আমাদের বাংলার মা-মাটি-মানুষের সরকার এ রাজ্যের দশ কোটি মানুষকে তাদের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ৬৪টি প্রকল্পের সুরক্ষা কবচের আওতায় নিয়ে এসেছে। বিনামূল্যে চাল বণ্টনের প্রকল্প খাদ্যসাথী— রাজ্য জুড়ে ২০,৪০০টি ন্যায্য মূল্যের রেশন দোকান ও ৫০০টি সরবরাহ কেন্দ্রের মাধ্যমে ৯ কোটি সুবিধা প্রাপককে বিনামূল্যে খাদ্যশস্য সরবরাহ করা হচ্ছে। বাংলার ডেয়ারির খুচরো বিক্রয় কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়িয়ে ৫৭৬টি করা হয়েছে যার ফলে প্রতিদিন গড় দুধ বিক্রির পরিমাণ ১.৪০ লক্ষ লিটার হয়েছে। অভূতপূর্ব ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্পের সুবিধা সর্বমোট ২৭৪৯টি হাসপাতাল/ নার্সিং হোমে পাওয়া যাচ্ছে। ‘চোখের আলো’ প্রকল্পে ১.৩১ কোটি মানুষ উপকৃত হয়েছেন।
আরও পড়ুন-যৌথ সংস্থার চুক্তি স্বাক্ষর করল রিলায়েন্স-ডিজনি
১২.৪৫ লক্ষ ছানি অপারেশন হয়েছে এবং ১৪.৪৮ লক্ষ বিনামূল্যে চশমা বিতরণ করা হয়েছে। ‘শিশুসাথী’ প্রকল্পে ২৯৫০০ জনের জন্মগত হার্টের রোগ নিরাময় এবং ৯৬৯৯ ক্লেপ্ট লিপ প্যালেট এবং ক্লাবফুট রোগের চিকিৎসা সম্ভব হয়েছে। ২০১১ সালের ব্লাড ব্যাঙ্কের সংখ্যা ৫৮টি থেকে বেড়ে ৮৯টি হয়েছে। ৮০০টি জুনিয়র হাই স্কুলকে হাই স্কুলে উন্নীত করা হয়েছে এবং ২২০০টি হাই স্কুলকে হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলে রূপান্তরিত করা হয়েছে। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠ্য পুস্তক/ স্কুল ইউনিফর্ম/ জুতো প্রদান করা হয়। মিড-ডে মিল কর্মসূচির অধীনে ১.১৮ কোটি ছাত্রছাত্রীদের পুষ্টিকর রান্না করা খাবার দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিগত ১২ বছরে রাজ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১২টি থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৪২টি করা হয়েছে। যার মধ্যে ৩১টি হল রাজ্য পোষিত বিশ্ববিদ্যালয় ও ১১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্পের সুবিধাপ্রাপ্ত ছাত্রীদের সংখ্যা গত বছর ছিল ৭৫ লক্ষ ৬৮ হাজার। এই বছর আরও ১০ লক্ষ ৫০ হাজার নতুন সুবিধা প্রাপক যুক্ত হয়ে সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে ৮৬ লক্ষ ১৮ হাজারে। কন্যাশ্রী প্রকল্পের অধীনে রাজ্যের মেয়েদের অগ্রগমনের বিষয়টিকে মান্যতা দিয়েছে স্বয়ং ইউনেস্কো। ‘রূপশ্রী’ প্রকল্পে সুবিধাপ্রাপ্ত মহিলাদের সংখ্যা ছিল ১৫ লক্ষ ৯৫ হাজার। এবছর আরও ৮৪ হাজার ৬৭০ জন যুক্ত হয়ে সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে ১৬ লক্ষ ৮০ হাজারে। ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্পে সুবিধাপ্রাপ্ত মহিলাদের সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৯৮ লক্ষ। এবছর আরও ১৩ লক্ষ যুক্ত হয়ে সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ১১ লক্ষে। সাধারণ মহিলাদের ক্ষেত্রে ভাতার পরিমাণ ৫০০ টাকা থেকে বেড়ে ১০০০ টাকা ও তফসিলি জাতি ও উপজাতির মহিলাদের ক্ষেত্রে ১০০০ টাকা থেকে বেড়ে ১২০০ টাকা হয়েছে। ৬০ বয়সের অধিক বয়স্কদের জন্য সমপরিমাণ বার্ধক্য ভাতা দেওয়া হচ্ছে। ‘বার্ধক্য ভাতা’ প্রকল্পে সুবিধাপ্রাপ্ত মানুষের সংখ্যা ছিল ১৯ লক্ষ ৪৪ হাজার। এই বছর আরও ৯ লক্ষ নাগরিক যুক্ত হয়ে সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে ২৮ লক্ষ ৪৪ হাজারে। ‘বিধবা ভাতা’ প্রকল্পে সুবিধাপ্রাপ্ত মহিলার সংখ্যা ছিল ১৯ লক্ষ ১৯ হাজার। এই বছর আরও ১ লক্ষ ৪ হাজার মহিলা যুক্ত হওয়ায় সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে ২০ লক্ষ ২৩ হাজারে।
আরও পড়ুন-কমনওয়েলথ দাবা চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা জিতলেন বাংলার মিত্রাভ গুহ
‘মানবিক’ প্রকল্পে সুবিধাপ্রাপ্ত মানুষের সংখ্যা ছিল ৭ লক্ষ ৩৩ হাজার। চলতি বছরে আরও ৭ হাজার সুবিধাভোগী যুক্ত হওয়ায় সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে ৭ লক্ষ ৪০ হাজারে। ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড’ প্রকল্পে এখনও পর্যন্ত ৬২ হাজারের বেশি ছাত্রছাত্রীদের জন্য বার্ষিক ৪% সুদের হারে ঋণ মঞ্জুর করা হয়েছে যার সামগ্রিক পরিমাণ ২০০০ কোটি টাকারও বেশি। রাজ্য ক্রীড়া দফতর বিভিন্ন ক্রীড়াক্ষেত্রে উৎসাহ প্রদানের উদ্দেশে বেঙ্গল আর্চারি অ্যাকাডেমি, বেঙ্গল টেবল টেনিস অ্যাকাডেমি, বেঙ্গল টেনিস অ্যাকাডেমি, বেঙ্গল ফুটবল অ্যাকাডেমি চালু করেছে। এছাড়াও সাঁতার অ্যাকাডেমি, ব্যাডমিন্টন অ্যাকাডেমি, রাইফেল শুটিং অ্যাকাডেমি স্থাপনে সচেষ্ট হয়েছে। বিবেকানন্দ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে একটি আন্তর্জাতিক মানের হকি স্টেডিয়াম নির্মাণের কাজ চলছে। বিবেকানন্দ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন, নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম, রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়াম এবং কিশোর ভারতী স্টেডিয়াম-এর মানোন্নয়ন করা হয়েছে। ২০১১-র পর রাজ্য জুড়ে নবরূপে সজ্জিত ১৮টি যুব আবাস জনসাধারণের ব্যবহার্থে ইতিমধ্যেই খুলে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ২০১১-র পর সম্পূর্ণ নতুনভাবে নির্মিত ২৩টি যুব আবাস জনসাধারণের ব্যবহার্থে উদ্বোধন করা হয়েছে। টালিগঞ্জের মূর অ্যাভিনিউয়ের যুব আবাসটি ‘বিশ্ব বাংলা যুব কেন্দ্র’র অনুসরণে নির্মাণ করা হচ্ছে। মৌলালির রাজ্য যুব কেন্দ্রের একতলায় প্রায় ১২০০ বর্গফুট জায়গা বিশিষ্ট একটি যুব ক্যান্টিন চালু করা হয়েছে। পূর্বতন সরকারের আমলে এই যুব ক্যান্টিনের ভাড়া বাবদ আয় হত বার্ষিক ১২ হাজার টাকা মাত্র।
আরও পড়ুন-‘সিঙ্গুর হল সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম হল নন্দীগ্রাম’ সন্দেশখালি নিয়ে স্পষ্ট বক্তব্য মুখ্যমন্ত্রীর
কিন্তু বর্তমান সরকারের আমলে যুব ক্যান্টিনের ভাড়া বাবদ আয় বেড়ে হয়েছে বার্ষিক ২০ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা যা রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে নিশ্চিতভাবেই বর্তমান রাজ্য সরকারের সাফল্যকে সূচিত করে। ২০১১-র পর এখনও পর্যন্ত মোট ৪২৩টি খেলার মাঠের উন্নয়ন করা হয়েছে। ২০১১-র আগে পূর্বতন সরকারে আমলে মাত্র ৬৪টি মাল্টি জিম ছিল। ২০১১ সালের পর থেকে এখনও পর্যন্ত মোট ৪১১১টি মাল্টি জিম স্থাপন করা হয়েছে। ২০১১-র পর থেকে এখনও পর্যন্ত মোট ৭৯৫টি মিনি ইন্ডোর গেমস কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়েছে। সম্প্রতি কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে একটি অত্যাধুনিক স্পোর্টস মেডিসিন সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। ক্রীড়া ব্যক্তিত্বদের স্বাস্থ্যের নিবিড় মূল্যায়ন এবং সমস্ত ধরনের খেলাধুলাজনিত আঘাত থেকে মুক্তিলাভের জন্য এটিতে অত্যাধুনিক পরিষেবা প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে। বর্তমানে সারা ভারতে এটি কোনও রাজ্য সরকার পরিচালিত একমাত্র স্পোর্টস মেডিসিন কেন্দ্র যা বাংলার ক্রীড়াবিদদের দীর্ঘ আকাঙ্ক্ষিত চাহিদা পূরণ করে চলেছে। অদ্যাবধি ২,৪৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে পূর্ত বিভাগ ১৬৩০ কিমি এলাকা জুড়ে ২২৫টি পথ নির্মাণ প্রকল্প এবং ২১ ব্রিজের কাজ সম্পূর্ণ করেছে। এছাড়াও ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪৩টি পুরাতন জীর্ণ ব্রিজের পুনর্নির্মাণের কাজ সমাপ্ত হয়েছে। চলতি অর্থবর্ষে ৫.১৪ লক্ষ নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পরিষেবা প্রদানের লক্ষ্যে ৭টি ৩৩/১১ কিলো ভোল্ট সাব স্টেশন নির্মিত হয়েছে সর্বমোট ক্ষমতা ১১৪.১ এমভিএ। এছাড়াও বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পুরণের লক্ষ্যে ১৩ টি ৩৩/১১ কিলো ভোল্ট ক্ষমতাসম্পন্ন সাবস্টেশনগুলির কার্য ক্ষমতা অতিরিক্ত ৮৯.৮ এমভিএ পর্যন্ত বাড়ানোর কাজ শেষ হয়েছে। চা-সুন্দরী আবাসন প্রকল্পে বন্ধ এবং রুগ্ণ চা-বাগানগুলির স্থায়ী কর্মীদের এখনও পর্যন্ত ৪০২২টি একতল বিশিষ্ট বাড়ি প্রদান করা হয়েছে। কর্মাঞ্জলি প্রকল্পে যে সমস্ত কর্মরতা মহিলারা শহরে একা থাকেন এবং যাঁদের কোনও বাসস্থান নেই তাঁদের কম ভাড়ায় বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। নিখরচায় সামাজিক সুরক্ষা যোজনা, নির্মাণ শ্রমিক, পরিবহণ শ্রমিক সহ ৬১টি অসংগঠিত ক্ষেত্রের নথিভুক্ত ১,৬৩,৬১,৪৪৩ জন শ্রমিকের মধ্যে ৩৩,৪৬,৭০৮ জন সুবিধা প্রাপককে সর্বমোট ২,৩২৩.০৯ কোটি টাকার সাহায্য দেওয়া হয়েছে। অষ্টম দফা পর্যন্ত দুয়ারে সরকার প্রকল্পে ৬.৬৮ লক্ষ শিবির অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে ৯.৯০ কোটিরও বেশি আবেদনপত্র জমা পড়েছে। যার মধ্যে ৮.৭৮ কোটি আর্জি অনুযায়ী পরিষেবা ইতিমধ্যেই প্রদত্ত হয়েছে।
আরও পড়ুন-বঞ্চিতদের পাশে রাজ্য, ৫৯ লক্ষ জবকার্ড হোল্ডারকে টাকা, ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর
আর উল্টোদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই জনমুখী প্রকল্পগুলিকে ব্যঙ্গ করে বিজেপির নেতারা এমনকী দেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত দান–খয়রাতির রাজনীতি (রেওড়ি পলিটিক্স) অ্যাখ্যা দিয়েছেন, যদিও সাম্প্রতিক কালে দেশের মানুষ দেখেছেন যে মধ্যপ্রদেশে ভোটের আগে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারকে নকল করে ‘লাডলি বেহেনা’ প্রকল্পের প্রচার তাঁরাই করলেন। এটা অবশ্য নতুন কিছু নয়। কারণ এর আগেও দেশের মানুষ দেখেছেন ২০১৩ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কন্যাশ্রীকে নকল করে ২০১৪ সালে ক্ষমতায় এসে বিজেপিক ‘বেটি বাঁচাও’ প্রকল্প ঘোষণা করেছে। দুঃখজনকভাবে এই কেন্দ্রীয় প্রকল্পে কোনও অর্থ বরাদ্দ হয়নি এবং আজ অবধি কোনও মহিলা সেই প্রকল্পের কোনও সুবিধাও পাননি।