অলোক সরকার: খেলার শেষে চন্দ্রকান্ত পণ্ডিতকে দেখে মনে হচ্ছিল এই বুঝি কেউ গেয়ে উঠবে অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের ছবির সেই গান, ‘বরুণ তুমি অঙ্কে ১৩….অঙ্কে ১৩’!
পণ্ডিত আগেরদিন বুক বাজিয়ে বলেছিলেন, “আমাদেরও প্ল্যান আছে। দেখবেন সেভাবেই খেলব।” তা খেললেন। এবং ১ রানে হারলেন! এবং অঙ্কে ফেল করে ‘আসছে বছর আবার হবে’ বলে ঘরোয়া ক্রিকেটের স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন হতে রঞ্জি আবহে ফেরত গেলেন!
আরও পড়ুন-বাঙালির বিস্মৃত অতীত আসল গৌরবগাথা
শনিবাসরীয় ম্যাচে অঙ্কের কচকচির সঙ্গে আর একটা জিনিস ছিল। আবেগ। লখনউ দলটা হঠাৎ সবুজ-মেরুন হয়ে যাওয়ায় এই আবেগ ভাগাভাগি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। তবে হয়নি। ইডেন থাকল কেকেআরেরই। এবং রিঙ্কু সিংয়ের (৬৭ নট আউট)। শুধু প্লে অফ মানচিত্র থেকে নাইটদের সরতে দেখে ঝিমোনো গ্যালারি আওয়াজ তুলল, গম্ভীর…গম্ভীর। অর্থাৎ, তুমি নীতীশ হতে পারো, রাসেল বা নারিন, কিন্তু তোমরা সবাই মিলেও দু’বার আইপিএল দেওয়া গৌতম গম্ভীর নও!
আরও পড়ুন-মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবন যেন সাধারণ কবিতাও নয়
কেকেআর তাদের শেষ লিগ ম্যাচে হেরে গেল ১ রানে। ১৪ ম্যাচে ১২ পয়েন্টেই আটকে থাকল নাইটরা। আর ১৪ ম্যাচে ১৭ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় দল হিসাবে প্লে অফে উঠে গেল লখনউ সুপার জায়ান্টস। বাকি দুই দল গুজরাট ও চেন্নাই।
সন্ধ্যা থেকে সবার মুখে ৯ ওভার ঘুরছিল! মানে সুপার জায়ান্টস যাই করুক, এই ওভারে সেটা তুলে দিতে হবে। তাতেও যে প্লে অফ হত, এমন নয়। আরও অঙ্ক ছিল। মুম্বইকে হারতে হবে। আরসিবিকে হারতে হবে। ৪ ওভারে কেকেআর ৫০/০ করে দেওয়ার পর নাইট গ্যালারিতে তবু উৎসাহের জোয়ার দেখা গেল। তারপর ঝিমিয়ে গেল। ভেঙ্কটেশ যখন ২৪ করে ফিরে গেলেন, ৫.৫ ওভারে ৬১/১। পাওয়ার প্লে-র শেষে এই রানটাই থাকল।
আরও পড়ুন-জামাই-বন্দনা
শেষ ক’টা ওভারে অনেক রান করে ফেলেছিল লখনউ। আর তখনই পরিষ্কার হয়ে যায় যে, এত বড় ধামাকা এখানে হচ্ছে না। কেন মারকুটে গুরবাজকে রেখে ভেঙ্কটেশকে জেসন রয়ের সঙ্গে পাঠানো হল, প্রশ্ন তোলা যায়। রয় চেষ্টা করলেন (২৮ বলে ৪৫)। কিন্তু নীতীশকে দেখে মনে হল এই অ্যাডভেঞ্চারে শামিল হওয়ার কারণ দেখেননি। ১০ বলে ৮ করে ফিরে গেলেন নাইট অধিনায়ক। অতঃপর ৯ ওভারে ৭৯/২ করার সঙ্গে সঙ্গে এবারের মতো কাগুজে আশাতে জল পড়ে গেল। তবে শেষদিকে ম্যাচে কিছুটা আকর্ষণ ফিরিয়েছিলেন রিঙ্কু।
আরও পড়ুন-সাত বছরের মাথায় ফের কেন নোট বাতিল
সন্ধ্যায় মাঠমুখী জনতার ভিড় আগের মতোই ছিল। কিন্তু এই ভিড়ে উৎসাহ ছিল না। থাকার কথাও নয়। কেকেআর আগে ব্যাট করলে কত? পরে ব্যাট করলে ক’ওভারে রান তুলতে হবে? এই অঙ্ক কষতে কষতেই মাঠে ঢুকলেন সবাই।
নীতীশ লখনউ সুপার জায়ান্টসকে আগে ব্যাট করতে দেওয়া পর তাদের শুরু ভাল হয়নি। লখনউয়ের অর্ধেক ব্যাটিং শেষ হয়ে গেল ১০.১ ওভারে। বোর্ডে রান ৭৩/৫। কুইন্টন ডি’কক (২৮) ছাড়া আর কেউ কেকেআর বোলিংকে খেলতে পারেননি। করণ শর্মা ৩, প্রেরক মানকড় ২৬, মার্কাস স্টয়নিস ০, ক্রুনাল পান্ডিয়াও (৯) রান করতে পারেননি।
আরও পড়ুন-যুদ্ধ বন্ধ করুন, ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান জি-৭ গোষ্ঠীর
সুয়শ শর্মাকে হরষিত রানার জায়গায় ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার হিসাবে আনল কেকেআর। চেন্নাইয়ের মতো ইডেনেও স্পিনাররা এবার ছড়ি ঘোরালেন। সুতরাং নাইটরা যে তিন স্পেশালিস্ট স্পিনারে যাবে, বোঝাই গিয়েছিল। বরুণ অবশ্য অন্য দিনের তুলনায় অফ কালার থাকলেন। তবে নারিন শুরু থেকে লখনউয়ের উপর চাপ রেখেছিলেন। চার ওভারে ২৮ রান দিয়ে নিলেন ২ উইকেট। বরুণ চার ওভারে ৩৮ রানে নেন ১টি উইকেট।
পাওয়ার প্লে-তে করণের উইকেট হারিয়ে পঞ্চাশ রান তুলে ফেললে কী হবে, এরপর তাড়াতাড়ি চার উইকেট চলে যায় সুপার জায়ান্টসদের। শার্দূলকে ফেরানো হয়েছিল এদিন। কিন্তু বড় কিছু করতে পারেননি। ২ ওভারে ২৭ রানে ২ উইকেট। বৈভব, হরষিতরা অবশ্য তুলনায় এই ম্যাচে ভাল বল করেছেন।
আরও পড়ুন-পরা যাবে না জিন্স, টিশার্ট, লেগিংস: অসমে ফতোয়া জারি শিক্ষক-শিক্ষিকাদের
তবু লখনউ ২০ ওভারে ১৭৬/৮-এ যেতে পারল নিকোলাস পুরান (৫৮) ও বাদোনির (২৫) সৌজন্যে। এই দু’জন কেকেআর বোলিংয়ের ফাঁস আলগা করতে না পারলেও লখনউকে ভদ্রস্থ জায়গায় নিয়ে গেলেন। জুটিতে উঠল ৮৪ রান। আর তাতেই পার্থক্য হয়ে গেল।