ করুক
আগামিকাল, ৩০ জানুয়ারি, বইমেলা প্রাঙ্গণ-এ শুরু হতে চলেছে ৪৬তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা। উদ্বোধন করবেন রাজ্যের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উপস্থিত থাকবেন স্পেনের মন্ত্রী মারিয়া খোসে গালবেজ সালভাদর, সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। এ ছাড়াও উপস্থিত থাকবেন রাজ্যের বিভিন্ন দপ্তরের মন্ত্রী এবং স্পেন ও বাংলার বহু বিশিষ্ট লেখক। বলা যায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বসবে চাঁদের হাট। এবারের বইমেলা চলবে ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
আরও পড়ুন-নাম বদল মুঘল গার্ডেনের
গতকাল হয়েছে কার্টেন রেজার অনুষ্ঠান। ছিলেন ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায়, সুধাংশুশেখর দে-সহ বহু বিশিষ্ট মানুষ। এবারে মেলার ফোকাল থিম কান্ট্রি স্পেন।
আয়োজক সংস্থা পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৭০০ স্টল থাকছে এবারের কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায়। সেইসঙ্গে থাকছে প্রায় ২০০ লিটল ম্যাগাজিন। বেশ কয়েকটি নতুন প্রকাশন সংস্থা এবার প্রথম অংশ নেবে। স্পেন, বাংলাদেশ-সহ পৃথিবীর ২০টি দেশ সরাসরি ও যৌথভাবে অংশগ্রহণ করছে। প্রথমবার অংশ নিচ্ছে থাইল্যান্ড।
আরও পড়ুন-একাধিক দাবিতে বিজেপি সাংসদ-বিধায়কের বাড়ির সামনে ধরনা-বিক্ষোভ
থাকছে ৯টি তোরণ। প্রতিটি তোরণ দিয়েই মেলায় ঢোকা এবং বেরোনো যাবে। একটি তোরণ হচ্ছে স্পেনের তোলেদো গেটের আদলে। বাকি তোরণের মধ্যে আছে বিশ্ববাংলা গেট এবং শতবর্ষ উপলক্ষে অগ্নিবীণা গেট।
দ্বিশত জন্মবর্ষ উদযাপনে বইমেলার দুটি হল হচ্ছে কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত এবং প্যারীচরণ সরকারের নামে। এই বছর সাহিত্যিক-সম্পাদক রমাপদ চৌধুরির জন্মশতবর্ষ। লিটিল ম্যাগাজিন প্যাভিলিয়ানটি উৎসর্গ করা হচ্ছে তাঁর নামে। এছাড়াও থাকছে মৃণাল সেন ও তরুণ মজুমদারের নামে দুটি মুক্তমঞ্চ এবং প্রেস কর্নার।
আরও পড়ুন-পাইলটের মৃত্যু
জানা গেছে, বইমেলায় মানুষের যাতায়াতের সুবিধার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পরিবহণ দফতর বিশেষ বাসের ব্যবস্থা করছে। চালু হয়েছে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো পরিষেবা। শিয়ালদহ স্টেশন থেকে বইমেলায় আসা যাবে সরাসরি। প্রতিটি রুটে স্থির করা হয়েছে নির্ধারিত অটো ভাড়া।
২০২৩ বইমেলাকে পরিবেশ বান্ধব সবুজ বইমেলা করে তোলার জন্য এগিয়ে এসেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বন দফতর। বইমেলার হেলথ পার্টনার পিয়ারলেস হসপিটেক্স হসপিটাল ও রিসার্চ সেন্টার লিমিটেড। এই প্রতিষ্ঠান বইমেলায় মেডিক্যাল সহায়তা কেন্দ্র এবং অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা প্রদান করবে।
আরও পড়ুন-গোর্খাল্যান্ড নয়, রাজ্যকে নিয়েই উন্নয়ন চান অনীত
সিইএসসি-র সহায়তায় থাকছে বইমেলার অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ। এ ছাড়াও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের জন্য থাকছে সুসজ্জিত সিইএসসি সেন্টার। প্রতিদিন সেখানে আয়োজিত হবে লটারি এবং প্রতিদিন ১৫ জন ভাগ্যবান বিজেতা প্রত্যেকে পাবেন মেলা থেকে বই কেনার জন্য ১০০০ টাকার বুক গিফট কুপন। থাকছে বই বাম্পার লটারি। বেশ কয়েকজন ভাগ্যবান বিজেতা পাবেন ২৫ হাজার টাকার বুক গিফট কুপন। উদ্বোধন মঞ্চে সিইএসসি সৃষ্টি সম্মান প্রদান করা হবে সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়কে।
আরও পড়ুন-নির্বাসিত হতে পারেন রোনাল্ডো
কলকাতা বইমেলার অন্যতম আকর্ষণ লিটারেচার ফেস্টিভ্যাল। চলবে ৯-১১ ফেব্রুয়ারি। অংশ নেবেন দেশ-বিদেশের বহু বিশিষ্ট লেখক।
এছাড়াও প্রতিদিন বিভিন্ন মঞ্চে আয়োজিত হবে বই এবং পত্রিকা প্রকাশ, আলোচনা, কবিতাপাঠ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। পাঠকদের মুখোমুখি হবেন লেখকরা। থাকছে প্রিয় লেখকদের অটোগ্রাফ নেওয়ার সুযোগ। এখন সেলফির যুগ। হাসিমুখে ভক্তদের আবদার মেটাবেন কবি-সাহিত্যিকরা।
গত চার দশকে শারদীয়া উৎসবের পর রাজ্যের সবথেকে বড় উৎসব আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা। এই বইমেলা পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ বইমেলার স্বীকৃতি পেয়েছে। নামেই কলকাতা বইমেলা। আসলে এই বইমেলা গোটা রাজ্যের, দেশের। সারা পৃথিবীরও বলা যেতে পারে। এখানে আন্তর্জাতিক মানের লেখকদের নানা ধরনের রচনার সঙ্গে পাঠকদের পরিচয় ঘটে। পাশাপাশি পরিচয় ঘটে দেশের এবং রাজ্যের লেখকদের সঙ্গেও। মহানগরের লেখকদের নাম অনেকেই জানেন। তাঁদের পিছনে আছে বড় বড় প্রতিষ্ঠান। কলকাতা বইমেলায় তাঁদের বই যেমন হাতের কাছে পাওয়া যায়, তেমনই পাওয়া যায় বিভিন্ন জেলার লেখকদের পুরনো ও নতুন বই। এমন কিছু বই, যেগুলো অন্য সময় কলেজস্ট্রিট বইপাড়ায় নেড়েচেড়ে দেখার সুযোগ থাকে না। তাই কলকাতা বইমেলা যতটা আলোকিত লেখকদের, ততটাই অনালোকিত বা কম আলোকিত লেখকদের। যতটা প্রবীণ কবির, ততটাই মেলার মাঠে একলা ঘোরা নবীন কবির।
আরও পড়ুন-তুমি অনেকের প্রেরণা, সানিয়াকে বার্তা শোয়েবের
বইমেলায় সমাবেশ ঘটে বিভিন্ন বয়সি পাঠকের। কেউ কেনেন গল্পের বই, কেউ উপন্যাস, কেউ কবিতা-ছড়ার, কেউ বা নাটক বা প্রবন্ধের। এইভাবেই জিতে যায় বই। রুচিশীল শিক্ষিত সমাজ এইভাবেই বাঁচিয়ে রেখেছে একটা বড় ইন্ডাস্ট্রিকে।
বই পরব এমন এক পরব যেখানে ধর্মের রং লাগে না। মহাসম্মিলন ঘটে নানা ভাষা, নানা মতের।
আরও পড়ুন-ক্ষোভ নয়, মানুষের চাওয়া-পাওয়া বলা: ‘দিদির দূত’দের অভিযোগ জানানো নিয়ে জবাব অভিষেকের
সোশ্যাল মিডিয়া আছে স্বমহিমায়। তবু বঙ্গ জীবনে বইয়ের গুরুত্ব কোনওভাবেই অস্বীকার করা যায় না। বিনোদনের রকমারি উপাদান থাকা সত্ত্বেও বই পড়ার এবং কেনার উৎসাহে বিন্দুমাত্র ভাটা পড়েনি। পরিসংখ্যান অন্তত সেই কথাই বলছে। মনে রাখতে হবে, বইমেলায় যত জনসমাগম হয়, অন্যান্য মেলায় ততটা হয় না। নিন্দুকরা পাল্টা যুক্তি খাড়া করলেও তা ধোপে টিকবে না। ২০২২-এর বইমেলায় ২২ লক্ষ বইপ্রেমী এসেছিলেন। বই বিক্রির পরিমাণ ছিল প্রায় ২৩ কোটি। অতীতের সমস্ত বইমেলার থেকে অনেকটাই বেশি। আশা করা যায়, এবার সৃষ্টি হবে নতুন রেকর্ড। তাই কমার প্রশ্ন নেই, বরং বইয়ের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। এই মুহূর্তে শীতের বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে নতুন বইয়ের গন্ধ। ছোঁয়ার অপেক্ষায় বইপ্রেমীরা।
ছবি : শুভেন্দু চৌধুরী