আজকের বিষয় বহুত্ববাদ ভারতীয় রাজনীতির অন্তরাত্মা। অর্থাৎ, ভারতীয় রাজনীতি আজ কোন পথে এগিয়ে চলেছে সেটা নিয়ে আমি আমার চিন্তা-ভাবনা, আমি কীভাবে ভারতীয় রাজনীতিকে দেখছি সেটাই আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নিচ্ছি। ভারতীয় রাজনীতির বর্তমান পরিস্থিতি বুঝতে গেলে আমার মনে হয়, সবার আগে আমাদের ইতিহাস জানাটা জরুরি এবং কিছুটা পিছনের সময়ে ফিরে যেতেও হবে।
ভারতবর্ষ এত বড় একটা দেশ। আসলে ভারতবর্ষ একটা দেশ নাকি মহাদেশ? একটা দেশের মধ্যে অনেকগুলো দেশ মিলেই তৈরি আমাদের ভারতবর্ষ। সুতরাং, ভারতবর্ষ আক্ষরিক অর্থেই একটি মহাদেশ। যে কারণে আমরা আমাদের মাইথলজিতেও এর উল্লেখ পাই, মহাভারতের।
কেন মহাভারত, শুধু ভারত নয় কেন? মহাভারত পড়ে বা মহাভারত সম্পর্কে আলোচনা করে আমি যেটুকু বুঝেছি, মহাভারতের একটা লেখার মধ্যে এত রকমের বৈচিত্র্য, টুকরো টুকরো এত অংশ একসঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে; সেই চিত্রগুলো এতটাই বৈচিত্র্যপূর্ণ, স্বাচ্ছন্দে আমরা তাকে বলতে পারি যে এই কাব্যে একটা মহাদেশর কাহিনিই বর্ণিত হয়েছে। কর্মসূত্রে পৃথিবীর অনেক দেশেই ঘুরেছি। প্রত্যেকটি দেশের একটি নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য থাকে, কিন্তু ভারতবর্ষ এমন একটি দেশ তাকে একটি ছকে কোনও ভাবেই ফেলা যায় না। ভারতকে একমাত্রিক কাঠামোতে ফেলে বোঝা সম্ভব নয়। ভারতবর্ষের যে সামাজিক বৈচিত্র্য, রাজনৈতিক বৈচিত্র্য সেটা না বুঝলে ভারতবর্ষের রাজনীতির কী হবে, কোন পথে রাজনীতির চলা উচিত, আমাদের রাজনৈতিক অবস্থান কী হবে সেটা বোধহয় নির্ধারণ করতে কোথাও কোথাও অসুবিধা হবে।
আরও পড়ুন-রসরাজ
ছোট ছোট কয়েকটা উদাহরণ দিয়ে সেটা পরিষ্কার বোঝা যায়—
ভারতবর্ষের সংবিধানের এইট শিডিউল অনুযায়ী ২২টা অফিসিয়াল ভাষা আছে। ২০১১-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী ভারতবর্ষে ১৯ হাজার ৫০০টি ভাষা আছে। মানে যেটা রেকর্ড করা গেছে। বাস্তবে হয়তো তার থেকে বেশি থাকবে। ব্যাপকতাটা একবার ভাবুন! ১৯,৫০০টি ভাষাকে আবার ১২১টি ভাগে বিভক্ত করা গিয়েছে। অর্থাৎ খুব কম করে ধরলেও ১২১টি ভাষা আছেই। মুর্শিদাবাদের মানুষ যে ভাষায় কথা বলেন, বীরভূমের মানুষ তার চেয়ে অন্য ভাষায়, মেদিনীপুরে মানুষ আরেকটু অন্য, কলকাতার মানুষ আরও আলাদা ভাষায় কথা বলেন। আমরা যদি একটু একটু করে সরে যাই, তাহলেই কতটা পার্থক্য হয়ে দাঁড়াচ্ছে একটা রাজ্যের মধ্যেই! কলকাতায় যদি ‘কোথায় গিয়েছিলি?’ জানতে চাওয়া হয়, এটাকেই মুর্শিদাবাদের কেন্দ্রবিন্দুতে বলা হয় ‘কতি জেলছিলি রে?’ এটাই মুর্শিদাবাদের ভাষা। একটু এগিয়ে এসে বর্ধমানের দিকে যদি ঢোকেন, বর্ধমানে ঠিক একই ভাষাকে বলা হয় ‘কোথা গিয়েছিলে রে?’ ভাবুন যদি একটা রাজ্যের মধ্যে তিনটি জেলাতে একই বাক্য এইভাবে পরিবর্তিত হয় তাহলে সমগ্র ভারতবর্ষে তার চেহারাটা কেমন হবে! তামিলরা তামিল বলেন, গুজরাটিরা গুজরাটি, পাঞ্জাবিরা পাঞ্জাবি বলেন।
আরও পড়ুন-সিগনাল পার করে গাড়িতে ধাক্কা ট্রেনের
শুধু ভাষাগত বৈচিত্র্যতেই ভারতবর্ষের এতরকম চিত্র। এবার যদি সংস্কৃতিগত বৈচিত্র্য নিয়ে কথা বলা যায়, বাংলা দিয়ে শুরু করলে; বাংলার মায়েদের এক রিচুয়াল নীল ষষ্ঠী। এই নীল ষষ্ঠী কিন্তু গোটা বাংলা জুড়ে পালিত হয় না। পশ্চিমবাংলার ওপরের দিকে যে জায়গাকে আমরা উত্তরবঙ্গ বলি সেখানে নীল ষষ্ঠী হয় না। রাঢ়বঙ্গে নীল ষষ্ঠী আছে। যদি সরস্বতী পুজোর কথা ভাবি, পূর্ববঙ্গীয় মানুষজনের আধিক্য যেখানে বেশি সেখানে ইলিশ মাছ খাওয়া হয়। আবার তথাকথিত ঘটি যাদের বলে থাকি তারা সরস্বতী পুজোয় উপোস থাকেন। খাওয়া— সংস্কৃতিগত পার্থক্য শুধু বাংলার মধ্যে এতটা লক্ষ্য করা যায়। তামিলনাড়ুর মানুষ ইডলি-ধোসা খান, আমরা মানে বাংলার মানুষ ভাত খেতে ভালবাসি, পাঞ্জাবের মানুষ রুটি খেতে ভালবাসেন। আসলে কেন? এটাও ভৌগোলিক কারণেই নির্ধারিত হয়।
আরও পড়ুন-বিশ্বভারতীর উপাচার্য এখন রাজনৈতিক নেতার ভূমিকায়
বাংলা হচ্ছে একটি নদীমাতৃক রাজ্য, যেখানে খাল, বিল, নদী, নালা, সমুদ্র বেশি। অর্থাৎ জলা জায়গার আধিক্য বেশি। সেই জন্য এখানে মাছ পাওয়া যায় বেশি, ধান চাষ হয় বেশি। সুতরাং, এই যে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন এক একটা জায়গায় একেক রকম তা প্রাকৃতিক ভৌগোলিকভাবেই ঠিক হয়ে আছে। যদি ভারতবর্ষের বিভিন্ন খাদ্য যেমন মাংস, যারা নর্থ-ইস্টে থাকে আপনারা জানেন সেখানে গরুর মাংস অথবা শুয়োরের মাংস খাওয়ার প্রবণতা বেশি। কারণ সেখানের ভৌগোলিক অবস্থান, সেখানে ঠান্ডার প্রভাব বেশি তাই সেখানে রেড মিট খাওয়ার প্রচলনও বেশি। আমরা যদি পশ্চিম ভারতের কথা বলি যেখানে অনেক গরম, যেমন গুজরাট। আপনি যদি কচ্ছের রানে গিয়ে বলেন আমি রেডমিট খাব তাহলে দু’দিনে অসুস্থ হয়ে পড়বেন। অর্থাৎ পূর্ব থেকে পশ্চিম ভারতের এই বৈচিত্র্য কখনওই অগ্রাহ্য করা সম্ভব নয়। আমাদের পরিধানেও ঠিক একইরকম বৈচিত্র্য রয়েছে।
আরও পড়ুন-অস্ত্র জোগালে পরিণতি ভাল হবে না
ধর্মের দিকেও দেখুন ভারতবর্ষের মধ্যে ২৮ শতাংশ মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ থাকেন, প্রায় ৩৬ কোটি মুসলিম আছেন। মুসলিমরা কতদিন ধরে আছেন ভারতবর্ষে? প্রায় ১২০০ বছরের বেশি। তাঁরা প্রথম বসবাস শুরু করেন আজকের গুজরাট এবং রাজস্থানের কাছে ব্যবসায়ী হিসেবে। তখন থেকে তাঁদের বসবাস; মুসলমান, হিন্দু, সনাতনী, আদিনিবাসী মানুষেরা সহাবস্থান করছেন, প্রত্যেকে সম্পূর্ণ আলাদা আলাদা ধর্ম পালন করে থাকেন। সেটাই তাঁরা বিশ্বাসও করেন। অর্থাৎ আমরা কখনওই বলতে পারি না, একটা ধর্মের মানুষই সমগ্র ভারতবর্ষ জুড়ে আছেন বা আমাদের দেশটা কোনও একটি ধর্মের দেশ। যেমন পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবনের মানুষেরা বনবিবির পুজো করেন, হুগলির মানুষেরা কি তা করেন? করেন না নিশ্চয়ই। কারণ তাঁদের প্রয়োজন নেই। তাই বলে হুগলির মানুষকে কখনওই অধার্মিক বলে দাগিয়ে দেওয়া হয় না। এই যে বৈচিত্র্য সেটা আমাদের সমাজের অংশ। আবার ভারতবর্ষ হল অন্যতম দেশ যেখানে একসঙ্গে আপনি দেখতে পাচ্ছেন হিমালয়ের পর্বতের মতো পর্বত, মরুভূমি, সমুদ্র, জঙ্গল। আমরা যদি ভৌগোলিকভাবেও দেখি তাহলেও ভারতবর্ষ অত্যন্ত বৈচিত্র্যময় একটি দেশ। ভারতবর্ষের আজকের এই যে ভূখণ্ডকে দেখছি সেটা কবে থেকে এইরূপ আয়তন-আকৃতি ধারণ করেছে? খুব কম করেও যদি ভারতবর্ষকে পাঁচ হাজার বছরের সভ্যতা ধরি, একই ভূখণ্ড এই লম্বা সময় ধরে ছিলই না, প্রত্যেকটা জায়গা এক-একটা আলাদা অঙ্গরাজ্য হিসেবে ছিল।
আরও পড়ুন-৫৬ লাখ বাড়িতে নলবাহিত পানীয় জল
তারা নিজেরা নিজেদেরকে একটি দেশ হিসেবেই কল্পনা করত, প্রত্যেকটি অঙ্গরাজ্য তাদের স্থানীয় শাসকদের দ্বারা শাসিত হত। দক্ষিণের লোকজন দক্ষিণের মতো চলত। প্রথম ভারতবর্ষের সবথেকে বড় যে শাসন ব্যবস্থা, অর্থাৎ একই শাসকের অধীনস্থ যে সর্বোচ্চ ভূখণ্ড তা মৌর্য সাম্রাজ্যে প্রথম দেখা যায়। সেখানেও কাশ্মীরের কিছুটা অংশ, দক্ষিণ ভারতের অনেকটা অংশই দেখা যায় না। তারপরে মুঘল সাম্রাজ্যে ঔরঙ্গজেবের শাসনকালেও যথেষ্ট বিস্তৃতি লাভ করে কিন্তু তাও কোনও ভাবেই আজকের ভূখণ্ডের সঙ্গে মেলানো যায় না। তখন এই দিকটা নেই কিন্তু অন্যান্য দিকে কিছু অংশ যেমন আফগানিস্তানের কিছুটা, পাকিস্তান তো অবশ্যই একটা অংশেই ছিল। অর্থাৎ এই ভূখণ্ড ধরে যেটাকে দেশ হিসেবে ভাবা হয় তা আসলে ব্রিটিশ কালের একদম শেষের দিকে একটা আকার নেয়। তারপরে যখন ভারত স্বাধীন হয় তখনও বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য প্রথমেই ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়নি, যেমন পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার এলাকাটা আলাদা থেকে তারা নিজস্ব শাসন ব্যবস্থা চালু রেখেছিল। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে যে ভূখণ্ড দেখতে পাই, আমাদের মহাদেশ ভারতবর্ষ, সেই দেশের মধ্যেও বিভিন্ন ছোট ছোট দেশকে নিয়ে এবং সেই দেশের আবার বিভিন্ন রকমের মানুষকে নিয়ে আজকের দেশের সমাহার। সুতরাং এই যে বহুত্ববাদ এই বহুত্ববাদের সমাহারই আজকের ভারতবর্ষ।
আরও পড়ুন-সূর্যর স্ট্র্যাটেজি সভায় বিজেপির সহসভাপতি, ফের বাম-বিজেপি আঁতাঁত এল প্রকাশ্যে
রাজনৈতিকভাবেও যদিও রাজনীতির দুটো ভাগ; একটি সংসদীয় গণতন্ত্র অপরটি বিপ্লবী রাজনীতি। সেক্ষেত্রে বিপ্লবী রাজনীতির হাজার ভাগ আছে। মনে করুন বামপন্থী রাজনীতি; তার বিভিন্ন মডেল আছে বিভিন্ন দর্শন আছে। তারা ছোট ছোট বিষয়ের উপর আদর্শগতভাবে আলোচনা করেন, তাদের মতভেদ আছে। একটা চিন্তাভাবনারই এত প্রকারভেদ! একইভাবে দক্ষিণপন্থী, মধ্যপন্থী সমস্ত রাজনৈতিক দল বা মতামতের যথেষ্ট শ্রেণিবিভাগ আছে। কোনওভাবেই ভারতের রাজনীতিকে খুব সরলীকরণ করে ‘হয় আমি নয় ও’ কেবলমাত্র এই দুভাগেই বিভক্ত করা যাবে না। অন্যান্য দিকেও, যেমন ভক্তি আন্দোলনের সময় সমান্তরালভাবে সুফি আন্দোলন হচ্ছে। একই ধর্মের মধ্যে আবার বিভিন্ন মতামত কেউ শাক্ত, কেউ বৈষ্ণব, সবটা মিলিয়ে বৈচিত্রের অভাব নেই। আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন, সমস্ত পৃথিবীর কাছে ভারতের পরিচয় হল ‘বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য’ হিসেবেই। বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে বর্তমানে যে কেন্দ্রের শাসক দল অর্থাৎ বিজেপি তারা এই ভারতবর্ষের যে আত্মা তাকেই অস্বীকার করার চেষ্টা করছে।
আরও পড়ুন-পরকীয়ার অভিযোগ বিজেপি কর্মীর বিরুদ্ধে
ভারতবর্ষের আত্মাকে তারা অস্বীকার করে একমাত্রিক রূপ দেওয়ার চেষ্টা করছে। যেটা কখনওই বাস্তবায়িত করা সম্ভব নয়। তাদের মতে গোটা দেশে একটাই ভাষা থাকবে, ১৯৫০০টি ভাষার মানুষকে কখনও কি একটি মাত্র ভাষায় আবদ্ধ করা সম্ভব? তাদের মতে হিন্দি একমাত্র ভাষা হবে সমগ্র দেশে! খাদ্যাভ্যাসও একই রকম করাতে চায়। যে মানুষেরা মাছ-ভাতের উপরে বেঁচে থাকে, তাকে যদি আমি সেটা বাদ দিয়ে চলতে বলি সে কি পারবে? যেখানে হাজার হাজার বছর ধরে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, ইসলাম, জৈন শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে অভ্যস্ত, সকল ধর্মের মানুষকে কি একটি ধর্ম দিয়ে বাঁধা সম্ভব! এ ছাড়াও ভাষাগত বৈচিত্র হল, ধর্মীয় বৈচিত্র্য হলে, সংস্কৃতিক বৈচিত্র্য হল, রাজনৈতিক বৈচিত্র তো কম নয় ভারতবর্ষে! বিভিন্ন রাজ্যে সেখানকার রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা অন্য অঙ্গরাজ্যের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনার সঙ্গে নাও মিলতে পারে। সুতরাং সমগ্র ভারতবর্ষে একই ধরনের দল থাকবে এটাও তো কখনওই সম্ভব নয়। প্রতিটি ভারতবাসীর, তিনি যে মতাদর্শেই বিশ্বস্ত হন না কেন, রাজনৈতিকভাবে তাদের এই বেসিক জায়গাটায় সকলেরই চিন্তা করা উচিত এবং এর বিরুদ্ধে সকলে মিলেই এক আন্দোলন গড়ে তোলা প্রয়োজন। বাকি লড়াই তো থাকবেই, সেটাই তো স্বাভাবিক।
আরও পড়ুন-পরকীয়ার অভিযোগ বিজেপি কর্মীর বিরুদ্ধে
এই বৈচিত্রপূর্ণ দেশে একই মত সকলের হতে পারে না। বিজেপি যেভাবে দুঃস্বপ্ন দেখাচ্ছে ভারতবর্ষকে, হিন্দু রাষ্ট্র করে দেওয়ার— ভারতবর্ষে একটাই ভাষা থাকবে, একই রকমের খাবার সকলেই খাবে, সকলেই একই প্রকার পোশাক পরবেন, উপাসনার পদ্ধতিও একই রকম হবে, যা ভারতবর্ষে বাস্তবিক পক্ষেই সম্ভব নয়। সেটা করতে গেলে দেশের পরিস্থিতি হবে ভয়ঙ্কর, গৃহযুদ্ধ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাবে। মনে করুন মুসলিমরা ৩৫ কোটি ভারতবর্ষে আছে। এই ৩৫ কোটি মানুষকে কি হাওয়া করে দেওয়া সম্ভব? গোটা ইউরোপে যত সংখ্যক মানুষ নেই তত সংখ্যক মুসলিম মানুষেরা ভারতবর্ষে থাকেন। গৃহযুদ্ধ হবে, দেশটা নষ্ট হয়ে যাবে, ভেঙে যাবে; সমাজের মধ্যে তৈরি হবে নৈরাজ্য। একদিকে আর্থিক বৈষম্য বাড়ছে আরেক দিকে যদি আমরা ভারতবর্ষের মূল চিন্তা-ভাবনার মৌলিক নীতিই নষ্ট করে দিই তাহলে আগামী দিনে ভারতবর্ষকে নিয়ে চিন্তা করার যথেষ্ট কারণ আছে। রাজনৈতিকভাবে প্রত্যেকটা মানুষকে এই বিষয়ে অগ্রধিকার দেওয়া উচিত, তিনি যে দলেরই বিশ্বাসী হোক না কেন, যে ধর্মেরই মানুষ হন, ভারতবর্ষের যে প্রান্তেরই মানুষ হোক না কেন। এই একটা বিষয়ে অন্তত সকলের একমত হওয়া উচিত বলেই মনে হয়। বহুত্ববাদ সেই কারণে অতটাই গুরুত্বপূর্ণ ভারতবর্ষের মতো একটা মহাদেশের ক্ষেত্রে। বহুত্ববাদী ভারতীয় রাজনীতির মেরুদণ্ড, ভারতীয় রাজনীতির অন্তরাত্মা এটাকে বাদ দিয়ে কখনও কোনও ভাবেই রাজনৈতিক আলোচনা করা সম্ভব নয়।
আরও পড়ুন-মেয়েদের শিক্ষা বন্ধ করতে স্কুলে গ্যাস-হামলা!
দেশ বাঁচানোর স্বার্থে, আমাদের সমাজ বাঁচানোর স্বার্থে, আগামী প্রজন্মকে বাঁচানোর স্বার্থে, এই বিষয় নিয়ে আরও চর্চা হওয়া উচিত এবং এটা নিয়ে ভারতবর্ষে যতটা আলোড়ন হওয়া প্রয়োজন ছিল এখনও ততটা আলোড়িত হইনি আমরা। আমাদের চেষ্টা থাকবে এ নিয়ে আরও তর্ক-বিতর্ক সভা, আলোচনা সভার আয়োজন করা, অংশগ্রহণ করা, ভারতবাসীর অন্তরাত্মাকে জাগ্রত করার চেষ্টা চালিয়ে যেতেই হবে। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন তাই সব জাতি, ধর্ম, ভাষার মানুষকে একত্রিত হয়ে যুক্ত সাধনার বা যৌথভাবে কাজ করার সুপরামর্শ দিয়েছেন। কারণ সেই ছেলেবেলা থেকেই তো আমরা পড়ে আসছি, কবির সেই বিখ্যাত পঙ্ক্তি— বিবিধের মাঝে দেখো মিলন মহান! সেই মহান দেশের বৈচিত্রকে রক্ষা করার জন্য আমাদেরই এগিয়ে আসতে হবে। যারা দেশের মূলে কুঠারাঘাত করতে চায়, তাদের রুখে দিতে হবে।