ভালবাসার গল্প নিয়ে ছবি তো সিনেমার সত্য যুগ থেকেই হয়। আর এ এমন এক বিষয় যা জীবনে পেতে বা পর্দায় দেখতে কেউই খুব অপছন্দ করেন না! তাই একের পর এক কাল্ট রোম্যান্টিক ফিল্ম বাংলায় শুধু নয় বিশ্ব সিনেমাতেও বারবার বিষয় হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে এবং তা দুর্দান্তভাবে দর্শক-মন জয় করেছে। সময় গড়িয়েছে, জীবন জটিল হয়েছে, জটিলতর হয়েছে ভালবাসাও। ভালবাসা বা রোমান্স মানে তা যে শুধু দুই নারী-পুরুষেরই হতে হবে সেই প্রথাও ভেঙে চুরমার। একই সঙ্গে জোরদার হয়েছে নিজেকে নিজের মতো করে ভালবাসার দাবিও। অরিত্র সময়ের দাবি মেনে শুধু ছবি বানান না, সময়কে ধাক্কা দিতেও ছবির বিষয় নির্ধারণ করেন। তাই ওঁর আগের ছবিগুলির মতো নতুন ছবি ‘ফাটাফাটি’ও (Fatafati) বিনোদনের মোড়কে এক বার্তা দিতে চলেছে সুধী দর্শকবৃন্দকে! যাতে ভালবাসার গল্প যেমন আছে তেমনই আছে ‘বডি শেমিং’-এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। ভালবাসার ধরন যতটা বদলেছে, মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির কিন্তু খুব বদল হয়নি! এইসব বিষয়ই ছবিতে তুলে ধরেছেন পরিচালক। ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তে প্রকাশ্যে আনা হল ছবির প্রথম লুক।
এর আগে ‘ব্রহ্মা জানেন গোপন কর্মটি’ এবং ‘বাবা, বেবি ও’ দুটি ছবিতেই অরিত্র নিজের ভাবনাকে গল্পের মাধ্যমে দর্শকের সামনে হাজির করেছিলেন, কিছু প্রশ্ন রেখেছিলেন, উত্তরও নিজের মতো করে সাজিয়েছিলেন। পরিবর্তন রাতারাতি হয় না কিন্তু ভাবনাটা শুরু হয়ে যায়। সে-কাজে একশো শতাংশ সফল ছিলেন অরিত্র। বক্স অফিস যা-ই বলুক, দর্শক মনে রেখেছেন ছবি দুটি। বিশেষত ‘ব্রহ্মা জানেন গোপন কর্মটি’ ছবিতে মহিলা পুরোহিত শবরী কিছুটা হলেও সমাজের অচলায়তনকে নাড়া দিতে যে পেরেছিল তা পরবর্তীতে প্রত্যক্ষ করেছি আমরা। এখন আবির চট্টোপাধ্যায় ও ঋতাভরী অভিনীত ‘ফাটাফাটি’ও সেই সফলতা পাবে এ-আশা শুধু পরিচালকের নয়, ছবির প্রযোজনা সংস্থা উইন্ডোজ-এরও। তাই ছবির প্রচারে দর্শকদের জন্য তাঁদের তরফে আগাম বার্তা, ‘এবারের গরমের ছুটি হবে ফাটাফাটি।’ মার্চে আন্তর্জাতিক নারীদিবস উদযাপনে ছবিটি মুক্তির কথা থাকলেও খানিক পিছিয়ে ছবি মুক্তি পাবে ১২ মে।
আরও পড়ুন:যশোর রোডে গাছ কাটার পক্ষে রায় সুপ্রিম কোর্টেরও
ভালবাসা যতটা সত্যি, শরীর নিয়ে ছুঁতমার্গও ততটাই বাস্তব। প্রেমে থাকলেও প্রেমিকা কিংবা প্রেমিকের চেহারা নিয়ে ছুঁড়ে দেওয়া মন্তব্য, উড়ে আসা টিপ্পনী কীভাবে মনকে নাড়িয়ে দেয়, চাইলেও এড়িয়ে থাকা যায় না, তা ‘ফাটাফাটি’র (Fatafati) নায়িকা ঋতাভরী জানেন প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায়। তাই ‘ফাটাফাটি’র গল্প প্রথমবার শুনেই ভীষণ এক্সাইটেড হয়েছিলেন। জানালেন, ‘‘অস্ত্রোপচারের পর ক্রমশ ওজন বেড়ে যাচ্ছিল আমার। আর তা নিয়ে সেই সময় যা যা কটাক্ষ শুনতে হয়েছিল তা বলার নয়। নিজেকে শক্ত রেখেছিলাম কিন্তু খারাপ লাগত মানুষের ভাবনার দৈন্যতা দেখে।’ সিনেমার মাধ্যমে বডি শেমিং-এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে পেরে তাই ঋতাভরী খুশি। ছবিতে একজন ফ্যাশন ইনফ্লুয়েন্সারের চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। নিজের চেহারা নিয়ে যার সম্যক ধারণা রয়েছে কিন্তু তাতে তার স্বপ্ন, কাজ, এগিয়ে চলা— কিছুই আটকে থাকেনি। প্লাস সাইজ মডেল হয়েও মনের জোরে এগোতে গিয়েই পাশে পেয়েছেন মনের মানুষকে। সেই চরিত্রে আবির চট্টোপাধ্যায়। যিনি শুধু প্রেমিকার হাতই ধরেন না প্রয়োজনে তার শাড়ির কুঁচিও ধরে দেন। ছবির পোস্টারটিই মন ছুঁয়ে গেছে তাই সকলের।
ছবির কাহিনিকার ও চিত্রনাট্যকার জিনিয়া সেন। সংলাপ লিখেছেন সম্রাজ্ঞী বন্দ্যোপাধ্যায়। দু’জনেই মনে করেন চেহারা, গায়ের রং নিয়ে কোনওপ্রকার হীনমন্যতা কারওরই থাকা উচিত নয় পৃথিবীতে। এর জন্য কুঁকড়ে বাঁচাও বোকামি। মানুষ তখনই মানুষ যখন সে অন্যের রূপ নয় গুণের কদর করে, মুখ নয় মনের মর্যাদা দেয়। আর এর যাত্রা শুরু করতে হয় নিজেকে দিয়েই। অরিত্র, জিনিয়া, সম্রাজ্ঞীর একত্রে এটি তৃতীয় ভেঞ্চার। ঋতাভরী এই ত্রয়ীর প্রথম ছবিতে কাজ করে হইহই ফেলে দিয়েছিলেন। এ ছবিতে ফিরতে পেরে তাই খুশি। জানালেন, ‘‘ওদের সঙ্গে বোঝাপড়াটা চমৎকার শুধু নয়, ভাবনা-চিন্তার মিল এতটাই যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক হয়ে গেছে আর তাই কাজটা দারুণ উপভোগ করেছি। এটুকু বলতে পারি, আমি আমার কেরিয়ারের সবচেয়ে সাহসী ছবিটি করেছি।’’ এই প্রথম জুটি বেঁধেছেন আবির চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে। আবির আগে এই প্রযোজনা সংস্থার হয়ে ‘মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি’তে অভিনয় করেছেন। সব মিলিয়ে শ্যুটিংটা খুব উপভোগ্য হয়েছে সবার কাছেই। ছবিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন স্বস্তিকা দত্ত। এ ছাড়াও আছেন সোমা বন্দ্যোপাধ্যায়, রক্তিম সামন্ত। সকলেই আশাবাদী ‘ফাটাফাটি’ (Fatafati) নিজের নামের মতোই সফল হবে!