ড. পার্থ কর্মকার
জয়েন্ট ডিরেক্টর অফ পাবলিক ইন্সট্রাকশন গভঃ অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল অ্যান্ড অ্যাডভাইসর ওয়েস্ট বেঙ্গল স্কুল সার্ভিস কমিশন, প্রাক্তন উপসচিব (শিক্ষা), পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ।
উচ্চমাধ্যমিকের বিভিন্ন বিষয়ের সম্মাননীয় অভিজ্ঞ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে মতামত বিনিময়ের মাধ্যমে যেসকল বিষয়ভিত্তিক টিপসগুলি পেয়েছি তা তোমাদেরকে উপস্থাপন করছি। এতে তোমরা তোমাদের ভুলগুলো দূর করে অনেক সুন্দর করে উত্তর লিখতে পারবে। একই সঙ্গে ধন্যবাদ জানাই সম্মাননীয় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের যাঁরা বিভিন্ন বিষয়ে সুন্দর উত্তর লেখার কৌশল আমাকে শেয়ার করেছেন আমাদের প্রিয় ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে।
আরও পড়ুন-শান্তিপুর পুরসভা চালু করল দুয়ারে চিকিৎসা
বিভিন্ন বিষয়ের উপরে কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস
ভূগোল (Geography) এর ক্ষেত্রে
১) যথাসম্ভব নিজের ভাষায় উত্তর লিখতে হবে।
২) MCQ উত্তর লেখার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নিশ্চিত হয়ে প্রদত্ত স্থানে সঠিক অপশনটি পেন দিয়ে লিখতে হবে। যদি সম্পূর্ণ নিশ্চিত না হওয়া যায় সেখানে পেন্সিল ব্যবহার করা ভাল।
৩) SAQ এর ক্ষেত্রে উত্তর লেখার সময় সঠিক উত্তর ভেবে নির্দিষ্ট স্থানে উত্তর লিখতে হবে। উত্তর লেখার স্থান যেহেতু নির্দিষ্ট তাই কাটাকাটি করে জায়গা নষ্ট করা ঠিক হবে না।
৪) Essay Type প্রশ্ন সাধারণত ৭ নম্বরের ৫টি করতে হয়। যার মধ্যে তিনটিতে অথবা থাকে। যে সকল প্রশ্নের পার্ট মার্কিং বেশি থাকে সেই সকল প্রশ্ন উত্তর লেখার জন্য বেছে নেবে। তাহলে বেশি নম্বর তোলার সুযোগ থাকবে।
৫) খাতায় যথাসম্ভব উত্তরের পাশে চিত্র দিতে হবে। চিত্র পেন্সিল দিয়ে আঁকবে।
৬) যেসকল উত্তর এক্ষেত্রে উদাহরণ দেওয়া সম্ভব সেই সকল স্থানে তা উল্লেখ করতে হবে এবং সেগুলোকে আন্ডারলাইন করে দিতে হবে।
৭) জনসংখ্যা, জনবসতি, কৃষি ও শিল্প অধ্যায়-এর ক্ষেত্রে তথ্য উল্লেখ করার সময় সাল দিতে হবে।
আরও পড়ুন-অনির্দিষ্টকালের জন্য পরীক্ষা স্থগিত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়
অর্থনীতি (Economics)-এর ক্ষেত্রে
১) প্রশ্নের দুটি বিভাগ থাকবে— একটি Part-1(২ নম্বর ও ৫ নম্বর এর প্রশ্ন) আর একটি Part-2 (MCQ ও SAQ)।
২) MCQ এর উত্তর বিকল্প উত্তরগুলোর পাশে বক্স-এ টিক দেবে (কোনও কারণে ভুল উত্তরে টিক দিলে সেটা কেটে সঠিক উত্তরের পাশে টিক অথবা পাশে a/b/c/d যেটা সঠিক হবে সেটা লিখে দেবে)।
৩) SAQ এর প্রশ্ন তিন ধরনের হয় (শূন্যস্থান, সত্য/মিথ্যা, আর এক কথায় উত্তর) চেষ্টা করবে। ১০টা নয়, সবগুলোর উত্তর করো, তাহলে ভুলগুলো বাদ দিয়েও পুরো নম্বর পেয়ে যেতে পারো।
৪) ২ নম্বর প্রশ্নের উত্তর শুধু দুটো পয়েন্ট লিখে ছেড়ে দেবে না, চেষ্টা করবে অতি সংক্ষিপ্ত (1/2 লাইনে পয়েন্টটা ব্যাখ্যা করার)।
৫) যে সমস্ত ২ নম্বর প্রশ্নের উত্তরে ফর্মুলা লেখা যায় (যেমন প্রান্তিক আয়, স্থিতিস্থাপকতা ইত্যাদি) সেগুলোতে অবশ্যই ফর্মুলা লিখবে।
৬) যে সমস্ত ২ নম্বর প্রশ্নের উত্তরে উদাহরণ দেওয়া যায় (যেমন, গিফেন দ্রব্য) সেগুলোতে একটা বা দুটো উদাহরণ দেবে।
৭) যে সমস্ত ২ নম্বর প্রশ্নের উত্তর এ ডায়াগ্রাম (গ্রাফ) দেওয়া যায় (যেমন, সম্পূর্ণ স্থিতিস্থাপক চাহিদা রেখা) সেগুলোতে আঁকবে। আর আঁকার ক্ষেত্রে মূলবিন্দু (o) ও X-অক্ষ ও Y-অক্ষ চিহ্নিত করতে ভুলবে না।
৮) ৫ নম্বর প্রশ্নের উত্তর লেখার সময় ভূমিকা (১/২ লাইন হলেও) আর উপসংহার অবশ্যই দেবে।
৯) ৫ নম্বর প্রশ্নের উত্তরে ছক, ছবি দিতে হবে এবং সেগুলোর ব্যাখ্যা করতে হবে।
১০) খাতায় প্রশ্নের নম্বর সুস্পষ্ট ভাবে লিখবে। যদি কোনও প্রশ্নের অথবা প্রশ্নটির উত্তর লেখ (যেমন ২ এর b প্রশ্নের অথবা) তবে সেক্ষেত্রে এভাবে লিখবে 2. b or) ।
আরও পড়ুন-ভারতের তুরুপের তাস নেট রানরেট
দর্শন (Philosophy)-এর ক্ষেত্রে
১) একটি প্রশ্নের উত্তর লেখার পর কিছুটা জায়গা ফাঁকা রাখতে হবে।
২) ভাল করে বুঝে নিয়ে প্রত্যেকটি প্রশ্নের উত্তর প্যারাগ্রাফ করে করে লিখতে হবে।
৩) বচনের ব্যাপকতা জানতে হবে। জানতে চাইলে ব্যাপ্য ও অব্যাপ্য দুটোই উল্লেখ করতে হবে পারলে গুণ পরিমাণ উল্লেখ করলে ভাল হয়।
৪) বৈধতা বিচার করার সময় যুক্তির গঠন যে পৃষ্ঠাতে হবে সেই পৃষ্ঠাতেই যেন ব্যাখ্যাটা থাকে।
৫) বৈধতা বিচারের সময় সংস্থান এবং মূর্তি অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে।
৬) বৈধতা বিচার করার সময় অবৈধ হলে দেশের নাম কোন নিয়ম লঙ্ঘনের ফলে এই দোষ হল সেটি অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে বৈধ হলেও অবশ্যই ব্যাখ্যা লিখতে হবে।
৭) বৈধতা বিচারের ক্ষেত্রে অনেকগুলি দোষ হতে পারে কিন্তু কোনও একটি দেশকে সামনে রেখেই ব্যাখ্যা করতে হবে।
৮) কোনও প্রশ্নের উত্তর লেখার পর ভুল হয়েছে মনে হলেও খাতাতে কাটাকুটি করার দরকার নেই একই দাগ নম্বর আবার দিয়ে যেটি ঠিক হবে মনে হচ্ছে সেটি লিখে দেওয়া ভাল। প্রত্যেকটি মূল প্রশ্নের উত্তর লেখার পর চার আঙুল জায়গা রাখতে হবে পরীক্ষকের নম্বর বসানোর জন্য।
৯) আরোহ পদ্ধতি লেখার সময় সাংকেতিক আকার এবং মুহূর্ত আকার সঠিকভাবে উল্লেখ করতে হবে বিশেষত সাংকেতিক আকার লেখার পর কারণ কার্য অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে।
১০) আরোহ পদ্ধতির ক্ষেত্রে সুবিধা এবং অসুবিধা দুটি করে লিখতে বলা হয় সুবিধা-অসুবিধা তিনটি করে লিখলে নম্বর কাটার সম্ভাবনা কম থাকে।
আরও পড়ুন-খোলা মনে খেলব এবার, আইপিএলের আগে বিরাট-ঘোষণা
ইতিহাস (History)-এর ক্ষেত্রে
১. দাগ নম্বর সঠিকভাবে উল্লেখ করতে হবে।
২. MCQ সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে হবে। কনফিউশন থাকলে হবে না।
৩. সঠিক তথ্য লিখতে হবে। ভুল তারিখ লেখা চলবে না।
৪. ভূমিকা থাকতে হবে। পয়েন্ট করে সব হেডিং সহ উত্তর লিখতে হবে। উত্তর হবে টু দ্য পয়েন্ট।
৫. দুটি প্রশ্নের উত্তরের মাঝখানে যথেষ্ট ফাঁকা জায়গা রাখতে হবে।
৬. একটি প্রশ্নের দুটি প্যারাগ্রাফের মধ্যে ফাঁকা জায়গা রাখতে হবে।
৭. ইতিহাসে তারিখ খুব গুরুত্বপূর্ণ, সঠিক তারিখ জানা থাকলে তবেই লিখতে হবে।
৮. বড় প্রশ্নের অনেকক্ষেত্রেই দুটি অংশ থাকে। উত্তর আলাদা আলাদাভাবে দুটি অংশেরই দিতে হবে।
৯. বড় প্রশ্নে প্রয়োজনে ঐতিহাসিকের উদ্ধৃতি দেওয়া যেতে পারে। তবে তা প্রাসঙ্গিক হওয়া উচিত।