সানস্ট্রোক কতটা ভয়ঙ্কর?
কিছু কিছু ক্ষেত্রে সানস্ট্রোকে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। বেলা এগারোটা-বারোটার পর থেকে মোটামুটি বিকেল চারটে পর্যন্ত, প্রচণ্ড দাবদাহ। ঝাঁ ঝাঁ রোদ্দুর। এই সময় সাধারণত রাস্তাঘাটে লোকজন খুব কম থাকেন। পারতপক্ষে এইসময় দাবদাহের মধ্যে খুব প্রয়োজন ছাড়া কেউই বাইরে বেরোতে চান না। ফাঁকা রাস্তায় কেউ যদি সানস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে চোখে অন্ধকার দেখে রাস্তায় পড়ে যান, তাঁকে তোলার মতো কেউ থাকেন না। এইভাবে দীর্ঘসময় পড়ে থাকলে সাধারণত আক্রান্তের কন্ডিশন ক্রিটিক্যাল হয়ে যায়।
সানস্ট্রোক কেন হয়?
সানস্ট্রোকের অন্যতম প্রধান কারণ দীর্ঘক্ষণ তাপবিদ্ধ হওয়া। সকাল ন’টার সময় একরকমের তাপমাত্রা। সেটা চারগুণ বেড়ে যায় বেলা বারোটার দিকে। সূর্য তখন মধ্যগগনে। এইসময় সৌররশ্মি আমাদের দেহের তাপমাত্রাকে অনেকটা বাড়িয়ে দেয়। প্রায় ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট হয়ে গেলে সানস্ট্রোক হতে পারে। মনে রাখতে হবে, এই তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া কিন্তু জ্বরের কারণে নয়।
আরও পড়ুন-বন্যার আগাম প্রস্তুতিতে বৈঠক আলিপুরদুয়ারে
আর কী কী হয়?
বেড়ে যায় হার্টবিট, বুক ধড়ফড়ানি। পাশাপাশি কমে যায় ঘাম। শরীর প্রায় ড্রাই হয়ে যায়। পায়ের পেশিতে টান ধরে। এইসব হলে অনেকেই নার্ভাস হয়ে পড়েন। তখন বুঝতে হবে সমস্যা তৈরি হচ্ছে। ভয় না পেয়ে সতর্ক হতে হবে। খুঁজে নিতে হবে ছায়া।
কেউ সানস্ট্রোকে আক্রান্ত
হলে কী করা উচিত?
অসুস্থ মানুষটিকে আগে ছায়ায় নিয়ে যেতে হবে। যেখানে ঠান্ডা হাওয়ার চলাচল বেশি সেইরকম জায়গায় নিয়ে যেতে পারলে তো খুব ভাল। আরও ভাল হয় যদি শীতাতপনিয়ন্ত্রিত কোনও জায়গায় নিয়ে যাওয়া যায়।
আর?
টাইট পোশাক পরে থাকলে সেগুলো আলগা করে দিতে হবে। পাশাপাশি খুব ভালভাবে স্নান করাতে হবে। বিশেষ করে মাথা, ঘাড় ভাল করে ভেজাতে হবে। বরফ পাওয়া গেলে মঙ্গল। ঘাড়ে, পিঠে, কনুই, বগল, কুঁচকি প্রভৃতি জায়গায় ভাল করে বরফ বুলিয়ে দিতে হবে। স্নানের শেষে খাওয়াতে হবে প্রচুর পরিমাণে জল।
আরও পড়ুন-সব মিলিয়ে এক লাখ ছেলেমেয়ের কর্মসংস্থান হবে, চাকরিমেলায় ব্যাপক সাড়া
কীরকম জল?
নুন-চিনির জল হলে সবচেয়ে ভাল। মনে রাখতে হবে, জল যেন গরম না হয়। ঠান্ডা জল খাওয়াতে হবে। যাঁদের ক্রনিক রোগ আছে, যেমন অ্যাজমা, সিওপিডি, তাঁদের ব্যাপারটা অবশ্য আলাদা। এর বাইরে সবাইকে এই পরিস্থিতিতে ঠান্ডা জল খাওয়াতে হবে এবং ঠান্ডা জলে স্নান করাতে হবে।
যদি জ্ঞান না ফেরে?
এত কিছুর পরেও যদি আক্রান্ত ব্যক্তির জ্ঞান না ফেরে তখন তাঁকে কাছেপিঠে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। পরামর্শ নিতে হবে চিকিৎসকের। যদি তাড়াতাড়ি আক্রান্তের পরিচর্যা করা যায়, তা হলে কিন্তু খুব একটা সমস্যা থাকে না।
আরও পড়ুন-‘সুকান্ত বলেছেন বিজেপি ক্ষমতায় আসতে প্রস্তুত নয়, একথা তো আমরা আগেই বলেছি’ তোপ কুণাল ঘোষের
ভবিষ্যতে সমস্যা দেখা দিতে পারে?
সানস্ট্রোকের জন্য ভবিষ্যতে সমস্যা দেখা দিতে পারে, এমন সম্ভাবনাও প্রায় নেই। একমাত্র হিউজ হ্যামারেজ হলেই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে?
না। তবে অসুস্থ মানুষটির যদি হার্ট, লাং, কিডনির সমস্যা থাকে, তখন অনেক কিছু মেনে চলতে হয়। যেমন কিডনির সমস্যা থাকলে জল মেপে খেতে হয় ইত্যাদি। তাই এই ধরনের রোগ যাঁদের আছে তাঁদের উচিত গরমের সময় অকারণে বাইরে না বেরনো। সাবধানে থাকতে হবে চার বছরের নিচের বাচ্চা এবং ষাট-পঁয়ষট্টির বেশি বয়সি মানুষদের। তিন-চারতলার উপর, টপ ফ্লোরে যে-সমস্ত বয়স্করা থাকেন, তাঁদের খুব সমস্যা। ঘরেও সানস্ট্রোক হয়ে যেতে পারে। গরমের সময় তাঁদের শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ঘরে রাখতে পারলে খুব ভাল হয়।
অ্যাজমার সমস্যা আছে এমন বয়স্কদের শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ঘরে
রাখা যায়?
অবশ্যই রাখা যায়। টেম্পারেচার যেন ২৪ থেকে ২৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড-এর মধ্যে থাকে। তবে খালি গায়ে রাখা উচিত নয়। এসি চলার সময় অবশ্যই জামা পরাতে হবে। শোয়ার সময় গায়ে দিতে হবে চাদর। লক্ষ্য রাখতে হবে, ডাইরেক্ট ঠান্ডা হাওয়া যেন গায়ে না লাগে। এইগুলো মেনটেন করলে কোনও সমস্যা হবে না। আর একটা কাজ করা যায়। সারাদিন জানালা খোলা রাখা হল। দুপুর বারোটা থেকে চারটে পর্যন্ত এসি চলল। তারপর বন্ধ করে দেওয়া হল। তাতে মনে হয় না খুব একটা অসুবিধা হবে।
সানস্ট্রোক এড়াতে কী ধরনের
সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত?
সবথেকে ভাল বেলা বারোটা থেকে বিকেল চারটে পর্যন্ত রাস্তায় না বেরনো। বিশেষ করে যাঁদের ক্রনিক সমস্যা আছে। যদি একান্তই বেরতে হয়, পরতে হবে হালকা ঢিলেঢালা পোশাক এবং হালকা রঙের পোশাক। সাদা হলে খুব ভাল। মোটকথা ডিপ কালারের জামাকাপড় এইসময় একদম পরা উচিত নয়। সারা শরীর ঢেকে রাখতে হবে। ব্যবহার করতে হবে ছাতা। মাথায় পরতে হবে বড় টুপি, চোখে ব্র্যান্ডেড সানগ্লাস। সাধারণ সানগ্লাস পরার থেকে না পরাই ভাল। মাখতে হবে পরিমাণমতো স্ট্যান্ডার্ড সানস্ক্রিন ক্রিম। এমন সানস্ক্রিন ক্রিম যেটা কমপক্ষে ছয় ঘণ্টা নিরাপত্তা দেবে।
আরও পড়ুন-লেখক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব শিব কুমার রাই -এর জন্মদিবসে শুভেচ্ছা বার্তা মমতা ও অভিষেকের
জল কতটা খেতে হবে?
সারাদিনে আট-দশ গ্লাস জল খাওয়া উচিত। সানস্ট্রোক এড়াতে দুপুরে বাইরে বেরনোর আগে অবশ্যই চার গ্লাস জল খেতে হবে। আর একটা কথা, দুপুরবেলায় শরীরচর্চা একদম নয়। এসি জিম হলে অবশ্য আলাদা কথা। নাহলে দুপুরে শরীরচর্চা না করার পরামর্শ দেব। গরমে শরীরচর্চা করার আগে পাঁচশো থেকে হাজার মিলিলিটার জল খাওয়া উচিত। শরীরচর্চার মাঝে চল্লিশ-পঁয়তাল্লিশ মিনিট অন্তর ২ গ্লাস করে জল খেতে হবে। এটা কিন্তু বাধ্যতামূলক। এইগুলো মেনটেন করলে সানস্ট্রোক হবার সম্ভাবনা কম।