জনরোষে জেরবার শ্রীলঙ্কা, সেনাকে নির্দেশ, দেখলেই গুলি করতে হবে

কোনও সাংসদ ও মন্ত্রী যাতে দেশ ছেড়ে পালাতে না পারেন সে জন্য দেশের প্রধান বন্দরনায়েকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অবরুদ্ধ করে রেখেছে ক্ষুব্ধ জনতা।

Must read

প্রতিবেদন : গত কয়েক মাস ধরে চরম অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম এতটাই বেড়েছে যে, দেশের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ কার্যত অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষের পদত্যাগের দাবিতে দেশজুড়ে চলছিল তীব্র প্রতিবাদ বিক্ষোভ। শেষ পর্যন্ত মানুষের দাবি মেনে সোমবার প্রধানমন্ত্রী পদে ইস্তফা দিয়েছেন মাহিন্দা। কিন্তু ইস্তফা দিলেও জনরোষের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না সদ্য পদত্যাগী প্রধানমন্ত্রী। তাই নিজের ও পরিবারের সুরক্ষার জন্য কলম্বো ছেড়ে ত্রিঙ্কোমালির নৌসেনা ছাউনিতে আশ্রয় নিয়েছেন সপরিবার মাহিন্দা রাজাপক্ষে। গত দু’দিন ধরেই শ্রীলঙ্কায় সরকার ও বিরোধী দলের সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ ঘটছে। চলছে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা। এ অবস্থায় দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক হুমকি দিয়েছে, যারা সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করবে তাদের দেখামাত্র গুলি করা হবে। প্রবল বিক্ষোভ দমাতে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে সেনাবাহিনীকে বিশেষ ক্ষমতা দিয়েছেন। দেখামাত্র গুলির নির্দেশও দেওয়া হয়েছে৷

আরও পড়ুন-পায়ে কম্বল জড়িয়ে পুতিন, কারণ কী?

অগ্নিগর্ভ শ্রীলঙ্কায় রাজাপক্ষে সপরিবার নৌসেনা ছাউনিতে আশ্রয় নিলেও বিক্ষোভের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। বিক্ষুব্ধ জনতা নৌসেনা ছাউনির সামনেও বিক্ষোভ দেখাচ্ছে বলে খবর। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর উপর রাগ কোনওভাবেই কমছে না আমজনতার। দেশের বন্দর শহর হামবানটোটায় রাজাপক্ষেদের পৈতৃক বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। সেখানে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে বলে অভিযোগ। অন্যদিকে বিরোধীরা অভিযোগ করেছে, রাজধানী কলম্বোয় শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের উপর চড়াও হয়েছে শাসক দলের কর্মী ও সমর্থকরা। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের উপর শাসকদলের সমর্থনকারীদের হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবার দেশজুড়ে ধর্মঘটের ডাক দেয় একাধিক ট্রেড ইউনিয়ন। পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার থেকে শুরু হওয়া এই সংঘর্ষে মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।

আরও পড়ুন-তাজমহলে মুগ্ধ

পরিস্থিতি সামাল দিতে শনিবার রাত থেকেই দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে। কিন্তু তাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসা তো দূরের কথা, বরং পরিস্থিতি আরও অগ্নিগর্ভ৷ শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আমেরিকা ও ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ। শ্রীলঙ্কা সরকার গত মাসেই জানিয়েছে, তারা ঋণদাতাদের অর্থ ফেরত দিতে পারবে না। কারণ তারা দেউলিয়া হয়ে গিয়েছে। ইতিমধ্যেই শ্রীলঙ্কার পুনরুজ্জীবনের জন্য বিশ্ব ব্যাঙ্ক ও আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডারের শীর্ষ কর্তারা আলোচনা করছেন বলে খবর।

আরও পড়ুন-আবহাওয়ার বদল, ভয়ঙ্কর দিন আসছে পাঁচ বছরেই

অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে দেশের মানুষকে শান্ত থাকার আর্জি জানিয়েছেন। এদিন কারফিউ প্রত্যাহার করার কথা থাকলেও বুধবার পর্যন্ত তা বাড়ানো হয়েছে। শ্রীলঙ্কার সেনাপ্রধান শাভেন্দ্র সিলভাও মানুষকে শান্ত থাকার পর অনুরোধ করেছেন। এদিন শ্রীলঙ্কার অ্যাটর্নি জেনারেল সঞ্জয় রাজারতনম পুলিশপ্রধানকে গতকালের ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। এরই মধ্যে কোনও সাংসদ ও মন্ত্রী যাতে দেশ ছেড়ে পালাতে না পারেন সে জন্য দেশের প্রধান বন্দরনায়েকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অবরুদ্ধ করে রেখেছে ক্ষুব্ধ জনতা।

Latest article