বিষম অবস্থা
আয়ুর্বেদ সম্বৎসরকে দুটো কালে ভাগ করে, তার মধ্যে উত্তরায়ণকে বলা হয় আদান কাল এবং দক্ষিণায়নকে বলা হয় বিসর্গকাল। শীত, বসন্ত এবং গ্রীষ্ম এই তিনটে উত্তরায়ণ। এই সময় সূর্যের বল খুব বেশি হয়, সূর্য অত্যধিক উগ্র হয়ে যায়। এই সময় সূর্য বলবান ও তীক্ষ্ণ হয়, ভূ-প্রকৃতি ক্ষীয়মাণ হয় ফলে জীবজগতের বল হানি হয়। তাই এটি আদান কাল। সূর্য প্রকৃতি থেকে বল নিয়ে নিজে বলবান হয় আর প্রকৃতিকে বা জীবজগৎকে বলহীন করে দেয়। আর বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত এই তিনটে হল বিসর্গকাল এই সময় প্রকৃতি বলবান হয় এবং সূর্য ক্ষীয়মান হয়। অতএব শীত, বসন্ত এবং গ্রীষ্মকালের মধ্যে সবচেয়ে উগ্র যে কাল তা হল গ্রীষ্মকাল, যখন মানুষ ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ে। শাস্ত্রে একটা কথা বলা হয়েছে—
‘প্রত্যহং ক্ষীয়তে শ্লেষ্মাঃ
তেন বায়ুশ্চ বর্ধতে’
আরও পড়ুন-কেন্দ্রীয় বঞ্চনা, বিজেপির বিরুদ্ধে ধর্নায় বসছে মহিলা তৃণমূল কংগ্রেস
অর্থাৎ প্রতিদিন শরীরের শ্লেষ্মা ভাগ ক্ষয় হয় বা শরীরের জলীয় ভাগ কমে ও দেহের বল হীন হয়। প্রাকৃত বল যেটাকে আমরা বলি ন্যাচারাল স্ট্রেন্থ সেটা কমে যায় আর বায়ু বেড়ে যায়। তার ফলে আমাদের সবধরনের ডাইজেস্টিভ ও মেটাবলিক ডিসফাংশন শুরু হয়। কখনও খুব ভাল হজমি রস বা হজম করার রস তৈরি হয় আবার কখনও খুব কম হজমি রস তৈরি হয়। যার ফলে একটা ডিসফাংশন বা ভারসাম্যহীনতা চলে। শরীরের সিস্টেমগুলির অনিয়মিত বা বিষম অবস্থা প্রাপ্ত হয়। তার ফলে ইনডাইজেশন বা বদহজম, অজীর্ণ, পেটফাঁপা, পেটব্যথা, বমি ভাব বা বমি হওয়া সঙ্গে ডায়েরিয়া, আয়ুর্বেদের ভাষায় যাকে বলে মলের অতিসরণ বা অতিসার। এই সময় গ্রীষ্মকালীন ডায়েরিয়া যেমন দেখা দেয় আবার কখনও কখনও কোষ্ঠকাঠিন্যও দেখা দেয়।
আরও পড়ুন-চার্লস ফিলিপ আর্থার জর্জের অভিষেক অনুষ্ঠানে থাকছেন সোনম কাপুর
অন্নবহ স্রোত এবং পুরীষবহ স্রোতের অনিয়ন্ত্রিত একটা বিষম অবস্থা চলে। তার মধ্যে অত্যধিক গরম যখন হয় মানুষ হাঁসফাঁস করে, খুব বেশি ঘাম শরীর থেকে নিঃসৃত হয়, স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হয় ফলে শরীর আরও রুক্ষ হয়ে যায়। এই অত্যধিক রুক্ষতার জন্য খাবারে অনীহা উৎপন্ন হয়। শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে জল বেরিয়ে যায়, ফলে ডি-হাইড্রেশন হয়ে যায়। আমাদের খাদ্যনালি থেকে শুরু করে অন্ত্র, পাকস্থলী ইত্যাদিতেও ডিহাইড্রেশন হয়ে যায়। তার ফলে উৎসেচকগুলোর নিঃসরণ হয় না। এই সব অঙ্গের সাধারণ গতি বা ছন্দ ব্যাহত হয়, কর্মক্ষমতা হারায় এবং বিষম হয়ে যায়। এর ফলে শরীর এবং মনে একটা প্রচণ্ড ইরিটেশন তৈরি হয়। শরীরে অস্বস্তি হয়। সেই জন্য এই সময় শরীর ঠান্ডা করা ও পেট ঠান্ডা রাখা জরুরি।
কী করবেন
স্নান করা ভীষণ দরকার, গায়ে সহ্য হলে দিনে দু-তিনবার করা যেতে পারে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খেতে হবে।
সকালে রোদ ওঠার আগে ঘুম থেকে উঠে ঠান্ডা বাতাস গায়ে লাগান। এটা খুব জরুরি।
গরম বাতাসে লু বয় তাই দরজা জানালা বন্ধ রাখা উচিত যাতে ঘর ঠান্ডা থাকে। খসখস ঝুলিয়ে রাখুন। ঘর সম্ভব হলে দু’বার জল দিয়ে মুছে নিন।
মাটির কলসির জল খেলে ভাল। ফ্রিজের জল খাওয়া যেতে পারে তবে অতি-ঠান্ডা জল নয়। ঠান্ডা-গরম মিশিয়ে খান।
আগের দিন রাতে মৌরি, মিছরি, ধনে ভিজিয়ে রেখে সকালে সেটা ছেঁকে তার সঙ্গে রক্তচন্দন বাটা দু-তিন ফোঁটা মিশিয়ে খান সকালে খালি পেটে।
আরও পড়ুন-তৃণমূল সরকারের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি: ‘লড়তে হবে, জিততে হবে’,বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর
কচি ডাবের জল বা আখের রস খাওয়া যেতে পারে। এতে শরীরে বল বাড়ে।
আয়ুর্বেদে একমাত্র গ্রীষ্মকালের দুপুরে ঘুমের নিদান রয়েছে। শিশু, বয়স্ক, শারীরিক ভাবে দুর্বল মানুষ দুপুরে ঘুমোতে পারে। যুবক বা যুবতী হলেও শুতে পারে তবে যদি সে শারীরিক দুর্বল বা অসুস্থ হয়।
টক দইকে ঘোল করে সৈন্ধব লবণ মিশিয়ে খেলে শরীর ঠান্ডা হবে।
একসঙ্গে অনেকটা খাওয়া যাবে না, বারে বারে অল্প করে খেতে হবে।
জিরে, মৌরি এই মশলাগুলো সবজির স্যুপে দিয়ে খাওয়া যেতে পারে। ঝিঙে, কুমড়ো, পটল, বেগুন, গাজর ইত্যাদি সবজি হালকা ফোড়ন দিয়ে স্যুপের মতো করে খাওয়া যেতে পারে। স্পাইস এবং ফ্রায়েড আইটেম বাদ দিতে হবে।
আরও পড়ুন-বেথুন স্কুলের ১৭৫ বছর, রাজপথে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা
ডায়েরিয়া শুরু হলে
ডায়েরিয়া শুরু হলে কুর্চি ছালের চূর্ণ দু’গ্রাম করে দিনে দু’বার খাওয়া যেতে পারে।
থানকুনি পাতা পাঁচটা করে সকাল-সন্ধে জলে ফুটিয়ে বা রস করে খেতে পারে।
বেলশুঁঠ চূর্ণ ও কুর্চি ছালের চূর্ণ মিশিয়ে দু’গ্রাম করে সকালে বিকেলে খেলে উপকার পাওয়া যাবে।
হরীতকী, সৈন্ধব, শুন্ঠী জোয়ান সমান মাত্রায় মিশিয়ে দেড় থেকে তিনগ্রাম করে দিনে দু’বার খাওয়া যেতে পারে।
মুসাম্বি লেবু, আপেল, কচি তালের শাস, তরমুজ, পেয়ারা ইত্যাদি খেতে হবে।
কলমি শাক, শুশনি শাক খাওয়া যেতে পারে নিয়মিত।
আরও পড়ুন-লালন শেখ মামলায় রাজ্য পুলিশেই আস্থা কোর্টের নির্দেশ সিবিআইকে
এই সময় যদি খুব কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়, সেক্ষেত্রে ইসবগুলের ভুসি, কটকি চূর্ণ মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
পেট ফাঁপলে সেক্ষেত্রে জোয়ানের আরক খাওয়া যেতে পারে।
পেটে ব্যথা হলে আমলকী চূর্ণ বা শুকনো আদার গুঁড়ো খাওয়া যেতে পারে। মুথা চূর্ণ বা মুস্তক চূর্ণ খাওয়া যেতে পারে।
খুব বেশি পরিমাণে পেট খারাপ হলে কুটজ ঘন বটি দুটো করে দিনে দু’বার অথবা লবঙ্গাদি বটি, চিত্রকাদি বটি দুটি করে দিনে দু’বার খাওয়া যেতে পারে।
বিল্বাদি চূর্ণ সকাল-সন্ধে খাওয়া যেতে পারে। খাওয়ার পর পেটে গ্যাস ফর্ম করলে হিঙ্গাষ্টক চূর্ণ খাওয়া যেতে পারে সকাল- সন্ধে।
খুব অম্বল হয়ে গেলে ধাত্রীলৌহ পাঁচশো মিলিগ্রাম দিনে দু’বার সকাল-দুপুর খাওয়া যেতে পারে। সুতশেখর রস ২৫০ মিলিগ্রাম সকালে-সন্ধ্যায় খাওয়া যেতে পারে।
কুশ, কাশ, আখ, বেনা ভিজিয়ে সেই জল খেলে শীতল হবে শরীর।