মস্কোর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার চাপ

Must read

প্রতিবেদন : ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে তীব্র চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের প্রেক্ষিতে মস্কোর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করল আমেরিকা। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সাংবাদিক সম্মেলন করে এই নিষেধাজ্ঞা জারির কথা ঘোষণা করেন। বাইডেন বলেন, রাশিয়া যেভাবে ইউক্রেনের প্রতি আগ্রাসন চালাচ্ছে তা অত্যন্ত অন্যায় ও অনৈতিক। ন্যাটো এলাকার শান্তি ও সুরক্ষা বজায় রাখতে আমেরিকা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ইউক্রেনকে (Ukraine) অস্ত্র-সহ সব ধরনের সহযোগিতা করার আশ্বাসও দিয়েছেন বাইডেন। আমেরিকা যেভাবে ইউক্রেনের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে তাতে আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে, কিয়েভকে সাহায্য করতে গিয়ে আমেরিকা কি সরাসরি রাশিয়ার সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়বে? যদিও এ ধরনের কোনও সম্ভাবনার কথা খারিজ করে দিয়েছেন বাইডেন।

এরইমধ্যে পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় ইউক্রেনের (Ukraine) নিরাপত্তা সংস্থাগুলি সরকারের কাছে জরুরি অবস্থা জারির আবেদন জানিয়েছে। প্রথম দফায় জরুরি অবস্থা ৩০ দিনের জন্য জারি করা যায়। পরে তার মেয়াদ আরও ৩০ দিন বাড়ান যায়। একইসঙ্গে ইউক্রেনের পার্লামেন্টে নাগরিকদের আগ্নেয়াস্ত্র বহনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন – চাপ বাড়াতেই পরমাণু অস্ত্রের মহড়া পুতিনের ?

আমেরিকার পাশাপাশি ফ্রান্স, ব্রিটেন, কানাডা, সুইৎজারল্যান্ড, নরওয়ে জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং জার্মানিও রাশিয়ার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করেছে। এই সব দেশ রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম আরও বাড়বে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। কারণ রাশিয়া হল সৌদি আরবের পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জ্বালানি রফতানিকারী দেশ। রাশিয়ার ওপর এই নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে শুধু যে সে দেশের তেল রফতানি মার খাবে তা নয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে রাশিয়ার বিদ্যুৎ, পরিকাঠামো, গাড়ি-সহ বিভিন্ন শিল্প ক্ষেত্র সমস্যার মুখে পড়বে।

ইউক্রেনের বিরুদ্ধে আগ্রাসন চালানোর আগে গত শনিবার রাশিয়া পারমাণবিক অস্ত্রের মহড়াও দিয়েছে। ওই মহড়ায় সাবমেরিন, অত্যাধিক যুদ্ধবিমান এবং নৌবাহিনীর অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র অংশ নিয়েছিল। ছিল পারমাণবিক অস্ত্রও। এই মহড়া চালাতে পার্লামেন্টের সমর্থন চেয়ে একটি প্রস্তাব পেশ করেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। পুতিনের ওই প্রস্তাবে সে দেশের পার্লামেন্ট সায় দিয়েছে।

এরইমধ্যে উপগ্রহ চিত্র দেখা গিয়েছে, রুশ সেনা ইউক্রেন সীমান্ত থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। শেষ ২৪ ঘন্টা ধরে ইউক্রেন সীমান্তে ক্রমশ বাড়ছে রাশিয়ার সৈন্য। মূলত বেলারুশের দক্ষিণ অঞ্চল এবং ইউক্রেন সীমান্তের পশ্চিম দিকে সেনা সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। শুধু সেনার সংখ্যা বাড়ানোই নয়, রাশিয়া ইউক্রেন সীমান্ত-সংলগ্ন বেলগরদেরে একটি অস্থায়ী হাসপাতালও নির্মাণ করেছে। এমনকী, ছোট বিমান অবতরণের জন্য তৈরি করেছে একটি এয়ারফিল্ড। ওই এয়ারফিল্ড ইউক্রেন সীমান্ত থেকে মাত্র ৪০ কিলোমিটার দূরে। ইউক্রেন সীমান্তে প্রতিদিনই এভাবে সেনার সংখ্যা বাড়িয়ে চললেও রাশিয়ার দাবি, ইউক্রেনে হামলা চালানোর কোনও পরিকল্পনাই তাদের নেই। তবে এই মুহূর্তে রাশিয়ার বক্তব্যকে কেউই আর সত্যি বলে মনে করছে না।

রাশিয়ার পরমাণু অস্ত্রের মহড়ার খবরে জি-৭ গোষ্ঠীর শীর্ষ নেতারা রীতিমতো উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। চলতি পরিস্থিতিতে ইউক্রেনকে আর্থিক সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে বিশ্বব্যাঙ্ক। প্রাথমিকভাবে ইউক্রেনকে তারা ৩৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সাহায্য দিচ্ছে। জি-৭ গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে রাশিয়াকে আগ্রাসনের পথ থেকে সরে আসার অনুরোধ জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে উদ্ভূত সমস্যা কূটনৈতিক পথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের জন্য মস্কোকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যদিও বুধবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, তাঁরা কূটনৈতিক সমাধানের পথে যেতে প্রস্তুত। একই সঙ্গে পুতিন জানিয়েছেন যে, রাশিয়ার স্বার্থ ক্ষুণ্ন করে তিনি কোনও সিদ্ধান্ত নেবেন না। রাশিয়া সব সময় সরাসরি ও সৎ আলোচনায় বিশ্বাস করে। তাঁরা মনে করেন, যেকোনও জটিল সমস্যার সমাধান কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমেই হতে পারে। রাশিয়া সেই রাস্তাতেই হাঁটতে চায়। তবে রাশিয়ার মানুষের স্বার্থ উপেক্ষা করে তাঁরা কোনও সিদ্ধান্ত নেবেন না বলে পুতিন জানান। পুতিন এদিন দেশের সেনাবাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, সরকার সব সময় সেনাদের পাশে থাকবে।

রাশিয়া ও ইউক্রেনের উদ্ভূত এই সমস্যায় আন্তর্জাতিক বাজারে ইতিমধ্যেই অপরিশোধিত তেলের দাম প্রায় ৯৮ ডলারে পৌঁছেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, চলতি পরিস্থিতি আরও কিছুদিন থাকলে অপরিশোধিত তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যাবে। ভারতের তেলের চাহিদার বেশিরভাগটাই আমদানি করতে হয়। স্বাভাবিকভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়লে ভারতের বাজারেও পেট্রোল, ডিজেল ও রান্নার গ্যাসের বিপুল দাম বাড়বে। এ ছাড়াও রাশিয়া-ইউক্রেন সমস্যার জন্য কৃষ্ণসাগর দিয়ে পণ্য পরিবহণ বাধা পেলেও দাম বাড়বে বিভিন্ন পণ্যের। বিশেষ করে গম ও ডাল শস্যের। কারণ এই মুহূর্তে রাশিয়া হচ্ছে বিশ্বের বৃহত্তম গম রফতানিকারক দেশ। চতুর্থ ইউক্রেন। সেক্ষেত্রে কৃষ্ণসাগরের পণ্য পরিবহণে বাধা পেলে ভারতের বাজারে গম ও ডালশস্য-সহ আরও কিছু খাদ্য শস্যের দাম বাড়তে পারে।

Latest article