খাদের ধারের রেলিংটা… হাতছানির দার্জিলিংটা…

টুং, সোনাদা, ঘুম পেরিয়ে ওই হাতছানির দার্জিলিংয়ে শৈশব থেকে বার্ধক্য— সবাই বারবার ফিরে যেতে চায়। পাহাড়ে একের পর এক নতুন পর্যটনকেন্দ্র তৈরি হলেও তাই দার্জিলিং আজও পাহাড়ের রানি। যখন-তখন সাদা কুয়াশার বদলে এবার অবশ্য আরও তরতাজা ব্যাপার, বরফপাত। বাঙালির নিজস্ব নস্টালজিয়া দার্জিলিংয়ের কথা লিখেছেন প্রীতিকণা পালরায়

Must read

নস্টালজিয়ার কথা খানিক পরে হবে, শুরুটা হোক সাম্প্রতিক উন্মাদনা দিয়ে। না, শুধু খ্রিস্ট জন্মদিবসে বা নতুন বছরের ভিড় কিংবা ঠান্ডার উন্মাদনা নয়, প্রায় ১০ বছর বাদে এবার দার্জিলিংবাসী (Darjeeling) ও সঙ্গে পর্যটকেরা প্রত্যক্ষ করেছেন বরফপাত। একটু-আধটু বা ছিটেফোঁটা বরফ নয়, বরফের চাদরে মোড়া দার্জিলিং। পথে-ঘাটে, বাড়ির মাথায়, গাছের পাতায় বরফ। মুক্তবাক্যে পর্যটক মাত্রেই বলেছেন, এ তাঁদের কাছে এক্কেবারে পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনা। বছরের শেষ ক’দিন এই চিত্রের পাশাপাশি নতুন বছরের প্রথম দিনটায় আবার মেঘ সরে ঝকঝকে রোদ উঠেছিল শৈলশহরে, তাই দেখা মিলেছিল শ্বেতশুভ্র কাঞ্চনজঙ্ঘারও। এ ছাড়া আরও যেটা উল্লেখযোগ্য তথ্য, পর্যটকরা একটা দূষণমুক্ত ঝকঝকে দার্জিলিং দেখতে পেয়েছেন। প্রকৃতি আর মানুষ হাত ধরাধরি করে চললে যে তার ফল আখেরে মিষ্টিই হয় তারও প্রমাণ বর্তমানের দার্জিলিং। রাস্তাঘাট উন্নত হয়েছে শুধু নয়, নিরাপত্তা-ব্যবস্থা দেখেও সকলে খুশি। সব মিলিয়ে পাহাড়ের রানি ফের পর্যটকদের পছন্দের তালিকার প্রথমদিকে উঠে এসেছে।

যেহেতু ফের অতিমারির বাড়-বাড়ন্তের কারণে অধিকাংশ পর্যটন কেন্দ্র ও বিনোদন পার্ক সরকারি তরফে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে আগামী ১৫ জানুয়ারি অবধি, পরিস্থিতি দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, সচেতন ও দায়িত্বশীল নাগরিক ও রাজ্যবাসী হিসেবে আমাদের প্রত্যেকেরই তাকে মান্যতা দেওয়া উচিত। কিন্তু আমরা সবাই জানি, ঝড় একদিন থেমে যাবেই, পৃথিবী ফের শান্ত হয়ে যাবে এবং পর্যটকেরা ফের পাহাড়ের রানির কাছে পৌঁছে যাবে। সেদিন, সুদিন সামনেই! সে-কথা মনে রেখেই আমরা আপাতত না বেরোলেও প্রস্তুতি নিয়ে রাখি। আর মানসভ্রমণ তো কোনও বিধিনিষেধ দিয়ে বাঁধ দেওয়া যায় না!

দার্জিলিং (Darjeeling) নামটির উৎপত্তি তিব্বতি শব্দ ‘দোর্জে’ ও ‘লিং’ শব্দ দুটি থেকে। দোর্জে অর্থ হিন্দু দেবতা ইন্দ্রের বজ্রদণ্ড আর লিং-এর অর্থ স্থান বা দেশ। দার্জিলিং নিঃসন্দেহে একটি ঐতিহাসিক শহরও। শহরটি জনপ্রিয়তা পেয়েছে ব্রিটিশদের হাত ধরেই। এই শহরকে ব্রিটিশরা তাদের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী হিসেবে গড়ে তোলার পর বিশেষ মর্যাদা পেতে শুরু করে এই শৈলশহরটি। তার অনেক আগে এটি ছিল প্রাচীন গোর্খা রাজধানী। পরে সিকিমের মহারাজা দার্জিলিংকে ব্রিটিশদের উপহার দেন। নিজেদের পরিকল্পনা ও প্রয়োজন মতো ব্রিটিশরা এবার দার্জিলিংয়ের (Darjeeling) আধুনিকীকরণ করে। ঔপনিবেশিক অনেক স্থাপত্য শহরের নানাদিকে আজও বিদ্যমান। ব্রিটিশরা এখানে তাদের পাবলিক স্কুল ধাঁচের যে স্কুলগুলি প্রতিষ্ঠা করেন, তা আজও বিশ্বমানের। দার্জিলিংকে কেন্দ্র করে মানুষ আশপাশের জনপ্রিয় শৈলশহরগুলি ঘোরার পরিকল্পনা করেন বেশি কিন্তু শুধুমাত্র এ শহরটিকে দেখতেও যদি কেউ উদ্যোগী হন, তাঁরাও দারুণ উপভোগ করবেন। দার্জিলিংয়ের দর্শনীয় স্থানগুলিকে ভালভাবে দেখতে এ শহরে কমপক্ষে তিন থেকে চার রাত কাটাতেই হবে। তাই র্যা পিড ফায়ার পদ্ধতিতে নয়, ভালবাসা আর আলসেমির হাত ধরে ঘুরে বেড়ান একবার দার্জিলিংয়ের চড়াই-উতরাই পথে, পাহাড়ে আর খাদের ধারে। এ-শহর আপনার মন জুড়ে আজীবন থাকবে।

আরও পড়ুন-মেঘলা আবহাওয়ায় পাইলটের ভুলেই ভেঙে পড়েছিল রাওয়াতের কপ্টার, বলছে রিপোর্ট

ছোট-বড় মিলিয়ে যে জায়গাগুলি অবশ্য দর্শনীয়, পাঠকদের সুবিধার্থে সেগুলির উল্লেখ করা হল এখানে। দার্জিলিং শহরেই অসংখ্য গাড়ি পাওয়া যায় যারা ডেলি বেসিসে ঘুরিয়ে দেখাতে পারে। এ-ছাড়া সংশ্লিষ্ট হোটেল কর্তৃপক্ষকে বললে তাঁরাও ব্যবস্থা করে দিতে পারেন।
** পৃথিবীর সর্বোচ্চ রেলওয়ে স্টেশন ঘুম
** ঘুম মোনাস্ট্রি
** বাতাসিয়া লুপ
** পদ্মজা নাইডু হিমালয়ান জুলজিক্যাল পার্ক
** হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট
** তেনজিং নোরগে রক
** সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮০০০ ফুট উঁচুতে দার্জিলিং-গোর্খা স্টেডিয়াম
** লেবং রেস কোর্স, পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট এবং সর্বোচ্চ রেসকোর্স
** বেঙ্গল ন্যাচারাল হিস্টরি মিউজিয়াম
** লাওডস বোটানিক্যাল গার্ডেন
** পৃথিবী বিখ্যাত বৌদ্ধ বিহার ‘জাপানিজ টেম্পল’
** ব্রিটিশ আমলের কাউন্সিল হাউস ‘লালকুঠি’
** আভা আর্ট গ্যালারি
** অবজারভেটরি হিল : প্রাচীন ‘দিরদাহাম টেম্পল’ বা ধীরধাম মন্দির ও বৌদ্ধ সংরক্ষণালয়
** রকগার্ডেন ও গঙ্গামায়া পার্ক
** ভিক্টোরিয়া ফলস
** দ্য মল (চলিত কথায় ‘ম্যাল’)

কীভাবে যাবেন : শিয়ালদা বা হাওড়া থেকে ট্রেনে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন। দার্জিলিং সেখান থেকে ৪৪ কিলোমিটার। গাড়িতে পৌঁছে যাবেন চারপাশের মনোরম দৃশ্য দেখতে দেখতে। এ-ছাড়া বাসে শিলিগুড়ি পৌঁছে, সেখান থেকে গাড়িতে যাওয়া যায় দার্জিলিং। আর যদি আকাশপথে যেতে চান, বাগডোগরা বিমানবন্দর হল দার্জিলিংয়ের সবচেয়ে কাছের। বাগডোগরা থেকে দার্জিলিংয়ের দূরত্ব ৬৮ কিলোমিটার।
কোথায় থাকবেন : দার্জিলিংয়ে সবরকম মানের অসংখ্য হোটেল, লজ আছে যা আগে থেকে বুক করে যাওয়া যায়। এ-ছাড়া ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্যুরিজমের লজের ব্যবস্থাপনাও দারুণ।

Latest article